ড. এম আবদুল আলীম

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস এলে আমরা আবেগদীপ্ত হই। স্মরণ করি, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের নানা ঘটনা এবং এই ইতিহাসনির্মাতাদের। সময়-সময় নকলদের ভিড়ে আসল নামগুলো বিস্মৃত হতেও দেখা যায়।
অন্তঃসত্ত্বা মা ভাষা আন্দোলনের মিছিলে হেঁটেছেন, মায়ের সেই সন্তান এখন নিজেকে এক অর্থে ভাষাসংগ্রামী দাবি করে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে! এমন বক্তৃতাও নিজ কানে শুনতে পাই এ দেশে! অথচ ভাষা আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করা অনেক শহীদের নাম-পরিচয় আমরা উদ্ধার করতে পারিনি, পারিনি তাঁদের স্মৃতি পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে।
ভাষার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে অনেকে পুলিশের নির্যাতন সহ্য করেছেন, কেউ কেউ হুলিয়া মাথায় নিয়ে বছরের পর বছর আত্মগোপনে থেকেছেন, অনেকে জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে যৌবনের সোনালি দিনগুলো অতিবাহিত করেছেন, কেউ ভিটেমাটি থেকে উৎখাত হয়েছেন, কেউ আবার অত্যাচার-নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন এবং জীবন পর্যন্ত বিপন্ন হয়েছে অনেকের।
আর এত যে ত্যাগের বিনিময়ে মাতৃভাষা বাংলা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তাকে কি আমরা সর্বস্তরে প্রচলনের ব্যবস্থা করতে পেরেছি? সেই আত্মত্যাগকারীদের কি প্রকৃত মর্যাদায় আমরা অধিষ্ঠিত করতে পেরেছি? কেন আমাদের এই বিস্মৃতি? কেন ভুলে যাওয়া? এটাই কি প্রাপ্য ছিল ভাষাসংগ্রামীদের? এতসব প্রশ্ন মাথায় এল একজন বিস্মৃতপ্রায় ভাষাসংগ্রামী সম্পর্কে লিখতে বসে। এই ভাষাসংগ্রামীর নাম সতীন্দ্রনাথ সেন। ছিলেন বরিশাল জেলা কংগ্রেসের সভাপতি এবং পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য।
সতীন্দ্রনাথ সেন ওরফে সতীন সেন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে গৌরবদীপ্ত নাম। জন্মেছিলেন ১৮৯৪ সালের ১৫ এপ্রিল ফরিদপুরের কোটালীপাড়ায় (বর্তমান গোপালগঞ্জ)। পিতা নবীন সেন ছিলেন পটুয়াখালীর নামকরা মোক্তার। অল্প বয়সে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হওয়ায় ১৯১১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর কলকাতার রিপন কলেজে ভর্তি হলেও লেখাপড়ায় আর অগ্রসর হতে পারেননি। বঙ্গভঙ্গ-রদের আন্দোলনে সক্রিয়তা থেকে ধীরে ধীরে নাম লেখান বিপ্লবীদের খাতায়। ১৯১১ সালে গুপ্ত সমিতির সদস্য হন এবং পটুয়াখালীতে বিপ্লবী দল গড়ে তোলেন। ১৯১৫ সালে বিপ্লবীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ডাকাতিতে যুক্ত হয়ে গ্রেপ্তার ও কারা নির্যাতন ভোগ করেন।
মুক্তির পর আবারও গ্রেপ্তার হন ১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে। কংগ্রেসের বরিশাল জেলার অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯২৬ ও ২৭ সালে পরপর দুবার গ্রেপ্তার ও কারাভোগ করেন। পরবর্তীকালে ‘লবণ আন্দোলন’ এবং ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে বরিশালের যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলকে পরাজিত করে আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর অনেকেই দেশত্যাগ করলেও তিনি স্বদেশের মাটি আঁকড়ে ধরে এখানেই রাজনীতি ও জনসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। মুসলিম লীগ সরকারের রোষানলে বারবার গ্রেপ্তার ও দুর্বিষহ কারা নির্যাতন ভোগ করে অবশেষে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ধ্বজা উড়িয়ে তথাকথিত পাকিস্তানি তমদ্দুন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। প্রথমে পূর্ববঙ্গের বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতিপ্রেমী বুদ্ধিজীবীরা এর প্রতিবাদ করলেও ধীরে ধীরে তা রাজপথের আন্দোলনে রূপ লাভ করে। ক্রমে ছাত্রসমাজ থেকে চূড়ান্ত পর্বে পূর্ববঙ্গের সর্বস্তরের মানুষ ভাষা আন্দোলনে শামিল হয়।
গণ-আজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক যুবলীগ, তমদ্দুন মজলিস, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ফেডারেশন, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ, পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ, ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ প্রভৃতি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ভাষা আন্দোলন বেগবানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ভাষা আন্দোলনে পাকিস্তান গণপরিষদ এবং পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদে বিরোধীদলীয় সদস্য হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেসের সদস্যরা।
বস্তুত ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে কংগ্রেস নেতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষাবিষয়ক সংশোধনী প্রস্তাব নাকচ হওয়ার প্রতিবাদে ভাষা আন্দোলন রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করে। কেবল আইন পরিষদে নয়, আইন পরিষদের বাইরেও কংগ্রেস নেতারা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সোচ্চার থাকেন এবং একুশে ফেব্রুয়ারি গুলিবর্ষণে হতাহতের প্রতিবাদ জানান। অনেকে পুলিশি নির্যাতন, গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হন। ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ততার অভিযোগে নির্যাতিতদের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি ছিলেন আইন পরিষদের কংগ্রেস দলীয় সদস্য সতীন্দ্রনাথ সেন।
একুশে ফেব্রুয়ারি গুলিবর্ষণে হতাহতের পর পূর্ববঙ্গের রাজপথের মতো আইন পরিষদও উত্তাল হয়ে ওঠে। মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, খয়রাত হোসেন, আনোয়ারা খাতুন প্রমুখের সঙ্গে কংগ্রেস সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, নেলী সেনগুপ্তা, প্রভাসচন্দ্র লাহিড়ী, গোবিন্দলাল ব্যানার্জি, সতীন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ আইন পরিষদের অধিবেশন ত্যাগ করে হতাহতদের দেখতে হাসপাতালে যান।
অনেক সদস্য ছাত্রদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে জ্বালাময়ী ভাষায় বক্তৃতা দিয়ে প্রতিবাদ করেন। আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সরকার ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে। একে একে গ্রেপ্তার করা হয় আইন পরিষদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের।
গ্রেপ্তার করা হয় কংগ্রেসদলীয় তিনজন আইন পরিষদ সদস্যকে—মনোরঞ্জন ধর, গোবিন্দলাল ব্যানার্জি ও সতীন্দ্রনাথ সেনকে।ননিরাপত্তা অরডিন্যান্স অনুযায়ী, সতীন্দ্রনাথ সেনকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। গ্রেপ্তারের পর প্রথমে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয় এবং পরে স্থানান্তর করা হয় রংপুর কারাগারে। কারা নির্যাতনে তাঁর স্বাস্থ্যের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে।
এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখি হলে মাইনরিটি মিনিস্টারের নির্দেশে তাঁর স্বাস্থ্য সম্পর্কে তদন্ত করা হয়। তাঁর গ্রেপ্তার ও আটক নিয়ে ১৯৫২ সালের ২৪ মার্চ পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদে তুমুল বিতর্ক হয়। এ বিষয়ে তিনি জেল ডায়েরিতে লিখেছেন, ‘১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের জন্য যখন জেলে ছিলাম, তখন পত্রিকায় আমার স্বাস্থ্য সম্বন্ধে কিছু লেখালেখি হওয়ায় এবং বোধ হয় মাইনরিটি মিনিস্টারের তরফ হইতে নির্দেশ আসায় আমার স্বাস্থ্য সম্পর্কে তদন্ত হয়। এরপর মুক্তি দিয়ে ১৯৫৪ সালের ১ জুন আবারও গ্রেপ্তার করা হয়।’
শেষবার যখন জেল থেকে মুক্তি মেলে, তখন তাঁর চিরমুক্তির ডাক আসে। ধারাবাহিক নির্যাতনে কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রভাসচন্দ্র লাহিড়ী তাঁর আত্মজীবনীতে সতীন্দ্রনাথ সেনকে ‘ভাষা আন্দোলনের আরেক শহীদ’ বলে অভিহিত করেছেন। বাস্তবেই তিনি ভাষা আন্দোলনের আরেক শহীদ।
কারণ ভাষা আন্দোলনে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর দীর্ঘ কারা নির্যাতনে তাঁর মৃত্যু হয়। পূর্ববঙ্গ সরকার প্রেসনোটের মাধ্যমে তাঁর মৃত্যুর ব্যাখ্যা দেয়। ওই সময় কলকাতার সাপ্তাহিক যুগান্তর পত্রিকায় ‘সতীন সেনের মৃত্যু’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়: ‘প্রবীণ জননায়ক সতীন সেনের মৃত্যুতে পূর্ববঙ্গ সরকারের প্রেসনোটে বলা হয়েছে, “তিনি রক্তাল্পতা, ওজন হ্রাস ও শ্বাসযন্ত্রে রক্ত জমাটজনিত ব্যাধিতে ভুগছিলেন।”
তাঁর অবস্থা কখনোই গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেনি।’ প্রেসনোটে আরও বলা হয়েছে, ‘তাঁকে মুক্তিদানের পর এত শিগগির হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধের দরুন তাঁর যে আকস্মিক মৃত্যু ঘটল, এই খবর দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। ৬১ বৎসর বয়স্ক সতীন সেনের প্রায় ৩১ বৎসরই কারাগারে কেটেছে। স্বাধীনতার পূর্বে সাড়ে সাতাশ বৎসর কেটেছে ইংরেজের জেলে, বাকি সাড়ে তিন বছর আজাদ পাকিস্তানের জেলে।
কিন্তু আশ্চর্য এই যে, আজাদ পাকিস্তান সরকারের তল্পিবাহকরা ৬১ বৎসর বয়স্ক বৃদ্ধ বন্দীর কঠিন ব্যাধিতে কদাপি উদ্বেগ বোধ করেননি।...ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে সতীন বাবুর শেষ দিনগুলো কাটে। এবং মৃত্যুর দেড় ঘণ্টা পূর্বে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।’
সতীন্দ্রনাথ সেনের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বাংলা ভাষা কেবল রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদাই লাভ করেনি, তাঁদের ত্যাগের পথ ধরে গড়ে ওঠা ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ক্রমে স্বাধিকার-আন্দোলনে রূপলাভ করে এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি অর্জন করেছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। সতীন্দ্রনাথ সেন অমর, ইতিহাসে ভাস্বর হয়ে থাকবে তাঁর আত্মত্যাগের মহিমা।
লেখক: ড. এম আবদুল আলীম,সাবেক ডিন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস এলে আমরা আবেগদীপ্ত হই। স্মরণ করি, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের নানা ঘটনা এবং এই ইতিহাসনির্মাতাদের। সময়-সময় নকলদের ভিড়ে আসল নামগুলো বিস্মৃত হতেও দেখা যায়।
অন্তঃসত্ত্বা মা ভাষা আন্দোলনের মিছিলে হেঁটেছেন, মায়ের সেই সন্তান এখন নিজেকে এক অর্থে ভাষাসংগ্রামী দাবি করে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে! এমন বক্তৃতাও নিজ কানে শুনতে পাই এ দেশে! অথচ ভাষা আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করা অনেক শহীদের নাম-পরিচয় আমরা উদ্ধার করতে পারিনি, পারিনি তাঁদের স্মৃতি পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে।
ভাষার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে অনেকে পুলিশের নির্যাতন সহ্য করেছেন, কেউ কেউ হুলিয়া মাথায় নিয়ে বছরের পর বছর আত্মগোপনে থেকেছেন, অনেকে জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে যৌবনের সোনালি দিনগুলো অতিবাহিত করেছেন, কেউ ভিটেমাটি থেকে উৎখাত হয়েছেন, কেউ আবার অত্যাচার-নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন এবং জীবন পর্যন্ত বিপন্ন হয়েছে অনেকের।
আর এত যে ত্যাগের বিনিময়ে মাতৃভাষা বাংলা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তাকে কি আমরা সর্বস্তরে প্রচলনের ব্যবস্থা করতে পেরেছি? সেই আত্মত্যাগকারীদের কি প্রকৃত মর্যাদায় আমরা অধিষ্ঠিত করতে পেরেছি? কেন আমাদের এই বিস্মৃতি? কেন ভুলে যাওয়া? এটাই কি প্রাপ্য ছিল ভাষাসংগ্রামীদের? এতসব প্রশ্ন মাথায় এল একজন বিস্মৃতপ্রায় ভাষাসংগ্রামী সম্পর্কে লিখতে বসে। এই ভাষাসংগ্রামীর নাম সতীন্দ্রনাথ সেন। ছিলেন বরিশাল জেলা কংগ্রেসের সভাপতি এবং পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য।
সতীন্দ্রনাথ সেন ওরফে সতীন সেন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে গৌরবদীপ্ত নাম। জন্মেছিলেন ১৮৯৪ সালের ১৫ এপ্রিল ফরিদপুরের কোটালীপাড়ায় (বর্তমান গোপালগঞ্জ)। পিতা নবীন সেন ছিলেন পটুয়াখালীর নামকরা মোক্তার। অল্প বয়সে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হওয়ায় ১৯১১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর কলকাতার রিপন কলেজে ভর্তি হলেও লেখাপড়ায় আর অগ্রসর হতে পারেননি। বঙ্গভঙ্গ-রদের আন্দোলনে সক্রিয়তা থেকে ধীরে ধীরে নাম লেখান বিপ্লবীদের খাতায়। ১৯১১ সালে গুপ্ত সমিতির সদস্য হন এবং পটুয়াখালীতে বিপ্লবী দল গড়ে তোলেন। ১৯১৫ সালে বিপ্লবীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ডাকাতিতে যুক্ত হয়ে গ্রেপ্তার ও কারা নির্যাতন ভোগ করেন।
মুক্তির পর আবারও গ্রেপ্তার হন ১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে। কংগ্রেসের বরিশাল জেলার অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯২৬ ও ২৭ সালে পরপর দুবার গ্রেপ্তার ও কারাভোগ করেন। পরবর্তীকালে ‘লবণ আন্দোলন’ এবং ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে বরিশালের যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলকে পরাজিত করে আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর অনেকেই দেশত্যাগ করলেও তিনি স্বদেশের মাটি আঁকড়ে ধরে এখানেই রাজনীতি ও জনসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। মুসলিম লীগ সরকারের রোষানলে বারবার গ্রেপ্তার ও দুর্বিষহ কারা নির্যাতন ভোগ করে অবশেষে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ধ্বজা উড়িয়ে তথাকথিত পাকিস্তানি তমদ্দুন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। প্রথমে পূর্ববঙ্গের বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতিপ্রেমী বুদ্ধিজীবীরা এর প্রতিবাদ করলেও ধীরে ধীরে তা রাজপথের আন্দোলনে রূপ লাভ করে। ক্রমে ছাত্রসমাজ থেকে চূড়ান্ত পর্বে পূর্ববঙ্গের সর্বস্তরের মানুষ ভাষা আন্দোলনে শামিল হয়।
গণ-আজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক যুবলীগ, তমদ্দুন মজলিস, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ফেডারেশন, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ, পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ, ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ প্রভৃতি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ভাষা আন্দোলন বেগবানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ভাষা আন্দোলনে পাকিস্তান গণপরিষদ এবং পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদে বিরোধীদলীয় সদস্য হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেসের সদস্যরা।
বস্তুত ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে কংগ্রেস নেতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষাবিষয়ক সংশোধনী প্রস্তাব নাকচ হওয়ার প্রতিবাদে ভাষা আন্দোলন রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করে। কেবল আইন পরিষদে নয়, আইন পরিষদের বাইরেও কংগ্রেস নেতারা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সোচ্চার থাকেন এবং একুশে ফেব্রুয়ারি গুলিবর্ষণে হতাহতের প্রতিবাদ জানান। অনেকে পুলিশি নির্যাতন, গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হন। ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ততার অভিযোগে নির্যাতিতদের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি ছিলেন আইন পরিষদের কংগ্রেস দলীয় সদস্য সতীন্দ্রনাথ সেন।
একুশে ফেব্রুয়ারি গুলিবর্ষণে হতাহতের পর পূর্ববঙ্গের রাজপথের মতো আইন পরিষদও উত্তাল হয়ে ওঠে। মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, খয়রাত হোসেন, আনোয়ারা খাতুন প্রমুখের সঙ্গে কংগ্রেস সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, নেলী সেনগুপ্তা, প্রভাসচন্দ্র লাহিড়ী, গোবিন্দলাল ব্যানার্জি, সতীন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ আইন পরিষদের অধিবেশন ত্যাগ করে হতাহতদের দেখতে হাসপাতালে যান।
অনেক সদস্য ছাত্রদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে জ্বালাময়ী ভাষায় বক্তৃতা দিয়ে প্রতিবাদ করেন। আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সরকার ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে। একে একে গ্রেপ্তার করা হয় আইন পরিষদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের।
গ্রেপ্তার করা হয় কংগ্রেসদলীয় তিনজন আইন পরিষদ সদস্যকে—মনোরঞ্জন ধর, গোবিন্দলাল ব্যানার্জি ও সতীন্দ্রনাথ সেনকে।ননিরাপত্তা অরডিন্যান্স অনুযায়ী, সতীন্দ্রনাথ সেনকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। গ্রেপ্তারের পর প্রথমে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয় এবং পরে স্থানান্তর করা হয় রংপুর কারাগারে। কারা নির্যাতনে তাঁর স্বাস্থ্যের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে।
এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখি হলে মাইনরিটি মিনিস্টারের নির্দেশে তাঁর স্বাস্থ্য সম্পর্কে তদন্ত করা হয়। তাঁর গ্রেপ্তার ও আটক নিয়ে ১৯৫২ সালের ২৪ মার্চ পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদে তুমুল বিতর্ক হয়। এ বিষয়ে তিনি জেল ডায়েরিতে লিখেছেন, ‘১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের জন্য যখন জেলে ছিলাম, তখন পত্রিকায় আমার স্বাস্থ্য সম্বন্ধে কিছু লেখালেখি হওয়ায় এবং বোধ হয় মাইনরিটি মিনিস্টারের তরফ হইতে নির্দেশ আসায় আমার স্বাস্থ্য সম্পর্কে তদন্ত হয়। এরপর মুক্তি দিয়ে ১৯৫৪ সালের ১ জুন আবারও গ্রেপ্তার করা হয়।’
শেষবার যখন জেল থেকে মুক্তি মেলে, তখন তাঁর চিরমুক্তির ডাক আসে। ধারাবাহিক নির্যাতনে কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রভাসচন্দ্র লাহিড়ী তাঁর আত্মজীবনীতে সতীন্দ্রনাথ সেনকে ‘ভাষা আন্দোলনের আরেক শহীদ’ বলে অভিহিত করেছেন। বাস্তবেই তিনি ভাষা আন্দোলনের আরেক শহীদ।
কারণ ভাষা আন্দোলনে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর দীর্ঘ কারা নির্যাতনে তাঁর মৃত্যু হয়। পূর্ববঙ্গ সরকার প্রেসনোটের মাধ্যমে তাঁর মৃত্যুর ব্যাখ্যা দেয়। ওই সময় কলকাতার সাপ্তাহিক যুগান্তর পত্রিকায় ‘সতীন সেনের মৃত্যু’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়: ‘প্রবীণ জননায়ক সতীন সেনের মৃত্যুতে পূর্ববঙ্গ সরকারের প্রেসনোটে বলা হয়েছে, “তিনি রক্তাল্পতা, ওজন হ্রাস ও শ্বাসযন্ত্রে রক্ত জমাটজনিত ব্যাধিতে ভুগছিলেন।”
তাঁর অবস্থা কখনোই গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেনি।’ প্রেসনোটে আরও বলা হয়েছে, ‘তাঁকে মুক্তিদানের পর এত শিগগির হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধের দরুন তাঁর যে আকস্মিক মৃত্যু ঘটল, এই খবর দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। ৬১ বৎসর বয়স্ক সতীন সেনের প্রায় ৩১ বৎসরই কারাগারে কেটেছে। স্বাধীনতার পূর্বে সাড়ে সাতাশ বৎসর কেটেছে ইংরেজের জেলে, বাকি সাড়ে তিন বছর আজাদ পাকিস্তানের জেলে।
কিন্তু আশ্চর্য এই যে, আজাদ পাকিস্তান সরকারের তল্পিবাহকরা ৬১ বৎসর বয়স্ক বৃদ্ধ বন্দীর কঠিন ব্যাধিতে কদাপি উদ্বেগ বোধ করেননি।...ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে সতীন বাবুর শেষ দিনগুলো কাটে। এবং মৃত্যুর দেড় ঘণ্টা পূর্বে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।’
সতীন্দ্রনাথ সেনের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বাংলা ভাষা কেবল রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদাই লাভ করেনি, তাঁদের ত্যাগের পথ ধরে গড়ে ওঠা ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ক্রমে স্বাধিকার-আন্দোলনে রূপলাভ করে এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি অর্জন করেছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। সতীন্দ্রনাথ সেন অমর, ইতিহাসে ভাস্বর হয়ে থাকবে তাঁর আত্মত্যাগের মহিমা।
লেখক: ড. এম আবদুল আলীম,সাবেক ডিন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ড. এম আবদুল আলীম

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস এলে আমরা আবেগদীপ্ত হই। স্মরণ করি, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের নানা ঘটনা এবং এই ইতিহাসনির্মাতাদের। সময়-সময় নকলদের ভিড়ে আসল নামগুলো বিস্মৃত হতেও দেখা যায়।
অন্তঃসত্ত্বা মা ভাষা আন্দোলনের মিছিলে হেঁটেছেন, মায়ের সেই সন্তান এখন নিজেকে এক অর্থে ভাষাসংগ্রামী দাবি করে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে! এমন বক্তৃতাও নিজ কানে শুনতে পাই এ দেশে! অথচ ভাষা আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করা অনেক শহীদের নাম-পরিচয় আমরা উদ্ধার করতে পারিনি, পারিনি তাঁদের স্মৃতি পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে।
ভাষার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে অনেকে পুলিশের নির্যাতন সহ্য করেছেন, কেউ কেউ হুলিয়া মাথায় নিয়ে বছরের পর বছর আত্মগোপনে থেকেছেন, অনেকে জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে যৌবনের সোনালি দিনগুলো অতিবাহিত করেছেন, কেউ ভিটেমাটি থেকে উৎখাত হয়েছেন, কেউ আবার অত্যাচার-নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন এবং জীবন পর্যন্ত বিপন্ন হয়েছে অনেকের।
আর এত যে ত্যাগের বিনিময়ে মাতৃভাষা বাংলা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তাকে কি আমরা সর্বস্তরে প্রচলনের ব্যবস্থা করতে পেরেছি? সেই আত্মত্যাগকারীদের কি প্রকৃত মর্যাদায় আমরা অধিষ্ঠিত করতে পেরেছি? কেন আমাদের এই বিস্মৃতি? কেন ভুলে যাওয়া? এটাই কি প্রাপ্য ছিল ভাষাসংগ্রামীদের? এতসব প্রশ্ন মাথায় এল একজন বিস্মৃতপ্রায় ভাষাসংগ্রামী সম্পর্কে লিখতে বসে। এই ভাষাসংগ্রামীর নাম সতীন্দ্রনাথ সেন। ছিলেন বরিশাল জেলা কংগ্রেসের সভাপতি এবং পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য।
সতীন্দ্রনাথ সেন ওরফে সতীন সেন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে গৌরবদীপ্ত নাম। জন্মেছিলেন ১৮৯৪ সালের ১৫ এপ্রিল ফরিদপুরের কোটালীপাড়ায় (বর্তমান গোপালগঞ্জ)। পিতা নবীন সেন ছিলেন পটুয়াখালীর নামকরা মোক্তার। অল্প বয়সে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হওয়ায় ১৯১১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর কলকাতার রিপন কলেজে ভর্তি হলেও লেখাপড়ায় আর অগ্রসর হতে পারেননি। বঙ্গভঙ্গ-রদের আন্দোলনে সক্রিয়তা থেকে ধীরে ধীরে নাম লেখান বিপ্লবীদের খাতায়। ১৯১১ সালে গুপ্ত সমিতির সদস্য হন এবং পটুয়াখালীতে বিপ্লবী দল গড়ে তোলেন। ১৯১৫ সালে বিপ্লবীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ডাকাতিতে যুক্ত হয়ে গ্রেপ্তার ও কারা নির্যাতন ভোগ করেন।
মুক্তির পর আবারও গ্রেপ্তার হন ১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে। কংগ্রেসের বরিশাল জেলার অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯২৬ ও ২৭ সালে পরপর দুবার গ্রেপ্তার ও কারাভোগ করেন। পরবর্তীকালে ‘লবণ আন্দোলন’ এবং ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে বরিশালের যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলকে পরাজিত করে আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর অনেকেই দেশত্যাগ করলেও তিনি স্বদেশের মাটি আঁকড়ে ধরে এখানেই রাজনীতি ও জনসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। মুসলিম লীগ সরকারের রোষানলে বারবার গ্রেপ্তার ও দুর্বিষহ কারা নির্যাতন ভোগ করে অবশেষে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ধ্বজা উড়িয়ে তথাকথিত পাকিস্তানি তমদ্দুন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। প্রথমে পূর্ববঙ্গের বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতিপ্রেমী বুদ্ধিজীবীরা এর প্রতিবাদ করলেও ধীরে ধীরে তা রাজপথের আন্দোলনে রূপ লাভ করে। ক্রমে ছাত্রসমাজ থেকে চূড়ান্ত পর্বে পূর্ববঙ্গের সর্বস্তরের মানুষ ভাষা আন্দোলনে শামিল হয়।
গণ-আজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক যুবলীগ, তমদ্দুন মজলিস, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ফেডারেশন, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ, পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ, ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ প্রভৃতি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ভাষা আন্দোলন বেগবানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ভাষা আন্দোলনে পাকিস্তান গণপরিষদ এবং পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদে বিরোধীদলীয় সদস্য হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেসের সদস্যরা।
বস্তুত ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে কংগ্রেস নেতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষাবিষয়ক সংশোধনী প্রস্তাব নাকচ হওয়ার প্রতিবাদে ভাষা আন্দোলন রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করে। কেবল আইন পরিষদে নয়, আইন পরিষদের বাইরেও কংগ্রেস নেতারা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সোচ্চার থাকেন এবং একুশে ফেব্রুয়ারি গুলিবর্ষণে হতাহতের প্রতিবাদ জানান। অনেকে পুলিশি নির্যাতন, গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হন। ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ততার অভিযোগে নির্যাতিতদের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি ছিলেন আইন পরিষদের কংগ্রেস দলীয় সদস্য সতীন্দ্রনাথ সেন।
একুশে ফেব্রুয়ারি গুলিবর্ষণে হতাহতের পর পূর্ববঙ্গের রাজপথের মতো আইন পরিষদও উত্তাল হয়ে ওঠে। মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, খয়রাত হোসেন, আনোয়ারা খাতুন প্রমুখের সঙ্গে কংগ্রেস সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, নেলী সেনগুপ্তা, প্রভাসচন্দ্র লাহিড়ী, গোবিন্দলাল ব্যানার্জি, সতীন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ আইন পরিষদের অধিবেশন ত্যাগ করে হতাহতদের দেখতে হাসপাতালে যান।
অনেক সদস্য ছাত্রদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে জ্বালাময়ী ভাষায় বক্তৃতা দিয়ে প্রতিবাদ করেন। আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সরকার ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে। একে একে গ্রেপ্তার করা হয় আইন পরিষদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের।
গ্রেপ্তার করা হয় কংগ্রেসদলীয় তিনজন আইন পরিষদ সদস্যকে—মনোরঞ্জন ধর, গোবিন্দলাল ব্যানার্জি ও সতীন্দ্রনাথ সেনকে।ননিরাপত্তা অরডিন্যান্স অনুযায়ী, সতীন্দ্রনাথ সেনকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। গ্রেপ্তারের পর প্রথমে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয় এবং পরে স্থানান্তর করা হয় রংপুর কারাগারে। কারা নির্যাতনে তাঁর স্বাস্থ্যের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে।
এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখি হলে মাইনরিটি মিনিস্টারের নির্দেশে তাঁর স্বাস্থ্য সম্পর্কে তদন্ত করা হয়। তাঁর গ্রেপ্তার ও আটক নিয়ে ১৯৫২ সালের ২৪ মার্চ পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদে তুমুল বিতর্ক হয়। এ বিষয়ে তিনি জেল ডায়েরিতে লিখেছেন, ‘১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের জন্য যখন জেলে ছিলাম, তখন পত্রিকায় আমার স্বাস্থ্য সম্বন্ধে কিছু লেখালেখি হওয়ায় এবং বোধ হয় মাইনরিটি মিনিস্টারের তরফ হইতে নির্দেশ আসায় আমার স্বাস্থ্য সম্পর্কে তদন্ত হয়। এরপর মুক্তি দিয়ে ১৯৫৪ সালের ১ জুন আবারও গ্রেপ্তার করা হয়।’
শেষবার যখন জেল থেকে মুক্তি মেলে, তখন তাঁর চিরমুক্তির ডাক আসে। ধারাবাহিক নির্যাতনে কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রভাসচন্দ্র লাহিড়ী তাঁর আত্মজীবনীতে সতীন্দ্রনাথ সেনকে ‘ভাষা আন্দোলনের আরেক শহীদ’ বলে অভিহিত করেছেন। বাস্তবেই তিনি ভাষা আন্দোলনের আরেক শহীদ।
কারণ ভাষা আন্দোলনে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর দীর্ঘ কারা নির্যাতনে তাঁর মৃত্যু হয়। পূর্ববঙ্গ সরকার প্রেসনোটের মাধ্যমে তাঁর মৃত্যুর ব্যাখ্যা দেয়। ওই সময় কলকাতার সাপ্তাহিক যুগান্তর পত্রিকায় ‘সতীন সেনের মৃত্যু’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়: ‘প্রবীণ জননায়ক সতীন সেনের মৃত্যুতে পূর্ববঙ্গ সরকারের প্রেসনোটে বলা হয়েছে, “তিনি রক্তাল্পতা, ওজন হ্রাস ও শ্বাসযন্ত্রে রক্ত জমাটজনিত ব্যাধিতে ভুগছিলেন।”
তাঁর অবস্থা কখনোই গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেনি।’ প্রেসনোটে আরও বলা হয়েছে, ‘তাঁকে মুক্তিদানের পর এত শিগগির হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধের দরুন তাঁর যে আকস্মিক মৃত্যু ঘটল, এই খবর দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। ৬১ বৎসর বয়স্ক সতীন সেনের প্রায় ৩১ বৎসরই কারাগারে কেটেছে। স্বাধীনতার পূর্বে সাড়ে সাতাশ বৎসর কেটেছে ইংরেজের জেলে, বাকি সাড়ে তিন বছর আজাদ পাকিস্তানের জেলে।
কিন্তু আশ্চর্য এই যে, আজাদ পাকিস্তান সরকারের তল্পিবাহকরা ৬১ বৎসর বয়স্ক বৃদ্ধ বন্দীর কঠিন ব্যাধিতে কদাপি উদ্বেগ বোধ করেননি।...ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে সতীন বাবুর শেষ দিনগুলো কাটে। এবং মৃত্যুর দেড় ঘণ্টা পূর্বে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।’
সতীন্দ্রনাথ সেনের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বাংলা ভাষা কেবল রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদাই লাভ করেনি, তাঁদের ত্যাগের পথ ধরে গড়ে ওঠা ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ক্রমে স্বাধিকার-আন্দোলনে রূপলাভ করে এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি অর্জন করেছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। সতীন্দ্রনাথ সেন অমর, ইতিহাসে ভাস্বর হয়ে থাকবে তাঁর আত্মত্যাগের মহিমা।
লেখক: ড. এম আবদুল আলীম,সাবেক ডিন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস এলে আমরা আবেগদীপ্ত হই। স্মরণ করি, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের নানা ঘটনা এবং এই ইতিহাসনির্মাতাদের। সময়-সময় নকলদের ভিড়ে আসল নামগুলো বিস্মৃত হতেও দেখা যায়।
অন্তঃসত্ত্বা মা ভাষা আন্দোলনের মিছিলে হেঁটেছেন, মায়ের সেই সন্তান এখন নিজেকে এক অর্থে ভাষাসংগ্রামী দাবি করে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে! এমন বক্তৃতাও নিজ কানে শুনতে পাই এ দেশে! অথচ ভাষা আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করা অনেক শহীদের নাম-পরিচয় আমরা উদ্ধার করতে পারিনি, পারিনি তাঁদের স্মৃতি পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে।
ভাষার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে অনেকে পুলিশের নির্যাতন সহ্য করেছেন, কেউ কেউ হুলিয়া মাথায় নিয়ে বছরের পর বছর আত্মগোপনে থেকেছেন, অনেকে জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে যৌবনের সোনালি দিনগুলো অতিবাহিত করেছেন, কেউ ভিটেমাটি থেকে উৎখাত হয়েছেন, কেউ আবার অত্যাচার-নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন এবং জীবন পর্যন্ত বিপন্ন হয়েছে অনেকের।
আর এত যে ত্যাগের বিনিময়ে মাতৃভাষা বাংলা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তাকে কি আমরা সর্বস্তরে প্রচলনের ব্যবস্থা করতে পেরেছি? সেই আত্মত্যাগকারীদের কি প্রকৃত মর্যাদায় আমরা অধিষ্ঠিত করতে পেরেছি? কেন আমাদের এই বিস্মৃতি? কেন ভুলে যাওয়া? এটাই কি প্রাপ্য ছিল ভাষাসংগ্রামীদের? এতসব প্রশ্ন মাথায় এল একজন বিস্মৃতপ্রায় ভাষাসংগ্রামী সম্পর্কে লিখতে বসে। এই ভাষাসংগ্রামীর নাম সতীন্দ্রনাথ সেন। ছিলেন বরিশাল জেলা কংগ্রেসের সভাপতি এবং পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য।
সতীন্দ্রনাথ সেন ওরফে সতীন সেন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে গৌরবদীপ্ত নাম। জন্মেছিলেন ১৮৯৪ সালের ১৫ এপ্রিল ফরিদপুরের কোটালীপাড়ায় (বর্তমান গোপালগঞ্জ)। পিতা নবীন সেন ছিলেন পটুয়াখালীর নামকরা মোক্তার। অল্প বয়সে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হওয়ায় ১৯১১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর কলকাতার রিপন কলেজে ভর্তি হলেও লেখাপড়ায় আর অগ্রসর হতে পারেননি। বঙ্গভঙ্গ-রদের আন্দোলনে সক্রিয়তা থেকে ধীরে ধীরে নাম লেখান বিপ্লবীদের খাতায়। ১৯১১ সালে গুপ্ত সমিতির সদস্য হন এবং পটুয়াখালীতে বিপ্লবী দল গড়ে তোলেন। ১৯১৫ সালে বিপ্লবীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ডাকাতিতে যুক্ত হয়ে গ্রেপ্তার ও কারা নির্যাতন ভোগ করেন।
মুক্তির পর আবারও গ্রেপ্তার হন ১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে। কংগ্রেসের বরিশাল জেলার অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯২৬ ও ২৭ সালে পরপর দুবার গ্রেপ্তার ও কারাভোগ করেন। পরবর্তীকালে ‘লবণ আন্দোলন’ এবং ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে বরিশালের যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলকে পরাজিত করে আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর অনেকেই দেশত্যাগ করলেও তিনি স্বদেশের মাটি আঁকড়ে ধরে এখানেই রাজনীতি ও জনসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। মুসলিম লীগ সরকারের রোষানলে বারবার গ্রেপ্তার ও দুর্বিষহ কারা নির্যাতন ভোগ করে অবশেষে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ধ্বজা উড়িয়ে তথাকথিত পাকিস্তানি তমদ্দুন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। প্রথমে পূর্ববঙ্গের বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতিপ্রেমী বুদ্ধিজীবীরা এর প্রতিবাদ করলেও ধীরে ধীরে তা রাজপথের আন্দোলনে রূপ লাভ করে। ক্রমে ছাত্রসমাজ থেকে চূড়ান্ত পর্বে পূর্ববঙ্গের সর্বস্তরের মানুষ ভাষা আন্দোলনে শামিল হয়।
গণ-আজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক যুবলীগ, তমদ্দুন মজলিস, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ফেডারেশন, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ, পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ, ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ প্রভৃতি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ভাষা আন্দোলন বেগবানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ভাষা আন্দোলনে পাকিস্তান গণপরিষদ এবং পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদে বিরোধীদলীয় সদস্য হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেসের সদস্যরা।
বস্তুত ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে কংগ্রেস নেতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষাবিষয়ক সংশোধনী প্রস্তাব নাকচ হওয়ার প্রতিবাদে ভাষা আন্দোলন রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করে। কেবল আইন পরিষদে নয়, আইন পরিষদের বাইরেও কংগ্রেস নেতারা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সোচ্চার থাকেন এবং একুশে ফেব্রুয়ারি গুলিবর্ষণে হতাহতের প্রতিবাদ জানান। অনেকে পুলিশি নির্যাতন, গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হন। ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ততার অভিযোগে নির্যাতিতদের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি ছিলেন আইন পরিষদের কংগ্রেস দলীয় সদস্য সতীন্দ্রনাথ সেন।
একুশে ফেব্রুয়ারি গুলিবর্ষণে হতাহতের পর পূর্ববঙ্গের রাজপথের মতো আইন পরিষদও উত্তাল হয়ে ওঠে। মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, খয়রাত হোসেন, আনোয়ারা খাতুন প্রমুখের সঙ্গে কংগ্রেস সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, নেলী সেনগুপ্তা, প্রভাসচন্দ্র লাহিড়ী, গোবিন্দলাল ব্যানার্জি, সতীন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ আইন পরিষদের অধিবেশন ত্যাগ করে হতাহতদের দেখতে হাসপাতালে যান।
অনেক সদস্য ছাত্রদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে জ্বালাময়ী ভাষায় বক্তৃতা দিয়ে প্রতিবাদ করেন। আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সরকার ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে। একে একে গ্রেপ্তার করা হয় আইন পরিষদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের।
গ্রেপ্তার করা হয় কংগ্রেসদলীয় তিনজন আইন পরিষদ সদস্যকে—মনোরঞ্জন ধর, গোবিন্দলাল ব্যানার্জি ও সতীন্দ্রনাথ সেনকে।ননিরাপত্তা অরডিন্যান্স অনুযায়ী, সতীন্দ্রনাথ সেনকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। গ্রেপ্তারের পর প্রথমে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয় এবং পরে স্থানান্তর করা হয় রংপুর কারাগারে। কারা নির্যাতনে তাঁর স্বাস্থ্যের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে।
এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখি হলে মাইনরিটি মিনিস্টারের নির্দেশে তাঁর স্বাস্থ্য সম্পর্কে তদন্ত করা হয়। তাঁর গ্রেপ্তার ও আটক নিয়ে ১৯৫২ সালের ২৪ মার্চ পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদে তুমুল বিতর্ক হয়। এ বিষয়ে তিনি জেল ডায়েরিতে লিখেছেন, ‘১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের জন্য যখন জেলে ছিলাম, তখন পত্রিকায় আমার স্বাস্থ্য সম্বন্ধে কিছু লেখালেখি হওয়ায় এবং বোধ হয় মাইনরিটি মিনিস্টারের তরফ হইতে নির্দেশ আসায় আমার স্বাস্থ্য সম্পর্কে তদন্ত হয়। এরপর মুক্তি দিয়ে ১৯৫৪ সালের ১ জুন আবারও গ্রেপ্তার করা হয়।’
শেষবার যখন জেল থেকে মুক্তি মেলে, তখন তাঁর চিরমুক্তির ডাক আসে। ধারাবাহিক নির্যাতনে কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রভাসচন্দ্র লাহিড়ী তাঁর আত্মজীবনীতে সতীন্দ্রনাথ সেনকে ‘ভাষা আন্দোলনের আরেক শহীদ’ বলে অভিহিত করেছেন। বাস্তবেই তিনি ভাষা আন্দোলনের আরেক শহীদ।
কারণ ভাষা আন্দোলনে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর দীর্ঘ কারা নির্যাতনে তাঁর মৃত্যু হয়। পূর্ববঙ্গ সরকার প্রেসনোটের মাধ্যমে তাঁর মৃত্যুর ব্যাখ্যা দেয়। ওই সময় কলকাতার সাপ্তাহিক যুগান্তর পত্রিকায় ‘সতীন সেনের মৃত্যু’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়: ‘প্রবীণ জননায়ক সতীন সেনের মৃত্যুতে পূর্ববঙ্গ সরকারের প্রেসনোটে বলা হয়েছে, “তিনি রক্তাল্পতা, ওজন হ্রাস ও শ্বাসযন্ত্রে রক্ত জমাটজনিত ব্যাধিতে ভুগছিলেন।”
তাঁর অবস্থা কখনোই গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেনি।’ প্রেসনোটে আরও বলা হয়েছে, ‘তাঁকে মুক্তিদানের পর এত শিগগির হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধের দরুন তাঁর যে আকস্মিক মৃত্যু ঘটল, এই খবর দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। ৬১ বৎসর বয়স্ক সতীন সেনের প্রায় ৩১ বৎসরই কারাগারে কেটেছে। স্বাধীনতার পূর্বে সাড়ে সাতাশ বৎসর কেটেছে ইংরেজের জেলে, বাকি সাড়ে তিন বছর আজাদ পাকিস্তানের জেলে।
কিন্তু আশ্চর্য এই যে, আজাদ পাকিস্তান সরকারের তল্পিবাহকরা ৬১ বৎসর বয়স্ক বৃদ্ধ বন্দীর কঠিন ব্যাধিতে কদাপি উদ্বেগ বোধ করেননি।...ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে সতীন বাবুর শেষ দিনগুলো কাটে। এবং মৃত্যুর দেড় ঘণ্টা পূর্বে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।’
সতীন্দ্রনাথ সেনের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বাংলা ভাষা কেবল রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদাই লাভ করেনি, তাঁদের ত্যাগের পথ ধরে গড়ে ওঠা ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ক্রমে স্বাধিকার-আন্দোলনে রূপলাভ করে এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি অর্জন করেছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। সতীন্দ্রনাথ সেন অমর, ইতিহাসে ভাস্বর হয়ে থাকবে তাঁর আত্মত্যাগের মহিমা।
লেখক: ড. এম আবদুল আলীম,সাবেক ডিন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৩ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস এলে আমরা আবেগদীপ্ত হই। স্মরণ করি, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের নানা ঘটনা এবং এই ইতিহাসনির্মাতাদের। সময়-সময় নকলদের ভিড়ে আসল নামগুলো বিস্মৃত হতেও দেখা যায়।
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস এলে আমরা আবেগদীপ্ত হই। স্মরণ করি, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের নানা ঘটনা এবং এই ইতিহাসনির্মাতাদের। সময়-সময় নকলদের ভিড়ে আসল নামগুলো বিস্মৃত হতেও দেখা যায়।
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৩ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস এলে আমরা আবেগদীপ্ত হই। স্মরণ করি, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের নানা ঘটনা এবং এই ইতিহাসনির্মাতাদের। সময়-সময় নকলদের ভিড়ে আসল নামগুলো বিস্মৃত হতেও দেখা যায়।
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৩ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস এলে আমরা আবেগদীপ্ত হই। স্মরণ করি, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের নানা ঘটনা এবং এই ইতিহাসনির্মাতাদের। সময়-সময় নকলদের ভিড়ে আসল নামগুলো বিস্মৃত হতেও দেখা যায়।
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৩ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫