ফজলুল কবির

এই বঙ্গমুলুকে একেক সময় একেক ধারা তৈরি হয়, একটা প্রবণতা গণ হয়ে হাজির হয়। এটা এ মাটির রোগ শুধু, নাকি সব দেশে সব কালেই ছিল বা আছে, কে জানে। কেউ কিছু একটা করে বা লিখে বা বলে আলোচনায় এলে দেখা যায় অন্য অনেকেই সে পথে হাঁটছে। শব্দ ব্যবহারের সময়ও অনেককে দেখা যায় এই প্রবণতার ফেরে পড়তে। জনপরিসরে চালু শব্দ-রাজনীতির ফাঁদে পড়ে যেতে দেখা যায় অনেক বিদগ্ধ লেখককেও। অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে এমন অতিশয়োক্তি করতে দেখা যায় অনেককে, যা সাধারণ্যে মানালেও বুদ্ধিজীবিতার সঙ্গে যায় না।
এ প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। আগে প্রবণতার কিছু নমুনা দেখা যাক। মোবাইল ডিভাইসে যেদিন থেকে ফ্রন্ট ক্যামেরা যুক্ত হলো, সেদিন থেকেই সেলফি এক ভীষণ ট্রেন্ডি বিষয় হয়ে দাঁড়াল। হবে না কেন? কে না জানে, আত্মপ্রেমই বড় প্রেম। না, সেলফি এর আগেও মানুষ তুলেছে, কিন্তু ছবি তোলার ডিভাইসের ক্যামেরা ‘ফ্রন্টাল’ ছিল না বলে, এত বাড়বাড়ন্তি ছিল না। মুশকিল হলো, মোবাইল ডিভাইসে ফ্রন্ট ক্যামেরা আসার পর।
কতটা মুশকিল? মানুষ ভাইরাল সেলফি তুলতে অসম্ভব সাধনে নেমে পড়ছে। এই তো গত মে মাসে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় রেললাইনে সেলফি তুলতে গিয়ে এক কিশোর গুরুতর আহত হলো। শেষ পর্যন্ত মারাও গেল সে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। এটিই প্রথম নয়। এর আগেও রেললাইনে সেলফি তুলতে গিয়ে এই বঙ্গেই বহুজন মরেছে। বয়সের বিচারও নেই। মৃতের তালিকায় আছে শিশু-কিশোর থেকে মাঝবয়সীও। ফলে একে ঠিক কৈশোরিক উচ্ছ্বাস বা অ্যাডভেঞ্চারপ্রবণতা দিয়ে ব্র্যাকেটবন্দী করা চলে না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এমন হাজারটা প্রবণতার উদাহরণ দেওয়া যাবে। সেদিকে আর না যাওয়াই ভালো। লেখালেখি বা কথা বলার ক্ষেত্রেও দেখা মেলে এমন কিছু শব্দ ও প্রবণতার। গত কয়েক বছরে এমনই এক শব্দ ও তা ব্যবহারের প্রবণতা দেখা দিয়েছে—বিকল্পহীন। কথায় কথায় এটা, ওটা, সেটাকে ‘অবিকল্প’ ঘোষণার এক মারি দেখা দিয়েছে যেন। এতেও কৈশোরিক কোনো ব্যাপার নেই। বয়সনির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষই নানা উদ্দেশ্যে শব্দটি প্রয়োগ করছে। এই দেখে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে জগতে বিকল্পহীন বস্তু আসলে কী? আদৌ এমন কিছুর অস্তিত্ব আছে কী?
একটু খুলে বলা যাক। এই যে হঠাৎ লোডশেডিং চলছে গোটা দেশে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন অক্ষমতাই হোক বা সঞ্চালনজনিত সংকটই হোক, কিংবা আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেলের বাজারের ফেরেই হোক, বিদ্যুৎহীনতার কিন্তু নাভিশ্বাস ঠিকই উঠছে। এতে মেজাজ চড়ছে, ক্ষোভ হচ্ছে, নানা গুলতানি হচ্ছে শহর বা গ্রামেও। তাই বলে আলোহীন অন্ধকারে নিশ্চয় বসে থাকছেন না আপনি। একটা চার্জার লাইট, ব্যাটারি লাইট, জেনারেটর, আইপিএস, মোমবাতি, হারিকেন বা কুপিবাতি হলেও খুঁজে নিয়ে অন্ধকারের ভূতটাকে ঠিকই তাড়াচ্ছে মানুষ; যার যেমন সামর্থ্য আরকি। প্রতিপক্ষ যখন অন্ধকার, তখন কিন্তু সে আলোর বিবিধ উৎস ঠিকই খুঁজে নিচ্ছে। হতোদ্যম হয়ে কেউ বসে নেই।
আসা যাক যোগাযোগের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন বিশ্ব শাসন করা চিঠি এখন স্মৃতিগদ্য হয়ে গেছে। এ নিয়ে রোমান্টিক অতীতচারণ চলে, কিন্তু একে নিয়ে বসে থাকলে চলে না। তার বিকল্প হিসেবে এখন আছে হাজারটা মাধ্যম—মোবাইল, ল্যান্ডফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, আরও কত-কী! চিঠিপ্রেমী লোক এখন তার চিঠিপ্রেম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দেয়, চিঠি লেখে না। লাঙল গেছে, ট্রাক্টর এসেছে; জমি কিন্তু অনাবাদি নেই। সিনেমা হল বা টেলিভিশনের জায়গা ক্রমেই নিয়ে নিচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো। প্রমত্তা পদ্মা পাড়ে বইঠার নৌকার বিকল্প হিসেবে এসেছে ইঞ্জিনের নৌকা, তাকে হটিয়ে লঞ্চ, ফেরি ইত্যাদি; আর সবশেষে পদ্মা সেতু তো চোখের সামনেই হলো। এখন তো জলে না ভেসেই পদ্মা পার হচ্ছে মানুষ। মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে বিকল্প কাকে বলে।
শ্রীলঙ্কার দিকেই তাকানো যাক। বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি। সেখানে যে মাহিন্দা রাজাপক্ষে ‘উন্নয়নের গালগল্পে’ নিজেকে প্রায় ‘অবিকল্প’ ঘোষণা করেছিলেন, সেই তিনি এখন বিক্ষোভের মুখে সাবেক বনে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী। যে রাজাপক্ষে পরিবার দেশটির ভাগ্যবিধাতা হয়ে বসে ছিল দীর্ঘদিন, তার শেষ সদস্য হিসেবে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে বিক্ষোভের মুখেই প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ছাড়তে হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মাহিন্দা রাজাপক্ষকে প্রতিস্থাপন করা রনিল বিক্রমাসিংহেও পদত্যাগের পথে। সুতরাং দেখাই যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কায় ‘বিকল্পহীন’ শব্দটি ছিল এক মিথ কেবল।
একই খেলা চলছে এখন আর্জেন্টিনায়। পরিস্থিতি বিচারে তা শ্রীলঙ্কার মতোই। মূল্যস্ফীতি, বিদ্যুৎ নেই, জ্বালানি নেই, চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ওষুধের সরবরাহ নেই, কারণ রিজার্ভ ঘাটতির কারণে আমদানি বাধাগ্রস্ত। সেখানেও বিক্ষোভ চলছে। তাদের লক্ষ্য শ্রীলঙ্কার মতোই প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ। আগে বলা প্রবণতার কথা ধরে এই আশঙ্কা জাগা তাই খুব স্বাভাবিক যে—দেশে দেশে হালের বিক্ষোভকারীদের মধ্যে রাষ্ট্রের শীর্ষ ক্ষমতাধর ব্যক্তির আবাসস্থল ঘেরাও কি তবে গণপ্রবণতায় রূপ নিচ্ছে! এ ধরনের প্রবণতা এর আগে দেখা দিয়েছিল ২০১০-এর পর আরব বসন্তের হাত ধরে। সে-ও ছিল মন্দাকাল। সে সময় বিক্ষুব্ধ জনতা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে নিজ নিজ দেশের চালু চত্বরগুলোয় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করত। এই প্রবণতার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী রাষ্ট্র এখন সিরিয়া।
সে যাক, প্রবণতার গল্পে ঢুকে লাভ নেই; বরং ‘বিকল্পহীন’ বিষয়টিতে ফেরা যাক আবার। কথায় কথায় ‘বিকল্পহীন’ ঘোষণা করাটা শুধু আমাদের আবেগময় জাতির মধ্যেই নেই। আরও অনেক জাতির মধ্যেই আছে। এটা মূলত ওপর থেকে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়া এক ধারণা। কীভাবে? সে ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে ‘বিকল্প’ শব্দটি একটু বোঝা দরকার।
বাংলা শব্দ বুঝতে হলে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে না গিয়ে উপায় কী? ফলে তাঁরই শরণ নেওয়া যাক। তাঁর লেখা বঙ্গীয় শব্দকোষে বিকল্প শব্দের অর্থ হিসেবে লেখা হচ্ছে—সংশয়, দ্বৈধ, বিতর্ক, শঙ্কা, ভেদ, নানাত্ব, ভ্রান্তি, কল্পনা, বিবিধ সৃষ্টি, সংকল্পবিশেষ, বৈষম্য ইত্যাদি। এবার এই শব্দগুলোর শেষে ‘হীন’ জুড়ে দিলে কী দাঁড়ায় ভেবে দেখুন। একটু কি গা-শিউরে উঠছে না? বুঝিয়ে বলা যাক। কোনো কিছুকে ‘বিকল্পহীন’ বলা মানে তাকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে, ভ্রান্তিহীন, সংশয়হীন ঘোষণা করা। এমনকি যে বহুত্বের কথা বলা হয় আধুনিক উদার মতবাদে, সেই বহুত্বকেও অস্বীকার করা হয় একচেটিয়া ‘বিকল্পহীন’ শব্দের প্রয়োগে। কিন্তু দুনিয়ায় আদৌ কি এমন কিছু আছে, যা ভ্রান্তির ঊর্ধ্বে? নিঃসংশয় হয়ে যাওয়া তো মূর্খতারই নামান্তর। ভেদ বাস্তব বলেই তো সাম্য সৃষ্টির জন্য এত প্রাণপাত।
বিকল্প শব্দ তো ‘কল্প’ থেকে আগত। ‘কল্প’ শব্দের সঙ্গে ‘বি’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে একে বহুত্ব দিয়েছে, একে বিস্তৃত করেছে। এই কল্প শব্দের অর্থের দিকে তাকালে এই বিস্তার ও বহুত্বকে কিছুটা বোঝা যাবে। কল্প শব্দের অর্থ হিসেবে হরিচরণ বলছেন—যোগ্য, দক্ষ, সমর্থ, শক্ত, বিধি, ন্যায় ইত্যাদি। তাই কল্প থেকে বিকল্প হয়ে ওঠার পথ আসলে উত্তরণের পথই। যোগ্যতা যখন বিবিধ দিকে বিস্তার হয়, দক্ষতা যখন বহুমুখী হয়, কোনো ব্যক্তি বা জাতি যখন বহু কিছুতে সমর্থ হয়ে ওঠে, তখন তার সামনে বিকল্প থাকে। বিকল্প নেই, মানে সে একই পাকে ঘুরে মরছে। এমনকি তার সামনে আর কল্পনাও নেই। এ তো মৃতের বৈশিষ্ট্য।
তবু তাহলে দেশে দেশে এই ‘বিকল্পহীন’ শব্দটি কীভাবে ছড়ায়, কেন ছড়ায়, কে ছড়ায়? যেকোনো তর্কের টেবিলে ‘বিকল্প দেখাও’ বলে কে চেঁচিয়ে ওঠে তবে? প্রশ্নগুলো সহজ। এই ‘বিকল্পহীন’ তকমাটা আদতে তারাই সামনে আনে, যাদের হাড়ে-মজ্জায় ক্ষমতার তেলঝোল, যাদের মনে ও মগজে সামন্তের বাস। তাদের কাছ থেকেই এটা উঠে আসে। প্রশ্ন উঠতে পারে অনেক সংগীতশিল্পী কিংবা লেখক সম্পর্কেও এমন কথা বলা হয়। সেখানে ক্ষমতার সম্বন্ধটি কোথায়? আগে বলুন, ক্ষমতা কোথায় নেই? বড় লেখক বা শিল্পীর অনুসারীরা, অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের সম্মতি বা অসম্মতিতেই তাঁদের ‘বিকল্পহীন’ ঘোষণা করে বসেন। এ নিয়ে চলে মাঠ দখলের লড়াই। আর দখল যেখানে আছে, ক্ষমতা সেখানে না থেকে করবেটা কী? আর ক্ষমতা যখন রাষ্ট্রের হয়, তখন তো এই শব্দ গুটি গুটি পায়ে মসনদের তলা থেকেই বের হয়।
আধুনিক রাষ্ট্রক্ষমতাকে ‘রাজত্ব’ মনে করা ব্যক্তিরা এই ধারণাকে সৃষ্টি করেন এবং অতি অবশ্যই স্পনসরও করেন। তাঁরা মানুষের মনে একটা ভয় জাগিয়ে রাখতে চান যে তাঁরাই একমাত্র ত্রাতা এবং এ বিষয়ে সবাইকে নিঃসংশয় হতে বলেন। তাঁরা রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে লোক নিয়োগ করেন, অনুসারীদের ওপর বিনিয়োগ করেন, যাতে বহুত্বকে গলা টিপে হত্যা করে ‘একার কেত্তন’ চালানো যায়। কোনো রাজা তাঁর আশপাশে যোগ্যতায়, দক্ষতায় তাঁকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো কাউকে বা নিদেনপক্ষে সম্ভাবনাময় কাউকে সহ্য করেছেন? করেননি। এ যুগের রাজারাও তা সহ্য করেন না। তাঁরা তাই এক ‘বিকল্পহীন’ বাস্তবতার গল্প চাউর করেন। সাধারণ্যে তা ছড়িয়ে যায়। মানুষ বুঝে, না বুঝে সেই গল্প বলে যেতে থাকে। একজন একজন করে লোক এই দলে গা ভাসায়, আর রাজারা আয়েশে মুচকি হেসে বলেন, ‘বাহ, পাওয়া গেল, আরেকটি চমৎকার দাস।’ তাঁরা খুশি হন। তাঁরা বেশ বক্তৃতা করেই তখন হীরকরাজার মতো বলতে পারেন, ‘তোমরা যাদের আমি পুষি, তোমাদের কাজে আমি বেজায় খুশি।’ এতে পোষ্যরাও হয়তো খুশি হয়; যদিও তা তাদের শুধু মৃত হিসেবেই প্রমাণ করে। রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে বসে থাকা লোকেরা এই মৃতের দঙ্গলকে খুব ভালোবাসেন।
শ্রীলঙ্কার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে কোনো দূর-ভাবনা ছাড়াই রাষ্ট্রের কর্তাদের উৎখাত করে ভালো না মন্দ করল, সে প্রশ্নের উত্তর পরে মিলবে হয়তো। কিন্তু তারা যে জ্যান্ত এখনো, তার মীমাংসা তো হয়ে গেছে। শাসকদের দুর্নীতি, একচেটিয়া মনোভাব, স্বজনপ্রীতি, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের নামে চুরি ইত্যাদির বিরুদ্ধে তারা তো একটি শক্তিশালী ‘না’ বলতে পেরেছে। এত দিনের ‘বিকল্পহীন’ সরকারকে উৎখাত করে, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে চড়ুইভাতি করতে করতে তারা গোটা দুনিয়াকে জানিয়ে দিয়েছে, এমন ধারণা ভাঁওতা কেবল। জগতে ‘বিকল্পহীন’ বলতে কিছু নেই।

এই বঙ্গমুলুকে একেক সময় একেক ধারা তৈরি হয়, একটা প্রবণতা গণ হয়ে হাজির হয়। এটা এ মাটির রোগ শুধু, নাকি সব দেশে সব কালেই ছিল বা আছে, কে জানে। কেউ কিছু একটা করে বা লিখে বা বলে আলোচনায় এলে দেখা যায় অন্য অনেকেই সে পথে হাঁটছে। শব্দ ব্যবহারের সময়ও অনেককে দেখা যায় এই প্রবণতার ফেরে পড়তে। জনপরিসরে চালু শব্দ-রাজনীতির ফাঁদে পড়ে যেতে দেখা যায় অনেক বিদগ্ধ লেখককেও। অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে এমন অতিশয়োক্তি করতে দেখা যায় অনেককে, যা সাধারণ্যে মানালেও বুদ্ধিজীবিতার সঙ্গে যায় না।
এ প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। আগে প্রবণতার কিছু নমুনা দেখা যাক। মোবাইল ডিভাইসে যেদিন থেকে ফ্রন্ট ক্যামেরা যুক্ত হলো, সেদিন থেকেই সেলফি এক ভীষণ ট্রেন্ডি বিষয় হয়ে দাঁড়াল। হবে না কেন? কে না জানে, আত্মপ্রেমই বড় প্রেম। না, সেলফি এর আগেও মানুষ তুলেছে, কিন্তু ছবি তোলার ডিভাইসের ক্যামেরা ‘ফ্রন্টাল’ ছিল না বলে, এত বাড়বাড়ন্তি ছিল না। মুশকিল হলো, মোবাইল ডিভাইসে ফ্রন্ট ক্যামেরা আসার পর।
কতটা মুশকিল? মানুষ ভাইরাল সেলফি তুলতে অসম্ভব সাধনে নেমে পড়ছে। এই তো গত মে মাসে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় রেললাইনে সেলফি তুলতে গিয়ে এক কিশোর গুরুতর আহত হলো। শেষ পর্যন্ত মারাও গেল সে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। এটিই প্রথম নয়। এর আগেও রেললাইনে সেলফি তুলতে গিয়ে এই বঙ্গেই বহুজন মরেছে। বয়সের বিচারও নেই। মৃতের তালিকায় আছে শিশু-কিশোর থেকে মাঝবয়সীও। ফলে একে ঠিক কৈশোরিক উচ্ছ্বাস বা অ্যাডভেঞ্চারপ্রবণতা দিয়ে ব্র্যাকেটবন্দী করা চলে না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এমন হাজারটা প্রবণতার উদাহরণ দেওয়া যাবে। সেদিকে আর না যাওয়াই ভালো। লেখালেখি বা কথা বলার ক্ষেত্রেও দেখা মেলে এমন কিছু শব্দ ও প্রবণতার। গত কয়েক বছরে এমনই এক শব্দ ও তা ব্যবহারের প্রবণতা দেখা দিয়েছে—বিকল্পহীন। কথায় কথায় এটা, ওটা, সেটাকে ‘অবিকল্প’ ঘোষণার এক মারি দেখা দিয়েছে যেন। এতেও কৈশোরিক কোনো ব্যাপার নেই। বয়সনির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষই নানা উদ্দেশ্যে শব্দটি প্রয়োগ করছে। এই দেখে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে জগতে বিকল্পহীন বস্তু আসলে কী? আদৌ এমন কিছুর অস্তিত্ব আছে কী?
একটু খুলে বলা যাক। এই যে হঠাৎ লোডশেডিং চলছে গোটা দেশে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন অক্ষমতাই হোক বা সঞ্চালনজনিত সংকটই হোক, কিংবা আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেলের বাজারের ফেরেই হোক, বিদ্যুৎহীনতার কিন্তু নাভিশ্বাস ঠিকই উঠছে। এতে মেজাজ চড়ছে, ক্ষোভ হচ্ছে, নানা গুলতানি হচ্ছে শহর বা গ্রামেও। তাই বলে আলোহীন অন্ধকারে নিশ্চয় বসে থাকছেন না আপনি। একটা চার্জার লাইট, ব্যাটারি লাইট, জেনারেটর, আইপিএস, মোমবাতি, হারিকেন বা কুপিবাতি হলেও খুঁজে নিয়ে অন্ধকারের ভূতটাকে ঠিকই তাড়াচ্ছে মানুষ; যার যেমন সামর্থ্য আরকি। প্রতিপক্ষ যখন অন্ধকার, তখন কিন্তু সে আলোর বিবিধ উৎস ঠিকই খুঁজে নিচ্ছে। হতোদ্যম হয়ে কেউ বসে নেই।
আসা যাক যোগাযোগের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন বিশ্ব শাসন করা চিঠি এখন স্মৃতিগদ্য হয়ে গেছে। এ নিয়ে রোমান্টিক অতীতচারণ চলে, কিন্তু একে নিয়ে বসে থাকলে চলে না। তার বিকল্প হিসেবে এখন আছে হাজারটা মাধ্যম—মোবাইল, ল্যান্ডফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, আরও কত-কী! চিঠিপ্রেমী লোক এখন তার চিঠিপ্রেম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দেয়, চিঠি লেখে না। লাঙল গেছে, ট্রাক্টর এসেছে; জমি কিন্তু অনাবাদি নেই। সিনেমা হল বা টেলিভিশনের জায়গা ক্রমেই নিয়ে নিচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো। প্রমত্তা পদ্মা পাড়ে বইঠার নৌকার বিকল্প হিসেবে এসেছে ইঞ্জিনের নৌকা, তাকে হটিয়ে লঞ্চ, ফেরি ইত্যাদি; আর সবশেষে পদ্মা সেতু তো চোখের সামনেই হলো। এখন তো জলে না ভেসেই পদ্মা পার হচ্ছে মানুষ। মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে বিকল্প কাকে বলে।
শ্রীলঙ্কার দিকেই তাকানো যাক। বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি। সেখানে যে মাহিন্দা রাজাপক্ষে ‘উন্নয়নের গালগল্পে’ নিজেকে প্রায় ‘অবিকল্প’ ঘোষণা করেছিলেন, সেই তিনি এখন বিক্ষোভের মুখে সাবেক বনে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী। যে রাজাপক্ষে পরিবার দেশটির ভাগ্যবিধাতা হয়ে বসে ছিল দীর্ঘদিন, তার শেষ সদস্য হিসেবে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে বিক্ষোভের মুখেই প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ছাড়তে হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মাহিন্দা রাজাপক্ষকে প্রতিস্থাপন করা রনিল বিক্রমাসিংহেও পদত্যাগের পথে। সুতরাং দেখাই যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কায় ‘বিকল্পহীন’ শব্দটি ছিল এক মিথ কেবল।
একই খেলা চলছে এখন আর্জেন্টিনায়। পরিস্থিতি বিচারে তা শ্রীলঙ্কার মতোই। মূল্যস্ফীতি, বিদ্যুৎ নেই, জ্বালানি নেই, চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ওষুধের সরবরাহ নেই, কারণ রিজার্ভ ঘাটতির কারণে আমদানি বাধাগ্রস্ত। সেখানেও বিক্ষোভ চলছে। তাদের লক্ষ্য শ্রীলঙ্কার মতোই প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ। আগে বলা প্রবণতার কথা ধরে এই আশঙ্কা জাগা তাই খুব স্বাভাবিক যে—দেশে দেশে হালের বিক্ষোভকারীদের মধ্যে রাষ্ট্রের শীর্ষ ক্ষমতাধর ব্যক্তির আবাসস্থল ঘেরাও কি তবে গণপ্রবণতায় রূপ নিচ্ছে! এ ধরনের প্রবণতা এর আগে দেখা দিয়েছিল ২০১০-এর পর আরব বসন্তের হাত ধরে। সে-ও ছিল মন্দাকাল। সে সময় বিক্ষুব্ধ জনতা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে নিজ নিজ দেশের চালু চত্বরগুলোয় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করত। এই প্রবণতার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী রাষ্ট্র এখন সিরিয়া।
সে যাক, প্রবণতার গল্পে ঢুকে লাভ নেই; বরং ‘বিকল্পহীন’ বিষয়টিতে ফেরা যাক আবার। কথায় কথায় ‘বিকল্পহীন’ ঘোষণা করাটা শুধু আমাদের আবেগময় জাতির মধ্যেই নেই। আরও অনেক জাতির মধ্যেই আছে। এটা মূলত ওপর থেকে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়া এক ধারণা। কীভাবে? সে ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে ‘বিকল্প’ শব্দটি একটু বোঝা দরকার।
বাংলা শব্দ বুঝতে হলে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে না গিয়ে উপায় কী? ফলে তাঁরই শরণ নেওয়া যাক। তাঁর লেখা বঙ্গীয় শব্দকোষে বিকল্প শব্দের অর্থ হিসেবে লেখা হচ্ছে—সংশয়, দ্বৈধ, বিতর্ক, শঙ্কা, ভেদ, নানাত্ব, ভ্রান্তি, কল্পনা, বিবিধ সৃষ্টি, সংকল্পবিশেষ, বৈষম্য ইত্যাদি। এবার এই শব্দগুলোর শেষে ‘হীন’ জুড়ে দিলে কী দাঁড়ায় ভেবে দেখুন। একটু কি গা-শিউরে উঠছে না? বুঝিয়ে বলা যাক। কোনো কিছুকে ‘বিকল্পহীন’ বলা মানে তাকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে, ভ্রান্তিহীন, সংশয়হীন ঘোষণা করা। এমনকি যে বহুত্বের কথা বলা হয় আধুনিক উদার মতবাদে, সেই বহুত্বকেও অস্বীকার করা হয় একচেটিয়া ‘বিকল্পহীন’ শব্দের প্রয়োগে। কিন্তু দুনিয়ায় আদৌ কি এমন কিছু আছে, যা ভ্রান্তির ঊর্ধ্বে? নিঃসংশয় হয়ে যাওয়া তো মূর্খতারই নামান্তর। ভেদ বাস্তব বলেই তো সাম্য সৃষ্টির জন্য এত প্রাণপাত।
বিকল্প শব্দ তো ‘কল্প’ থেকে আগত। ‘কল্প’ শব্দের সঙ্গে ‘বি’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে একে বহুত্ব দিয়েছে, একে বিস্তৃত করেছে। এই কল্প শব্দের অর্থের দিকে তাকালে এই বিস্তার ও বহুত্বকে কিছুটা বোঝা যাবে। কল্প শব্দের অর্থ হিসেবে হরিচরণ বলছেন—যোগ্য, দক্ষ, সমর্থ, শক্ত, বিধি, ন্যায় ইত্যাদি। তাই কল্প থেকে বিকল্প হয়ে ওঠার পথ আসলে উত্তরণের পথই। যোগ্যতা যখন বিবিধ দিকে বিস্তার হয়, দক্ষতা যখন বহুমুখী হয়, কোনো ব্যক্তি বা জাতি যখন বহু কিছুতে সমর্থ হয়ে ওঠে, তখন তার সামনে বিকল্প থাকে। বিকল্প নেই, মানে সে একই পাকে ঘুরে মরছে। এমনকি তার সামনে আর কল্পনাও নেই। এ তো মৃতের বৈশিষ্ট্য।
তবু তাহলে দেশে দেশে এই ‘বিকল্পহীন’ শব্দটি কীভাবে ছড়ায়, কেন ছড়ায়, কে ছড়ায়? যেকোনো তর্কের টেবিলে ‘বিকল্প দেখাও’ বলে কে চেঁচিয়ে ওঠে তবে? প্রশ্নগুলো সহজ। এই ‘বিকল্পহীন’ তকমাটা আদতে তারাই সামনে আনে, যাদের হাড়ে-মজ্জায় ক্ষমতার তেলঝোল, যাদের মনে ও মগজে সামন্তের বাস। তাদের কাছ থেকেই এটা উঠে আসে। প্রশ্ন উঠতে পারে অনেক সংগীতশিল্পী কিংবা লেখক সম্পর্কেও এমন কথা বলা হয়। সেখানে ক্ষমতার সম্বন্ধটি কোথায়? আগে বলুন, ক্ষমতা কোথায় নেই? বড় লেখক বা শিল্পীর অনুসারীরা, অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের সম্মতি বা অসম্মতিতেই তাঁদের ‘বিকল্পহীন’ ঘোষণা করে বসেন। এ নিয়ে চলে মাঠ দখলের লড়াই। আর দখল যেখানে আছে, ক্ষমতা সেখানে না থেকে করবেটা কী? আর ক্ষমতা যখন রাষ্ট্রের হয়, তখন তো এই শব্দ গুটি গুটি পায়ে মসনদের তলা থেকেই বের হয়।
আধুনিক রাষ্ট্রক্ষমতাকে ‘রাজত্ব’ মনে করা ব্যক্তিরা এই ধারণাকে সৃষ্টি করেন এবং অতি অবশ্যই স্পনসরও করেন। তাঁরা মানুষের মনে একটা ভয় জাগিয়ে রাখতে চান যে তাঁরাই একমাত্র ত্রাতা এবং এ বিষয়ে সবাইকে নিঃসংশয় হতে বলেন। তাঁরা রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে লোক নিয়োগ করেন, অনুসারীদের ওপর বিনিয়োগ করেন, যাতে বহুত্বকে গলা টিপে হত্যা করে ‘একার কেত্তন’ চালানো যায়। কোনো রাজা তাঁর আশপাশে যোগ্যতায়, দক্ষতায় তাঁকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো কাউকে বা নিদেনপক্ষে সম্ভাবনাময় কাউকে সহ্য করেছেন? করেননি। এ যুগের রাজারাও তা সহ্য করেন না। তাঁরা তাই এক ‘বিকল্পহীন’ বাস্তবতার গল্প চাউর করেন। সাধারণ্যে তা ছড়িয়ে যায়। মানুষ বুঝে, না বুঝে সেই গল্প বলে যেতে থাকে। একজন একজন করে লোক এই দলে গা ভাসায়, আর রাজারা আয়েশে মুচকি হেসে বলেন, ‘বাহ, পাওয়া গেল, আরেকটি চমৎকার দাস।’ তাঁরা খুশি হন। তাঁরা বেশ বক্তৃতা করেই তখন হীরকরাজার মতো বলতে পারেন, ‘তোমরা যাদের আমি পুষি, তোমাদের কাজে আমি বেজায় খুশি।’ এতে পোষ্যরাও হয়তো খুশি হয়; যদিও তা তাদের শুধু মৃত হিসেবেই প্রমাণ করে। রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে বসে থাকা লোকেরা এই মৃতের দঙ্গলকে খুব ভালোবাসেন।
শ্রীলঙ্কার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে কোনো দূর-ভাবনা ছাড়াই রাষ্ট্রের কর্তাদের উৎখাত করে ভালো না মন্দ করল, সে প্রশ্নের উত্তর পরে মিলবে হয়তো। কিন্তু তারা যে জ্যান্ত এখনো, তার মীমাংসা তো হয়ে গেছে। শাসকদের দুর্নীতি, একচেটিয়া মনোভাব, স্বজনপ্রীতি, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের নামে চুরি ইত্যাদির বিরুদ্ধে তারা তো একটি শক্তিশালী ‘না’ বলতে পেরেছে। এত দিনের ‘বিকল্পহীন’ সরকারকে উৎখাত করে, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে চড়ুইভাতি করতে করতে তারা গোটা দুনিয়াকে জানিয়ে দিয়েছে, এমন ধারণা ভাঁওতা কেবল। জগতে ‘বিকল্পহীন’ বলতে কিছু নেই।
ফজলুল কবির

এই বঙ্গমুলুকে একেক সময় একেক ধারা তৈরি হয়, একটা প্রবণতা গণ হয়ে হাজির হয়। এটা এ মাটির রোগ শুধু, নাকি সব দেশে সব কালেই ছিল বা আছে, কে জানে। কেউ কিছু একটা করে বা লিখে বা বলে আলোচনায় এলে দেখা যায় অন্য অনেকেই সে পথে হাঁটছে। শব্দ ব্যবহারের সময়ও অনেককে দেখা যায় এই প্রবণতার ফেরে পড়তে। জনপরিসরে চালু শব্দ-রাজনীতির ফাঁদে পড়ে যেতে দেখা যায় অনেক বিদগ্ধ লেখককেও। অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে এমন অতিশয়োক্তি করতে দেখা যায় অনেককে, যা সাধারণ্যে মানালেও বুদ্ধিজীবিতার সঙ্গে যায় না।
এ প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। আগে প্রবণতার কিছু নমুনা দেখা যাক। মোবাইল ডিভাইসে যেদিন থেকে ফ্রন্ট ক্যামেরা যুক্ত হলো, সেদিন থেকেই সেলফি এক ভীষণ ট্রেন্ডি বিষয় হয়ে দাঁড়াল। হবে না কেন? কে না জানে, আত্মপ্রেমই বড় প্রেম। না, সেলফি এর আগেও মানুষ তুলেছে, কিন্তু ছবি তোলার ডিভাইসের ক্যামেরা ‘ফ্রন্টাল’ ছিল না বলে, এত বাড়বাড়ন্তি ছিল না। মুশকিল হলো, মোবাইল ডিভাইসে ফ্রন্ট ক্যামেরা আসার পর।
কতটা মুশকিল? মানুষ ভাইরাল সেলফি তুলতে অসম্ভব সাধনে নেমে পড়ছে। এই তো গত মে মাসে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় রেললাইনে সেলফি তুলতে গিয়ে এক কিশোর গুরুতর আহত হলো। শেষ পর্যন্ত মারাও গেল সে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। এটিই প্রথম নয়। এর আগেও রেললাইনে সেলফি তুলতে গিয়ে এই বঙ্গেই বহুজন মরেছে। বয়সের বিচারও নেই। মৃতের তালিকায় আছে শিশু-কিশোর থেকে মাঝবয়সীও। ফলে একে ঠিক কৈশোরিক উচ্ছ্বাস বা অ্যাডভেঞ্চারপ্রবণতা দিয়ে ব্র্যাকেটবন্দী করা চলে না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এমন হাজারটা প্রবণতার উদাহরণ দেওয়া যাবে। সেদিকে আর না যাওয়াই ভালো। লেখালেখি বা কথা বলার ক্ষেত্রেও দেখা মেলে এমন কিছু শব্দ ও প্রবণতার। গত কয়েক বছরে এমনই এক শব্দ ও তা ব্যবহারের প্রবণতা দেখা দিয়েছে—বিকল্পহীন। কথায় কথায় এটা, ওটা, সেটাকে ‘অবিকল্প’ ঘোষণার এক মারি দেখা দিয়েছে যেন। এতেও কৈশোরিক কোনো ব্যাপার নেই। বয়সনির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষই নানা উদ্দেশ্যে শব্দটি প্রয়োগ করছে। এই দেখে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে জগতে বিকল্পহীন বস্তু আসলে কী? আদৌ এমন কিছুর অস্তিত্ব আছে কী?
একটু খুলে বলা যাক। এই যে হঠাৎ লোডশেডিং চলছে গোটা দেশে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন অক্ষমতাই হোক বা সঞ্চালনজনিত সংকটই হোক, কিংবা আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেলের বাজারের ফেরেই হোক, বিদ্যুৎহীনতার কিন্তু নাভিশ্বাস ঠিকই উঠছে। এতে মেজাজ চড়ছে, ক্ষোভ হচ্ছে, নানা গুলতানি হচ্ছে শহর বা গ্রামেও। তাই বলে আলোহীন অন্ধকারে নিশ্চয় বসে থাকছেন না আপনি। একটা চার্জার লাইট, ব্যাটারি লাইট, জেনারেটর, আইপিএস, মোমবাতি, হারিকেন বা কুপিবাতি হলেও খুঁজে নিয়ে অন্ধকারের ভূতটাকে ঠিকই তাড়াচ্ছে মানুষ; যার যেমন সামর্থ্য আরকি। প্রতিপক্ষ যখন অন্ধকার, তখন কিন্তু সে আলোর বিবিধ উৎস ঠিকই খুঁজে নিচ্ছে। হতোদ্যম হয়ে কেউ বসে নেই।
আসা যাক যোগাযোগের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন বিশ্ব শাসন করা চিঠি এখন স্মৃতিগদ্য হয়ে গেছে। এ নিয়ে রোমান্টিক অতীতচারণ চলে, কিন্তু একে নিয়ে বসে থাকলে চলে না। তার বিকল্প হিসেবে এখন আছে হাজারটা মাধ্যম—মোবাইল, ল্যান্ডফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, আরও কত-কী! চিঠিপ্রেমী লোক এখন তার চিঠিপ্রেম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দেয়, চিঠি লেখে না। লাঙল গেছে, ট্রাক্টর এসেছে; জমি কিন্তু অনাবাদি নেই। সিনেমা হল বা টেলিভিশনের জায়গা ক্রমেই নিয়ে নিচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো। প্রমত্তা পদ্মা পাড়ে বইঠার নৌকার বিকল্প হিসেবে এসেছে ইঞ্জিনের নৌকা, তাকে হটিয়ে লঞ্চ, ফেরি ইত্যাদি; আর সবশেষে পদ্মা সেতু তো চোখের সামনেই হলো। এখন তো জলে না ভেসেই পদ্মা পার হচ্ছে মানুষ। মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে বিকল্প কাকে বলে।
শ্রীলঙ্কার দিকেই তাকানো যাক। বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি। সেখানে যে মাহিন্দা রাজাপক্ষে ‘উন্নয়নের গালগল্পে’ নিজেকে প্রায় ‘অবিকল্প’ ঘোষণা করেছিলেন, সেই তিনি এখন বিক্ষোভের মুখে সাবেক বনে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী। যে রাজাপক্ষে পরিবার দেশটির ভাগ্যবিধাতা হয়ে বসে ছিল দীর্ঘদিন, তার শেষ সদস্য হিসেবে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে বিক্ষোভের মুখেই প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ছাড়তে হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মাহিন্দা রাজাপক্ষকে প্রতিস্থাপন করা রনিল বিক্রমাসিংহেও পদত্যাগের পথে। সুতরাং দেখাই যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কায় ‘বিকল্পহীন’ শব্দটি ছিল এক মিথ কেবল।
একই খেলা চলছে এখন আর্জেন্টিনায়। পরিস্থিতি বিচারে তা শ্রীলঙ্কার মতোই। মূল্যস্ফীতি, বিদ্যুৎ নেই, জ্বালানি নেই, চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ওষুধের সরবরাহ নেই, কারণ রিজার্ভ ঘাটতির কারণে আমদানি বাধাগ্রস্ত। সেখানেও বিক্ষোভ চলছে। তাদের লক্ষ্য শ্রীলঙ্কার মতোই প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ। আগে বলা প্রবণতার কথা ধরে এই আশঙ্কা জাগা তাই খুব স্বাভাবিক যে—দেশে দেশে হালের বিক্ষোভকারীদের মধ্যে রাষ্ট্রের শীর্ষ ক্ষমতাধর ব্যক্তির আবাসস্থল ঘেরাও কি তবে গণপ্রবণতায় রূপ নিচ্ছে! এ ধরনের প্রবণতা এর আগে দেখা দিয়েছিল ২০১০-এর পর আরব বসন্তের হাত ধরে। সে-ও ছিল মন্দাকাল। সে সময় বিক্ষুব্ধ জনতা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে নিজ নিজ দেশের চালু চত্বরগুলোয় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করত। এই প্রবণতার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী রাষ্ট্র এখন সিরিয়া।
সে যাক, প্রবণতার গল্পে ঢুকে লাভ নেই; বরং ‘বিকল্পহীন’ বিষয়টিতে ফেরা যাক আবার। কথায় কথায় ‘বিকল্পহীন’ ঘোষণা করাটা শুধু আমাদের আবেগময় জাতির মধ্যেই নেই। আরও অনেক জাতির মধ্যেই আছে। এটা মূলত ওপর থেকে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়া এক ধারণা। কীভাবে? সে ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে ‘বিকল্প’ শব্দটি একটু বোঝা দরকার।
বাংলা শব্দ বুঝতে হলে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে না গিয়ে উপায় কী? ফলে তাঁরই শরণ নেওয়া যাক। তাঁর লেখা বঙ্গীয় শব্দকোষে বিকল্প শব্দের অর্থ হিসেবে লেখা হচ্ছে—সংশয়, দ্বৈধ, বিতর্ক, শঙ্কা, ভেদ, নানাত্ব, ভ্রান্তি, কল্পনা, বিবিধ সৃষ্টি, সংকল্পবিশেষ, বৈষম্য ইত্যাদি। এবার এই শব্দগুলোর শেষে ‘হীন’ জুড়ে দিলে কী দাঁড়ায় ভেবে দেখুন। একটু কি গা-শিউরে উঠছে না? বুঝিয়ে বলা যাক। কোনো কিছুকে ‘বিকল্পহীন’ বলা মানে তাকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে, ভ্রান্তিহীন, সংশয়হীন ঘোষণা করা। এমনকি যে বহুত্বের কথা বলা হয় আধুনিক উদার মতবাদে, সেই বহুত্বকেও অস্বীকার করা হয় একচেটিয়া ‘বিকল্পহীন’ শব্দের প্রয়োগে। কিন্তু দুনিয়ায় আদৌ কি এমন কিছু আছে, যা ভ্রান্তির ঊর্ধ্বে? নিঃসংশয় হয়ে যাওয়া তো মূর্খতারই নামান্তর। ভেদ বাস্তব বলেই তো সাম্য সৃষ্টির জন্য এত প্রাণপাত।
বিকল্প শব্দ তো ‘কল্প’ থেকে আগত। ‘কল্প’ শব্দের সঙ্গে ‘বি’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে একে বহুত্ব দিয়েছে, একে বিস্তৃত করেছে। এই কল্প শব্দের অর্থের দিকে তাকালে এই বিস্তার ও বহুত্বকে কিছুটা বোঝা যাবে। কল্প শব্দের অর্থ হিসেবে হরিচরণ বলছেন—যোগ্য, দক্ষ, সমর্থ, শক্ত, বিধি, ন্যায় ইত্যাদি। তাই কল্প থেকে বিকল্প হয়ে ওঠার পথ আসলে উত্তরণের পথই। যোগ্যতা যখন বিবিধ দিকে বিস্তার হয়, দক্ষতা যখন বহুমুখী হয়, কোনো ব্যক্তি বা জাতি যখন বহু কিছুতে সমর্থ হয়ে ওঠে, তখন তার সামনে বিকল্প থাকে। বিকল্প নেই, মানে সে একই পাকে ঘুরে মরছে। এমনকি তার সামনে আর কল্পনাও নেই। এ তো মৃতের বৈশিষ্ট্য।
তবু তাহলে দেশে দেশে এই ‘বিকল্পহীন’ শব্দটি কীভাবে ছড়ায়, কেন ছড়ায়, কে ছড়ায়? যেকোনো তর্কের টেবিলে ‘বিকল্প দেখাও’ বলে কে চেঁচিয়ে ওঠে তবে? প্রশ্নগুলো সহজ। এই ‘বিকল্পহীন’ তকমাটা আদতে তারাই সামনে আনে, যাদের হাড়ে-মজ্জায় ক্ষমতার তেলঝোল, যাদের মনে ও মগজে সামন্তের বাস। তাদের কাছ থেকেই এটা উঠে আসে। প্রশ্ন উঠতে পারে অনেক সংগীতশিল্পী কিংবা লেখক সম্পর্কেও এমন কথা বলা হয়। সেখানে ক্ষমতার সম্বন্ধটি কোথায়? আগে বলুন, ক্ষমতা কোথায় নেই? বড় লেখক বা শিল্পীর অনুসারীরা, অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের সম্মতি বা অসম্মতিতেই তাঁদের ‘বিকল্পহীন’ ঘোষণা করে বসেন। এ নিয়ে চলে মাঠ দখলের লড়াই। আর দখল যেখানে আছে, ক্ষমতা সেখানে না থেকে করবেটা কী? আর ক্ষমতা যখন রাষ্ট্রের হয়, তখন তো এই শব্দ গুটি গুটি পায়ে মসনদের তলা থেকেই বের হয়।
আধুনিক রাষ্ট্রক্ষমতাকে ‘রাজত্ব’ মনে করা ব্যক্তিরা এই ধারণাকে সৃষ্টি করেন এবং অতি অবশ্যই স্পনসরও করেন। তাঁরা মানুষের মনে একটা ভয় জাগিয়ে রাখতে চান যে তাঁরাই একমাত্র ত্রাতা এবং এ বিষয়ে সবাইকে নিঃসংশয় হতে বলেন। তাঁরা রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে লোক নিয়োগ করেন, অনুসারীদের ওপর বিনিয়োগ করেন, যাতে বহুত্বকে গলা টিপে হত্যা করে ‘একার কেত্তন’ চালানো যায়। কোনো রাজা তাঁর আশপাশে যোগ্যতায়, দক্ষতায় তাঁকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো কাউকে বা নিদেনপক্ষে সম্ভাবনাময় কাউকে সহ্য করেছেন? করেননি। এ যুগের রাজারাও তা সহ্য করেন না। তাঁরা তাই এক ‘বিকল্পহীন’ বাস্তবতার গল্প চাউর করেন। সাধারণ্যে তা ছড়িয়ে যায়। মানুষ বুঝে, না বুঝে সেই গল্প বলে যেতে থাকে। একজন একজন করে লোক এই দলে গা ভাসায়, আর রাজারা আয়েশে মুচকি হেসে বলেন, ‘বাহ, পাওয়া গেল, আরেকটি চমৎকার দাস।’ তাঁরা খুশি হন। তাঁরা বেশ বক্তৃতা করেই তখন হীরকরাজার মতো বলতে পারেন, ‘তোমরা যাদের আমি পুষি, তোমাদের কাজে আমি বেজায় খুশি।’ এতে পোষ্যরাও হয়তো খুশি হয়; যদিও তা তাদের শুধু মৃত হিসেবেই প্রমাণ করে। রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে বসে থাকা লোকেরা এই মৃতের দঙ্গলকে খুব ভালোবাসেন।
শ্রীলঙ্কার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে কোনো দূর-ভাবনা ছাড়াই রাষ্ট্রের কর্তাদের উৎখাত করে ভালো না মন্দ করল, সে প্রশ্নের উত্তর পরে মিলবে হয়তো। কিন্তু তারা যে জ্যান্ত এখনো, তার মীমাংসা তো হয়ে গেছে। শাসকদের দুর্নীতি, একচেটিয়া মনোভাব, স্বজনপ্রীতি, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের নামে চুরি ইত্যাদির বিরুদ্ধে তারা তো একটি শক্তিশালী ‘না’ বলতে পেরেছে। এত দিনের ‘বিকল্পহীন’ সরকারকে উৎখাত করে, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে চড়ুইভাতি করতে করতে তারা গোটা দুনিয়াকে জানিয়ে দিয়েছে, এমন ধারণা ভাঁওতা কেবল। জগতে ‘বিকল্পহীন’ বলতে কিছু নেই।

এই বঙ্গমুলুকে একেক সময় একেক ধারা তৈরি হয়, একটা প্রবণতা গণ হয়ে হাজির হয়। এটা এ মাটির রোগ শুধু, নাকি সব দেশে সব কালেই ছিল বা আছে, কে জানে। কেউ কিছু একটা করে বা লিখে বা বলে আলোচনায় এলে দেখা যায় অন্য অনেকেই সে পথে হাঁটছে। শব্দ ব্যবহারের সময়ও অনেককে দেখা যায় এই প্রবণতার ফেরে পড়তে। জনপরিসরে চালু শব্দ-রাজনীতির ফাঁদে পড়ে যেতে দেখা যায় অনেক বিদগ্ধ লেখককেও। অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে এমন অতিশয়োক্তি করতে দেখা যায় অনেককে, যা সাধারণ্যে মানালেও বুদ্ধিজীবিতার সঙ্গে যায় না।
এ প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। আগে প্রবণতার কিছু নমুনা দেখা যাক। মোবাইল ডিভাইসে যেদিন থেকে ফ্রন্ট ক্যামেরা যুক্ত হলো, সেদিন থেকেই সেলফি এক ভীষণ ট্রেন্ডি বিষয় হয়ে দাঁড়াল। হবে না কেন? কে না জানে, আত্মপ্রেমই বড় প্রেম। না, সেলফি এর আগেও মানুষ তুলেছে, কিন্তু ছবি তোলার ডিভাইসের ক্যামেরা ‘ফ্রন্টাল’ ছিল না বলে, এত বাড়বাড়ন্তি ছিল না। মুশকিল হলো, মোবাইল ডিভাইসে ফ্রন্ট ক্যামেরা আসার পর।
কতটা মুশকিল? মানুষ ভাইরাল সেলফি তুলতে অসম্ভব সাধনে নেমে পড়ছে। এই তো গত মে মাসে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় রেললাইনে সেলফি তুলতে গিয়ে এক কিশোর গুরুতর আহত হলো। শেষ পর্যন্ত মারাও গেল সে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। এটিই প্রথম নয়। এর আগেও রেললাইনে সেলফি তুলতে গিয়ে এই বঙ্গেই বহুজন মরেছে। বয়সের বিচারও নেই। মৃতের তালিকায় আছে শিশু-কিশোর থেকে মাঝবয়সীও। ফলে একে ঠিক কৈশোরিক উচ্ছ্বাস বা অ্যাডভেঞ্চারপ্রবণতা দিয়ে ব্র্যাকেটবন্দী করা চলে না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এমন হাজারটা প্রবণতার উদাহরণ দেওয়া যাবে। সেদিকে আর না যাওয়াই ভালো। লেখালেখি বা কথা বলার ক্ষেত্রেও দেখা মেলে এমন কিছু শব্দ ও প্রবণতার। গত কয়েক বছরে এমনই এক শব্দ ও তা ব্যবহারের প্রবণতা দেখা দিয়েছে—বিকল্পহীন। কথায় কথায় এটা, ওটা, সেটাকে ‘অবিকল্প’ ঘোষণার এক মারি দেখা দিয়েছে যেন। এতেও কৈশোরিক কোনো ব্যাপার নেই। বয়সনির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষই নানা উদ্দেশ্যে শব্দটি প্রয়োগ করছে। এই দেখে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে জগতে বিকল্পহীন বস্তু আসলে কী? আদৌ এমন কিছুর অস্তিত্ব আছে কী?
একটু খুলে বলা যাক। এই যে হঠাৎ লোডশেডিং চলছে গোটা দেশে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন অক্ষমতাই হোক বা সঞ্চালনজনিত সংকটই হোক, কিংবা আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেলের বাজারের ফেরেই হোক, বিদ্যুৎহীনতার কিন্তু নাভিশ্বাস ঠিকই উঠছে। এতে মেজাজ চড়ছে, ক্ষোভ হচ্ছে, নানা গুলতানি হচ্ছে শহর বা গ্রামেও। তাই বলে আলোহীন অন্ধকারে নিশ্চয় বসে থাকছেন না আপনি। একটা চার্জার লাইট, ব্যাটারি লাইট, জেনারেটর, আইপিএস, মোমবাতি, হারিকেন বা কুপিবাতি হলেও খুঁজে নিয়ে অন্ধকারের ভূতটাকে ঠিকই তাড়াচ্ছে মানুষ; যার যেমন সামর্থ্য আরকি। প্রতিপক্ষ যখন অন্ধকার, তখন কিন্তু সে আলোর বিবিধ উৎস ঠিকই খুঁজে নিচ্ছে। হতোদ্যম হয়ে কেউ বসে নেই।
আসা যাক যোগাযোগের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন বিশ্ব শাসন করা চিঠি এখন স্মৃতিগদ্য হয়ে গেছে। এ নিয়ে রোমান্টিক অতীতচারণ চলে, কিন্তু একে নিয়ে বসে থাকলে চলে না। তার বিকল্প হিসেবে এখন আছে হাজারটা মাধ্যম—মোবাইল, ল্যান্ডফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, আরও কত-কী! চিঠিপ্রেমী লোক এখন তার চিঠিপ্রেম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দেয়, চিঠি লেখে না। লাঙল গেছে, ট্রাক্টর এসেছে; জমি কিন্তু অনাবাদি নেই। সিনেমা হল বা টেলিভিশনের জায়গা ক্রমেই নিয়ে নিচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো। প্রমত্তা পদ্মা পাড়ে বইঠার নৌকার বিকল্প হিসেবে এসেছে ইঞ্জিনের নৌকা, তাকে হটিয়ে লঞ্চ, ফেরি ইত্যাদি; আর সবশেষে পদ্মা সেতু তো চোখের সামনেই হলো। এখন তো জলে না ভেসেই পদ্মা পার হচ্ছে মানুষ। মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে বিকল্প কাকে বলে।
শ্রীলঙ্কার দিকেই তাকানো যাক। বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি। সেখানে যে মাহিন্দা রাজাপক্ষে ‘উন্নয়নের গালগল্পে’ নিজেকে প্রায় ‘অবিকল্প’ ঘোষণা করেছিলেন, সেই তিনি এখন বিক্ষোভের মুখে সাবেক বনে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী। যে রাজাপক্ষে পরিবার দেশটির ভাগ্যবিধাতা হয়ে বসে ছিল দীর্ঘদিন, তার শেষ সদস্য হিসেবে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে বিক্ষোভের মুখেই প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ছাড়তে হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মাহিন্দা রাজাপক্ষকে প্রতিস্থাপন করা রনিল বিক্রমাসিংহেও পদত্যাগের পথে। সুতরাং দেখাই যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কায় ‘বিকল্পহীন’ শব্দটি ছিল এক মিথ কেবল।
একই খেলা চলছে এখন আর্জেন্টিনায়। পরিস্থিতি বিচারে তা শ্রীলঙ্কার মতোই। মূল্যস্ফীতি, বিদ্যুৎ নেই, জ্বালানি নেই, চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ওষুধের সরবরাহ নেই, কারণ রিজার্ভ ঘাটতির কারণে আমদানি বাধাগ্রস্ত। সেখানেও বিক্ষোভ চলছে। তাদের লক্ষ্য শ্রীলঙ্কার মতোই প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ। আগে বলা প্রবণতার কথা ধরে এই আশঙ্কা জাগা তাই খুব স্বাভাবিক যে—দেশে দেশে হালের বিক্ষোভকারীদের মধ্যে রাষ্ট্রের শীর্ষ ক্ষমতাধর ব্যক্তির আবাসস্থল ঘেরাও কি তবে গণপ্রবণতায় রূপ নিচ্ছে! এ ধরনের প্রবণতা এর আগে দেখা দিয়েছিল ২০১০-এর পর আরব বসন্তের হাত ধরে। সে-ও ছিল মন্দাকাল। সে সময় বিক্ষুব্ধ জনতা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে নিজ নিজ দেশের চালু চত্বরগুলোয় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করত। এই প্রবণতার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী রাষ্ট্র এখন সিরিয়া।
সে যাক, প্রবণতার গল্পে ঢুকে লাভ নেই; বরং ‘বিকল্পহীন’ বিষয়টিতে ফেরা যাক আবার। কথায় কথায় ‘বিকল্পহীন’ ঘোষণা করাটা শুধু আমাদের আবেগময় জাতির মধ্যেই নেই। আরও অনেক জাতির মধ্যেই আছে। এটা মূলত ওপর থেকে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়া এক ধারণা। কীভাবে? সে ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে ‘বিকল্প’ শব্দটি একটু বোঝা দরকার।
বাংলা শব্দ বুঝতে হলে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে না গিয়ে উপায় কী? ফলে তাঁরই শরণ নেওয়া যাক। তাঁর লেখা বঙ্গীয় শব্দকোষে বিকল্প শব্দের অর্থ হিসেবে লেখা হচ্ছে—সংশয়, দ্বৈধ, বিতর্ক, শঙ্কা, ভেদ, নানাত্ব, ভ্রান্তি, কল্পনা, বিবিধ সৃষ্টি, সংকল্পবিশেষ, বৈষম্য ইত্যাদি। এবার এই শব্দগুলোর শেষে ‘হীন’ জুড়ে দিলে কী দাঁড়ায় ভেবে দেখুন। একটু কি গা-শিউরে উঠছে না? বুঝিয়ে বলা যাক। কোনো কিছুকে ‘বিকল্পহীন’ বলা মানে তাকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে, ভ্রান্তিহীন, সংশয়হীন ঘোষণা করা। এমনকি যে বহুত্বের কথা বলা হয় আধুনিক উদার মতবাদে, সেই বহুত্বকেও অস্বীকার করা হয় একচেটিয়া ‘বিকল্পহীন’ শব্দের প্রয়োগে। কিন্তু দুনিয়ায় আদৌ কি এমন কিছু আছে, যা ভ্রান্তির ঊর্ধ্বে? নিঃসংশয় হয়ে যাওয়া তো মূর্খতারই নামান্তর। ভেদ বাস্তব বলেই তো সাম্য সৃষ্টির জন্য এত প্রাণপাত।
বিকল্প শব্দ তো ‘কল্প’ থেকে আগত। ‘কল্প’ শব্দের সঙ্গে ‘বি’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে একে বহুত্ব দিয়েছে, একে বিস্তৃত করেছে। এই কল্প শব্দের অর্থের দিকে তাকালে এই বিস্তার ও বহুত্বকে কিছুটা বোঝা যাবে। কল্প শব্দের অর্থ হিসেবে হরিচরণ বলছেন—যোগ্য, দক্ষ, সমর্থ, শক্ত, বিধি, ন্যায় ইত্যাদি। তাই কল্প থেকে বিকল্প হয়ে ওঠার পথ আসলে উত্তরণের পথই। যোগ্যতা যখন বিবিধ দিকে বিস্তার হয়, দক্ষতা যখন বহুমুখী হয়, কোনো ব্যক্তি বা জাতি যখন বহু কিছুতে সমর্থ হয়ে ওঠে, তখন তার সামনে বিকল্প থাকে। বিকল্প নেই, মানে সে একই পাকে ঘুরে মরছে। এমনকি তার সামনে আর কল্পনাও নেই। এ তো মৃতের বৈশিষ্ট্য।
তবু তাহলে দেশে দেশে এই ‘বিকল্পহীন’ শব্দটি কীভাবে ছড়ায়, কেন ছড়ায়, কে ছড়ায়? যেকোনো তর্কের টেবিলে ‘বিকল্প দেখাও’ বলে কে চেঁচিয়ে ওঠে তবে? প্রশ্নগুলো সহজ। এই ‘বিকল্পহীন’ তকমাটা আদতে তারাই সামনে আনে, যাদের হাড়ে-মজ্জায় ক্ষমতার তেলঝোল, যাদের মনে ও মগজে সামন্তের বাস। তাদের কাছ থেকেই এটা উঠে আসে। প্রশ্ন উঠতে পারে অনেক সংগীতশিল্পী কিংবা লেখক সম্পর্কেও এমন কথা বলা হয়। সেখানে ক্ষমতার সম্বন্ধটি কোথায়? আগে বলুন, ক্ষমতা কোথায় নেই? বড় লেখক বা শিল্পীর অনুসারীরা, অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের সম্মতি বা অসম্মতিতেই তাঁদের ‘বিকল্পহীন’ ঘোষণা করে বসেন। এ নিয়ে চলে মাঠ দখলের লড়াই। আর দখল যেখানে আছে, ক্ষমতা সেখানে না থেকে করবেটা কী? আর ক্ষমতা যখন রাষ্ট্রের হয়, তখন তো এই শব্দ গুটি গুটি পায়ে মসনদের তলা থেকেই বের হয়।
আধুনিক রাষ্ট্রক্ষমতাকে ‘রাজত্ব’ মনে করা ব্যক্তিরা এই ধারণাকে সৃষ্টি করেন এবং অতি অবশ্যই স্পনসরও করেন। তাঁরা মানুষের মনে একটা ভয় জাগিয়ে রাখতে চান যে তাঁরাই একমাত্র ত্রাতা এবং এ বিষয়ে সবাইকে নিঃসংশয় হতে বলেন। তাঁরা রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে লোক নিয়োগ করেন, অনুসারীদের ওপর বিনিয়োগ করেন, যাতে বহুত্বকে গলা টিপে হত্যা করে ‘একার কেত্তন’ চালানো যায়। কোনো রাজা তাঁর আশপাশে যোগ্যতায়, দক্ষতায় তাঁকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো কাউকে বা নিদেনপক্ষে সম্ভাবনাময় কাউকে সহ্য করেছেন? করেননি। এ যুগের রাজারাও তা সহ্য করেন না। তাঁরা তাই এক ‘বিকল্পহীন’ বাস্তবতার গল্প চাউর করেন। সাধারণ্যে তা ছড়িয়ে যায়। মানুষ বুঝে, না বুঝে সেই গল্প বলে যেতে থাকে। একজন একজন করে লোক এই দলে গা ভাসায়, আর রাজারা আয়েশে মুচকি হেসে বলেন, ‘বাহ, পাওয়া গেল, আরেকটি চমৎকার দাস।’ তাঁরা খুশি হন। তাঁরা বেশ বক্তৃতা করেই তখন হীরকরাজার মতো বলতে পারেন, ‘তোমরা যাদের আমি পুষি, তোমাদের কাজে আমি বেজায় খুশি।’ এতে পোষ্যরাও হয়তো খুশি হয়; যদিও তা তাদের শুধু মৃত হিসেবেই প্রমাণ করে। রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে বসে থাকা লোকেরা এই মৃতের দঙ্গলকে খুব ভালোবাসেন।
শ্রীলঙ্কার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে কোনো দূর-ভাবনা ছাড়াই রাষ্ট্রের কর্তাদের উৎখাত করে ভালো না মন্দ করল, সে প্রশ্নের উত্তর পরে মিলবে হয়তো। কিন্তু তারা যে জ্যান্ত এখনো, তার মীমাংসা তো হয়ে গেছে। শাসকদের দুর্নীতি, একচেটিয়া মনোভাব, স্বজনপ্রীতি, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের নামে চুরি ইত্যাদির বিরুদ্ধে তারা তো একটি শক্তিশালী ‘না’ বলতে পেরেছে। এত দিনের ‘বিকল্পহীন’ সরকারকে উৎখাত করে, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে চড়ুইভাতি করতে করতে তারা গোটা দুনিয়াকে জানিয়ে দিয়েছে, এমন ধারণা ভাঁওতা কেবল। জগতে ‘বিকল্পহীন’ বলতে কিছু নেই।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

এই বঙ্গমুলুকে একেক সময় একেক ধারা তৈরি হয়, একটা প্রবণতা গণ হয়ে হাজির হয়। এটা এ মাটির রোগ শুধু, নাকি সব দেশে সব কালেই ছিল বা আছে, কে জানে। কেউ কিছু একটা করে বা লিখে বা বলে আলোচনায় এলে দেখা যায় অন্য অনেকেই সে পথে হাঁটছে। শব্দ ব্যবহারের সময়ও অনেককে দেখা যায় এই প্রবণতার ফেরে পড়তে। জনপরিসরে চালু শব্দ-রাজন
১৪ জুলাই ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

এই বঙ্গমুলুকে একেক সময় একেক ধারা তৈরি হয়, একটা প্রবণতা গণ হয়ে হাজির হয়। এটা এ মাটির রোগ শুধু, নাকি সব দেশে সব কালেই ছিল বা আছে, কে জানে। কেউ কিছু একটা করে বা লিখে বা বলে আলোচনায় এলে দেখা যায় অন্য অনেকেই সে পথে হাঁটছে। শব্দ ব্যবহারের সময়ও অনেককে দেখা যায় এই প্রবণতার ফেরে পড়তে। জনপরিসরে চালু শব্দ-রাজন
১৪ জুলাই ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

এই বঙ্গমুলুকে একেক সময় একেক ধারা তৈরি হয়, একটা প্রবণতা গণ হয়ে হাজির হয়। এটা এ মাটির রোগ শুধু, নাকি সব দেশে সব কালেই ছিল বা আছে, কে জানে। কেউ কিছু একটা করে বা লিখে বা বলে আলোচনায় এলে দেখা যায় অন্য অনেকেই সে পথে হাঁটছে। শব্দ ব্যবহারের সময়ও অনেককে দেখা যায় এই প্রবণতার ফেরে পড়তে। জনপরিসরে চালু শব্দ-রাজন
১৪ জুলাই ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

এই বঙ্গমুলুকে একেক সময় একেক ধারা তৈরি হয়, একটা প্রবণতা গণ হয়ে হাজির হয়। এটা এ মাটির রোগ শুধু, নাকি সব দেশে সব কালেই ছিল বা আছে, কে জানে। কেউ কিছু একটা করে বা লিখে বা বলে আলোচনায় এলে দেখা যায় অন্য অনেকেই সে পথে হাঁটছে। শব্দ ব্যবহারের সময়ও অনেককে দেখা যায় এই প্রবণতার ফেরে পড়তে। জনপরিসরে চালু শব্দ-রাজন
১৪ জুলাই ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫