Ajker Patrika

নারীর মজুরি পুরুষের অর্ধেক

আনোয়ার সাদাৎ, মধুপুর
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২২, ১৯: ৩১
Thumbnail image

ন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ ৮ মার্চ। দিবসটিকে কেন্দ্র করে নারীদের কল্যাণের ভাবনায় চলছে আলোচনা সভা, সেমিনার ও কর্মশালা। জিও-এনজিও-সুধীরা জানান দিচ্ছেন সম-অধিকারের বার্তা। সেই বার্তা দিবস শেষেই মলিন হয়ে পড়বে। মধুপুরের কাইতকাই, নয়াপাড়া, রক্তিপাড়া, নরকোনা, টেকিপাড়া, টেলকি ও বেরিবাইদ গ্রামের নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। তাঁরা জানান, সব জায়গাতেই নারীদের পারিশ্রমিক পুরুষদের তুলনায় কম।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, শত শত নারী-পুরুষ ফসলের পরিচর্যা, ধনের চারা রোপণ, মাটি কাটা, সড়ক সংস্কারসহ নানা কাজ করছেন। এতে নারীরা পুরুষের সঙ্গে সমানতালে শ্রম দিলেও মজুরি পাচ্ছেন না সমান। পুরুষেরা দিন শেষে পেয়ে থাকেন ৫০০ টাকা আর নারীরা ২৫০ টাকা। কেউ কেউ ২২০ টাকাও পান বলে অভিযোগ রয়েছে।

নয়াপাড়ায় গ্রামের চাতালে শক্ত হাতে রশি টানছেন জরিনা-হানিফা। পেছনে ইব্রাহিম লাঙ্গলি ধরে একতালে ধান জমানোর কাজ করছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭ জন পুরুষ আর ৪ জন নারী বিরামহীন কাজ করেন প্রতিদিন। এঁদের মধ্যে নারী শ্রমিকেরা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তিন বেলা রান্নার কাজ করে থাকেন। তারপরও মাস শেষে ওই নারী শ্রমিকদের ভাগ্যে জোটে পুরুষের অর্ধেক বেতন। ইব্রাহিমরা পান ১১ হাজার আর জরিনারা মাত্র ৬ হাজার টাকা।

ফাগুনের আগুনঝরা রোদে রক্তিপাড়ার বেগুন খেতে (ছদ্মনাম) বুলবুলি, আছিয়া, সহিতন, হাসান, আছাদ কাজ করছেন। এ সময় বুলবুলি জানান, ‘সকাল সাড়ে আটটায় কাজে যোগ দিয়েছি। বাড়ির পথে রওনা হব বিকেল চারটার পরে। প্রতিদিন এভাবেই চলে। আমার বেতন ২৫০ আর তাগোর বেতন ৫০০।’

চাতালে কর্মরত শ্রমিক ইব্রাহিম বলেন, ‘মাসে ১১ হাজার টাকা পাই। এতেই সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে নারীরা জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে অল্প টাকায় কাজ করেন।’

মুক্তাগাছা উপজেলার আলাফশিং গ্রামের জরিনা শ্রমিকের কাজ করেন মধুপুরে। তিনি বলেন, ‘নারী-পুরুষ বেতনবৈষম্য বুঝি না। কাম করন নাগবো, খাওন নাগবো। বাঁচন নাগবো। এর বাইরের চিন্তা আমাগোর মাথায় আহে না।’

রাইস মিলের সহকারী ম্যানেজার সবুজ মিয়া বলেন, নারী শ্রমিকদের অনেকেই অসহায়, বিধবা। অনটনের সংসারে বোঝা না হয়ে অল্প বেতনেই কাজ করতে বাধ্য হয়। তবে নারীরা ভারী কাজ করতে পারেন না—এই অজুহাতে সব সময়ই তাঁদের বেতন কম দেওয়া হয়।

এ বৈষম্য নিয়ে মধুপুর নির্মাণ প্রকৌশল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আব্দুল হাকিম বলেন, নারীরা আগের দিনে গৃহস্থালির কাজ করতেন ভাত-কাপড়ে। এখনো তাঁদের বেতন ৩ হাজারের নিচেই রয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের মালিক বা গৃহস্থরাও আগের মতো নারী শ্রমিক নিলে সাশ্রয় হয় দেখে অল্প বেতন দিয়ে থাকেন।

মধুপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ বজলুর রশিদ খান চুন্নু বলেন, নারী-পুরুষের সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার জন্য সম-অধিকার আন্দোলন আরও বেগবান করতে হবে। তাহলে শ্রমমূল্যের বৈষম্য কমে আসবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমাদের দেশের নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। তাঁরা কর্মক্ষেত্রে সফলতা দেখাচ্ছেন। যে যেখানে আছেন সেখান থেকেই বৈষম্য দূর করার জন্য কাজ করতে হবে। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। তাহলে বৈষম্য ধীরে ধীরে কমে আসবে।’

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সাবেক জাতীয় ঊর্ধ্বতন পরামর্শক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. উত্তম কুমার দাস বলেন, সমকাজের জন্য নিয়োজিত সব শ্রমিক সমান শ্রমমূল্য পাবেন। এটাই শ্রম আইনের বিধান। এই আইন লঙ্ঘন দণ্ডনীয় অপরাধ। এই বৈষম্য দূর করতে সরকারের নজরদারি ও পর্যবেক্ষণ বাড়াতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত