Ajker Patrika

পুকুরে শাপলার লালগালিচা

মোহাম্মদ উজ্জ্বল মহম্মদপুর (মাগুরা) 
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯: ০৯
পুকুরে শাপলার লালগালিচা

দুই পাশে ঘরের ব্যালকনি। পশ্চিমে রড-সিমেন্টের গোলাকার টেবিল আর চেয়ার। আয়েশ করে সেই চেয়ারে বসতেই চোখে পড়বে লালে ছেয়ে আছে পুকুর। কয়েক শ লাল শাপলা পুকুরের পানিতে লালগালিচা বিছিয়ে রেখেছে যেন। শরতের সকালে মৃদু হাওয়ায় একটি আরেকটির গায়ে এসে পড়ছে। একটি, দুটি, তিনটি নয়, পুরো পুকুরেই ছড়িয়ে আছে। লাল শাপলার চোখজুড়ানো হাসিতে প্রশান্তি আসে ক্লান্ত পথিকের প্রাণে।

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। তবে তার রং সাদা। লাল শাপলাও যে আছে, তা অনেকেই হয়তো জানেন না। কেউ কেউ ভুল করে মনে করেন এগুলো আসলে পদ্ম। গ্রামবাংলার বিল আর জলাশয়ে এখন লাল শাপলা খুব কম দেখা যায়। কালের বিবর্তনে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী। অনেক প্রকৃতিপ্রেমী বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণের চেষ্টা করছেন।

তেমনই বিলুপ্তপ্রায় লাল শাপলা সংরক্ষণে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে নিজ বাড়ির পুকুরে লাল শাপলার মেলা বসিয়েছেন মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বাবুখালী আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ রবিউল আলম। তাঁর সৃষ্টিশীল চিন্তা ও নতুন উদ্যোগের ফলে পুকুরে এখন শোভা পাচ্ছে রঙিন শাপলা।

মাগুরা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে বাবুখালী ইউনিয়নের চালিমিয়া গ্রাম। সবুজ শ্যামল এ গ্রামেই রয়েছে ‘সেঁজুতি’ নামের একটি বাড়ি।

সরেজমিনে গতকাল শুক্রবার সেঁজুতি নিবাসে মিলল লালগালিচা বিছানো পুকুরের। সারা পুকুর লাল শাপলায় সয়লাব। সেঁজুতিতে লাল শাপলা দেখার জন্য প্রকৃতিপ্রেমীরা প্রতিদিন ভিড় করছেন। গতকাল ভিড়টা একটু বেশিই ছিল। ছুটির দিন বলে কথা। পানির ওপর সূর্যের সোনালি রোদ পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়তেই শাপলারা নিজেদের গুটিয়ে নিতে শুরু করে। শাপলা ফুল সাধারণত রাতে জেগে থাকে। ভোরে গেলে দেখা মেলে লাল শাপলার মূল সৌন্দর্য।

বছর দুয়েক আগে সৈয়দ রবিউল আলম লাল শাপলার কিছু কন্দ এনে লাগিয়েছিলেন এখানে। তিনি মহেশপুর থেকে মোথা কন্দগুলো এনে প্রায় ৯ শতাংশ জমির ওই পুকুরে রোপণ করেন। তার পর থেকে নিবিড়ভাবে পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে গাছগুলো। সেখানেই এখন ফুটেছে পাঁচ শতাধিক লাল শাপলা। ভাবনার দিক থেকে সৈয়দ রবিউল আলমের এ উদ্যোগকে অনেকটা ব্যতিক্রম বলা যেতে পারে।

অধ্যক্ষ সৈয়দ রবিউল আলম বলেন, ‘লাল শাপলার নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখার জন্য আমি সুযোগ পেলেই গ্রামে আসি। এ যেন প্রকৃতির অপরূপ কারুকাজ। সকাল ৯টা পর্যন্ত শাপলাগুলো পূর্ণ ফুটন্ত অবস্থায় থাকে। পুকুরটিতে লাল শাপলার পাশাপাশি আমরা পদ্মফুলও চাষ করব বলে ভাবছি।’ তিনি আরও জানান, বর্তমান প্রজন্মের অনেক ছেলেমেয়ে লাল শাপলা চেনে না। এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এখানে এসে জানতে পারবে লাল শাপলার পরিচিতি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবদুস সোবহান জানান, লাল শাপলা একটি জলজ উদ্ভিদ এবং ওষধি বটে। বিলুপ্তপ্রায় লাল শাপলা এখন আর দেশের বিলঝিলে তেমন একটা দেখা যায় না। তবে অনেকে বাণিজ্যিকভাবে পুকুরে চাষ করছেন। সৈয়দ রবিউল আলমের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত