Ajker Patrika

আলকারাসে যুগ বদলের গান

শাহরিয়ার ফিরোজ, ঢাকা
Thumbnail image

হতবিহ্বল হয়ে নোভাক জোকোভিচ তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। ক্লোজ আপে টিভি পর্দায় ভেসে ওঠা বিস্মিত সার্বিয়ান তারকার মনের ভাষা তখন পড়া যায় সহজেই—এমনও ড্রপ শট হয়!

একটু পেছনের দিকেই ছিলেন, কিন্তু সামনে ঝুঁকে বলটা ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করতেই পারতেন। তা না করে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন জোকোভিচ। কয়েক ন্যানো সেকেন্ডেই যেন বুঝে গিয়েছিলেন, ওই ড্রপ শট ফেরানোর সাধ্য কারও নেই!

৪ সেট শেষে ২-২-এ সমতার পর উইম্বলডন ফাইনালের শেষ সেটে নিজের সেরাটা নিয়েই হাজির হয়েছিলেন কার্লোস আলকারাস। আর তাতে শুধু জোকোভিচই কেন, সেন্টার কোর্টের হাজারো এবং টিভি সেটের সামনে থাকা লাখো দর্শক থ মেরে গিয়েছিলেন। একেকটা সার্ভ করছেন আলকারাস, আর সেটা পরিণত হচ্ছে একেকটা এইসে! ভাবা যায় শেষ সেটে টানা তিনটি এইস করেছেন আলকারাস। তাঁর শক্তিশালী সার্ভের কাছে যেভাবে ভ্যাবাচেকা খেলেন জোকোভিচ, তাতে সেই সার্ভের বিপক্ষে তাঁর দুই দশকের অভিজ্ঞতাও মনে হলো নস্যি। ছেলেদের টেনিসের সবচেয়ে বেশি ২৩টি গ্র্যান্ড স্লামের মালিককেও মনে হলো যেন আনকোরা কোনো প্রতিযোগী!

অথচ দুজনের বয়স-অভিজ্ঞতার ব্যবধান দেখুন, যে বছর পেশাদার টেনিসে জোকোভিচের পা রাখা, সেই ২০০৩ সালেই জন্ম আলকারাসের। দুজনের বয়সের ব্যবধান ১৫ বছর ৩৪৯ দিন। জোকোভিচের গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা ২৩টি, আলকারাসের ১টি। জোকোভিচ সেন্টার কোর্টে ১০ বছর ধরে অপরাজিত, ম্যাচের হিসাবে ৪৫! সেই সেন্টার কোর্টে পরশুর ফাইনালে ওই টানা তিনটি এইস যাঁরা দেখেছেন, আলকারাসের জয় নিয়ে তাঁদের কারও সংশয়ই ছিল না।

উইম্বলডনে ফেদেরারের ৮, আর গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপায় মার্গারেট কোর্টের ২৪ ছুঁয়ে ফেলার জোকোভিচের স্বপ্ন চুরমার করে ৪ ঘণ্টা ৪২ মিনিটের ম্যাচটি জিতেছেন আলকারাসই। আর তাতে টেনিসেরই জয় দেখছেন সবাই। গত কয়েক বছর একের পর এক যেভাবে গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন জোকোভিচ, তাতে ‘মেশিন’ পরিচিতি পেয়ে গিয়েছিলেন। আর মেশিনের কাছে আবেগ, বয়স, ক্লে-হার্ড কিংবা ঘাসের কোর্টের পার্থক্যের কোনো মূল্য নেই। গ্র্যান্ড স্লামের শিরোপা জেতা তাঁর কাছে যেন ছেলের হাতের মোয়া!

জোকোভিচকে থামানোর প্রয়োজনীয়তাও দেখেছেন কেউ কেউ। ফাইনালের আগে সুইডিশ টেনিস গ্রেট ম্যাটস উইল্যান্ডারও বলেছেন, ‘জোকোভিচকের বিরুদ্ধে আলকারাসের জেতাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খেলাটার স্বার্থেই জোকোকে থামানো দরকার।’

১-৬, ৭-৬ (৮-৬), ৬-১, ৩-৬, ৬-৪ গেমে ফাইনাল জিতে সেই জোকোভিচকে থামিয়ে দিলেন আলকারাস। এই এক হারেই ‘জোকো-রাজের’ পতন হয়েছে—এমনটা ভাবার কোনোই কারণ নেই। সুপার ফিট জোকোর টেনিসকে দেওয়ার এখনো অনেক বাকি। কিন্তু পরশু সেন্টার কোর্টের আলকারাসকে দেখে ‘আলকা-রাজে’র শুরু দেখছেন অনেকেই। আলকারাস এমন এক খেলোয়াড়, যাঁর মধ্যে তিন গ্রেট—রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল এবং জোকোভিচের সুষম মিশেল দেখেন কেউ কেউ। সেন্টার কোর্টে তাঁর টানা চার বছরের শ্রেষ্ঠত্ব খোয়ানোর পর তুর্কি তরুণের মধ্যে সেই মিশেল দেখলেন জোকোভিচও, ‘মানুষ যে বলে আসছে, ওর মধ্যে রজার (ফেদেরার), রাফা (নাদাল) এবং আমার সংমিশ্রণ ঘটেছে, আমিও মনে করি তা। তিন বিশ্বসেরার ভালো সব গুণই আছে ওর মধ্যে।’

বিশ্ব টেনিসে পালাবদলের গান শোনাবেন তো এমন খেলোয়াড়েরাই। পরশুর উইম্বলডন জিতে সে গানের রাগিণী যে বাজিয়ে দিয়েছেন আলকারাস, সেটি অনেকের মতো শুনতে পেয়েছেন শচীন টেন্ডুলকারও। ফাইনাল শেষে চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় এই ব্যাটিং কিংবদন্তির টুইট, ‘টেনিসের পরের মহাতারকার উত্থান দেখলাম আমরা। আগামী ১০-১২ বছর কার্লোসকে অনুসরণ করব, যেমনটা করে এসেছি রজার ফেদেরারকে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত