Ajker Patrika

৪ কোটি টাকাই পানিতে

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ৩০
৪ কোটি টাকাই পানিতে

২০১৫ সালে ৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন জাতিসংঘ পার্কে দুটি সুইমিংপুল ও জিমনেশিয়াম নির্মাণ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এরপর দীর্ঘ ৭ বছরেও এ দুটি সুইমিং পুল চালু করতে পারেনি চসিক। নির্মাণত্রুটির কারণে দীর্ঘ দিন অব্যবহৃত থাকার পর সেগুলো অপসারণে উদ্যোগ নিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। ওই পার্ককে ঘিরে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন একটি প্রকল্পও বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সংস্থাটি। এটি বাস্তবায়ন করতে চসিকনির্মিত এ দুটি সুইমিংপুল অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ সব কারণে গচ্চা যাচ্ছে সুইমিংপুল নির্মাণে খরচ হওয়া ৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। অপরিকল্পিতভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণেই এই অর্থের অপচয় হয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন চসিকের কর্মকর্তা। তাঁরা বলছেন, পরিকল্পিতভাবেই সুইমিংপুল দুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা একটি মামলা করায় সুইমিংপুল দুটি চালু করা সম্ভব হয়নি।

গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (চট্টগ্রাম জোন) মো. আবুল খায়ের বলেন, ‘পার্কটির উন্নয়নে ২০১৭ সালে আমরা একটি প্রকল্প নিয়েছিলাম। সিটি করপোরেশনের আপত্তির কারণে তখন সেটি বাস্তবায়ন করা যায়নি। করপোরেশন তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এখন আমরা ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিদ্যমান দুটি সুইমিং পুল অপসারণ করার প্রস্তাব দিয়েছে উপকারভোগীরা। সেই আলোকে আমরা গত সপ্তাহে পরিকল্পনা কমিশনে সুইমিং পুল দুটি অপসারণের প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’

সুইমিংপুল দুটি পরিকল্পিত ও মানসম্মতভাবে নির্মাণ করা হয়নি। তাই এগুলো বিদ্যমান রেখে নতুন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বলেও জানান আবুল খায়ের।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, জাতিসংঘ পার্কের যেই অংশে সুইমিংপুল নির্মাণ করা হয়েছে, সীমানাঘেরা ওই অংশের গেটটি বন্ধ। অপর অংশের চারপাশে সীমানা দেয়ালের কোনো অস্তিত্ব নেই। কিছু অংশ মাটি দিয়ে উঁচু করা হয়েছে। আবার কিছু অংশ আগের মতোই নিচু। এখানে কিছু ছোট ছোট গাছ দেখা যায়। মাঝে মাঝে বসার কিছু বেঞ্চ আছে। কিন্তু এসব বেঞ্চে বসার মতো কোনো পরিবেশ নেই। পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে পার্কের এ অংশটি। দীর্ঘদিন এসব সুইমিংপুল কেউ ব্যবহার করেনি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সুইমিংপুল নির্মাণের পর থেকেই বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ২০১৬ সালের দিকে একবার সাঁতার প্রতিযোগিতা হয় এখানে। এরপর আর কেউ এটি ব্যবহারের সুযোগ পায়নি।

এদিকে সুইমিংপুল নির্মাণের পর তা ফেলে রাখা এবং সেখানে নতুন করে প্রকল্প নেওয়াকে সরকারি অর্থের অপচয় বলে মন্তব্য করেছেন প্ল্যানার্স ফোরাম ফর চিটাগংয়ের সদস্য প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জবাবদিহি না থাকায় এ ধরনের অবস্থা তৈরি হচ্ছে। চেয়ারে বসেই ইচ্ছেমতো প্রকল্প নিচ্ছেন কেউ, বাস্তবায়নও করছেন। প্রকল্পগুলো থেকে সুফল পাওয়া যাবে কী যাবে না সেটি তাঁদের মাথায় থাকে না। যদি জবাবদিহি থাকত তাহলে কেউ এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারতেন না।’

সুভাষ বড়ুয়া আরও বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়। এর প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হয়। টেকনিক্যাল কমিটি করে তাঁদের মতামত অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এগুলো করা হয় না। হুটহাট করে কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। পরে দেখা যায়, এসব প্রকল্প মানুষের কোনো কাজে আসে না।

গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ‘পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান’ শিরোনামে জাতিসংঘ পার্কের উন্নয়নে প্রকল্প নেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার টাকা। কিন্তু চসিকের আপত্তিতে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে আটকে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল পুনর্বিন্যাস আনছে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলে

‘বাবার অসুস্থতায় পরামর্শ নিতে’ চিকিৎসকের বাসায় নারী, দুজনকে পুলিশে দিল স্থানীয়রা

১৪৬ যাত্রী নিয়ে ব্যাংককের পথে এক ঘণ্টা উড়ে মিয়ানমার থেকে ফিরে এল বিমানের সেই ফ্লাইট

৬ বছর পর চীন সফরে যাচ্ছেন মোদি, আসবেন পুতিনও

রাশিয়ার তেল চীনও কেনে, তবে ট্রাম্পের শুল্ক শুধু ভারতের ওপর কেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত