Ajker Patrika

গ্রিল চুরি

সম্পাদকীয়
গ্রিল চুরি

ছাত্ররাজনীতিতে আসলে কী চলছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে হতাশাই প্রকট হয়ে উঠবে। সেই বিশাল আলোচনায় না গিয়ে  আমরা বরং ছাত্রলীগ নেতার কথা বলি, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে গ্রিল চুরি করেছেন।

ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলার রাজনীতিতে খুবই তাৎপর্যময় এবং গুরুত্বপূর্ণ। ষাটের দশকে ছাত্ররাজনীতিতে একদিকে বামপন্থীরা যখন মজবুত আসন তৈরি করে ফেলেছে, অন্যদিকে সরকারি পেটোয়া এনএসএফ সশস্ত্র হয়ে ছাত্রদের বুকে ভীতির সঞ্চার করতে চাইছে, তখনই বাঙালি জাতীয়তাবাদের আদর্শে বলীয়ান হয়ে ছাত্রলীগ স্বাধিকার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ইতিহাসে ছাত্রলীগের ওই সময়কার অবদান ভোলার নয়। ছাত্রলীগ সে সময় আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল।

ষাটের দশক ছাত্রলীগের ইতিহাসে স্বর্ণোজ্জ্বল হয়ে আছে। সেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বিভিন্ন সময় বিতর্কিত হয়ে উঠলেও মূল নেতৃত্বে বেশির ভাগ সময়ই দেখা গেছে প্রজ্ঞাবানদের অবস্থান। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সুঠাম হলেও অঞ্চলভেদে যে সঠিক নেতৃত্ব পৌঁছায় না, তার ভূরি ভূরি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে ছাত্রলীগ। বলা বাহুল্য নয়, শুধু ছাত্রলীগই এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিয়েছে, এমন নয়; যে দলই যখন নির্বাচিত বা অনির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছে, সেই দলের সঙ্গে যুক্ত ছাত্রসংগঠনগুলো বিভিন্ন সময়ে উচ্ছৃঙ্খলতার জন্ম দিয়েছে। দুর্নীতি, মাস্তানিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

নৈতিক মূল্যবোধ কোন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে তার একটা মুমূর্ষু উদাহরণ হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতার গ্রিল চুরির ঘটনাটি উল্লেখ করতে হয়। আবাসিক হলের জানালা থেকে গ্রিল খুলে ছাত্রলীগের এই নেতা যাচ্ছিলেন বিক্রি করতে। যেকোনো কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষই জানে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়েরই সম্পদ। এটা ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। একজন ছাত্রনেতা সে কথা বেমালুম ভুলে গেছেন, এ কথা মানতে মন সায় দিচ্ছে না।

মূলত তিনি জেনেশুনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের গ্রিল বিক্রি করার চেষ্টা করেছিলেন। যে প্রহরী তাঁকে আটকে দিয়েছেন, তাঁর সাহসের প্রশংসা করতে হয়, প্রশংসা করতে হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরও। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখন পর্যন্ত এই গ্রিল চোরের পাশে দাঁড়ায়নি। মুচলেকা দিয়ে এই গ্রিল লোপাট করে দেওয়া ছাত্রটি শেষ পর্যন্ত শাস্তির হাত থেকে বেঁচেছেন।

ঐতিহ্যবাহী ছাত্রলীগের ললাটে এ ধরনের চিহ্ন বিদ্যমান হলে সাধারণ ছাত্রদের কাছে ছাত্রলীগ হাস্যকর এক সংগঠনে পরিণত হবে।ছাত্রলীগ কিংবা আওয়ামী লীগের নেতারা নিশ্চয়ই সেটা চাইবেন না। এ ধরনের বিপৎসংকেত আমলে নিয়ে দল গোছানোই হবে ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব। আশা করি, আঞ্চলিকভাবে ক্ষয়ে যাওয়া নৈতিকতার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বোধোদয় হবে এবং এ ধরনের স্থূলতা কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে তাঁরা যত্নবান হবেন।

স্বাধিকার আন্দোলনের সবচেয়ে তাৎপর্যময় সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা তাঁদের অতীত ইতিহাসকে শ্রদ্ধা করবেন না, এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে এই সংগঠনের পক্ষে নৈতিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করার পাশাপাশি রাজনীতিতে নৈতিকতাকে সুদৃঢ় না করা হলে এই রাজনীতির কোনো মানে থাকে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শ্বশুরকে জামাতার ফোন: ‘আপনার মেয়েকে মাইরা ফেলছি, লাশ নিয়ে যান’

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ দুদক: আইনজীবী

স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে গেলেন ইমামতি করতে

ঢাবির সিন্ডিকেটে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের চূড়ান্ত অনুমোদন

ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি বাতিল করল পাকিস্তান, এর প্রভাব কী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত