ড. মইনুল ইসলাম

গত ১১ মে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকার খবরে ভোলার ইলিশায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কৃত হওয়ার খবরটি বাপেক্স নিশ্চিত করেছে। ওই সব খবরে জানা গেল, ভোলায় ইতিমধ্যে ইলিশাসহ যে ৯টি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, সেগুলোতে প্রাপ্ত গ্যাসের সম্ভাব্য পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ভোলা দ্বীপটি প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর ভাসছে। যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে এই দ্বীপে গ্যাস অনুসন্ধান চালালে নাকি এখানকার বিভিন্ন স্থানে আরও ৮ টিসিএফের বেশি গ্যাস পাওয়া যাবে আগামী কয়েক বছরে, এটাই বিশেষজ্ঞদের অভিমত। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিবছর গ্যাস ব্যবহৃত হয় প্রায় এক টিসিএফ। সেই হিসাবে শুধু ভোলার গ্যাস দিয়ে বাংলাদেশের গ্যাসের চাহিদা মেটানো যাবে প্রায় ১০ বছর। এটা যে দেশের জন্য কত বড় সুখবর, সেটা বোঝা যাবে একটি খবর থেকে: এখন দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতিবছর আমাদের এলএনজি আমদানিতে ব্যয় করতে হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। আরও গুরুতর সমস্যা হলো, সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দামে যে উল্লম্ফন ঘটেছে, এর ফলে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ এলএনজি আমদানিও করতে পারছি না। এর পরিণামে দেশের অনেকগুলো গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট গ্যাসের অভাবে বন্ধ রাখতে হচ্ছে, ফলে এই গ্রীষ্মকালের অসহনীয় গরমের সময়ও সারা দেশে দুই হাজার থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লোডশেডিং করতে হচ্ছে প্রতিদিন।
অথচ ভোলার গ্যাস দেশের গ্যাস-গ্রিডে আনা যাচ্ছে না একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মোহনার চরাঞ্চল ভোলার ১ দশমিক ৭৫ টিসিএফ গ্যাস এত দিনেও মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসার ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি বিধায়। বছরের পর বছর ধরে সরকারের জ্বালানিবিষয়ক নীতিনির্ধারকদের পরিচিত গলাবাজির বুলি ছিল পাইপলাইনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিধায় অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, এটা একটা ভুয়া যুক্তি। কোনো বিশ্বাসযোগ্য ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি’র মাধ্যমে এহেন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়নি। এর আসল কারণ কয়েকজন অত্যন্ত প্রভাবশালী এলএনজি আমদানিকারককে অন্যায্য ফায়দা দেওয়ার ব্যবস্থা করা, যাঁদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টাও রয়েছেন। এসব প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর কারণেই দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে গত এক দশকে আমদানি করা এলএনজিনির্ভর করে গড়ে তোলা হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, তাঁদের মুনাফাবাজিকে টিকিয়ে রাখার জন্যই ২০০৯ সাল থেকে দেশের স্থলভাগ এবং বিপুল সমুদ্রাঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকে অবহেলা করা হচ্ছে। ২০১২ সালে মিয়ানমার এবং ২০১৪ সালে ভারতের বিরুদ্ধে সমুদ্রসীমা-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মামলা জেতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমার ওপর নিয়ন্ত্রণাধিকার (এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন) অর্জন করা সত্ত্বেও গত ৯ বা ১১ বছরেও এই বিশাল সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান-প্রক্রিয়া শুরুই করতে পারেনি। এই ব্যর্থতার দায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এড়াতে পারেন না। তা ছাড়া বলা হয়ে থাকে, তিনি সব বিষয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এটা কি আমরা জানি যে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার অদূরে সেন্ট মার্টিন উপকূলের কাছে মিয়ানমার তাদের সমুদ্রসীমায় দেড় দশক আগেই চার টিসিএফের বেশি গ্যাস আবিষ্কার করে ওই গ্যাস চীনে রপ্তানি করছে? (ওই গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবটিকে বিএনপি-জামায়াত সরকার প্রত্যাখ্যান করেছিল)। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, সমুদ্রের তলদেশের ভূ-কাঠামো বিবেচনায় একই কাঠামো বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায়ও রয়েছে। তাই এরূপ গ্যাসক্ষেত্র বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায়ও বিস্তৃত রয়েছে বলে গ্যাস বিশেষজ্ঞরা মত ব্যক্ত করেছেন। ২০০৯ সালে ওই এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোরিয়ার দাইয়ু কোম্পানি জাহাজভর্তি সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হলে মিয়ানমার নৌবাহিনী তাদের ফিরে আসতে বাধ্য করেছিল, এলাকাটি মিয়ানমারের দাবি করে। ২০১২ সালে ইটলসের রায়ে ওই এলাকা বাংলাদেশ পেয়ে গেছে। কিন্তু গত ১১ বছরেও আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওই এলাকার সাগরে কোনো ইজারাদার কোম্পানি গ্যাস অনুসন্ধানের প্রয়াস চালায়নি কেন? মিয়ানমারের ভয়ে? (ভারতের ওএনজিসি দুটো ব্লকে বর্তমানে অনুসন্ধান চালালেও তাদের তুলনামূলক নিষ্ক্রিয়তা রহস্যজনক, হয়তো ভারতের স্বার্থহানিকর কিছু তারা করবে না)। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সমুদ্র-সীমান্তের অদূরে ভারত গোদাগাড়ী এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে বিরাট গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে গ্যাস উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ এখনো নিজেদের সমুদ্রসীমায় আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোকে আকর্ষণ করার জন্য একটি মাল্টি-ক্লায়েন্ট সিসমিক সার্ভে পর্যন্ত সম্পন্ন করতে পারেনি। (বর্তমানে একটি সিসমিক সার্ভে চলছে, যার ফলাফল এ বছরের শেষ নাগাদ পাওয়া যাবে)। সম্প্রতি, মার্কিন বহুজাতিক তেল কোম্পানি এক্সন-মবিল বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র এলাকার ১৫টি ব্লকে তেল অনুসন্ধানের আগ্রহ দেখিয়েছে বলে পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ ব্যাপারেও সরকারের রহস্যজনক নীরবতা লক্ষণীয়।
হয়তো উল্লিখিত প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই ভোলার গ্যাস এত দিনে দেশের গ্যাস-গ্রিডে নিয়ে আসার ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হয়নি! এখন যখন এলএনজি আমদানি ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে গেছে, তখন হয়তো সরকারের টনক নড়েছে। অতএব মূল সমস্যাটি হলো, ভোলায় ইতিমধ্যে প্রাপ্ত গ্যাসকে কীভাবে অর্থনৈতিকভাবে যুক্তিযুক্ত উপায়ে দেশের মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা যায়। ভবিষ্যতে যদি ভোলায় আরও গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয় তাহলে এ ব্যাপারটি দেশের অর্থনীতিতে বড়সড় ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠবে নিঃসন্দেহে। ১১ মের একটি পত্রিকার নিউজ আইটেমে জানা গেল, ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসফিল্ড ও ভোলা নর্থ গ্যাসফিল্ড থেকে বরিশালের লাহারহাট পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস বরিশালে নিয়ে আসার জন্য ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প-প্রস্তাব বর্তমানে সরকারের পরিকল্পনা কমিশনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে এই গ্যাস পাইপলাইনটি কুয়াকাটা-বরিশাল-গোপালগঞ্জ-খুলনা পাইপলাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্যাস-গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হবে। আমার মতে, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির প্রকৃত বাস্তবায়ন-ব্যয় পরে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও এটাকে অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় বিবেচনা করতে হবে। কারণ, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম এক এমএমবিটিউ ১৪-১৬ ডলার। তাহলে ভোলার ১ দশমিক ৭৫ টিসিএফ গ্যাসের মোট মূল্য দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মাত্র দেড়-দুই হাজার কোটি টাকার পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে যদি আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা এই ১ দশমিক ৭৫ টিসিএফ গ্যাস জাতীয় গ্যাস-গ্রিডে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে এই পাইপলাইন অর্থনীতির জন্য কতখানি উপকার বয়ে আনতে পারবে, সেটা কি আমরা অনুধাবন করতে পারছি? ইতিমধ্যে ইন্ট্রাকোকে ঠিকাদারি দিয়ে সিলিন্ডারে ভরে ভোলার গ্যাস ঢাকায় নিয়ে আসার যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটা অর্থনৈতিকভাবে উল্লেখযোগ্য সুফল বয়ে আনবে না। অতএব এই পাইপলাইন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সঙ্গে সরকারের চুক্তি বহাল রাখা যেতে পারে, পাইপলাইন স্থাপনের বিরুদ্ধে এটাকে যেন বাধা হিসেবে খাড়া করা না হয়।
প্রস্তাবিত পাইপলাইনটি আরেকটি দিক থেকেও বাংলাদেশকে সুফল দেবে। বর্তমানে বাংলাদেশের এলএনজি আমদানির টার্মিনালগুলো মহেশখালী-কক্সবাজার অঞ্চলে স্থাপন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো বৈরিতা দেখা দিলে ভোলায় আরেকটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করে প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা এলএনজি জাতীয় গ্রিডে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। তবে আমার মতে, প্রস্তাবিত পাইপলাইনটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভবিষ্যৎ-ব্যবহার নিশ্চিত হবে যদি বাংলাদেশ গভীর সমুদ্রের ব্লকগুলোতে গ্যাস পেয়ে যায়। তখন এলএনজির আকারে গভীর সমুদ্রের গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই পাইপলাইন সবচেয়ে ব্যয়-সাশ্রয়ী উপায় হয়ে উঠবে। এমনকি এ সম্ভাবনাটি মাথায় রেখে পাইপলাইনের ব্যাস ৩০ ইঞ্চি থেকে আরও বাড়ানো যুক্তিযুক্ত বিবেচিত হতে পারে। ওপরে উল্লিখিত আলোচনা-বিশ্লেষণ থেকে আমি অনুসিদ্ধান্ত টানতে চাই, প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল গ্যাস পাইপলাইনটি একটি যুগান্তকারী প্রকল্প হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ধারণ করছে। তাই অবিলম্বে একনেকে উপস্থাপন করে প্রকল্পটি অনুমোদনের ব্যবস্থা করা সরকারের অগ্রাধিকারের দাবি রাখে। কোনো দেশ বা উন্নয়ন-সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখালে ভালো, নয়তো সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলেও কয়েক বছরের মধ্যেই প্রকল্পের ব্যয়ের কয়েক গুণ বেশি সুফল অর্জন করবে আমাদের অর্থনীতি। বর্তমান বিদ্যুৎ-সংকট, গ্যাসের চলমান ঘাটতির সমস্যা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারা এবং ডলারের সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য এটাকে দেশের জনগণের জন্য আল্লাহর রহমত হিসেবে বিবেচনা করা উচিত মনে করি।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

গত ১১ মে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকার খবরে ভোলার ইলিশায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কৃত হওয়ার খবরটি বাপেক্স নিশ্চিত করেছে। ওই সব খবরে জানা গেল, ভোলায় ইতিমধ্যে ইলিশাসহ যে ৯টি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, সেগুলোতে প্রাপ্ত গ্যাসের সম্ভাব্য পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ভোলা দ্বীপটি প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর ভাসছে। যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে এই দ্বীপে গ্যাস অনুসন্ধান চালালে নাকি এখানকার বিভিন্ন স্থানে আরও ৮ টিসিএফের বেশি গ্যাস পাওয়া যাবে আগামী কয়েক বছরে, এটাই বিশেষজ্ঞদের অভিমত। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিবছর গ্যাস ব্যবহৃত হয় প্রায় এক টিসিএফ। সেই হিসাবে শুধু ভোলার গ্যাস দিয়ে বাংলাদেশের গ্যাসের চাহিদা মেটানো যাবে প্রায় ১০ বছর। এটা যে দেশের জন্য কত বড় সুখবর, সেটা বোঝা যাবে একটি খবর থেকে: এখন দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতিবছর আমাদের এলএনজি আমদানিতে ব্যয় করতে হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। আরও গুরুতর সমস্যা হলো, সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দামে যে উল্লম্ফন ঘটেছে, এর ফলে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ এলএনজি আমদানিও করতে পারছি না। এর পরিণামে দেশের অনেকগুলো গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট গ্যাসের অভাবে বন্ধ রাখতে হচ্ছে, ফলে এই গ্রীষ্মকালের অসহনীয় গরমের সময়ও সারা দেশে দুই হাজার থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লোডশেডিং করতে হচ্ছে প্রতিদিন।
অথচ ভোলার গ্যাস দেশের গ্যাস-গ্রিডে আনা যাচ্ছে না একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মোহনার চরাঞ্চল ভোলার ১ দশমিক ৭৫ টিসিএফ গ্যাস এত দিনেও মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসার ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি বিধায়। বছরের পর বছর ধরে সরকারের জ্বালানিবিষয়ক নীতিনির্ধারকদের পরিচিত গলাবাজির বুলি ছিল পাইপলাইনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিধায় অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, এটা একটা ভুয়া যুক্তি। কোনো বিশ্বাসযোগ্য ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি’র মাধ্যমে এহেন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়নি। এর আসল কারণ কয়েকজন অত্যন্ত প্রভাবশালী এলএনজি আমদানিকারককে অন্যায্য ফায়দা দেওয়ার ব্যবস্থা করা, যাঁদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টাও রয়েছেন। এসব প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর কারণেই দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে গত এক দশকে আমদানি করা এলএনজিনির্ভর করে গড়ে তোলা হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, তাঁদের মুনাফাবাজিকে টিকিয়ে রাখার জন্যই ২০০৯ সাল থেকে দেশের স্থলভাগ এবং বিপুল সমুদ্রাঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকে অবহেলা করা হচ্ছে। ২০১২ সালে মিয়ানমার এবং ২০১৪ সালে ভারতের বিরুদ্ধে সমুদ্রসীমা-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মামলা জেতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমার ওপর নিয়ন্ত্রণাধিকার (এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন) অর্জন করা সত্ত্বেও গত ৯ বা ১১ বছরেও এই বিশাল সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান-প্রক্রিয়া শুরুই করতে পারেনি। এই ব্যর্থতার দায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এড়াতে পারেন না। তা ছাড়া বলা হয়ে থাকে, তিনি সব বিষয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এটা কি আমরা জানি যে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার অদূরে সেন্ট মার্টিন উপকূলের কাছে মিয়ানমার তাদের সমুদ্রসীমায় দেড় দশক আগেই চার টিসিএফের বেশি গ্যাস আবিষ্কার করে ওই গ্যাস চীনে রপ্তানি করছে? (ওই গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবটিকে বিএনপি-জামায়াত সরকার প্রত্যাখ্যান করেছিল)। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, সমুদ্রের তলদেশের ভূ-কাঠামো বিবেচনায় একই কাঠামো বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায়ও রয়েছে। তাই এরূপ গ্যাসক্ষেত্র বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায়ও বিস্তৃত রয়েছে বলে গ্যাস বিশেষজ্ঞরা মত ব্যক্ত করেছেন। ২০০৯ সালে ওই এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোরিয়ার দাইয়ু কোম্পানি জাহাজভর্তি সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হলে মিয়ানমার নৌবাহিনী তাদের ফিরে আসতে বাধ্য করেছিল, এলাকাটি মিয়ানমারের দাবি করে। ২০১২ সালে ইটলসের রায়ে ওই এলাকা বাংলাদেশ পেয়ে গেছে। কিন্তু গত ১১ বছরেও আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওই এলাকার সাগরে কোনো ইজারাদার কোম্পানি গ্যাস অনুসন্ধানের প্রয়াস চালায়নি কেন? মিয়ানমারের ভয়ে? (ভারতের ওএনজিসি দুটো ব্লকে বর্তমানে অনুসন্ধান চালালেও তাদের তুলনামূলক নিষ্ক্রিয়তা রহস্যজনক, হয়তো ভারতের স্বার্থহানিকর কিছু তারা করবে না)। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সমুদ্র-সীমান্তের অদূরে ভারত গোদাগাড়ী এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে বিরাট গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে গ্যাস উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ এখনো নিজেদের সমুদ্রসীমায় আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোকে আকর্ষণ করার জন্য একটি মাল্টি-ক্লায়েন্ট সিসমিক সার্ভে পর্যন্ত সম্পন্ন করতে পারেনি। (বর্তমানে একটি সিসমিক সার্ভে চলছে, যার ফলাফল এ বছরের শেষ নাগাদ পাওয়া যাবে)। সম্প্রতি, মার্কিন বহুজাতিক তেল কোম্পানি এক্সন-মবিল বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র এলাকার ১৫টি ব্লকে তেল অনুসন্ধানের আগ্রহ দেখিয়েছে বলে পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ ব্যাপারেও সরকারের রহস্যজনক নীরবতা লক্ষণীয়।
হয়তো উল্লিখিত প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই ভোলার গ্যাস এত দিনে দেশের গ্যাস-গ্রিডে নিয়ে আসার ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হয়নি! এখন যখন এলএনজি আমদানি ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে গেছে, তখন হয়তো সরকারের টনক নড়েছে। অতএব মূল সমস্যাটি হলো, ভোলায় ইতিমধ্যে প্রাপ্ত গ্যাসকে কীভাবে অর্থনৈতিকভাবে যুক্তিযুক্ত উপায়ে দেশের মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা যায়। ভবিষ্যতে যদি ভোলায় আরও গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয় তাহলে এ ব্যাপারটি দেশের অর্থনীতিতে বড়সড় ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠবে নিঃসন্দেহে। ১১ মের একটি পত্রিকার নিউজ আইটেমে জানা গেল, ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসফিল্ড ও ভোলা নর্থ গ্যাসফিল্ড থেকে বরিশালের লাহারহাট পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস বরিশালে নিয়ে আসার জন্য ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প-প্রস্তাব বর্তমানে সরকারের পরিকল্পনা কমিশনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে এই গ্যাস পাইপলাইনটি কুয়াকাটা-বরিশাল-গোপালগঞ্জ-খুলনা পাইপলাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্যাস-গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হবে। আমার মতে, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির প্রকৃত বাস্তবায়ন-ব্যয় পরে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও এটাকে অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় বিবেচনা করতে হবে। কারণ, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম এক এমএমবিটিউ ১৪-১৬ ডলার। তাহলে ভোলার ১ দশমিক ৭৫ টিসিএফ গ্যাসের মোট মূল্য দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মাত্র দেড়-দুই হাজার কোটি টাকার পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে যদি আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা এই ১ দশমিক ৭৫ টিসিএফ গ্যাস জাতীয় গ্যাস-গ্রিডে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে এই পাইপলাইন অর্থনীতির জন্য কতখানি উপকার বয়ে আনতে পারবে, সেটা কি আমরা অনুধাবন করতে পারছি? ইতিমধ্যে ইন্ট্রাকোকে ঠিকাদারি দিয়ে সিলিন্ডারে ভরে ভোলার গ্যাস ঢাকায় নিয়ে আসার যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটা অর্থনৈতিকভাবে উল্লেখযোগ্য সুফল বয়ে আনবে না। অতএব এই পাইপলাইন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সঙ্গে সরকারের চুক্তি বহাল রাখা যেতে পারে, পাইপলাইন স্থাপনের বিরুদ্ধে এটাকে যেন বাধা হিসেবে খাড়া করা না হয়।
প্রস্তাবিত পাইপলাইনটি আরেকটি দিক থেকেও বাংলাদেশকে সুফল দেবে। বর্তমানে বাংলাদেশের এলএনজি আমদানির টার্মিনালগুলো মহেশখালী-কক্সবাজার অঞ্চলে স্থাপন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো বৈরিতা দেখা দিলে ভোলায় আরেকটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করে প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা এলএনজি জাতীয় গ্রিডে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। তবে আমার মতে, প্রস্তাবিত পাইপলাইনটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভবিষ্যৎ-ব্যবহার নিশ্চিত হবে যদি বাংলাদেশ গভীর সমুদ্রের ব্লকগুলোতে গ্যাস পেয়ে যায়। তখন এলএনজির আকারে গভীর সমুদ্রের গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই পাইপলাইন সবচেয়ে ব্যয়-সাশ্রয়ী উপায় হয়ে উঠবে। এমনকি এ সম্ভাবনাটি মাথায় রেখে পাইপলাইনের ব্যাস ৩০ ইঞ্চি থেকে আরও বাড়ানো যুক্তিযুক্ত বিবেচিত হতে পারে। ওপরে উল্লিখিত আলোচনা-বিশ্লেষণ থেকে আমি অনুসিদ্ধান্ত টানতে চাই, প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল গ্যাস পাইপলাইনটি একটি যুগান্তকারী প্রকল্প হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ধারণ করছে। তাই অবিলম্বে একনেকে উপস্থাপন করে প্রকল্পটি অনুমোদনের ব্যবস্থা করা সরকারের অগ্রাধিকারের দাবি রাখে। কোনো দেশ বা উন্নয়ন-সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখালে ভালো, নয়তো সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলেও কয়েক বছরের মধ্যেই প্রকল্পের ব্যয়ের কয়েক গুণ বেশি সুফল অর্জন করবে আমাদের অর্থনীতি। বর্তমান বিদ্যুৎ-সংকট, গ্যাসের চলমান ঘাটতির সমস্যা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারা এবং ডলারের সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য এটাকে দেশের জনগণের জন্য আল্লাহর রহমত হিসেবে বিবেচনা করা উচিত মনে করি।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ড. মইনুল ইসলাম

গত ১১ মে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকার খবরে ভোলার ইলিশায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কৃত হওয়ার খবরটি বাপেক্স নিশ্চিত করেছে। ওই সব খবরে জানা গেল, ভোলায় ইতিমধ্যে ইলিশাসহ যে ৯টি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, সেগুলোতে প্রাপ্ত গ্যাসের সম্ভাব্য পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ভোলা দ্বীপটি প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর ভাসছে। যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে এই দ্বীপে গ্যাস অনুসন্ধান চালালে নাকি এখানকার বিভিন্ন স্থানে আরও ৮ টিসিএফের বেশি গ্যাস পাওয়া যাবে আগামী কয়েক বছরে, এটাই বিশেষজ্ঞদের অভিমত। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিবছর গ্যাস ব্যবহৃত হয় প্রায় এক টিসিএফ। সেই হিসাবে শুধু ভোলার গ্যাস দিয়ে বাংলাদেশের গ্যাসের চাহিদা মেটানো যাবে প্রায় ১০ বছর। এটা যে দেশের জন্য কত বড় সুখবর, সেটা বোঝা যাবে একটি খবর থেকে: এখন দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতিবছর আমাদের এলএনজি আমদানিতে ব্যয় করতে হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। আরও গুরুতর সমস্যা হলো, সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দামে যে উল্লম্ফন ঘটেছে, এর ফলে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ এলএনজি আমদানিও করতে পারছি না। এর পরিণামে দেশের অনেকগুলো গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট গ্যাসের অভাবে বন্ধ রাখতে হচ্ছে, ফলে এই গ্রীষ্মকালের অসহনীয় গরমের সময়ও সারা দেশে দুই হাজার থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লোডশেডিং করতে হচ্ছে প্রতিদিন।
অথচ ভোলার গ্যাস দেশের গ্যাস-গ্রিডে আনা যাচ্ছে না একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মোহনার চরাঞ্চল ভোলার ১ দশমিক ৭৫ টিসিএফ গ্যাস এত দিনেও মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসার ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি বিধায়। বছরের পর বছর ধরে সরকারের জ্বালানিবিষয়ক নীতিনির্ধারকদের পরিচিত গলাবাজির বুলি ছিল পাইপলাইনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিধায় অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, এটা একটা ভুয়া যুক্তি। কোনো বিশ্বাসযোগ্য ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি’র মাধ্যমে এহেন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়নি। এর আসল কারণ কয়েকজন অত্যন্ত প্রভাবশালী এলএনজি আমদানিকারককে অন্যায্য ফায়দা দেওয়ার ব্যবস্থা করা, যাঁদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টাও রয়েছেন। এসব প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর কারণেই দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে গত এক দশকে আমদানি করা এলএনজিনির্ভর করে গড়ে তোলা হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, তাঁদের মুনাফাবাজিকে টিকিয়ে রাখার জন্যই ২০০৯ সাল থেকে দেশের স্থলভাগ এবং বিপুল সমুদ্রাঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকে অবহেলা করা হচ্ছে। ২০১২ সালে মিয়ানমার এবং ২০১৪ সালে ভারতের বিরুদ্ধে সমুদ্রসীমা-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মামলা জেতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমার ওপর নিয়ন্ত্রণাধিকার (এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন) অর্জন করা সত্ত্বেও গত ৯ বা ১১ বছরেও এই বিশাল সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান-প্রক্রিয়া শুরুই করতে পারেনি। এই ব্যর্থতার দায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এড়াতে পারেন না। তা ছাড়া বলা হয়ে থাকে, তিনি সব বিষয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এটা কি আমরা জানি যে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার অদূরে সেন্ট মার্টিন উপকূলের কাছে মিয়ানমার তাদের সমুদ্রসীমায় দেড় দশক আগেই চার টিসিএফের বেশি গ্যাস আবিষ্কার করে ওই গ্যাস চীনে রপ্তানি করছে? (ওই গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবটিকে বিএনপি-জামায়াত সরকার প্রত্যাখ্যান করেছিল)। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, সমুদ্রের তলদেশের ভূ-কাঠামো বিবেচনায় একই কাঠামো বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায়ও রয়েছে। তাই এরূপ গ্যাসক্ষেত্র বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায়ও বিস্তৃত রয়েছে বলে গ্যাস বিশেষজ্ঞরা মত ব্যক্ত করেছেন। ২০০৯ সালে ওই এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোরিয়ার দাইয়ু কোম্পানি জাহাজভর্তি সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হলে মিয়ানমার নৌবাহিনী তাদের ফিরে আসতে বাধ্য করেছিল, এলাকাটি মিয়ানমারের দাবি করে। ২০১২ সালে ইটলসের রায়ে ওই এলাকা বাংলাদেশ পেয়ে গেছে। কিন্তু গত ১১ বছরেও আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওই এলাকার সাগরে কোনো ইজারাদার কোম্পানি গ্যাস অনুসন্ধানের প্রয়াস চালায়নি কেন? মিয়ানমারের ভয়ে? (ভারতের ওএনজিসি দুটো ব্লকে বর্তমানে অনুসন্ধান চালালেও তাদের তুলনামূলক নিষ্ক্রিয়তা রহস্যজনক, হয়তো ভারতের স্বার্থহানিকর কিছু তারা করবে না)। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সমুদ্র-সীমান্তের অদূরে ভারত গোদাগাড়ী এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে বিরাট গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে গ্যাস উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ এখনো নিজেদের সমুদ্রসীমায় আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোকে আকর্ষণ করার জন্য একটি মাল্টি-ক্লায়েন্ট সিসমিক সার্ভে পর্যন্ত সম্পন্ন করতে পারেনি। (বর্তমানে একটি সিসমিক সার্ভে চলছে, যার ফলাফল এ বছরের শেষ নাগাদ পাওয়া যাবে)। সম্প্রতি, মার্কিন বহুজাতিক তেল কোম্পানি এক্সন-মবিল বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র এলাকার ১৫টি ব্লকে তেল অনুসন্ধানের আগ্রহ দেখিয়েছে বলে পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ ব্যাপারেও সরকারের রহস্যজনক নীরবতা লক্ষণীয়।
হয়তো উল্লিখিত প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই ভোলার গ্যাস এত দিনে দেশের গ্যাস-গ্রিডে নিয়ে আসার ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হয়নি! এখন যখন এলএনজি আমদানি ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে গেছে, তখন হয়তো সরকারের টনক নড়েছে। অতএব মূল সমস্যাটি হলো, ভোলায় ইতিমধ্যে প্রাপ্ত গ্যাসকে কীভাবে অর্থনৈতিকভাবে যুক্তিযুক্ত উপায়ে দেশের মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা যায়। ভবিষ্যতে যদি ভোলায় আরও গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয় তাহলে এ ব্যাপারটি দেশের অর্থনীতিতে বড়সড় ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠবে নিঃসন্দেহে। ১১ মের একটি পত্রিকার নিউজ আইটেমে জানা গেল, ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসফিল্ড ও ভোলা নর্থ গ্যাসফিল্ড থেকে বরিশালের লাহারহাট পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস বরিশালে নিয়ে আসার জন্য ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প-প্রস্তাব বর্তমানে সরকারের পরিকল্পনা কমিশনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে এই গ্যাস পাইপলাইনটি কুয়াকাটা-বরিশাল-গোপালগঞ্জ-খুলনা পাইপলাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্যাস-গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হবে। আমার মতে, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির প্রকৃত বাস্তবায়ন-ব্যয় পরে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও এটাকে অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় বিবেচনা করতে হবে। কারণ, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম এক এমএমবিটিউ ১৪-১৬ ডলার। তাহলে ভোলার ১ দশমিক ৭৫ টিসিএফ গ্যাসের মোট মূল্য দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মাত্র দেড়-দুই হাজার কোটি টাকার পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে যদি আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা এই ১ দশমিক ৭৫ টিসিএফ গ্যাস জাতীয় গ্যাস-গ্রিডে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে এই পাইপলাইন অর্থনীতির জন্য কতখানি উপকার বয়ে আনতে পারবে, সেটা কি আমরা অনুধাবন করতে পারছি? ইতিমধ্যে ইন্ট্রাকোকে ঠিকাদারি দিয়ে সিলিন্ডারে ভরে ভোলার গ্যাস ঢাকায় নিয়ে আসার যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটা অর্থনৈতিকভাবে উল্লেখযোগ্য সুফল বয়ে আনবে না। অতএব এই পাইপলাইন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সঙ্গে সরকারের চুক্তি বহাল রাখা যেতে পারে, পাইপলাইন স্থাপনের বিরুদ্ধে এটাকে যেন বাধা হিসেবে খাড়া করা না হয়।
প্রস্তাবিত পাইপলাইনটি আরেকটি দিক থেকেও বাংলাদেশকে সুফল দেবে। বর্তমানে বাংলাদেশের এলএনজি আমদানির টার্মিনালগুলো মহেশখালী-কক্সবাজার অঞ্চলে স্থাপন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো বৈরিতা দেখা দিলে ভোলায় আরেকটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করে প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা এলএনজি জাতীয় গ্রিডে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। তবে আমার মতে, প্রস্তাবিত পাইপলাইনটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভবিষ্যৎ-ব্যবহার নিশ্চিত হবে যদি বাংলাদেশ গভীর সমুদ্রের ব্লকগুলোতে গ্যাস পেয়ে যায়। তখন এলএনজির আকারে গভীর সমুদ্রের গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই পাইপলাইন সবচেয়ে ব্যয়-সাশ্রয়ী উপায় হয়ে উঠবে। এমনকি এ সম্ভাবনাটি মাথায় রেখে পাইপলাইনের ব্যাস ৩০ ইঞ্চি থেকে আরও বাড়ানো যুক্তিযুক্ত বিবেচিত হতে পারে। ওপরে উল্লিখিত আলোচনা-বিশ্লেষণ থেকে আমি অনুসিদ্ধান্ত টানতে চাই, প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল গ্যাস পাইপলাইনটি একটি যুগান্তকারী প্রকল্প হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ধারণ করছে। তাই অবিলম্বে একনেকে উপস্থাপন করে প্রকল্পটি অনুমোদনের ব্যবস্থা করা সরকারের অগ্রাধিকারের দাবি রাখে। কোনো দেশ বা উন্নয়ন-সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখালে ভালো, নয়তো সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলেও কয়েক বছরের মধ্যেই প্রকল্পের ব্যয়ের কয়েক গুণ বেশি সুফল অর্জন করবে আমাদের অর্থনীতি। বর্তমান বিদ্যুৎ-সংকট, গ্যাসের চলমান ঘাটতির সমস্যা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারা এবং ডলারের সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য এটাকে দেশের জনগণের জন্য আল্লাহর রহমত হিসেবে বিবেচনা করা উচিত মনে করি।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

গত ১১ মে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকার খবরে ভোলার ইলিশায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কৃত হওয়ার খবরটি বাপেক্স নিশ্চিত করেছে। ওই সব খবরে জানা গেল, ভোলায় ইতিমধ্যে ইলিশাসহ যে ৯টি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, সেগুলোতে প্রাপ্ত গ্যাসের সম্ভাব্য পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ভোলা দ্বীপটি প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর ভাসছে। যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে এই দ্বীপে গ্যাস অনুসন্ধান চালালে নাকি এখানকার বিভিন্ন স্থানে আরও ৮ টিসিএফের বেশি গ্যাস পাওয়া যাবে আগামী কয়েক বছরে, এটাই বিশেষজ্ঞদের অভিমত। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিবছর গ্যাস ব্যবহৃত হয় প্রায় এক টিসিএফ। সেই হিসাবে শুধু ভোলার গ্যাস দিয়ে বাংলাদেশের গ্যাসের চাহিদা মেটানো যাবে প্রায় ১০ বছর। এটা যে দেশের জন্য কত বড় সুখবর, সেটা বোঝা যাবে একটি খবর থেকে: এখন দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতিবছর আমাদের এলএনজি আমদানিতে ব্যয় করতে হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। আরও গুরুতর সমস্যা হলো, সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দামে যে উল্লম্ফন ঘটেছে, এর ফলে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ এলএনজি আমদানিও করতে পারছি না। এর পরিণামে দেশের অনেকগুলো গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট গ্যাসের অভাবে বন্ধ রাখতে হচ্ছে, ফলে এই গ্রীষ্মকালের অসহনীয় গরমের সময়ও সারা দেশে দুই হাজার থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লোডশেডিং করতে হচ্ছে প্রতিদিন।
অথচ ভোলার গ্যাস দেশের গ্যাস-গ্রিডে আনা যাচ্ছে না একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মোহনার চরাঞ্চল ভোলার ১ দশমিক ৭৫ টিসিএফ গ্যাস এত দিনেও মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসার ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি বিধায়। বছরের পর বছর ধরে সরকারের জ্বালানিবিষয়ক নীতিনির্ধারকদের পরিচিত গলাবাজির বুলি ছিল পাইপলাইনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিধায় অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, এটা একটা ভুয়া যুক্তি। কোনো বিশ্বাসযোগ্য ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি’র মাধ্যমে এহেন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়নি। এর আসল কারণ কয়েকজন অত্যন্ত প্রভাবশালী এলএনজি আমদানিকারককে অন্যায্য ফায়দা দেওয়ার ব্যবস্থা করা, যাঁদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টাও রয়েছেন। এসব প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর কারণেই দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে গত এক দশকে আমদানি করা এলএনজিনির্ভর করে গড়ে তোলা হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, তাঁদের মুনাফাবাজিকে টিকিয়ে রাখার জন্যই ২০০৯ সাল থেকে দেশের স্থলভাগ এবং বিপুল সমুদ্রাঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকে অবহেলা করা হচ্ছে। ২০১২ সালে মিয়ানমার এবং ২০১৪ সালে ভারতের বিরুদ্ধে সমুদ্রসীমা-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মামলা জেতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমার ওপর নিয়ন্ত্রণাধিকার (এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন) অর্জন করা সত্ত্বেও গত ৯ বা ১১ বছরেও এই বিশাল সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান-প্রক্রিয়া শুরুই করতে পারেনি। এই ব্যর্থতার দায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এড়াতে পারেন না। তা ছাড়া বলা হয়ে থাকে, তিনি সব বিষয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এটা কি আমরা জানি যে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার অদূরে সেন্ট মার্টিন উপকূলের কাছে মিয়ানমার তাদের সমুদ্রসীমায় দেড় দশক আগেই চার টিসিএফের বেশি গ্যাস আবিষ্কার করে ওই গ্যাস চীনে রপ্তানি করছে? (ওই গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবটিকে বিএনপি-জামায়াত সরকার প্রত্যাখ্যান করেছিল)। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, সমুদ্রের তলদেশের ভূ-কাঠামো বিবেচনায় একই কাঠামো বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায়ও রয়েছে। তাই এরূপ গ্যাসক্ষেত্র বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায়ও বিস্তৃত রয়েছে বলে গ্যাস বিশেষজ্ঞরা মত ব্যক্ত করেছেন। ২০০৯ সালে ওই এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোরিয়ার দাইয়ু কোম্পানি জাহাজভর্তি সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হলে মিয়ানমার নৌবাহিনী তাদের ফিরে আসতে বাধ্য করেছিল, এলাকাটি মিয়ানমারের দাবি করে। ২০১২ সালে ইটলসের রায়ে ওই এলাকা বাংলাদেশ পেয়ে গেছে। কিন্তু গত ১১ বছরেও আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওই এলাকার সাগরে কোনো ইজারাদার কোম্পানি গ্যাস অনুসন্ধানের প্রয়াস চালায়নি কেন? মিয়ানমারের ভয়ে? (ভারতের ওএনজিসি দুটো ব্লকে বর্তমানে অনুসন্ধান চালালেও তাদের তুলনামূলক নিষ্ক্রিয়তা রহস্যজনক, হয়তো ভারতের স্বার্থহানিকর কিছু তারা করবে না)। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সমুদ্র-সীমান্তের অদূরে ভারত গোদাগাড়ী এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে বিরাট গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে গ্যাস উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ এখনো নিজেদের সমুদ্রসীমায় আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোকে আকর্ষণ করার জন্য একটি মাল্টি-ক্লায়েন্ট সিসমিক সার্ভে পর্যন্ত সম্পন্ন করতে পারেনি। (বর্তমানে একটি সিসমিক সার্ভে চলছে, যার ফলাফল এ বছরের শেষ নাগাদ পাওয়া যাবে)। সম্প্রতি, মার্কিন বহুজাতিক তেল কোম্পানি এক্সন-মবিল বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র এলাকার ১৫টি ব্লকে তেল অনুসন্ধানের আগ্রহ দেখিয়েছে বলে পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ ব্যাপারেও সরকারের রহস্যজনক নীরবতা লক্ষণীয়।
হয়তো উল্লিখিত প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই ভোলার গ্যাস এত দিনে দেশের গ্যাস-গ্রিডে নিয়ে আসার ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হয়নি! এখন যখন এলএনজি আমদানি ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে গেছে, তখন হয়তো সরকারের টনক নড়েছে। অতএব মূল সমস্যাটি হলো, ভোলায় ইতিমধ্যে প্রাপ্ত গ্যাসকে কীভাবে অর্থনৈতিকভাবে যুক্তিযুক্ত উপায়ে দেশের মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা যায়। ভবিষ্যতে যদি ভোলায় আরও গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয় তাহলে এ ব্যাপারটি দেশের অর্থনীতিতে বড়সড় ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠবে নিঃসন্দেহে। ১১ মের একটি পত্রিকার নিউজ আইটেমে জানা গেল, ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসফিল্ড ও ভোলা নর্থ গ্যাসফিল্ড থেকে বরিশালের লাহারহাট পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস বরিশালে নিয়ে আসার জন্য ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প-প্রস্তাব বর্তমানে সরকারের পরিকল্পনা কমিশনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে এই গ্যাস পাইপলাইনটি কুয়াকাটা-বরিশাল-গোপালগঞ্জ-খুলনা পাইপলাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্যাস-গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হবে। আমার মতে, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির প্রকৃত বাস্তবায়ন-ব্যয় পরে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও এটাকে অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় বিবেচনা করতে হবে। কারণ, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম এক এমএমবিটিউ ১৪-১৬ ডলার। তাহলে ভোলার ১ দশমিক ৭৫ টিসিএফ গ্যাসের মোট মূল্য দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মাত্র দেড়-দুই হাজার কোটি টাকার পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে যদি আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা এই ১ দশমিক ৭৫ টিসিএফ গ্যাস জাতীয় গ্যাস-গ্রিডে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে এই পাইপলাইন অর্থনীতির জন্য কতখানি উপকার বয়ে আনতে পারবে, সেটা কি আমরা অনুধাবন করতে পারছি? ইতিমধ্যে ইন্ট্রাকোকে ঠিকাদারি দিয়ে সিলিন্ডারে ভরে ভোলার গ্যাস ঢাকায় নিয়ে আসার যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটা অর্থনৈতিকভাবে উল্লেখযোগ্য সুফল বয়ে আনবে না। অতএব এই পাইপলাইন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সঙ্গে সরকারের চুক্তি বহাল রাখা যেতে পারে, পাইপলাইন স্থাপনের বিরুদ্ধে এটাকে যেন বাধা হিসেবে খাড়া করা না হয়।
প্রস্তাবিত পাইপলাইনটি আরেকটি দিক থেকেও বাংলাদেশকে সুফল দেবে। বর্তমানে বাংলাদেশের এলএনজি আমদানির টার্মিনালগুলো মহেশখালী-কক্সবাজার অঞ্চলে স্থাপন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো বৈরিতা দেখা দিলে ভোলায় আরেকটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করে প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা এলএনজি জাতীয় গ্রিডে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। তবে আমার মতে, প্রস্তাবিত পাইপলাইনটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভবিষ্যৎ-ব্যবহার নিশ্চিত হবে যদি বাংলাদেশ গভীর সমুদ্রের ব্লকগুলোতে গ্যাস পেয়ে যায়। তখন এলএনজির আকারে গভীর সমুদ্রের গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই পাইপলাইন সবচেয়ে ব্যয়-সাশ্রয়ী উপায় হয়ে উঠবে। এমনকি এ সম্ভাবনাটি মাথায় রেখে পাইপলাইনের ব্যাস ৩০ ইঞ্চি থেকে আরও বাড়ানো যুক্তিযুক্ত বিবেচিত হতে পারে। ওপরে উল্লিখিত আলোচনা-বিশ্লেষণ থেকে আমি অনুসিদ্ধান্ত টানতে চাই, প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল গ্যাস পাইপলাইনটি একটি যুগান্তকারী প্রকল্প হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ধারণ করছে। তাই অবিলম্বে একনেকে উপস্থাপন করে প্রকল্পটি অনুমোদনের ব্যবস্থা করা সরকারের অগ্রাধিকারের দাবি রাখে। কোনো দেশ বা উন্নয়ন-সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখালে ভালো, নয়তো সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলেও কয়েক বছরের মধ্যেই প্রকল্পের ব্যয়ের কয়েক গুণ বেশি সুফল অর্জন করবে আমাদের অর্থনীতি। বর্তমান বিদ্যুৎ-সংকট, গ্যাসের চলমান ঘাটতির সমস্যা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারা এবং ডলারের সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য এটাকে দেশের জনগণের জন্য আল্লাহর রহমত হিসেবে বিবেচনা করা উচিত মনে করি।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত ১১ মে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকার খবরে ভোলার ইলিশায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কৃত হওয়ার খবরটি বাপেক্স নিশ্চিত করেছে। ওই সব খবরে জানা গেল, ভোলায় ইতিমধ্যে ইলিশাসহ যে ৯টি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, সেগুলোতে প্রাপ্ত গ্যাসের সম্ভাব্য পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৭
১৭ জুন ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

গত ১১ মে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকার খবরে ভোলার ইলিশায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কৃত হওয়ার খবরটি বাপেক্স নিশ্চিত করেছে। ওই সব খবরে জানা গেল, ভোলায় ইতিমধ্যে ইলিশাসহ যে ৯টি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, সেগুলোতে প্রাপ্ত গ্যাসের সম্ভাব্য পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৭
১৭ জুন ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

গত ১১ মে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকার খবরে ভোলার ইলিশায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কৃত হওয়ার খবরটি বাপেক্স নিশ্চিত করেছে। ওই সব খবরে জানা গেল, ভোলায় ইতিমধ্যে ইলিশাসহ যে ৯টি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, সেগুলোতে প্রাপ্ত গ্যাসের সম্ভাব্য পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৭
১৭ জুন ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

গত ১১ মে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকার খবরে ভোলার ইলিশায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কৃত হওয়ার খবরটি বাপেক্স নিশ্চিত করেছে। ওই সব খবরে জানা গেল, ভোলায় ইতিমধ্যে ইলিশাসহ যে ৯টি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, সেগুলোতে প্রাপ্ত গ্যাসের সম্ভাব্য পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৭
১৭ জুন ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫