Ajker Patrika

বুয়েটের শিক্ষার্থীদের শপথ ও কিছু কথা

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৩, ০৮: ৪৫
বুয়েটের শিক্ষার্থীদের শপথ ও কিছু কথা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে শপথ নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার সামনে কয়েক শ শিক্ষার্থী বুকে হাত রেখে এই শপথ নেন। তাঁরা শপথে আরও বলেন, ‘এই আঙিনায় আর কোনো নিষ্পাপ প্রাণ যেন ঝরে না যায়, আর কোনো নিরপরাধ যেন অত্যাচারের শিকার না হয়, তা আমরা সবাই মিলে নিশ্চিত করব।’

শিক্ষার্থীদের এই শপথের খবর পড়ে অনেকে হয়তো খুশি হবেন, আবার সংখ্যায় কম হলেও কিছু মানুষ এতে অখুশিও হবেন। আমাদের দেশে ছাত্র আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য আছে। কিন্তু এখন ছাত্র আন্দোলন অনেকটাই বিপথগামী হয়েছে। সন্ত্রাস-হানাহানিকে কোনোভাবেই ছাত্র আন্দোলন বা ছাত্ররাজনীতি বলা যায় না। অথচ এখন সহিংসতাই হয়ে দাঁড়িয়েছে ছাত্ররাজনীতি। এই অপরাজনীতির বিরুদ্ধে বুয়েটশিক্ষার্থীদের অবস্থান হলে সেটার প্রশংসা করতেই হবে। তবে সাংগঠনিক বা দলীয় রাজনীতির বিরোধিতার আড়ালে যদি সাম্প্রদায়িক বা ধর্মীয় চিন্তার বিস্তারে ভূমিকা পালনকারীদের আড়াল করা হয়, সেটা সমর্থন করা ঠিক হবে না।

শিক্ষার্থীরা যদিও বলেছেন, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান থেকে তাঁরা কখনো সরবেন না। যেকোনো ছাত্ররাজনীতি এবং মৌলবাদ চর্চা বুয়েট ক্যাম্পাসে গ্রহণযোগ্য হবে না, তা যে দলেরই হোক না কেন।

শিক্ষার্থীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ‘মৌলবাদ চর্চা’ বন্ধে কী ভূমিকা পালন করেন, সেটা অনেকেই হয়তো পর্যবেক্ষণে রাখবেন। অভিযোগ আছে, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে দিলেও বুয়েট ক্যাম্পাসে মৌলবাদীদের গোপন তৎপরতা থেমে নেই।

‘বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ’ করার এসব ঘোষণার আড়ালে বিশেষ কোনো মতলব আছে কি না, দেখার বিষয় সেটাও। ছাত্রদের মধ্যে রাজনীতি বন্ধ হয় না, এটা করা যায় না। বাস্তবে ছাত্রদের রাজনীতি বন্ধ করা অসম্ভব আর আইনগতভাবেও এটা করা যায় না। যেকোনো সংগঠনের সদস্য হওয়া বা সংগঠন করা বা মতামত প্রকাশ করা বা প্রচার করা হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকার। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা নেই কাউকে রাজনৈতিক দলের বা সংগঠনের সদস্য হওয়া থেকে বিরত রাখার। তবে যুক্তিসংগত কারণে ক্যাম্পাসে মিটিং, মিছিল ইত্যাদি থেকে শিক্ষার্থীদের সাময়িকভাবে বিরত রাখা যেতেই পারে।

হ্যাঁ, সন্ত্রাস, গুন্ডামি, মৌলবাদ—এসব নিয়ন্ত্রণ করা অবশ্যই জরুরি। এর জন্য রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়; বরং নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে দরকার আইনশৃঙ্খলার কঠোর নিয়ন্ত্রণ। কেউ গুন্ডামি করলে তাকে বহিষ্কার করা যেতে পারে, আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও কেউ বিরোধিতা করবে না। বিচারব্যবস্থা শক্তিশালী হলে বা আইনের শাসন কার্যকর করা গেলে গুন্ডামি-হানাহানি এমনিতেই কমে আসার কথা। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি উপেক্ষা করে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের দিকে মনোযোগী হওয়া কোনো ভালো লক্ষণ নয়। তা ছাড়া, কেবল শ্রেণিকক্ষ ও পাঠ্যবইয়ের ওপর নির্ভর করে কি শিক্ষার্থীরা জীবন-অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে পারেন? ক্যাম্পাসে নানামুখী চর্চার পথ রুদ্ধ করা ঠিক নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত