Ajker Patrika

দেশের নোংরামি বিদেশের মাটিতে

মহিউদ্দিন খান মোহন
আপডেট : ০৭ মে ২০২৩, ১১: ০১
দেশের নোংরামি বিদেশের মাটিতে

১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরে জন্ম হয়েছিল এক নয়া ইতিহাসের। ৮ ঘণ্টা শ্রম ও শ্রমের ন্যায্য মজুরির দাবিতে সেদিন হে মার্কেটে ধর্মঘটি শ্রমিকদের ওপর মালিক ও সরকারপক্ষের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনী নির্বিচার গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল অসংখ্য শ্রমিককে।

শিকাগোর মাটি রঞ্জিত হয়েছিল অধিকার আদায়ের দাবিতে সোচ্চার শ্রমিকদের রক্তে। তার পর থেকেই ১ মে বিশ্বজুড়ে মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। যদিও আমেরিকা-কানাডাসহ কয়েকটি পুঁজিবাদী দেশ মে দিবস পালন করে না। তবে ১ মের রক্ত পিচ্ছিল পথ বেয়ে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক শ্রম আইন সব দেশই মানতে বাধ্য। বিশ্ব ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তন বা নয়া ইতিহাস সৃষ্টিকারী তারিখগুলোর মধ্যে তাই ১ মে

অবস্থান অনন্য। আমাদের দেশেও দিনটি মহান মে দিবস হিসেবে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রতিবছর পালিত হয়ে আসছে। ১৮৮৬ সালের ১৩৭ বছর পরে সেই আমেরিকাতেই নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি হলো। এবারের ঘটনাস্থল আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি। আর ইতিহাস সৃষ্টিকারীরা বাংলাদেশের নাগরিক। যেকোনো নতুন ইতিহাস সৃষ্টির গর্বে আমাদের ছাতি সাধারণত কয়েক ইঞ্চি স্ফীত হয়।

কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। উল্টো মনটা কেমন চুপসে গেছে। কারণ, যে ইতিহাস আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা সৃষ্টি করেছেন, তা যেমন লজ্জার, তেমনি বমি উদ্রেককারী; প্রমিত বাংলায় যাকে বলে ‘ন্যক্কারজনক’।

বিশ্বব্যাংক এবং বাংলাদেশের অংশীদারত্বের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যাংকের সদর দপ্তরের ভেতরে যখন অনুষ্ঠান চলছিল, তখন বাইরে চলছিল বাংলাদেশের রাজনীতির এক কদর্য মহড়া। প্রবাসী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় ওয়াশিংটনের রাস্তা যেন রূপ নিয়েছিল ঢাকার গুলিস্তান কিংবা পল্টনের। তাঁরা একে অপরের ওপর হামলে পড়েছিলেন জানবাজ যুদ্ধের শপথ নিয়ে। তাতে উভয় পক্ষের ১২ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশকে গলদঘর্ম হতে হয়েছে।

ওয়াশিংটনের রাজপথে বাংলাদেশের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত এই মল্লযুদ্ধ সচেতন ব্যক্তিদের বিস্ময়ে বিমূঢ় করে দিয়েছে। দেশের রাজনীতির নোংরামি বিদেশের মাটিতে সংক্রমিত হতে দেখে তাঁরা বেদনার্ত হয়েছেন। ঘটনাটি নিশ্চয়ই ওয়াশিংটনবাসীকে বিস্মিত করে থাকবে। সেখানে ছোটখাটো সংঘর্ষের ঘটনা হয়তো ঘটে, তবে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির কর্মীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে একে অপরের ওপর এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার ঘটনা বিরল। সে হিসাবে নতুন এক রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ওয়াশিংটনবাসীর হলো বলা যায়। ওই খণ্ডযুদ্ধের যেসব ভিডিও ক্লিপ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে, তাতে দেখা গেছে, বিদেশি নাগরিকেরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বাংলাদেশি দুই পক্ষের লাঠালাঠি প্রত্যক্ষ করছেন। তাঁরা কী ভাবছিলেন তা জানার কোনো সুযোগ নেই। তবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, ওয়াশিংটনের অধিবাসীরা এ ঘটনায় বিস্ময়ে হতবাক হয়ে থাকবেন। কারণ, রাজনৈতিক বিরোধিতায় এমন ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত তাঁদের ধারণারও অতীত।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফরের কর্মসূচির কথা প্রচারিত হওয়ার পরই বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভের প্রস্তুতি নেন। শুধু ওয়াশিংটন নয়, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য এলাকা থেকেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা সেখানে সমবেত হন। একই সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও একই স্থানে সমবেত হলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী নানান স্লোগান দিলে আওয়ামী লীগের কর্মীরাও পাল্টা স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে উভয় দলের কর্মীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হন।

আমাদের দেশের সরকারপ্রধানদের বিদেশ সফরের সময় বিরোধী দলের বিক্ষোভ প্রদর্শন নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এটা এখন আমাদের দেশের রাজনৈতিক কালচারের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণত সংশ্লিষ্ট দেশের পুলিশের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে এ ধরনের বিক্ষোভ কিংবা সংবর্ধনার আয়োজন বৈধ। ওয়াশিংটনেও হয়তো উভয় পক্ষই পুলিশের অনুমতি নিয়ে নিজ নিজ কর্মসূচি পালনে সমবেত হয়েছিল। এ ধরনের মুখোমুখি কর্মসূচিতে ইতিপূর্বে দু-এক জায়গায় ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটলেও চর দখলের স্টাইলে লাঠিসোঁটা নিয়ে মারামারি এই প্রথম।

এটা ঠিক ঘটনার পর আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপিকে তুলোধুনো করবেন শিষ্টাচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের জন্য, বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার জন্য। তাঁরা হয়তো এটাও বলবেন যে বিদেশের মাটিতে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মান ক্ষুণ্ন করার মতো ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপি গর্হিত অন্যায় করেছে। সচেতন ব্যক্তিরাও এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে কখনো সমর্থন করতে পারেন না। কিন্তু অতীত ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা।  খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন তাঁর বিদেশ সফরের সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এয়ারপোর্ট কিংবা তাঁর অবস্থানের হোটেলের বাইরে একই কায়দায় বিক্ষোভ করেছেন। আমার এ কথাকে কেউ যদি এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রতি সমর্থন মনে করেন, তাহলে ভুল হবে। আমি বিশ্বাস করি, একটি মন্দ কাজের দৃষ্টান্ত টেনে আরেকটি মন্দ কাজকে জায়েজ করা যায় না। একটি মন্দ কাজ আরেকটি মন্দ কাজের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।

রাজনৈতিকভাবে আমরা যে ক্রমেই চরম অসহিষ্ণু হয়ে উঠছি, ওয়াশিংটনের ঘটনা এর বড় প্রমাণ। দেশের ভেতরে রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের প্রতি শত্রুসুলভ আচরণ করে, এটা জানা কথা। এখন বিদেশের মাটিতেও একই ঘটনা ঘটছে। ওয়াশিংটনে উপস্থিত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা ইচ্ছে করলে সংঘর্ষ এড়াতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অসহিষ্ণুতা এবং পেশিশক্তি দিয়ে একে অপরকে মোকাবিলার নীতি অবলম্বন করায় এই দুঃখজনক ঘটনার অবতারণা হয়েছে।

ঘটনার পরপরই নিউইয়র্কপ্রবাসী আমার বন্ধু কবি ও সাংবাদিক সালেম সুলেরী তাঁর ফেসবুক পেজে দুর্দান্ত মন্তব্য করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বাঙালিরা বিভাজন বিতর্কেও প্রবাসে নাম কুড়িয়েছে। দেশের যেকোনো রাজনৈতিক প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে বিরোধিতা থাকবেই।

বিমানবন্দরে এক পক্ষ দেখায় কালো পতাকা। সোচ্চার স্লোগান ও ব্যানারে লেখা, ‘‘গো ব্যাক বাংলাদেশ’’। অন্য পক্ষ ব্যানার-ফেস্টুনে জানায় ‘‘ওয়েলকাম আওয়ার লিডার’’। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আগমনে বিমানবন্দর থাকে তটস্থ। নিরাপত্তা, টহল, অ্যাম্বুলেন্স—বিশেষ ব্যবস্থা নিতেই হয়।...১৪৭ (আসলে ১৩৭) বছরের পয়লা মে এবার নতুন রেকর্ড পেল বাংলাদেশের প্রধান দুটো রাজনৈতিক দলের ‘‘হাইপোথিটিক্যাল কমিটি’’র সহিংসতা। উল্লেখ্য, অর্থনৈতিক মন্দায় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফকে ভীষণ প্রয়োজন বাংলাদেশের। অনেক প্রত্যাশা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফরটি করছিলেন। কিন্তু তাঁর পদত্যাগ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী আন্দোলন বিশ্বের নীতিনির্ধারকদের কাছে বিষয়টি নেতিবাচক ফল আনবে—সচেতন মহল এমনটিই আশঙ্কা করছেন।’

কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করলেও বন্ধু সালেম সুলেরীর অভিমতের সঙ্গে আমি অন্তত দ্বিমত পোষণ করব না। আওয়ামী লীগের বন্ধুরা হয়তো বলবেন, বিএনপির এসব বিক্ষোভ-কালো পতাকা সরকারের ইমেজে কোনো আঁচড় কাটতে পারবে না। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক দল বা সরকার পানিতে সাঁতার কাটা হাঁস নয় যে তীরে উঠে গা ঝাড়া দিলেই পানি ঝরে যাবে।

সরকারপ্রধান বিদেশ সফরে গেলেই তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের যে অনৈতিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে, এর অবসান হওয়া দরকার। আর সে জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিবেচনাবোধ ও সহিষ্ণুতার কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র, ‘এভরি অ্যাকশন হ্যাজ এন অপজিট অ্যান্ড ইকুয়াল রিয়েকশন’, অর্থাৎ ‘সব ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে’ স্মরণে রাখা বাঞ্ছনীয়।

লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত