Ajker Patrika

অথঃ ডিসি সমাচার

সম্পাদকীয়
অথঃ ডিসি সমাচার

ডিসি পদ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যে হট্টগোল হয়ে গেল মঙ্গলবার, তা জাতির জন্য অশনিসংকেত। পদবঞ্চিত কর্মকর্তারা বিক্ষোভ করছেন, নিয়োগপ্রাপ্ত ডিসিদের কর্মস্থলে যাওয়া স্থগিত করা হয়েছে—এ  রকম  ঘটনা বাংলাদেশের জীবনে এই প্রথম ঘটল। সচিবালয়ে ঢুকে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করার মাধ্যমে ছাত্ররা যে নজির সৃষ্টি করেছিল, তারই পথ ধরে সচিবালয়ে আন্দোলন চলছে। মনে হচ্ছে, কোনোভাবে সচিবালয়ে সংগঠিতভাবে দাঁড়াতে পারলেই দাবি আদায়ের পথ সুগম হবে।

যে ৫৯ জন কর্মকর্তাকে ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের প্রতি অন্য কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ কেন? কেন তাঁরা ডিসি নিয়োগের দুটি প্রজ্ঞাপনই বাতিলের দাবি জানিয়েছেন? কেন তাঁরা মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের দুই যুগ্ম সচিবকে কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখলেন?

বিএনপি-জামায়াত ঘরানার কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই ডিসিদের মধ্যে মাত্র তিনজন ‘বঞ্চিত কর্মকর্তা’ রয়েছেন। আন্দোলনকারীরা একটা ভয়াবহ অভিযোগ করেছেন—ডিসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নাকি অবৈধ লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ তাঁদের ভাষায় আওয়ামী লীগ সরকারের ‘দালাল’দের ঘুষের বিনিময়ে ডিসি বানানো হয়েছে। আর এ জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের দুই যুগ্ম সচিব দায়ী। এদেরই একজন জানিয়েছেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের আপত্তির কারণে ‘বঞ্চিত’দের ডিসি করা যায়নি।

মঙ্গলবার ওই হট্টগোলের মধ্যেই মোবাইলে ভিডিও বন্ধ করা, ধস্তাধস্তি, টয়লেটে লুকিয়ে থাকার মতো নানা ধরনের ঘটনা ঘটেছে। নির্দিষ্ট করে যেসব নিয়োগপ্রাপ্ত ডিসির নামে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘দালালি’ করার অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের কেউ কেউ বিগত সরকারের বিভিন্ন নেতার কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তার সঙ্গে কাজ করেছেন। প্রশ্ন হলো, তাঁরা ওইসব পদে থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন কি না। সেটা করা হলে বিভাগীয় তদন্ত হওয়াই সংগত। সরকারি চাকরিতে পদায়ন বা পদোন্নতির ক্ষেত্রে যখন শুধু দলীয় লোকদের বেছে নেওয়া হয়, অন্যদের বঞ্চিত করা হয়, কিংবা ওএসডি করে গুরুত্বহীন জায়গায় বসিয়ে তাঁদের হেনস্তা করা হয়, তখনই তো বৈষম্যের প্রশ্ন আসে। যোগ্য মানুষ প্রচলিত নিয়মেই ধারাবাহিকভাবে পদোন্নতি ও পদায়ন পাবেন, সেটাই কাঙ্ক্ষিত।

দ্বিতীয় প্রসঙ্গটি তো ভয়াবহ। সরকারি কর্মকর্তারাই তাঁদের সতীর্থদের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ লেনদেন’-এর অভিযোগ এনেছেন। তাহলে কি টাকার খেলা শুরু হয়ে গেল? এত বড় একটা পরিবর্তন হলো, কিন্তু ঘুষ আর ক্ষমতার রাজনীতি বদলাল না! এ নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।

যে রাজনৈতিক সংস্কারের অঙ্গীকার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে, সে অঙ্গীকার পালন করতে হলে সূক্ষ্মভাবে এই সংকটগুলোর দিকে তাকাতে হবে। ডিসি নিয়োগ স্থগিত বা বাতিল করলেই মূল সমস্যা কেটে যায় না। মূল সমস্যা হলো, প্রশাসন যেন এক দলের খবরদারির জায়গায় আরেক দলের খবরদারির কবলে না পড়ে। সৎ, যোগ্য কর্মকর্তা কোন দল করল, সেটা চাকরির নিয়ামক হতে পারে না। ধারাবাহিকভাবে দক্ষ যোগ্য মানুষ পদোন্নতি পাবেন, সেটাই মূল কথা। আশা করি, বিষয়টিকে বিজ্ঞজনেরা গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, মাদ্রাসা সুপারসহ তিনজন আটক

মধুচন্দ্রিমায় স্বামী নিহত, কফিন জড়িয়ে হিমাশি

বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক সাফিনুলের পরিবারের ৫৬ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

১৬ বছর আগে নিহত শিশু ও সাত বছর ধরে প্রবাসী অষ্টগ্রামে মামলার আসামি!

এটা ছোটখাটো অপহরণ: চবির ৫ শিক্ষার্থীকে নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত