Ajker Patrika

যানবাহনে নামাজ আদায়ের বিধান

আবদুল আযীয কাসেমি
যানবাহনে নামাজ আদায়ের বিধান

প্রশ্ন: ভ্রমণকালে যানবাহনে নামাজ আদায় করা যাবে? কীভাবে নামাজ আদায় করতে হবে? কিবলা কীভাবে ঠিক রাখতে হবে—বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
নাফিজ আদনান, ঢাকা

উত্তর: সফরের সময়ও গুরুত্ব দিয়ে নামাজ আদায় করা আবশ্যক। যানবাহনে নামাজের সময় হয়ে গেলে, উপযুক্ত পরিবেশ থাকলে যথানিয়মে নামাজ আদায় করা চাই। তবে কখনো কখনো প্রয়োজনের কারণে কিছুটা শিথিলতা আছে। নিচে যানবাহনে নামাজ আদায়ের বিধান তুলে ধরা হলো:

স্থলযান: সাধারণত বাসে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিকভাবে নামাজ পড়া যায় না। তাই কাছাকাছি যাতায়াতের ক্ষেত্রে গন্তব্যে পৌঁছে নামাজ আদায় করবেন। ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগেই গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না মনে হলে গাড়ি থেকে নেমে নামাজ আদায় করবেন। দূরের যাত্রা হলে অথবা বাস থেকে নামলে ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা থাকলে বা বাস না থামলে সিটেই যেভাবে সম্ভব বসে বা ইশারায় নামাজ আদায় করে নেওয়া যাবে। তবে পরবর্তী সময়ে সতর্কতামূলক এর কাজা করে নেওয়া ভালো। 
রেল যদি স্টেশনে থেমে থাকে এবং প্ল্যাটফর্মে নামাজের ব্যবস্থাও থাকে, তারপরও রেলের ওপর নামাজ আদায় করা জায়েজ। চলন্ত রেলে নামাজ পড়া বাইরে সমতলে নামাজ পড়ার মতোই।

নৌযান: লঞ্চ যদি উপকূলে নোঙর করা থাকে, শান্ত থাকে, দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা সম্ভব হয়, তবে দাঁড়িয়েই নামাজ আদায় করতে হবে। নোঙর করা আছে এবং সাগর অশান্ত হওয়ায় দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা সম্ভব নয়, তবে লঞ্চ থেকে নেমে নামাজ আদায়ের সুযোগ আছে, তাহলে লঞ্চে নামাজ বৈধ নয়। চলন্ত লঞ্চে দাঁড়াতে না পারলে সর্বসম্মতিক্রমে বসে নামাজ আদায় করা যাবে। আর দাঁড়াতে পারলে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে, বসে আদায় করলেও নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে, তবে তা মাকরুহ হবে। ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ (রহ.) বলেন, দাঁড়িয়েই নামাজ আদায় করতে হবে। দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়ের কারণে মাথা চক্কর দিলে সর্বসম্মতিক্রমে বসেই নামাজ পড়া যাবে। 

আকাশযান: সমতলের মতো উড়োজাহাজেও নামাজ আদায় করা যাবে। কাবা শরিফকেই সামনে রেখে নামাজ পড়তে হবে—এ রকম কোনো বাধ্যবাধকতা নেই; বরং কাবার বরাবর ওপরের দিকে পুরো বায়ুমণ্ডলই কিবলা। তাই যত উঁচু স্থানেই মানুষ থাকুক, নামাজ আদায় করা যাবে। 

যানবাহনে কিবলা ঠিক রাখা: যানবাহনে কিবলামুখী হয়ে নামাজ আদায়ের সুযোগ থাকলে ফরজ নামাজ শুরুর সময় এবং নামাজ পড়াকালীন উভয় অবস্থাতেই কিবলামুখী হওয়া জরুরি। যদি কিবলামুখী হয়ে নামাজ শুরুর পর যানবাহন দিক পরিবর্তন করে, তখন মুসল্লিরও দিক পরিবর্তন করা চাই। যদি যানবাহনে কিবলামুখী হয়ে নামাজ আদায়ের সুযোগ না থাকে এবং নেমে যাওয়ারও সুযোগ না থাকে, তবে ফরজ নামাজ মুসল্লি নিজের সুবিধামতো আদায় করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে রুকু-সিজদা করতে পারলে পরে নামাজের পুনরাবৃত্তির দরকার নেই। যদি ইশারায় আদায় করতে হয়, তবে সতর্কতামূলক নামাজের পুনরাবৃত্তি করা উচিত। 

সূত্র: জাদিদ ফিকহি মাসায়েল: ১ / ৮৭-৯০ 

উত্তর দিয়েছেন
আবদুল আযীয কাসেমি
শিক্ষক ও হাদিস গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত