Ajker Patrika

জোড়াতালির সংস্কারকাজ

মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া)
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২২, ১২: ৩৫
জোড়াতালির সংস্কারকাজ

কুমারখালী উপজেলার সান্দিয়ারা থেকে লাহিনীপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়ক বেহাল। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। কোথাও সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সড়কটি সংস্কারের জন্য ১৫ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর। ২০১৯ সালে কাজ শুরু করে ২০২০ সালে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সন্তোষজনক কাজ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বাতিল করে প্রকৌশলী অধিদপ্তর। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাতিলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে। এতে ঝুলে যায় সংস্কারকাজ। সম্প্রতি এ সড়কে শুরু হয়েছে জরুরি সংস্কারকাজ।

জানা গেছে, সড়কে চলাচল সচল রাখতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর জরুরি মেরামতের জন্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের অধিক ভাঙা ও জরাজীর্ণ অংশে কাজ শুরু করেছে।

স্থানীয় ও চলাচলকারীরা জানান, জরুরি মেরামতের ২৮ লাখ টাকা কোনো কাজেই আসছে না। পাকা সড়কটি পাকার বদলে কাঁচা হচ্ছে। ধুলাবালি আর ঝাঁকুনি থেকেই গেছে। প্রতিদিনই হাজার হাজার যানবাহন ও মানুষ ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করছে।

সরেজমিন দেখা যায়, সড়কের প্রতি কদমে কদমে গর্ত। মাঝে মাঝে সড়কের দুপাশ ভাঙা। আবার কোথাও কোথাও চলছে জোড়াতালির সংস্কার। গাড়িতে উঠলেই ঝাঁকুনি আর ঝাঁকুনি। যানবাহনের সঙ্গে উড়ছে ধুলা।

উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জিকে ক্যানাল সংলগ্ন সড়কটি (সান্দিয়ারা থেকে লাহিনী কুমারখালীর অংশ) ৫ দশমিক ৫ মিটার কার্পেটিং এবং শোল্ডারসহ মোট ৭ দশমিক ৩২ মিটার চওড়া সংস্কার কাজের জন্য ১৫ কোটি ৭ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৩ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সঙ্গে ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর চুক্তি সম্পন্ন করে ফরিদপুর জেলার রাফিয়া কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও এম এম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড জেভি। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর কাজ শুরু হয়ে শেষ করার কথা ছিল ২০২০ বছরের ৩১ মে। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে নির্ধারিত সময়ে সন্তোষজনক কাজ করতে পারেনি ঠিকাদার।

উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, কাজের অগ্রগতি ও নির্ধারিত সময়ে সমাপ্তির জন্য ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর হতে ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১০ বারবার লিখিত তাগিদ দেওয়া হয়। তবুও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজের অগ্রগতি বন্ধ রাখে এবং নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে বাতিল করে নতুন স্টিমেট করা হয় পুনঃদরপত্র আহ্বান করার জন্য। কিন্তু ঠিকাদার হাইকোর্টে দরপত্র নিয়ে রিট করেন। ফলে আইনি জটিলতায় কাজ বন্ধ আছে। তবে মানুষের ভোগান্তি কমাতে বেশি ভাঙা স্থানগুলোতে সংস্কার করা হচ্ছে। প্রায় ২৮ লাখ টাকা চুক্তিমূল্যে কাজটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেলার মিরপুর উপজেলার বিজন নগর এলাকার মেসার্স খন্দকার এন্টারপ্রাইজ।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলীয় যদুবয়রা, চাপড়া, বাগুলাট, চাদপুর ও পান্টি ইউনিয়নবাসীর রাজধানী ও জেলা শহরে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটি এটি। এ ছাড়া জেলার খোকসা উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়নবাসী ও ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলাবাসীও তাদের নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে ব্যবহার করে এ সড়ক। এ অঞ্চলের মানুষ এ সড়ক দিয়েই পার্শ্ববর্তী আরও একটি জেলা মাগুরাতে যাওয়া-আসা করে। কিন্তু সড়কে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোটবড় গর্ত আর খানাখন্দ। পিচঢালায় ওঠে পাকা সড়কটিতে জমেছে ধুলাবালি আর কাদামাটি। প্রতিদিনই উল্টে যায়, ভেঙে যায় মাল ও যাত্রীবাহী গাড়ি, বিকল হয়ে পরে থাকে যানবাহন। সাম্প্রতিক সময়ে জোড়াতালির সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। এ সংস্কার কোনো কাজেই আসছে না।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম বলেন, ‘২০২০ সালে সংস্কারকাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদার ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে জেলে চলে যান। এতে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। নির্দিষ্ট সময়ে দৃশ্যমান কাজ না হওয়ায় ঠিকাদারকে বাতিল করা হয়। কিন্তু বাতিলকৃত ঠিকাদার হাইকোর্টে রিট করায় পুনঃদরপত্র আহ্বান করা সম্ভব হচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন সংস্কার কাজ না হওয়ায় সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। তাই মেইনটেন্যান্স জন্য ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। চলাচল সচল রাখার জন্য অতিরিক্ত ভাঙা অংশ সংস্কার করা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ