ড. মইনুল ইসলাম

সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশের আমদানি ব্যয় ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধির পেছনে এটাও বড় কারণ। কিন্তু আমদানি এলসি বেলাগাম গতিতে বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ ওভার ইনভয়েসিং পদ্ধতিতে বিদেশে পুঁজি পাচার বেড়ে যাওয়া।
শ্রীলঙ্কার ‘লঙ্কাকাণ্ড’ দেশটাকে চরম অরাজকতায় ডোবাতে চলেছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ ছিল শ্রীলঙ্কা। প্রায় শতভাগ জনগণ ছিল শিক্ষিত। দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ছিল ভারতের কেরালার পর দক্ষিণ এশিয়ার সেরা। চাল উৎপাদনে শ্রীলঙ্কা ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। মানুষের মাথাপিছু জিডিপি ছিল প্রায় ৪ হাজার ডলার। জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা ছিল সবচেয়ে অগ্রগামী। ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধে বিজয়ের পর চীনের ঋণের অর্থে শ্রীলঙ্কা অনেকগুলো স্বল্প-প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করে। এর পাশাপাশি ‘সভরেন বন্ড’ ছেড়ে তারা দেশ-বিদেশের অর্থবাজার থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার ঋণ সংগ্রহ করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করার প্রয়াস চালায়। কিন্তু প্রকল্পগুলো থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে মাহিন্দাসহ রাজাপক্ষে পরিবারের অন্য সদস্যরা কোটি কোটি ডলার আত্মসাৎ করার অভিযোগ চরম আকার ধারণ করায় ২০১৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাহিন্দা রাজাপক্ষে মাইথ্রিপালা সিরিসেনার কাছে পরাজিত হয়ে ক্ষমতাচ্যুত হন।
কিন্তু সিরিসেনা সরকার মাহিন্দার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগগুলো প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাহিন্দার ভাই গোতাবায়া রাজাপক্ষে অনেকগুলো ‘পপুলিস্ট’ অঙ্গীকারের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার ভোটারদের মন জয় করে আবার বিজয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হন। ওই নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী গোতাবায়া ১৫ শতাংশ জেনারেল সেলস ট্যাক্সকে ৮ শতাংশে নামিয়ে ফেলেন এবং ২ শতাংশ ন্যাশনাল রিবিল্ডিং ট্যাক্সকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। এতে খুশি হয়ে ২০২০ সালের সংসদীয় নির্বাচনে ভোটাররা রাজাপক্ষে পরিবারের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলকে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা সহকারে বিজয় এনে দেয়। মাহিন্দা আবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান, তাঁর সঙ্গে মন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন বাসিল রাজাপক্ষে, চামাল রাজাপক্ষে এবং পরবর্তী জেনারেশনের আরও দুজন রাজাপক্ষে। পরিবারতন্ত্র আর কাকে বলে! কিন্তু, এক দশকের ‘ঋণ করে ঘি খাওয়ার’ নীতি ২০২০ সালেই শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে শুরু করে। আয় বাড়াতে ব্যর্থ হয়ে চীনের অর্থে নির্মিত হাম্বানটোটা গভীর সমুদ্রবন্দরকে ৯৯ বছরের জন্য চীনের কাছে লিজ দিতে বাধ্য হয় শ্রীলঙ্কা। একই সঙ্গে হাম্বানটোটায় নির্মিত রাজাপক্ষে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিও একেবারেই স্বল্প-ব্যবহৃত বিমানবন্দর হিসেবে বোঝায় পরিণত হয়।
অন্যদিকে ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি আঘাত হানার পর শ্রীলঙ্কায় মানুষ বেশি মারা না গেলেও অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক আয়ের সবচেয়ে বড় সূত্র পর্যটন খাতের আয় মহামারির ফলে রাতারাতি শূন্যে নেমে আসে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় প্রবাসী শ্রীলঙ্কানদের রেমিট্যান্সে মহামারি-সৃষ্ট ধস, যাতে দেশটির ফরমাল চ্যানেলের রেমিট্যান্স আয়ও প্রায় ৮০ শতাংশ সংকুচিত হয়ে যায়। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, রাতারাতি কৃষি খাতে ‘অরগানিক ফার্মিং’ চালুর জন্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশক আমদানি নিষিদ্ধ করে প্রদত্ত প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত, যার ফলে এক অভূতপূর্ব ফলন-বিপর্যয়ে পতিত হয় শ্রীলঙ্কার কৃষি খাত। ফলে শ্রীলঙ্কার কৃষিজাত খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন এক বছরে বিপর্যয়করভাবে এক-তৃতীয়াংশ কমে যায়, এবং খাদ্যশস্য আমদানির জন্য ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কাকে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়। এসব বিপর্যয়ের ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালেই শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমে বিপজ্জনক স্তরে চলে আসে। আমদানি করতে অসমর্থ হওয়ায় জ্বালানি তেল, এলএনজি, ভোজ্যতেল, চিনি, চাল এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি চরম আকার ধারণ করে, মানুষ রাস্তায় নেমে আসে রাজাপক্ষে পরিবারের উৎখাতের দাবিতে। ২০২২ সালের এপ্রিলে রিজার্ভ মাত্র ৫০০ মিলিয়ন ডলারে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কা নিজেকে ঋণখেলাপি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। শ্রীলঙ্কার মতো একদা-সমৃদ্ধ একটা অর্থনীতি যে এভাবে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে, সেটাই অচিন্তনীয় ছিল দুই মাস আগেও। অথচ বিশ্বকে এই অবিশ্বাস্য পতন প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে এখন। অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত জনগণ এপ্রিল মাসজুড়ে কলম্বোর রাজপথে রাজাপক্ষে পরিবারের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের পদত্যাগের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু মাহিন্দা রাজাপক্ষের এক অবিমৃশ্যকারী ‘রাজনৈতিক গুন্ডামির’ কারণে ৯ মে এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন মারাত্মক সংঘাতপূর্ণ গৃহযুদ্ধে পর্যবসিত হলো, যেখানে একজন সংসদ সদস্যসহ আট ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। আন্দোলনের তীব্রতায় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হওয়ার পর মাহিন্দা তাঁর সমর্থকদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাসে করে কলম্বোয় নিয়ে আসেন। এই ভাড়াটে গুন্ডারা বিনা উসকানিতে মাসাধিককাল ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী জনতার ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে ও আরও বহু মানুষকে মারাত্মকভাবে আহত করে। এই হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং গুন্ডাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এর জেরে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীরা সরকার-সমর্থকদের গণপিটুনি দেওয়ার পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং রাজাপক্ষে পরিবারের বাড়িঘর আগুনে পোড়ানো শুরু করে দেয় এবং অনেককে মারধরের পাশাপাশি পানিতে চুবানো শুরু করে। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিশিয়াল বাসভবনে জনতা ঢুকে পড়তে উদ্যত হলে মাহিন্দা এবং তাঁর পরিবার হেলিকপ্টারে চড়ে সেখান থেকে ভেগে গিয়ে ত্রিনকোমালির একটি নৌঘাঁটিতে আশ্রয় নেয়। এখন গোতাবায়ার যাওয়ার পালা।
শ্রীলঙ্কার এই চলমান গণ-অভ্যুত্থান থেকে বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর জন্য অনেকগুলো শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও খামখেয়ালিপনা, পারিবারিক একনায়কতন্ত্র, হঠকারী সিদ্ধান্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে অবিমৃশ্যকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজাপক্ষে পরিবার দুই বছরের মধ্যেই শ্রীলঙ্কার মতো একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতিকে ধসিয়ে দিয়েছে এবং দেউলিয়া করে ফেলেছে। ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর বেশ কয়েক বছর শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি হয়েছিল, কিন্তু ‘ঋণ করে ঘি খাওয়ার’ এই নীতি রাজাপক্ষে পরিবারের শাসনকে অবশ্যম্ভাবী পতনের দিকে ধাবিত করেছে এবং শ্রীলঙ্কার জনগণকেও দুর্দশার অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করেছে। করোনাভাইরাস মহামারি এই পতনকে ত্বরান্বিত করেছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক মহাসংকটের আলামতগুলো মহামারির বহু আগেই স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল। নির্বাচিত সরকার হলেই খামখেয়ালি ও স্বেচ্ছাচারিতার লাইসেন্স জনগণ কাউকে দেয় না। বিদেশি ঋণ পাওয়া গেলেই যথার্থ প্রকল্প মূল্যায়ন ব্যতিরেকে কারও ইচ্ছামাফিক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের পরিণাম কখনোই শুভ হয় না। বাংলাদেশেও প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের পরিবর্তে যদি গ্ল্যামারাস ও স্বল্প-প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ অব্যাহত থাকে, তাহলে শ্রীলঙ্কার মতো ঋণগ্রস্ততার ফাঁদে পড়তে বাংলাদেশেরও দেরি হবে না। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টের ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ২০২২ সালের মে মাসে ৪১ বিলিয়ন ডলার হয়ে গেছে। চলমান মেগা-প্রজেক্টগুলোর ব্যয়ের ধারাবাহিকতায় বৈদেশিক ঋণ ৯১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ মাসে বাংলাদেশের আমদানি গত বছরের চেয়ে ৪৬ শতাংশ বেড়ে গেছে, যেটাকে আসন্ন মহাবিপদের ‘অশনিসংকেত’ আখ্যায়িত করাই সমীচীন। এই গতিতে আমদানি এলসি খোলা অব্যাহত থাকলে ২০২২ সালের ৩০ জুন ২০২১-২২ অর্থবছরের মোট আমদানি ৮২-৮৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাবে। এর মানে, এই অর্থবছরের রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর প্রাক্কলন সত্ত্বেও অর্থবছরের শেষে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমান অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে যাবে। অতএব, আমাদের ব্যালান্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট অ্যাকাউন্টে এ বছর প্রায় ১০-১২ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।
করোনাভাইরাস মহামারির তাণ্ডব কমতে না কমতেই ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং আগ্রাসন মোকাবিলায় পশ্চিমা দেশগুলোর সহায়তায় ইউক্রেনের মরণপণ প্রতিরোধ সারা বিশ্বকে এক ভয়াবহ যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে নিক্ষেপ করেছে। সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশের আমদানি ব্যয় ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধির পেছনে এটাও বড় কারণ। কিন্তু আমদানি এলসি বেলাগাম গতিতে বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ ওভার ইনভয়েসিং পদ্ধতিতে বিদেশে পুঁজি পাচার বেড়ে যাওয়া। উপরন্তু করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে হুন্ডি পদ্ধতি বেশ খানিকটা ঝিমিয়ে পড়েছিল চাহিদা এবং সরবরাহ—দুই দিক থেকেই। এখন আবার হুন্ডি ব্যবসা চাঙা হয়ে উঠেছে। কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ৯৫ টাকায় উঠে গেছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত আন্তব্যাংক লেনদেনে ব্যবহৃত ডলারের দামের চেয়ে আট টাকা বেশি। এই গ্যাপ কমাতে না পারলে হুন্ডির দাপট বাড়তেই থাকবে, ফরমাল চ্যানেলের রেমিট্যান্সে যা ধস নামাবে। সাধু সাবধান!
ড. মইনুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশের আমদানি ব্যয় ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধির পেছনে এটাও বড় কারণ। কিন্তু আমদানি এলসি বেলাগাম গতিতে বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ ওভার ইনভয়েসিং পদ্ধতিতে বিদেশে পুঁজি পাচার বেড়ে যাওয়া।
শ্রীলঙ্কার ‘লঙ্কাকাণ্ড’ দেশটাকে চরম অরাজকতায় ডোবাতে চলেছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ ছিল শ্রীলঙ্কা। প্রায় শতভাগ জনগণ ছিল শিক্ষিত। দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ছিল ভারতের কেরালার পর দক্ষিণ এশিয়ার সেরা। চাল উৎপাদনে শ্রীলঙ্কা ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। মানুষের মাথাপিছু জিডিপি ছিল প্রায় ৪ হাজার ডলার। জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা ছিল সবচেয়ে অগ্রগামী। ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধে বিজয়ের পর চীনের ঋণের অর্থে শ্রীলঙ্কা অনেকগুলো স্বল্প-প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করে। এর পাশাপাশি ‘সভরেন বন্ড’ ছেড়ে তারা দেশ-বিদেশের অর্থবাজার থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার ঋণ সংগ্রহ করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করার প্রয়াস চালায়। কিন্তু প্রকল্পগুলো থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে মাহিন্দাসহ রাজাপক্ষে পরিবারের অন্য সদস্যরা কোটি কোটি ডলার আত্মসাৎ করার অভিযোগ চরম আকার ধারণ করায় ২০১৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাহিন্দা রাজাপক্ষে মাইথ্রিপালা সিরিসেনার কাছে পরাজিত হয়ে ক্ষমতাচ্যুত হন।
কিন্তু সিরিসেনা সরকার মাহিন্দার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগগুলো প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাহিন্দার ভাই গোতাবায়া রাজাপক্ষে অনেকগুলো ‘পপুলিস্ট’ অঙ্গীকারের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার ভোটারদের মন জয় করে আবার বিজয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হন। ওই নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী গোতাবায়া ১৫ শতাংশ জেনারেল সেলস ট্যাক্সকে ৮ শতাংশে নামিয়ে ফেলেন এবং ২ শতাংশ ন্যাশনাল রিবিল্ডিং ট্যাক্সকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। এতে খুশি হয়ে ২০২০ সালের সংসদীয় নির্বাচনে ভোটাররা রাজাপক্ষে পরিবারের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলকে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা সহকারে বিজয় এনে দেয়। মাহিন্দা আবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান, তাঁর সঙ্গে মন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন বাসিল রাজাপক্ষে, চামাল রাজাপক্ষে এবং পরবর্তী জেনারেশনের আরও দুজন রাজাপক্ষে। পরিবারতন্ত্র আর কাকে বলে! কিন্তু, এক দশকের ‘ঋণ করে ঘি খাওয়ার’ নীতি ২০২০ সালেই শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে শুরু করে। আয় বাড়াতে ব্যর্থ হয়ে চীনের অর্থে নির্মিত হাম্বানটোটা গভীর সমুদ্রবন্দরকে ৯৯ বছরের জন্য চীনের কাছে লিজ দিতে বাধ্য হয় শ্রীলঙ্কা। একই সঙ্গে হাম্বানটোটায় নির্মিত রাজাপক্ষে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিও একেবারেই স্বল্প-ব্যবহৃত বিমানবন্দর হিসেবে বোঝায় পরিণত হয়।
অন্যদিকে ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি আঘাত হানার পর শ্রীলঙ্কায় মানুষ বেশি মারা না গেলেও অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক আয়ের সবচেয়ে বড় সূত্র পর্যটন খাতের আয় মহামারির ফলে রাতারাতি শূন্যে নেমে আসে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় প্রবাসী শ্রীলঙ্কানদের রেমিট্যান্সে মহামারি-সৃষ্ট ধস, যাতে দেশটির ফরমাল চ্যানেলের রেমিট্যান্স আয়ও প্রায় ৮০ শতাংশ সংকুচিত হয়ে যায়। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, রাতারাতি কৃষি খাতে ‘অরগানিক ফার্মিং’ চালুর জন্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশক আমদানি নিষিদ্ধ করে প্রদত্ত প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত, যার ফলে এক অভূতপূর্ব ফলন-বিপর্যয়ে পতিত হয় শ্রীলঙ্কার কৃষি খাত। ফলে শ্রীলঙ্কার কৃষিজাত খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন এক বছরে বিপর্যয়করভাবে এক-তৃতীয়াংশ কমে যায়, এবং খাদ্যশস্য আমদানির জন্য ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কাকে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়। এসব বিপর্যয়ের ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালেই শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমে বিপজ্জনক স্তরে চলে আসে। আমদানি করতে অসমর্থ হওয়ায় জ্বালানি তেল, এলএনজি, ভোজ্যতেল, চিনি, চাল এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি চরম আকার ধারণ করে, মানুষ রাস্তায় নেমে আসে রাজাপক্ষে পরিবারের উৎখাতের দাবিতে। ২০২২ সালের এপ্রিলে রিজার্ভ মাত্র ৫০০ মিলিয়ন ডলারে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কা নিজেকে ঋণখেলাপি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। শ্রীলঙ্কার মতো একদা-সমৃদ্ধ একটা অর্থনীতি যে এভাবে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে, সেটাই অচিন্তনীয় ছিল দুই মাস আগেও। অথচ বিশ্বকে এই অবিশ্বাস্য পতন প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে এখন। অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত জনগণ এপ্রিল মাসজুড়ে কলম্বোর রাজপথে রাজাপক্ষে পরিবারের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের পদত্যাগের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু মাহিন্দা রাজাপক্ষের এক অবিমৃশ্যকারী ‘রাজনৈতিক গুন্ডামির’ কারণে ৯ মে এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন মারাত্মক সংঘাতপূর্ণ গৃহযুদ্ধে পর্যবসিত হলো, যেখানে একজন সংসদ সদস্যসহ আট ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। আন্দোলনের তীব্রতায় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হওয়ার পর মাহিন্দা তাঁর সমর্থকদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাসে করে কলম্বোয় নিয়ে আসেন। এই ভাড়াটে গুন্ডারা বিনা উসকানিতে মাসাধিককাল ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী জনতার ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে ও আরও বহু মানুষকে মারাত্মকভাবে আহত করে। এই হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং গুন্ডাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এর জেরে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীরা সরকার-সমর্থকদের গণপিটুনি দেওয়ার পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং রাজাপক্ষে পরিবারের বাড়িঘর আগুনে পোড়ানো শুরু করে দেয় এবং অনেককে মারধরের পাশাপাশি পানিতে চুবানো শুরু করে। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিশিয়াল বাসভবনে জনতা ঢুকে পড়তে উদ্যত হলে মাহিন্দা এবং তাঁর পরিবার হেলিকপ্টারে চড়ে সেখান থেকে ভেগে গিয়ে ত্রিনকোমালির একটি নৌঘাঁটিতে আশ্রয় নেয়। এখন গোতাবায়ার যাওয়ার পালা।
শ্রীলঙ্কার এই চলমান গণ-অভ্যুত্থান থেকে বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর জন্য অনেকগুলো শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও খামখেয়ালিপনা, পারিবারিক একনায়কতন্ত্র, হঠকারী সিদ্ধান্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে অবিমৃশ্যকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজাপক্ষে পরিবার দুই বছরের মধ্যেই শ্রীলঙ্কার মতো একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতিকে ধসিয়ে দিয়েছে এবং দেউলিয়া করে ফেলেছে। ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর বেশ কয়েক বছর শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি হয়েছিল, কিন্তু ‘ঋণ করে ঘি খাওয়ার’ এই নীতি রাজাপক্ষে পরিবারের শাসনকে অবশ্যম্ভাবী পতনের দিকে ধাবিত করেছে এবং শ্রীলঙ্কার জনগণকেও দুর্দশার অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করেছে। করোনাভাইরাস মহামারি এই পতনকে ত্বরান্বিত করেছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক মহাসংকটের আলামতগুলো মহামারির বহু আগেই স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল। নির্বাচিত সরকার হলেই খামখেয়ালি ও স্বেচ্ছাচারিতার লাইসেন্স জনগণ কাউকে দেয় না। বিদেশি ঋণ পাওয়া গেলেই যথার্থ প্রকল্প মূল্যায়ন ব্যতিরেকে কারও ইচ্ছামাফিক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের পরিণাম কখনোই শুভ হয় না। বাংলাদেশেও প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের পরিবর্তে যদি গ্ল্যামারাস ও স্বল্প-প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ অব্যাহত থাকে, তাহলে শ্রীলঙ্কার মতো ঋণগ্রস্ততার ফাঁদে পড়তে বাংলাদেশেরও দেরি হবে না। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টের ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ২০২২ সালের মে মাসে ৪১ বিলিয়ন ডলার হয়ে গেছে। চলমান মেগা-প্রজেক্টগুলোর ব্যয়ের ধারাবাহিকতায় বৈদেশিক ঋণ ৯১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ মাসে বাংলাদেশের আমদানি গত বছরের চেয়ে ৪৬ শতাংশ বেড়ে গেছে, যেটাকে আসন্ন মহাবিপদের ‘অশনিসংকেত’ আখ্যায়িত করাই সমীচীন। এই গতিতে আমদানি এলসি খোলা অব্যাহত থাকলে ২০২২ সালের ৩০ জুন ২০২১-২২ অর্থবছরের মোট আমদানি ৮২-৮৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাবে। এর মানে, এই অর্থবছরের রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর প্রাক্কলন সত্ত্বেও অর্থবছরের শেষে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমান অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে যাবে। অতএব, আমাদের ব্যালান্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট অ্যাকাউন্টে এ বছর প্রায় ১০-১২ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।
করোনাভাইরাস মহামারির তাণ্ডব কমতে না কমতেই ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং আগ্রাসন মোকাবিলায় পশ্চিমা দেশগুলোর সহায়তায় ইউক্রেনের মরণপণ প্রতিরোধ সারা বিশ্বকে এক ভয়াবহ যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে নিক্ষেপ করেছে। সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশের আমদানি ব্যয় ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধির পেছনে এটাও বড় কারণ। কিন্তু আমদানি এলসি বেলাগাম গতিতে বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ ওভার ইনভয়েসিং পদ্ধতিতে বিদেশে পুঁজি পাচার বেড়ে যাওয়া। উপরন্তু করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে হুন্ডি পদ্ধতি বেশ খানিকটা ঝিমিয়ে পড়েছিল চাহিদা এবং সরবরাহ—দুই দিক থেকেই। এখন আবার হুন্ডি ব্যবসা চাঙা হয়ে উঠেছে। কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ৯৫ টাকায় উঠে গেছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত আন্তব্যাংক লেনদেনে ব্যবহৃত ডলারের দামের চেয়ে আট টাকা বেশি। এই গ্যাপ কমাতে না পারলে হুন্ডির দাপট বাড়তেই থাকবে, ফরমাল চ্যানেলের রেমিট্যান্সে যা ধস নামাবে। সাধু সাবধান!
ড. মইনুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ড. মইনুল ইসলাম

সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশের আমদানি ব্যয় ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধির পেছনে এটাও বড় কারণ। কিন্তু আমদানি এলসি বেলাগাম গতিতে বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ ওভার ইনভয়েসিং পদ্ধতিতে বিদেশে পুঁজি পাচার বেড়ে যাওয়া।
শ্রীলঙ্কার ‘লঙ্কাকাণ্ড’ দেশটাকে চরম অরাজকতায় ডোবাতে চলেছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ ছিল শ্রীলঙ্কা। প্রায় শতভাগ জনগণ ছিল শিক্ষিত। দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ছিল ভারতের কেরালার পর দক্ষিণ এশিয়ার সেরা। চাল উৎপাদনে শ্রীলঙ্কা ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। মানুষের মাথাপিছু জিডিপি ছিল প্রায় ৪ হাজার ডলার। জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা ছিল সবচেয়ে অগ্রগামী। ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধে বিজয়ের পর চীনের ঋণের অর্থে শ্রীলঙ্কা অনেকগুলো স্বল্প-প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করে। এর পাশাপাশি ‘সভরেন বন্ড’ ছেড়ে তারা দেশ-বিদেশের অর্থবাজার থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার ঋণ সংগ্রহ করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করার প্রয়াস চালায়। কিন্তু প্রকল্পগুলো থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে মাহিন্দাসহ রাজাপক্ষে পরিবারের অন্য সদস্যরা কোটি কোটি ডলার আত্মসাৎ করার অভিযোগ চরম আকার ধারণ করায় ২০১৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাহিন্দা রাজাপক্ষে মাইথ্রিপালা সিরিসেনার কাছে পরাজিত হয়ে ক্ষমতাচ্যুত হন।
কিন্তু সিরিসেনা সরকার মাহিন্দার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগগুলো প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাহিন্দার ভাই গোতাবায়া রাজাপক্ষে অনেকগুলো ‘পপুলিস্ট’ অঙ্গীকারের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার ভোটারদের মন জয় করে আবার বিজয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হন। ওই নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী গোতাবায়া ১৫ শতাংশ জেনারেল সেলস ট্যাক্সকে ৮ শতাংশে নামিয়ে ফেলেন এবং ২ শতাংশ ন্যাশনাল রিবিল্ডিং ট্যাক্সকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। এতে খুশি হয়ে ২০২০ সালের সংসদীয় নির্বাচনে ভোটাররা রাজাপক্ষে পরিবারের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলকে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা সহকারে বিজয় এনে দেয়। মাহিন্দা আবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান, তাঁর সঙ্গে মন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন বাসিল রাজাপক্ষে, চামাল রাজাপক্ষে এবং পরবর্তী জেনারেশনের আরও দুজন রাজাপক্ষে। পরিবারতন্ত্র আর কাকে বলে! কিন্তু, এক দশকের ‘ঋণ করে ঘি খাওয়ার’ নীতি ২০২০ সালেই শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে শুরু করে। আয় বাড়াতে ব্যর্থ হয়ে চীনের অর্থে নির্মিত হাম্বানটোটা গভীর সমুদ্রবন্দরকে ৯৯ বছরের জন্য চীনের কাছে লিজ দিতে বাধ্য হয় শ্রীলঙ্কা। একই সঙ্গে হাম্বানটোটায় নির্মিত রাজাপক্ষে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিও একেবারেই স্বল্প-ব্যবহৃত বিমানবন্দর হিসেবে বোঝায় পরিণত হয়।
অন্যদিকে ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি আঘাত হানার পর শ্রীলঙ্কায় মানুষ বেশি মারা না গেলেও অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক আয়ের সবচেয়ে বড় সূত্র পর্যটন খাতের আয় মহামারির ফলে রাতারাতি শূন্যে নেমে আসে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় প্রবাসী শ্রীলঙ্কানদের রেমিট্যান্সে মহামারি-সৃষ্ট ধস, যাতে দেশটির ফরমাল চ্যানেলের রেমিট্যান্স আয়ও প্রায় ৮০ শতাংশ সংকুচিত হয়ে যায়। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, রাতারাতি কৃষি খাতে ‘অরগানিক ফার্মিং’ চালুর জন্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশক আমদানি নিষিদ্ধ করে প্রদত্ত প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত, যার ফলে এক অভূতপূর্ব ফলন-বিপর্যয়ে পতিত হয় শ্রীলঙ্কার কৃষি খাত। ফলে শ্রীলঙ্কার কৃষিজাত খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন এক বছরে বিপর্যয়করভাবে এক-তৃতীয়াংশ কমে যায়, এবং খাদ্যশস্য আমদানির জন্য ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কাকে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়। এসব বিপর্যয়ের ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালেই শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমে বিপজ্জনক স্তরে চলে আসে। আমদানি করতে অসমর্থ হওয়ায় জ্বালানি তেল, এলএনজি, ভোজ্যতেল, চিনি, চাল এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি চরম আকার ধারণ করে, মানুষ রাস্তায় নেমে আসে রাজাপক্ষে পরিবারের উৎখাতের দাবিতে। ২০২২ সালের এপ্রিলে রিজার্ভ মাত্র ৫০০ মিলিয়ন ডলারে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কা নিজেকে ঋণখেলাপি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। শ্রীলঙ্কার মতো একদা-সমৃদ্ধ একটা অর্থনীতি যে এভাবে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে, সেটাই অচিন্তনীয় ছিল দুই মাস আগেও। অথচ বিশ্বকে এই অবিশ্বাস্য পতন প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে এখন। অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত জনগণ এপ্রিল মাসজুড়ে কলম্বোর রাজপথে রাজাপক্ষে পরিবারের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের পদত্যাগের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু মাহিন্দা রাজাপক্ষের এক অবিমৃশ্যকারী ‘রাজনৈতিক গুন্ডামির’ কারণে ৯ মে এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন মারাত্মক সংঘাতপূর্ণ গৃহযুদ্ধে পর্যবসিত হলো, যেখানে একজন সংসদ সদস্যসহ আট ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। আন্দোলনের তীব্রতায় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হওয়ার পর মাহিন্দা তাঁর সমর্থকদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাসে করে কলম্বোয় নিয়ে আসেন। এই ভাড়াটে গুন্ডারা বিনা উসকানিতে মাসাধিককাল ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী জনতার ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে ও আরও বহু মানুষকে মারাত্মকভাবে আহত করে। এই হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং গুন্ডাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এর জেরে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীরা সরকার-সমর্থকদের গণপিটুনি দেওয়ার পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং রাজাপক্ষে পরিবারের বাড়িঘর আগুনে পোড়ানো শুরু করে দেয় এবং অনেককে মারধরের পাশাপাশি পানিতে চুবানো শুরু করে। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিশিয়াল বাসভবনে জনতা ঢুকে পড়তে উদ্যত হলে মাহিন্দা এবং তাঁর পরিবার হেলিকপ্টারে চড়ে সেখান থেকে ভেগে গিয়ে ত্রিনকোমালির একটি নৌঘাঁটিতে আশ্রয় নেয়। এখন গোতাবায়ার যাওয়ার পালা।
শ্রীলঙ্কার এই চলমান গণ-অভ্যুত্থান থেকে বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর জন্য অনেকগুলো শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও খামখেয়ালিপনা, পারিবারিক একনায়কতন্ত্র, হঠকারী সিদ্ধান্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে অবিমৃশ্যকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজাপক্ষে পরিবার দুই বছরের মধ্যেই শ্রীলঙ্কার মতো একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতিকে ধসিয়ে দিয়েছে এবং দেউলিয়া করে ফেলেছে। ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর বেশ কয়েক বছর শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি হয়েছিল, কিন্তু ‘ঋণ করে ঘি খাওয়ার’ এই নীতি রাজাপক্ষে পরিবারের শাসনকে অবশ্যম্ভাবী পতনের দিকে ধাবিত করেছে এবং শ্রীলঙ্কার জনগণকেও দুর্দশার অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করেছে। করোনাভাইরাস মহামারি এই পতনকে ত্বরান্বিত করেছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক মহাসংকটের আলামতগুলো মহামারির বহু আগেই স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল। নির্বাচিত সরকার হলেই খামখেয়ালি ও স্বেচ্ছাচারিতার লাইসেন্স জনগণ কাউকে দেয় না। বিদেশি ঋণ পাওয়া গেলেই যথার্থ প্রকল্প মূল্যায়ন ব্যতিরেকে কারও ইচ্ছামাফিক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের পরিণাম কখনোই শুভ হয় না। বাংলাদেশেও প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের পরিবর্তে যদি গ্ল্যামারাস ও স্বল্প-প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ অব্যাহত থাকে, তাহলে শ্রীলঙ্কার মতো ঋণগ্রস্ততার ফাঁদে পড়তে বাংলাদেশেরও দেরি হবে না। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টের ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ২০২২ সালের মে মাসে ৪১ বিলিয়ন ডলার হয়ে গেছে। চলমান মেগা-প্রজেক্টগুলোর ব্যয়ের ধারাবাহিকতায় বৈদেশিক ঋণ ৯১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ মাসে বাংলাদেশের আমদানি গত বছরের চেয়ে ৪৬ শতাংশ বেড়ে গেছে, যেটাকে আসন্ন মহাবিপদের ‘অশনিসংকেত’ আখ্যায়িত করাই সমীচীন। এই গতিতে আমদানি এলসি খোলা অব্যাহত থাকলে ২০২২ সালের ৩০ জুন ২০২১-২২ অর্থবছরের মোট আমদানি ৮২-৮৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাবে। এর মানে, এই অর্থবছরের রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর প্রাক্কলন সত্ত্বেও অর্থবছরের শেষে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমান অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে যাবে। অতএব, আমাদের ব্যালান্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট অ্যাকাউন্টে এ বছর প্রায় ১০-১২ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।
করোনাভাইরাস মহামারির তাণ্ডব কমতে না কমতেই ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং আগ্রাসন মোকাবিলায় পশ্চিমা দেশগুলোর সহায়তায় ইউক্রেনের মরণপণ প্রতিরোধ সারা বিশ্বকে এক ভয়াবহ যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে নিক্ষেপ করেছে। সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশের আমদানি ব্যয় ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধির পেছনে এটাও বড় কারণ। কিন্তু আমদানি এলসি বেলাগাম গতিতে বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ ওভার ইনভয়েসিং পদ্ধতিতে বিদেশে পুঁজি পাচার বেড়ে যাওয়া। উপরন্তু করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে হুন্ডি পদ্ধতি বেশ খানিকটা ঝিমিয়ে পড়েছিল চাহিদা এবং সরবরাহ—দুই দিক থেকেই। এখন আবার হুন্ডি ব্যবসা চাঙা হয়ে উঠেছে। কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ৯৫ টাকায় উঠে গেছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত আন্তব্যাংক লেনদেনে ব্যবহৃত ডলারের দামের চেয়ে আট টাকা বেশি। এই গ্যাপ কমাতে না পারলে হুন্ডির দাপট বাড়তেই থাকবে, ফরমাল চ্যানেলের রেমিট্যান্সে যা ধস নামাবে। সাধু সাবধান!
ড. মইনুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশের আমদানি ব্যয় ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধির পেছনে এটাও বড় কারণ। কিন্তু আমদানি এলসি বেলাগাম গতিতে বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ ওভার ইনভয়েসিং পদ্ধতিতে বিদেশে পুঁজি পাচার বেড়ে যাওয়া।
শ্রীলঙ্কার ‘লঙ্কাকাণ্ড’ দেশটাকে চরম অরাজকতায় ডোবাতে চলেছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ ছিল শ্রীলঙ্কা। প্রায় শতভাগ জনগণ ছিল শিক্ষিত। দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ছিল ভারতের কেরালার পর দক্ষিণ এশিয়ার সেরা। চাল উৎপাদনে শ্রীলঙ্কা ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। মানুষের মাথাপিছু জিডিপি ছিল প্রায় ৪ হাজার ডলার। জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা ছিল সবচেয়ে অগ্রগামী। ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধে বিজয়ের পর চীনের ঋণের অর্থে শ্রীলঙ্কা অনেকগুলো স্বল্প-প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করে। এর পাশাপাশি ‘সভরেন বন্ড’ ছেড়ে তারা দেশ-বিদেশের অর্থবাজার থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার ঋণ সংগ্রহ করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করার প্রয়াস চালায়। কিন্তু প্রকল্পগুলো থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে মাহিন্দাসহ রাজাপক্ষে পরিবারের অন্য সদস্যরা কোটি কোটি ডলার আত্মসাৎ করার অভিযোগ চরম আকার ধারণ করায় ২০১৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাহিন্দা রাজাপক্ষে মাইথ্রিপালা সিরিসেনার কাছে পরাজিত হয়ে ক্ষমতাচ্যুত হন।
কিন্তু সিরিসেনা সরকার মাহিন্দার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগগুলো প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাহিন্দার ভাই গোতাবায়া রাজাপক্ষে অনেকগুলো ‘পপুলিস্ট’ অঙ্গীকারের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার ভোটারদের মন জয় করে আবার বিজয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হন। ওই নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী গোতাবায়া ১৫ শতাংশ জেনারেল সেলস ট্যাক্সকে ৮ শতাংশে নামিয়ে ফেলেন এবং ২ শতাংশ ন্যাশনাল রিবিল্ডিং ট্যাক্সকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। এতে খুশি হয়ে ২০২০ সালের সংসদীয় নির্বাচনে ভোটাররা রাজাপক্ষে পরিবারের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলকে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা সহকারে বিজয় এনে দেয়। মাহিন্দা আবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান, তাঁর সঙ্গে মন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন বাসিল রাজাপক্ষে, চামাল রাজাপক্ষে এবং পরবর্তী জেনারেশনের আরও দুজন রাজাপক্ষে। পরিবারতন্ত্র আর কাকে বলে! কিন্তু, এক দশকের ‘ঋণ করে ঘি খাওয়ার’ নীতি ২০২০ সালেই শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে শুরু করে। আয় বাড়াতে ব্যর্থ হয়ে চীনের অর্থে নির্মিত হাম্বানটোটা গভীর সমুদ্রবন্দরকে ৯৯ বছরের জন্য চীনের কাছে লিজ দিতে বাধ্য হয় শ্রীলঙ্কা। একই সঙ্গে হাম্বানটোটায় নির্মিত রাজাপক্ষে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিও একেবারেই স্বল্প-ব্যবহৃত বিমানবন্দর হিসেবে বোঝায় পরিণত হয়।
অন্যদিকে ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি আঘাত হানার পর শ্রীলঙ্কায় মানুষ বেশি মারা না গেলেও অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক আয়ের সবচেয়ে বড় সূত্র পর্যটন খাতের আয় মহামারির ফলে রাতারাতি শূন্যে নেমে আসে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় প্রবাসী শ্রীলঙ্কানদের রেমিট্যান্সে মহামারি-সৃষ্ট ধস, যাতে দেশটির ফরমাল চ্যানেলের রেমিট্যান্স আয়ও প্রায় ৮০ শতাংশ সংকুচিত হয়ে যায়। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, রাতারাতি কৃষি খাতে ‘অরগানিক ফার্মিং’ চালুর জন্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশক আমদানি নিষিদ্ধ করে প্রদত্ত প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত, যার ফলে এক অভূতপূর্ব ফলন-বিপর্যয়ে পতিত হয় শ্রীলঙ্কার কৃষি খাত। ফলে শ্রীলঙ্কার কৃষিজাত খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন এক বছরে বিপর্যয়করভাবে এক-তৃতীয়াংশ কমে যায়, এবং খাদ্যশস্য আমদানির জন্য ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কাকে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়। এসব বিপর্যয়ের ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালেই শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমে বিপজ্জনক স্তরে চলে আসে। আমদানি করতে অসমর্থ হওয়ায় জ্বালানি তেল, এলএনজি, ভোজ্যতেল, চিনি, চাল এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি চরম আকার ধারণ করে, মানুষ রাস্তায় নেমে আসে রাজাপক্ষে পরিবারের উৎখাতের দাবিতে। ২০২২ সালের এপ্রিলে রিজার্ভ মাত্র ৫০০ মিলিয়ন ডলারে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কা নিজেকে ঋণখেলাপি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। শ্রীলঙ্কার মতো একদা-সমৃদ্ধ একটা অর্থনীতি যে এভাবে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে, সেটাই অচিন্তনীয় ছিল দুই মাস আগেও। অথচ বিশ্বকে এই অবিশ্বাস্য পতন প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে এখন। অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত জনগণ এপ্রিল মাসজুড়ে কলম্বোর রাজপথে রাজাপক্ষে পরিবারের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের পদত্যাগের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু মাহিন্দা রাজাপক্ষের এক অবিমৃশ্যকারী ‘রাজনৈতিক গুন্ডামির’ কারণে ৯ মে এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন মারাত্মক সংঘাতপূর্ণ গৃহযুদ্ধে পর্যবসিত হলো, যেখানে একজন সংসদ সদস্যসহ আট ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। আন্দোলনের তীব্রতায় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হওয়ার পর মাহিন্দা তাঁর সমর্থকদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাসে করে কলম্বোয় নিয়ে আসেন। এই ভাড়াটে গুন্ডারা বিনা উসকানিতে মাসাধিককাল ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী জনতার ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে ও আরও বহু মানুষকে মারাত্মকভাবে আহত করে। এই হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং গুন্ডাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এর জেরে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীরা সরকার-সমর্থকদের গণপিটুনি দেওয়ার পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং রাজাপক্ষে পরিবারের বাড়িঘর আগুনে পোড়ানো শুরু করে দেয় এবং অনেককে মারধরের পাশাপাশি পানিতে চুবানো শুরু করে। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিশিয়াল বাসভবনে জনতা ঢুকে পড়তে উদ্যত হলে মাহিন্দা এবং তাঁর পরিবার হেলিকপ্টারে চড়ে সেখান থেকে ভেগে গিয়ে ত্রিনকোমালির একটি নৌঘাঁটিতে আশ্রয় নেয়। এখন গোতাবায়ার যাওয়ার পালা।
শ্রীলঙ্কার এই চলমান গণ-অভ্যুত্থান থেকে বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর জন্য অনেকগুলো শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও খামখেয়ালিপনা, পারিবারিক একনায়কতন্ত্র, হঠকারী সিদ্ধান্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে অবিমৃশ্যকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজাপক্ষে পরিবার দুই বছরের মধ্যেই শ্রীলঙ্কার মতো একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতিকে ধসিয়ে দিয়েছে এবং দেউলিয়া করে ফেলেছে। ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর বেশ কয়েক বছর শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি হয়েছিল, কিন্তু ‘ঋণ করে ঘি খাওয়ার’ এই নীতি রাজাপক্ষে পরিবারের শাসনকে অবশ্যম্ভাবী পতনের দিকে ধাবিত করেছে এবং শ্রীলঙ্কার জনগণকেও দুর্দশার অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করেছে। করোনাভাইরাস মহামারি এই পতনকে ত্বরান্বিত করেছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক মহাসংকটের আলামতগুলো মহামারির বহু আগেই স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল। নির্বাচিত সরকার হলেই খামখেয়ালি ও স্বেচ্ছাচারিতার লাইসেন্স জনগণ কাউকে দেয় না। বিদেশি ঋণ পাওয়া গেলেই যথার্থ প্রকল্প মূল্যায়ন ব্যতিরেকে কারও ইচ্ছামাফিক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের পরিণাম কখনোই শুভ হয় না। বাংলাদেশেও প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের পরিবর্তে যদি গ্ল্যামারাস ও স্বল্প-প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ অব্যাহত থাকে, তাহলে শ্রীলঙ্কার মতো ঋণগ্রস্ততার ফাঁদে পড়তে বাংলাদেশেরও দেরি হবে না। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টের ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ২০২২ সালের মে মাসে ৪১ বিলিয়ন ডলার হয়ে গেছে। চলমান মেগা-প্রজেক্টগুলোর ব্যয়ের ধারাবাহিকতায় বৈদেশিক ঋণ ৯১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ মাসে বাংলাদেশের আমদানি গত বছরের চেয়ে ৪৬ শতাংশ বেড়ে গেছে, যেটাকে আসন্ন মহাবিপদের ‘অশনিসংকেত’ আখ্যায়িত করাই সমীচীন। এই গতিতে আমদানি এলসি খোলা অব্যাহত থাকলে ২০২২ সালের ৩০ জুন ২০২১-২২ অর্থবছরের মোট আমদানি ৮২-৮৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাবে। এর মানে, এই অর্থবছরের রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর প্রাক্কলন সত্ত্বেও অর্থবছরের শেষে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমান অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে যাবে। অতএব, আমাদের ব্যালান্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট অ্যাকাউন্টে এ বছর প্রায় ১০-১২ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।
করোনাভাইরাস মহামারির তাণ্ডব কমতে না কমতেই ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং আগ্রাসন মোকাবিলায় পশ্চিমা দেশগুলোর সহায়তায় ইউক্রেনের মরণপণ প্রতিরোধ সারা বিশ্বকে এক ভয়াবহ যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে নিক্ষেপ করেছে। সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশের আমদানি ব্যয় ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধির পেছনে এটাও বড় কারণ। কিন্তু আমদানি এলসি বেলাগাম গতিতে বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ ওভার ইনভয়েসিং পদ্ধতিতে বিদেশে পুঁজি পাচার বেড়ে যাওয়া। উপরন্তু করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে হুন্ডি পদ্ধতি বেশ খানিকটা ঝিমিয়ে পড়েছিল চাহিদা এবং সরবরাহ—দুই দিক থেকেই। এখন আবার হুন্ডি ব্যবসা চাঙা হয়ে উঠেছে। কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ৯৫ টাকায় উঠে গেছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত আন্তব্যাংক লেনদেনে ব্যবহৃত ডলারের দামের চেয়ে আট টাকা বেশি। এই গ্যাপ কমাতে না পারলে হুন্ডির দাপট বাড়তেই থাকবে, ফরমাল চ্যানেলের রেমিট্যান্সে যা ধস নামাবে। সাধু সাবধান!
ড. মইনুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশের আমদানি ব্যয় ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধির পেছনে এটাও বড় কারণ। কিন্তু আমদানি এলসি বেলাগাম গতিতে বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ ওভার ইনভয়েসিং পদ্ধতিতে বিদেশে পুঁজি পাচার বেড়ে যাওয়া।
২১ মে ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশের আমদানি ব্যয় ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধির পেছনে এটাও বড় কারণ। কিন্তু আমদানি এলসি বেলাগাম গতিতে বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ ওভার ইনভয়েসিং পদ্ধতিতে বিদেশে পুঁজি পাচার বেড়ে যাওয়া।
২১ মে ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশের আমদানি ব্যয় ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধির পেছনে এটাও বড় কারণ। কিন্তু আমদানি এলসি বেলাগাম গতিতে বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ ওভার ইনভয়েসিং পদ্ধতিতে বিদেশে পুঁজি পাচার বেড়ে যাওয়া।
২১ মে ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশের আমদানি ব্যয় ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধির পেছনে এটাও বড় কারণ। কিন্তু আমদানি এলসি বেলাগাম গতিতে বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ ওভার ইনভয়েসিং পদ্ধতিতে বিদেশে পুঁজি পাচার বেড়ে যাওয়া।
২১ মে ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫