Ajker Patrika

পেঁয়াজের বাজারে ‘আগুন ’

জিয়াউল হক, যশোর
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ৩০
পেঁয়াজের বাজারে ‘আগুন ’

যশোরে ১৫-২০ দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। এতে খুচরা বাজারেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। হঠাৎ করে সরবরাহ কমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। এদিকে ভোক্তারা বলছেন, বাজার মনিটরিং কার্যক্রম না থাকায় নিজেদের ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা।

গতকাল বুধবার যশোরের বড় বাজারের পাইকারি দোকানে গিয়ে ৫০ কেজির এক বস্তা পেঁয়াজের দাম করা হলে এক বিক্রেতা সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা দাম রাখতে রাজি হন। এ হিসাব অনুযায়ী কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম পড়ে ৪০ টাকা। একটু পরে সংবাদ সংগ্রহের জন্য গণমাধ্যমকর্মী পরিচয়ে দরদাম করলে, দাম কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৫০ টাকায়। অর্থাৎ কেজিতে ৩ টাকা কম। একইভাবে খোলাবাজারে ১ কেজি পেঁয়াজের দাম হাঁকা হয় ৫৫ টাকা। গণমাধ্যমকর্মীর পরিচয় দিলে দাম ৫ টাকা কমে যায়। দামের এমন হেরফেরের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বিক্রেতারা।

পেঁয়াজের ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দাম নিয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের পরস্পরবিরোধী অভিযোগ রয়েছে। আড়তদার সোহরাব হোসেন বলেন, ‘শনিবার সকালে আমরা ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি করেছি ১ হাজার ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকায়। সে হিসেবে কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা। কিন্তু খুচরা বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘আমাকে এক বস্তা পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে ২ হাজার ২০০ টাকায়। সে হিসেবে পেঁয়াজের কেজি পড়ে ৪৪ টাকা।

আদনান সিদ্দিকী নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘১৫-২০ দিন আগে যশোরের খুচরা বাজারে প্রকারভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০-২৫ টাকায়। এক মাস আগে এই পেঁয়াজই কিনেছি ১০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু গত কয়েক দিনের ব্যবধানে তা কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণের বেশি দামে।’

সালেহা খাতুন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘দুদিন পরপরই পেঁয়াজের দাম ওঠানামা করে। কাঁচাবাজারে জিনিসের দাম ওঠানামা করবে এটা স্বাভাবিক। দাম ২-৪-৫ টাকা বাড়লে মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই কেজিতে ৩০-৩৫ টাকা বাড়বে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কখনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাজার মনিটরিং করতে দেখি না। রমজান এবং বিশেষ কিছু সময়ে দু-এক দিন অভিযান চালানো হলেও তা যথেষ্ট নয়।’

পেঁয়াজের বাজারদর নিয়ে যখন এই অবস্থা, তখন হতাশা দেখা দিয়েছে কৃষকদের মধ্যে। রফিকুল ইসলাম নামের এক পেঁয়াজচাষি বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করতে ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ সেই পেঁয়াজ এক সপ্তাহ আগেও কেজিপ্রতি ৮-১০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছে। এতে আমাদের খরচই ওঠেনি।

সিরাজুল ইসলাম নামের আরেক বলেন, ‘যখনই বাজারে পেঁয়াজ ওঠার সময় হয় তখনই দাম কমে যায়। আবার মাঠ থেকে পেঁয়াজ উঠে গেলে দাম বেড়ে যায়। বছরের পর বছর ধরে আমরা এমনটি দেখে আসছি। উৎপাদন করে যে দামে আমরা বিক্রি করি, সেই একই পেঁয়াজ নিজে কিনতে গেলে কয়েক গুণ বেশি দামে কিনতে হয়। অর্থাৎ চাষি কিংবা ভোক্তা হিসেবে কোনোভাবেই আমরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না। শক্তিশালী সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ফায়দা তুলছে।’

রিয়াজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, গণমাধ্যম ও ভ্রাম্যমাণ আদালত আসলে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। তবে তা সামান্য সময়ের জন্য। বাজার দর নির্ধারণের পুরো ব্যবস্থাপনাই একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলছে। ওই সিন্ডিকেটটিই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। সিন্ডিকেটটি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মানুষকে জিম্মি করছে।

যশোর বড় বাজার আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘বাজারে আপাতত মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ কম। তা ছাড়া এবারের অসময়ের বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে পেঁয়াজের উৎপাদন ও চালান কমে গেছে। অন্যদিকে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহও তুলনামূলক কম। এতে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এসব কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।

মো. কামাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘শিগগিরই ভাতি পেঁয়াজ বাজারে উঠবে। সেই সঙ্গে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানিও বাড়বে। তখন আবার পেঁয়াজের দাম মানুষের নাগালে চলে আসবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আ.লীগের এমপি শাম্মীর বাসায় ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি ও ভাগ-বাঁটোয়ারার বিবরণ দিলেন রিয়াদ

কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা: কে এই ফ্লাইট এক্সপার্ট এমডি সালমান, বাবার হাত ধরে যাঁর উত্থান

গঙ্গাচড়ায় হিন্দুপল্লিতে হামলাকারীদের উসকানি, স্থানীয় সাংবাদিক গ্রেপ্তার

কিশোরগঞ্জে হর্টিকালচারের উপপরিচালকের বিরুদ্ধে ‘সমকামিতার’ অভিযোগ, মামলা বাবুর্চির

অতিরিক্ত ফি দাবি করায় বিমানবন্দর স্টাফের চোয়াল ভেঙে দিলেন যাত্রী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত