Ajker Patrika

হাসপাতালে রোগীর ভিড়

ভোলা প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২২, ১০: ২৪
Thumbnail image

ভোলায় হঠাৎ বেড়েছে ডায়রিয়ার রোগী। তাদের বেশির ভাগই শিশু। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এক সপ্তাহ ধরে ভোলা সদর হাসপাতালে শয্যার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি রয়েছে। শয্যায় জায়গা না পেয়ে অনেকে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে। তবে চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার অভিযোগ রোগীর স্বজনদের।

এদিকে ভোলা সদর হাসপাতাল থেকে গত এক সপ্তাহে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে দুই শতাধিক রোগী।

গত রোববার দুপুরে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, শয্যার চেয়ে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি রয়েছে ওয়ার্ডটিতে। হাসপাতালে শয্যাসংকটের কারণে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনের বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে বেশ কয়েকজন শিশু।

এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র নার্স মুক্তা আক্তার। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যার সংখ্যা ১১। প্রতিদিন ২০ জনের বেশি রোগী ভর্তি থাকে। বাধ্য হয়ে রোগীদের মেঝেতে রেখেই চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার ও রোববার ভোলা সদর হাসপাতালে অর্ধশত ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। ২১ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত এক সপ্তাহে ভর্তি হয়েছে ১১৫ জন। তাদের মধ্যে ২১ মার্চ ১১, ২২ মার্চ ১৪, ২৩ মার্চ ২৫, ২৪ মার্চ ২২, ২৫ মার্চ ১৩, ২৬ মার্চ ২০ ও ২৭ মার্চ ১০ জন রোগী ভর্তি হয়। এ ছাড়া ১২ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত ১৫ দিনে ভর্তি হন ২৪৩ জন। ভোলার সিভিল সার্জন কে এম শফিকুজ্জামানও কয়েক দিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।

হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে ৯ মাসের শিশু তাহিয়া আক্তার। তার বাড়ি বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড় মানিকা ইউনিয়নের উত্তর বাটামারা গ্রামে। শিশুটির মা তাসনুর বেগম বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলেই বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৫ দিন চিকিৎসা চলে। কিন্তু কোনো উন্নতি না হওয়ায় ২৬ মার্চ ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে শয্যা না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। কিন্তু এরপরও কোনো উন্নতি হচ্ছে না।

একইভাবে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে জহুরুল ইসলাম নামের এক ফার্মাসিস্টের ৮ মাস বয়সী ছেলে তাইফুর রহমান। তার বাবা বলেন, ‘ছেলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে ৫ দিন ধরে বাসায় চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু উন্নতি না হওয়ায় তাকে ২৭ মার্চ ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। ভর্তি করানো হয়েছে। হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুধু খাওয়ার স্যালাইন ছাড়া আর কিছুই দিচ্ছে না। নার্স আসছেন। ডাক্তারও আসছেন না।’

ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মোমিন বলেন, ‘ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ও শয্যার সংকট থাকায় আমার ২ বছরের ছেলে মো. তাওহিদকে মেঝেতে রাখা হয়েছে।’

হাসপাতালে ভর্তি সদর উপজেলার কালীবাড়ি রোডের ভদ্রপাড়ার বাসিন্দা কুলসুম বেগম বলেন, ‘১০ মাসের শিশু সাওদার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে ৩ দিন আগে। কিন্তু ডাক্তার আসেনি এক দিনও। এ ছাড়া ডায়রিয়ার সব ওষুধ কিনতে হয় বাইরের ফার্মেসি থেকে।’

ভোলার সিভিল সার্জন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আমি নিজেও কয়েক দিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। এর জন্য ওষুধও সেবন করছি। এ বিষয়ে সব হাসপাতালের কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত খাওয়ার স্যালাইন ও ডায়রিয়া রোগীর ওষুধ প্রস্তুত রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

গরমের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা। ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় সর্তকতা অবলম্বন করার পরামর্শ জানান চিকিৎসকেরা।

এ বিষয়ে ভোলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. নিরুপম সরকার (সোহাগ) জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকার নদীর পানি লবনাক্ত হওয়ায় বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এ সময় পানি ব্যবহারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের বেলায় এই সতর্কতা মেনে চলা জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত