মহিউদ্দিন খান মোহন
১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরে জন্ম হয়েছিল এক নয়া ইতিহাসের। ৮ ঘণ্টা শ্রম ও শ্রমের ন্যায্য মজুরির দাবিতে সেদিন হে মার্কেটে ধর্মঘটি শ্রমিকদের ওপর মালিক ও সরকারপক্ষের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনী নির্বিচার গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল অসংখ্য শ্রমিককে।
শিকাগোর মাটি রঞ্জিত হয়েছিল অধিকার আদায়ের দাবিতে সোচ্চার শ্রমিকদের রক্তে। তার পর থেকেই ১ মে বিশ্বজুড়ে মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। যদিও আমেরিকা-কানাডাসহ কয়েকটি পুঁজিবাদী দেশ মে দিবস পালন করে না। তবে ১ মের রক্ত পিচ্ছিল পথ বেয়ে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক শ্রম আইন সব দেশই মানতে বাধ্য। বিশ্ব ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তন বা নয়া ইতিহাস সৃষ্টিকারী তারিখগুলোর মধ্যে তাই ১ মে
অবস্থান অনন্য। আমাদের দেশেও দিনটি মহান মে দিবস হিসেবে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রতিবছর পালিত হয়ে আসছে। ১৮৮৬ সালের ১৩৭ বছর পরে সেই আমেরিকাতেই নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি হলো। এবারের ঘটনাস্থল আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি। আর ইতিহাস সৃষ্টিকারীরা বাংলাদেশের নাগরিক। যেকোনো নতুন ইতিহাস সৃষ্টির গর্বে আমাদের ছাতি সাধারণত কয়েক ইঞ্চি স্ফীত হয়।
কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। উল্টো মনটা কেমন চুপসে গেছে। কারণ, যে ইতিহাস আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা সৃষ্টি করেছেন, তা যেমন লজ্জার, তেমনি বমি উদ্রেককারী; প্রমিত বাংলায় যাকে বলে ‘ন্যক্কারজনক’।
বিশ্বব্যাংক এবং বাংলাদেশের অংশীদারত্বের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যাংকের সদর দপ্তরের ভেতরে যখন অনুষ্ঠান চলছিল, তখন বাইরে চলছিল বাংলাদেশের রাজনীতির এক কদর্য মহড়া। প্রবাসী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় ওয়াশিংটনের রাস্তা যেন রূপ নিয়েছিল ঢাকার গুলিস্তান কিংবা পল্টনের। তাঁরা একে অপরের ওপর হামলে পড়েছিলেন জানবাজ যুদ্ধের শপথ নিয়ে। তাতে উভয় পক্ষের ১২ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশকে গলদঘর্ম হতে হয়েছে।
ওয়াশিংটনের রাজপথে বাংলাদেশের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত এই মল্লযুদ্ধ সচেতন ব্যক্তিদের বিস্ময়ে বিমূঢ় করে দিয়েছে। দেশের রাজনীতির নোংরামি বিদেশের মাটিতে সংক্রমিত হতে দেখে তাঁরা বেদনার্ত হয়েছেন। ঘটনাটি নিশ্চয়ই ওয়াশিংটনবাসীকে বিস্মিত করে থাকবে। সেখানে ছোটখাটো সংঘর্ষের ঘটনা হয়তো ঘটে, তবে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির কর্মীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে একে অপরের ওপর এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার ঘটনা বিরল। সে হিসাবে নতুন এক রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ওয়াশিংটনবাসীর হলো বলা যায়। ওই খণ্ডযুদ্ধের যেসব ভিডিও ক্লিপ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে, তাতে দেখা গেছে, বিদেশি নাগরিকেরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বাংলাদেশি দুই পক্ষের লাঠালাঠি প্রত্যক্ষ করছেন। তাঁরা কী ভাবছিলেন তা জানার কোনো সুযোগ নেই। তবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, ওয়াশিংটনের অধিবাসীরা এ ঘটনায় বিস্ময়ে হতবাক হয়ে থাকবেন। কারণ, রাজনৈতিক বিরোধিতায় এমন ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত তাঁদের ধারণারও অতীত।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফরের কর্মসূচির কথা প্রচারিত হওয়ার পরই বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভের প্রস্তুতি নেন। শুধু ওয়াশিংটন নয়, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য এলাকা থেকেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা সেখানে সমবেত হন। একই সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও একই স্থানে সমবেত হলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী নানান স্লোগান দিলে আওয়ামী লীগের কর্মীরাও পাল্টা স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে উভয় দলের কর্মীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হন।
আমাদের দেশের সরকারপ্রধানদের বিদেশ সফরের সময় বিরোধী দলের বিক্ষোভ প্রদর্শন নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এটা এখন আমাদের দেশের রাজনৈতিক কালচারের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণত সংশ্লিষ্ট দেশের পুলিশের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে এ ধরনের বিক্ষোভ কিংবা সংবর্ধনার আয়োজন বৈধ। ওয়াশিংটনেও হয়তো উভয় পক্ষই পুলিশের অনুমতি নিয়ে নিজ নিজ কর্মসূচি পালনে সমবেত হয়েছিল। এ ধরনের মুখোমুখি কর্মসূচিতে ইতিপূর্বে দু-এক জায়গায় ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটলেও চর দখলের স্টাইলে লাঠিসোঁটা নিয়ে মারামারি এই প্রথম।
এটা ঠিক ঘটনার পর আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপিকে তুলোধুনো করবেন শিষ্টাচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের জন্য, বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার জন্য। তাঁরা হয়তো এটাও বলবেন যে বিদেশের মাটিতে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মান ক্ষুণ্ন করার মতো ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপি গর্হিত অন্যায় করেছে। সচেতন ব্যক্তিরাও এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে কখনো সমর্থন করতে পারেন না। কিন্তু অতীত ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা। খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন তাঁর বিদেশ সফরের সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এয়ারপোর্ট কিংবা তাঁর অবস্থানের হোটেলের বাইরে একই কায়দায় বিক্ষোভ করেছেন। আমার এ কথাকে কেউ যদি এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রতি সমর্থন মনে করেন, তাহলে ভুল হবে। আমি বিশ্বাস করি, একটি মন্দ কাজের দৃষ্টান্ত টেনে আরেকটি মন্দ কাজকে জায়েজ করা যায় না। একটি মন্দ কাজ আরেকটি মন্দ কাজের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।
রাজনৈতিকভাবে আমরা যে ক্রমেই চরম অসহিষ্ণু হয়ে উঠছি, ওয়াশিংটনের ঘটনা এর বড় প্রমাণ। দেশের ভেতরে রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের প্রতি শত্রুসুলভ আচরণ করে, এটা জানা কথা। এখন বিদেশের মাটিতেও একই ঘটনা ঘটছে। ওয়াশিংটনে উপস্থিত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা ইচ্ছে করলে সংঘর্ষ এড়াতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অসহিষ্ণুতা এবং পেশিশক্তি দিয়ে একে অপরকে মোকাবিলার নীতি অবলম্বন করায় এই দুঃখজনক ঘটনার অবতারণা হয়েছে।
ঘটনার পরপরই নিউইয়র্কপ্রবাসী আমার বন্ধু কবি ও সাংবাদিক সালেম সুলেরী তাঁর ফেসবুক পেজে দুর্দান্ত মন্তব্য করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বাঙালিরা বিভাজন বিতর্কেও প্রবাসে নাম কুড়িয়েছে। দেশের যেকোনো রাজনৈতিক প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে বিরোধিতা থাকবেই।
বিমানবন্দরে এক পক্ষ দেখায় কালো পতাকা। সোচ্চার স্লোগান ও ব্যানারে লেখা, ‘‘গো ব্যাক বাংলাদেশ’’। অন্য পক্ষ ব্যানার-ফেস্টুনে জানায় ‘‘ওয়েলকাম আওয়ার লিডার’’। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আগমনে বিমানবন্দর থাকে তটস্থ। নিরাপত্তা, টহল, অ্যাম্বুলেন্স—বিশেষ ব্যবস্থা নিতেই হয়।...১৪৭ (আসলে ১৩৭) বছরের পয়লা মে এবার নতুন রেকর্ড পেল বাংলাদেশের প্রধান দুটো রাজনৈতিক দলের ‘‘হাইপোথিটিক্যাল কমিটি’’র সহিংসতা। উল্লেখ্য, অর্থনৈতিক মন্দায় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফকে ভীষণ প্রয়োজন বাংলাদেশের। অনেক প্রত্যাশা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফরটি করছিলেন। কিন্তু তাঁর পদত্যাগ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী আন্দোলন বিশ্বের নীতিনির্ধারকদের কাছে বিষয়টি নেতিবাচক ফল আনবে—সচেতন মহল এমনটিই আশঙ্কা করছেন।’
কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করলেও বন্ধু সালেম সুলেরীর অভিমতের সঙ্গে আমি অন্তত দ্বিমত পোষণ করব না। আওয়ামী লীগের বন্ধুরা হয়তো বলবেন, বিএনপির এসব বিক্ষোভ-কালো পতাকা সরকারের ইমেজে কোনো আঁচড় কাটতে পারবে না। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক দল বা সরকার পানিতে সাঁতার কাটা হাঁস নয় যে তীরে উঠে গা ঝাড়া দিলেই পানি ঝরে যাবে।
সরকারপ্রধান বিদেশ সফরে গেলেই তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের যে অনৈতিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে, এর অবসান হওয়া দরকার। আর সে জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিবেচনাবোধ ও সহিষ্ণুতার কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র, ‘এভরি অ্যাকশন হ্যাজ এন অপজিট অ্যান্ড ইকুয়াল রিয়েকশন’, অর্থাৎ ‘সব ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে’ স্মরণে রাখা বাঞ্ছনীয়।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরে জন্ম হয়েছিল এক নয়া ইতিহাসের। ৮ ঘণ্টা শ্রম ও শ্রমের ন্যায্য মজুরির দাবিতে সেদিন হে মার্কেটে ধর্মঘটি শ্রমিকদের ওপর মালিক ও সরকারপক্ষের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনী নির্বিচার গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল অসংখ্য শ্রমিককে।
শিকাগোর মাটি রঞ্জিত হয়েছিল অধিকার আদায়ের দাবিতে সোচ্চার শ্রমিকদের রক্তে। তার পর থেকেই ১ মে বিশ্বজুড়ে মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। যদিও আমেরিকা-কানাডাসহ কয়েকটি পুঁজিবাদী দেশ মে দিবস পালন করে না। তবে ১ মের রক্ত পিচ্ছিল পথ বেয়ে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক শ্রম আইন সব দেশই মানতে বাধ্য। বিশ্ব ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তন বা নয়া ইতিহাস সৃষ্টিকারী তারিখগুলোর মধ্যে তাই ১ মে
অবস্থান অনন্য। আমাদের দেশেও দিনটি মহান মে দিবস হিসেবে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রতিবছর পালিত হয়ে আসছে। ১৮৮৬ সালের ১৩৭ বছর পরে সেই আমেরিকাতেই নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি হলো। এবারের ঘটনাস্থল আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি। আর ইতিহাস সৃষ্টিকারীরা বাংলাদেশের নাগরিক। যেকোনো নতুন ইতিহাস সৃষ্টির গর্বে আমাদের ছাতি সাধারণত কয়েক ইঞ্চি স্ফীত হয়।
কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। উল্টো মনটা কেমন চুপসে গেছে। কারণ, যে ইতিহাস আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা সৃষ্টি করেছেন, তা যেমন লজ্জার, তেমনি বমি উদ্রেককারী; প্রমিত বাংলায় যাকে বলে ‘ন্যক্কারজনক’।
বিশ্বব্যাংক এবং বাংলাদেশের অংশীদারত্বের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যাংকের সদর দপ্তরের ভেতরে যখন অনুষ্ঠান চলছিল, তখন বাইরে চলছিল বাংলাদেশের রাজনীতির এক কদর্য মহড়া। প্রবাসী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় ওয়াশিংটনের রাস্তা যেন রূপ নিয়েছিল ঢাকার গুলিস্তান কিংবা পল্টনের। তাঁরা একে অপরের ওপর হামলে পড়েছিলেন জানবাজ যুদ্ধের শপথ নিয়ে। তাতে উভয় পক্ষের ১২ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশকে গলদঘর্ম হতে হয়েছে।
ওয়াশিংটনের রাজপথে বাংলাদেশের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত এই মল্লযুদ্ধ সচেতন ব্যক্তিদের বিস্ময়ে বিমূঢ় করে দিয়েছে। দেশের রাজনীতির নোংরামি বিদেশের মাটিতে সংক্রমিত হতে দেখে তাঁরা বেদনার্ত হয়েছেন। ঘটনাটি নিশ্চয়ই ওয়াশিংটনবাসীকে বিস্মিত করে থাকবে। সেখানে ছোটখাটো সংঘর্ষের ঘটনা হয়তো ঘটে, তবে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির কর্মীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে একে অপরের ওপর এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার ঘটনা বিরল। সে হিসাবে নতুন এক রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ওয়াশিংটনবাসীর হলো বলা যায়। ওই খণ্ডযুদ্ধের যেসব ভিডিও ক্লিপ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে, তাতে দেখা গেছে, বিদেশি নাগরিকেরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বাংলাদেশি দুই পক্ষের লাঠালাঠি প্রত্যক্ষ করছেন। তাঁরা কী ভাবছিলেন তা জানার কোনো সুযোগ নেই। তবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, ওয়াশিংটনের অধিবাসীরা এ ঘটনায় বিস্ময়ে হতবাক হয়ে থাকবেন। কারণ, রাজনৈতিক বিরোধিতায় এমন ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত তাঁদের ধারণারও অতীত।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফরের কর্মসূচির কথা প্রচারিত হওয়ার পরই বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভের প্রস্তুতি নেন। শুধু ওয়াশিংটন নয়, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য এলাকা থেকেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা সেখানে সমবেত হন। একই সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও একই স্থানে সমবেত হলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী নানান স্লোগান দিলে আওয়ামী লীগের কর্মীরাও পাল্টা স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে উভয় দলের কর্মীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হন।
আমাদের দেশের সরকারপ্রধানদের বিদেশ সফরের সময় বিরোধী দলের বিক্ষোভ প্রদর্শন নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এটা এখন আমাদের দেশের রাজনৈতিক কালচারের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণত সংশ্লিষ্ট দেশের পুলিশের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে এ ধরনের বিক্ষোভ কিংবা সংবর্ধনার আয়োজন বৈধ। ওয়াশিংটনেও হয়তো উভয় পক্ষই পুলিশের অনুমতি নিয়ে নিজ নিজ কর্মসূচি পালনে সমবেত হয়েছিল। এ ধরনের মুখোমুখি কর্মসূচিতে ইতিপূর্বে দু-এক জায়গায় ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটলেও চর দখলের স্টাইলে লাঠিসোঁটা নিয়ে মারামারি এই প্রথম।
এটা ঠিক ঘটনার পর আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপিকে তুলোধুনো করবেন শিষ্টাচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের জন্য, বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার জন্য। তাঁরা হয়তো এটাও বলবেন যে বিদেশের মাটিতে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মান ক্ষুণ্ন করার মতো ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপি গর্হিত অন্যায় করেছে। সচেতন ব্যক্তিরাও এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে কখনো সমর্থন করতে পারেন না। কিন্তু অতীত ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা। খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন তাঁর বিদেশ সফরের সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এয়ারপোর্ট কিংবা তাঁর অবস্থানের হোটেলের বাইরে একই কায়দায় বিক্ষোভ করেছেন। আমার এ কথাকে কেউ যদি এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রতি সমর্থন মনে করেন, তাহলে ভুল হবে। আমি বিশ্বাস করি, একটি মন্দ কাজের দৃষ্টান্ত টেনে আরেকটি মন্দ কাজকে জায়েজ করা যায় না। একটি মন্দ কাজ আরেকটি মন্দ কাজের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।
রাজনৈতিকভাবে আমরা যে ক্রমেই চরম অসহিষ্ণু হয়ে উঠছি, ওয়াশিংটনের ঘটনা এর বড় প্রমাণ। দেশের ভেতরে রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের প্রতি শত্রুসুলভ আচরণ করে, এটা জানা কথা। এখন বিদেশের মাটিতেও একই ঘটনা ঘটছে। ওয়াশিংটনে উপস্থিত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা ইচ্ছে করলে সংঘর্ষ এড়াতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অসহিষ্ণুতা এবং পেশিশক্তি দিয়ে একে অপরকে মোকাবিলার নীতি অবলম্বন করায় এই দুঃখজনক ঘটনার অবতারণা হয়েছে।
ঘটনার পরপরই নিউইয়র্কপ্রবাসী আমার বন্ধু কবি ও সাংবাদিক সালেম সুলেরী তাঁর ফেসবুক পেজে দুর্দান্ত মন্তব্য করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বাঙালিরা বিভাজন বিতর্কেও প্রবাসে নাম কুড়িয়েছে। দেশের যেকোনো রাজনৈতিক প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে বিরোধিতা থাকবেই।
বিমানবন্দরে এক পক্ষ দেখায় কালো পতাকা। সোচ্চার স্লোগান ও ব্যানারে লেখা, ‘‘গো ব্যাক বাংলাদেশ’’। অন্য পক্ষ ব্যানার-ফেস্টুনে জানায় ‘‘ওয়েলকাম আওয়ার লিডার’’। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আগমনে বিমানবন্দর থাকে তটস্থ। নিরাপত্তা, টহল, অ্যাম্বুলেন্স—বিশেষ ব্যবস্থা নিতেই হয়।...১৪৭ (আসলে ১৩৭) বছরের পয়লা মে এবার নতুন রেকর্ড পেল বাংলাদেশের প্রধান দুটো রাজনৈতিক দলের ‘‘হাইপোথিটিক্যাল কমিটি’’র সহিংসতা। উল্লেখ্য, অর্থনৈতিক মন্দায় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফকে ভীষণ প্রয়োজন বাংলাদেশের। অনেক প্রত্যাশা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফরটি করছিলেন। কিন্তু তাঁর পদত্যাগ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী আন্দোলন বিশ্বের নীতিনির্ধারকদের কাছে বিষয়টি নেতিবাচক ফল আনবে—সচেতন মহল এমনটিই আশঙ্কা করছেন।’
কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করলেও বন্ধু সালেম সুলেরীর অভিমতের সঙ্গে আমি অন্তত দ্বিমত পোষণ করব না। আওয়ামী লীগের বন্ধুরা হয়তো বলবেন, বিএনপির এসব বিক্ষোভ-কালো পতাকা সরকারের ইমেজে কোনো আঁচড় কাটতে পারবে না। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক দল বা সরকার পানিতে সাঁতার কাটা হাঁস নয় যে তীরে উঠে গা ঝাড়া দিলেই পানি ঝরে যাবে।
সরকারপ্রধান বিদেশ সফরে গেলেই তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের যে অনৈতিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে, এর অবসান হওয়া দরকার। আর সে জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিবেচনাবোধ ও সহিষ্ণুতার কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র, ‘এভরি অ্যাকশন হ্যাজ এন অপজিট অ্যান্ড ইকুয়াল রিয়েকশন’, অর্থাৎ ‘সব ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে’ স্মরণে রাখা বাঞ্ছনীয়।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
২ দিন আগেবিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪