Ajker Patrika

পিঁপড়া যখন ‘শিক্ষক’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ৫৪
Thumbnail image

‘পিপীলিকা, পিপীলিকা/দলবল ছাড়ি একা/কোথা যাও, যাও ভাই বলি/শীতের সঞ্চয় চাই/খাদ্য খুঁজিতেছি তাই/ছয় পায়ে পিলপিল চলি’—‘কাজের লোক’ কবিতায় পরিশ্রমী পিপীলিকাকে কাজ থেকে থামাতে পারেননি কবি নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য। দেয়ালের পিঠে কিংবা ঘরের কোণে ঘুরে বেড়ানো এ ছোট্ট পিঁপড়াকে থামানো আসলেই কঠিন কাজ। পথে বাধা হিসেবে কিছু রাখলে পথ ঘুরে সে ঠিকই গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাবে। কিছুতেই থামার পাত্র নয় সে।

অবশ্য বিজ্ঞান বলছে, পিঁপড়া দল বেঁধে চলে। ছোট্ট এ জীবের কাছ থেকে এ জন্যই মানুষের শৃঙ্খলাবোধ শেখার আছে। তবে খাদ্যের খোঁজে বের হওয়ার সময় এরা একা একা ঘুরে বেড়ায়। খোঁজ পেলেই শুধু দল বেঁধে ছুটে যায়। ছোট্ট এ প্রাণীর মস্তিষ্কের আকার আরও ছোট। সেই ছোট্ট মগজে এত পরিকল্পনা থাকে কোথায়?

বিচিত্র এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে জেনে নেওয়া যাক আরও কিছু অদ্ভুত তথ্য।

আদিম যুগে মানুষ যখন বর্বর অবস্থা থেকে কিছুটা সভ্য হতে শিখল, তখন থেকেই মূলত কৃষিকাজের প্রচলন। জমিতে ফসল ফলিয়ে সে ফসল ঘরে তোলা হয়। এরপর সবাই মিলে পেটের ক্ষুধা নিবারণ। সভ্যতা যত এগিয়ে গেছে কৃষিকাজে আরও পারদর্শী হয়েছে মানুষ। শিল্পায়নের এ যুগেও কৃষকের কাজকেই মনে করা হয় অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। কবি রাজিয়া খাতুন চৌধুরানীর মতো করে বললে, ‘সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা’।

পিঁপড়ার পিলপিল পা রেখে কৃষকের এ জয়গান কেন? বলছি সে কথা। এই জয়ের গান কৃষকের পাশাপাশি পিঁপড়ার জন্যও। মানুষের অনেক আগে থেকেই কৃষিকাজ করে আসছে ছোট্ট এ প্রাণীটি! অদ্ভুত মনে হলেও ‘এটা সত্য’। তারাও শিকারি থেকে ‘কৃষক’ হয়েছে। এখানে-সেখানে ছুটে বেড়ানোর সময় অজানা এক প্রবৃত্তির কারণে এরা সংগ্রহ করে উদ্ভিদের খাবার। এরপর সেগুলো নিয়ে আসে নিজেদের বাসায়। সেখান থেকে চাষ করা হয় অতিক্ষুদ্র ছত্রাকজাতীয় উদ্ভিদ। আর সেটিই হয়ে ওঠে পিঁপড়ার প্রধান খাদ্য।

যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা এ জন্য পিঁপড়ার নাম দিয়েছেন ‘ছত্রাক-চাষি’। তাঁদের মতে, ৬ কোটি বছর আগে থেকে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক চাষ করে আসছে পিঁপড়া। এমনকি পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোও শিখে গেছে এরা। মার্কিন সাময়িকী ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় এসব তথ্য।

মার্কিন গবেষক কীটতত্ত্ববিদ টেড শোলজ বলেন, আপনাকে যদি কোনো শুষ্ক আবাসে নিয়ে যাওয়া হয় তখন আপনার ভাগ্য সেই শুষ্ক পরিবেশের ওপরই নির্ভর করবে। তখন এই পিঁপড়ার কৌশলই বেছে নিতে হবে আপনাকে। আর্দ্র পরিবেশে একে এত দিন অবজ্ঞা করে এসেছেন।

দুই ভাগে ছত্রাক চাষ করে পিঁপড়া। এক দল সরাসরি বিভিন্ন ছত্রাক সংগ্রহ করে এক জায়গায় জমা করে। সেখান থেকে তৈরি হয় সংকর জাত। অন্যদিকে শীতের সময় মাটিতে ১২ ফুট গভীর সুড়ঙ্গ করে এরা। ছত্রাকের আবাসের নিচেই। ‘গ্রিনহাউসের’ মতো সেখানে জমা করে ছত্রাকের খাবার।

চাষের ক্ষেত্রে মানুষের চেয়ে ঢের এগিয়ে ছোট্ট প্রাণীটি। মাটির নিচে কিংবা কোনো কোনায় তাদের ঘরে চাষ করা এ ছত্রাকজাতীয় উদ্ভিদে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না; বরং কিছু ক্ষেত্রে উপকার হয়। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। মাটিকে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করে ফলানো হচ্ছে ফসল। এ জায়গায় পিঁপড়ার থেকে শেখার আছে ‘স্বেচ্ছাচারী’ মানুষের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত