জাহীদ রেজা নূর

সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে অবিশ্বাস্য আনন্দের জন্ম দিয়ে আমাদের মেয়েরা যেদিন ঢাকায় ফিরে এলেন, সেদিন বাফুফের প্রধান কাজী সালাউদ্দিনের একটা কথা ভেসে বেড়াতে লাগল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সংবাদ সম্মেলনে হাস্যকর কিছু কথা বলেছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। তিনি নাকি তিনবার নেপালে যাওয়ার জন্য টিকিট করেছেন, কিন্তু তিনি নেপালে তাঁর উপস্থিতিতে মেয়েরা নাকি বাড়তি চাপ অনুভব করতেন। আর এই চাপ মেয়েদের খেলাকে ব্যাহত করত। এ কারণেই নাকি তিনি নেপালে যাননি।
বাফুফে সভাপতি আবার সাফেরও সভাপতি। ফলে ট্রফি তো তাঁর হাত থেকেই মেয়েরা নেবেন। কিন্তু মেয়েদের বাড়তি চাপ না দেওয়ার জন্য তিনি যাননি নেপালে।স্বভাবতই বাফুফে প্রধানের এ কথা নিয়ে তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। কে কার আগে নিজের অনুভূতি জানাতে পারে, তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল। যাঁরা প্রতিক্রিয়া দেননি, তাঁদের সিংহভাগও বাফুফে সভাপতির বক্তব্যে কষ্ট পেয়েছেন। আসলে আমাদের নারীরা উল্লেখযোগ্য পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই শত প্রতিকূলতা ঠেলে যেভাবে নিজেদের প্রমাণ করছেন বারবার, তাতে আমাদের বাফুফে সভাপতির কোনো অবদান আছে কি না, তা আমাদের জানা নেই। তবে ফুটবল খেলে নারী ও পুরুষ যে আয় করেন, সেই আয়ের বৈষম্যই তো বলে দেয়, আসলে আমাদের মেয়েদের সাফল্যের পেছনে সেই মেয়েদেরই মেধা, পরিশ্রম এবং প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠার জেদটা কাজ করেছে বেশি, তুলনায় পৃষ্ঠপোষকতা ছিল তুচ্ছ।
মেয়েরা নেপাল থেকে দেশে ফিরে আসার পর ‘ক্রেডিট’ নেওয়ার জন্য ভরে গেল বিমানবন্দর, ভরে গেল বাফুফের সংবাদ সম্মেলন। বিমানবন্দরে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পদচারণে ঢাকা পড়ে গেলেন মেয়েরা, মালা পরে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন সংগঠকের দল, বাফুফের সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারগুলো দখল করে নিলেন পৃষ্ঠপোষকেরাই। চেয়ার থেকে উঠিয়ে দেওয়া হলো নারী ফুটবল দলের কোচ ও অধিনায়ককে। এই রুচিহীনতাই প্রমাণ করে, কেন আসলে আমাদের খেলাধুলা এ রকম কাদার মধ্যে পড়েছে।
দুই. ঘটনার উল্টো দিকও আছে। যেকোনো বিষয়েই অতি আবেগ বস্তুনিষ্ঠতাকে ম্লান করে দেয়। আবেগের ঘায়ে সত্য পালায়। আমাদের সমাজজীবনে আবেগের ঘনঘটা নতুন এক সত্যের জন্ম দিচ্ছে। এ সত্য বড়ই লজ্জার। যে কেউ যে কাউকে যুক্তিহীনভাবে আঘাত করতে পারবে, কিন্তু তার দায় নেবে না। কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিজের কথা বলে দিয়েই যেন মুক্তি। এ কথাগুলো যদি আসে এমন কারও মুখ থেকে, যিনি সমাজে প্রতিষ্ঠিত কিংবা যাঁকে শ্রদ্ধা করে আমজনতা, তাহলে তিনি ভুল তথ্য ছড়িয়ে যতটা ক্ষতি করতে পারেন, তা কোনো পরিমাপেই ধরা যায় না।
অনেকের মতো, একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হঠাৎ করে কাজী সালাউদ্দিনের নামে ছড়িয়ে পড়া একটি ট্রল শেয়ার করে নিজেই কাজী সালাউদ্দিনকে নিয়ে অবমাননাকর কিছু কথা লিখে দিয়েছিলেন। বাফুফে নাকি মেয়েদের বিয়ের খরচ বহন করবে, এ রকম ছিল ট্রলের ভাষা। যেকোনো স্বাভাবিক বিচারেই এটা বোঝা কঠিন নয় যে বাফুফে সভাপতি এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। এ কথা ভেবে আমি স্ট্যাটাসটিতে অনেকটা এ ধরনের মন্তব্য করেছিলাম, ‘কাজী সালাউদ্দিন কি সত্যিই এ রকম কথা বলেছেন? কথাটা কি ভ্যারিফাই করা হয়েছে?’
উত্তরে পোস্টদাতা বলেছেন, তিনি ভ্যারিফাই করেননি। আমি চাইলে ভ্যারিফাই করে তাঁকে জানাতে পারি।একজন মানুষ কোনো কথা বলেছেন কি বলেননি, সেটা যাচাই না করেই ফেসবুকে দিচ্ছেন, আবার সেটা প্রমাণ করার দায়িত্বও তাঁর নয়, এ রকম কথা বলে দিচ্ছেন তাঁরাও, যাঁদের প্রতি আস্থা রাখতে চায় মানুষ!
পরে যখন প্রমাণ হলো, সালাউদ্দিন এ রকম কোনো কথা বলেননি, সেই ব্যক্তি তখন ফেসবুক পোস্ট দিলেন যে তিনি স্ট্যাটাসটি প্রত্যাহার করে নিলেন এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য ক্ষমাও চাইলেন না। শুধু প্রত্যাহার করে নেওয়াই যেন তাঁর মহানুভবতার প্রকাশ। এরই মধ্যে তাঁর ছড়ানো হাস্যরসে যে অগণিত মানুষ মন মজাল এবং যিনি যা ঘটাননি, তাঁকে সেই ঘটনায় দোষী করল, এই দায় কে নেবে? মানসিক এই বন্ধ্যত্বকেও তাহলে বরণ করে নেওয়ার রেওয়াজ গড়ে ওঠা শুরু হয়ে গেছে আমাদের মধ্যে!
তিন. আমরা যে ক্রমেই চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছি, সেটা নিজেরাই বুঝতে পারছি না। যেকোনো বিষয়ে নিজেদের মতামত দেওয়ার জন্য সবাই যেন উদগ্রীব হয়ে আছে। কী বলবে, তা নিয়ে ভাবছেও না। বলে ফেলছে দ্রুত। কোনো ঘটনা ঘটার পর তা বুঝে নিয়ে যুক্তিসংগত মন্তব্য না করে গড্ডলিকা প্রবাহে ভাসিয়ে দিচ্ছে নিজেকে। সব বিষয়ে সবারই মতামত কেন দিতে হচ্ছে? না দিলে কি পিছিয়ে পড়বে মানুষ? অন্যদের চোখে হেয় হয়ে যাবে?
এই তো কদিন ধরে মরিয়ম নামের একটি মেয়ে ছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এক মাস ধরে মাকে খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়ার বাড়ি থেকে পানি তুলতে গিয়ে মরিয়ম মান্নানের মা কি তবে গুম হয়েছিলেন? ক্রন্দনরত মরিয়মের ছবি হাহাকার তুলেছিল মানুষের হৃদয়ে। একসময় ময়মনসিংহে একটি বস্তাবন্দী লাশের সন্ধান পাওয়ার পর মরিয়ম নিশ্চিত হয়ে বলেছিলেন, এটা তাঁর মায়েরই লাশ। অথচ তাঁর মা রহিমা বেগমকে ফরিদপুর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি নাকি স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছিলেন।
মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম কেন স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছিলেন, তাঁর চার মেয়ে কেন অন্য একটি লাশকেই তাঁদের মায়ের লাশ বলে শনাক্ত করেছিলেন, জমিজমা-সংক্রান্ত কোনো ঘাপলা আছে কি না—সে রহস্যও একসময় উদ্ঘাটিত হবে নিশ্চয়ই। কিন্তু মরিয়মের আহাজারির পর কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাবড় তাবড় ব্যক্তিরা যখন ‘গুম’ শব্দটির নানাবিধ ব্যবহার করছিলেন এবং ইঙ্গিত করছিলেন এর সঙ্গে সরকারি সংশ্লিষ্টতার, তখন বুঝতে হবে, যে চোরাবালিতে ডুবে যাওয়ার কথা বলছিলাম, এই হচ্ছে সেই চোরাবালি। যেকোনো বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে শক্ত ভিতে পা পড়ে না। তখনই চোরাবালিতে ডুবে যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়।
একটি স্বনামধন্য পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক এবং অর্থনীতিতে পড়া আরেকজন মেধাবী সাংবাদিকের ফেসবুক দেয়ালেও মরিয়মকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দেখেছি। আজ তাঁদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখি, তাঁরা সেই পোস্ট উধাও করে দিয়েছেন!
চার. ‘ধীরে চলো’ নীতিটা এখন আর কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে না। এখন তো সবাই শিক্ষক, শিক্ষার্থী কেউ নেই। তাই সবাই একই সঙ্গে শিক্ষা দিতে থাকেন। নিজের মনে যা আছে, সেটাই বলতে থাকেন। তাতে যুক্তি থাকল কি থাকল না, সেটা বড় কোনো ব্যাপার নয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা ইচ্ছে তা-ই লেখার অধিকার কী করে জন্মাচ্ছে, সেটাও তো দেখা দরকার। রাজনীতি, ধর্ম, সমাজনীতি, অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক জীবন—সবটাই দখল করে নিচ্ছে পেশিশক্তি। যেদিকে তাকায় মানুষ, সেদিকেই দেখতে পায় ক্ষমতাবানদের আস্ফালন। তখন নিজেকে হেয় মনে হতে থাকে। মানুষ মনের সে জ্বালা জুড়ায় ফেসবুক বা অন্য কোনো যোগাযোগমাধ্যমে এসে।
তাই বলে ফেসবুকে কি শুধুই যুক্তিহীন কথকতার চাষবাস হয়? একেবারেই নয়। গত কয়েক বছরে সরকারি মহলেও এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের চাপে পড়ে। সংবাদমাধ্যম এ ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। সংবাদপত্রে কিংবা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে এমন কোনো সুগভীর ভাবনারও তো প্রকাশ দেখা যাচ্ছে না। মানুষ নির্ভর করবে কার ওপর? কোথাও তো জ্ঞানচর্চা বা জ্ঞান সৃষ্টির কাজটা হচ্ছে না। ফলে মাথায় যদি মধ্যযুগ এসে স্থায়ী আসন গাড়তে চায়, হাজার বছর আগের জীবনযাপন পদ্ধতিকে আজকের জীবনের মধ্যে জোর করে প্রয়োগ করতে চায়, তাহলে যেমন বিপদ, তেমনি বিপদ কোনো রাজনৈতিক মতবাদকে একমাত্র মতবাদ হিসেবে অন্যকে মানতে বাধ্য করার প্রবণতার প্রসার ঘটলে।
যেহেতু যৌক্তিকভাবে কোনো আলোচনায় বসার সুযোগ নেই, সেহেতু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে যার স্বাধীন মত প্রকাশ করতে থাকে। ফেসবুক গভীর ভাবনার প্রকাশক নয়। যার মনে যা আছে, তারই প্রতিচ্ছবি দেখা যায় সেখানে। সেটাই সংগত। কিন্তু ‘যার মন’ বলে যা বলা হচ্ছে, সেই মনগুলোকে ঠিকপথে চালিত করার জন্য যে শিক্ষার আবহ গড়ে তোলা দরকার ছিল, সেটা কেন গড়ে উঠল না বা যেটুকু ছিল, সেটুকুও কেন প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল, সেটাও তো ভাবা দরকার। শেষ একটা কথা বলি। এ নিয়ে ভাবতে পারেন। আমাদের দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বেড়ে যাওয়ার পেছনে কি শুধু ধর্মব্যবসায়ীরাই দায়ী? যাঁরা এই ধর্ম-উন্মাদনাকে সহিষ্ণুতার দিকে নিয়ে যেতে পারতেন, তাঁরা হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলেন? এ প্রশ্নটির যৌক্তিক কোনো উত্তর দেওয়া গেলেই বোঝা যাবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেন এত অস্থিরতা!
লেখক: উপসম্পাদক আজকের পত্রিকা

সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে অবিশ্বাস্য আনন্দের জন্ম দিয়ে আমাদের মেয়েরা যেদিন ঢাকায় ফিরে এলেন, সেদিন বাফুফের প্রধান কাজী সালাউদ্দিনের একটা কথা ভেসে বেড়াতে লাগল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সংবাদ সম্মেলনে হাস্যকর কিছু কথা বলেছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। তিনি নাকি তিনবার নেপালে যাওয়ার জন্য টিকিট করেছেন, কিন্তু তিনি নেপালে তাঁর উপস্থিতিতে মেয়েরা নাকি বাড়তি চাপ অনুভব করতেন। আর এই চাপ মেয়েদের খেলাকে ব্যাহত করত। এ কারণেই নাকি তিনি নেপালে যাননি।
বাফুফে সভাপতি আবার সাফেরও সভাপতি। ফলে ট্রফি তো তাঁর হাত থেকেই মেয়েরা নেবেন। কিন্তু মেয়েদের বাড়তি চাপ না দেওয়ার জন্য তিনি যাননি নেপালে।স্বভাবতই বাফুফে প্রধানের এ কথা নিয়ে তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। কে কার আগে নিজের অনুভূতি জানাতে পারে, তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল। যাঁরা প্রতিক্রিয়া দেননি, তাঁদের সিংহভাগও বাফুফে সভাপতির বক্তব্যে কষ্ট পেয়েছেন। আসলে আমাদের নারীরা উল্লেখযোগ্য পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই শত প্রতিকূলতা ঠেলে যেভাবে নিজেদের প্রমাণ করছেন বারবার, তাতে আমাদের বাফুফে সভাপতির কোনো অবদান আছে কি না, তা আমাদের জানা নেই। তবে ফুটবল খেলে নারী ও পুরুষ যে আয় করেন, সেই আয়ের বৈষম্যই তো বলে দেয়, আসলে আমাদের মেয়েদের সাফল্যের পেছনে সেই মেয়েদেরই মেধা, পরিশ্রম এবং প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠার জেদটা কাজ করেছে বেশি, তুলনায় পৃষ্ঠপোষকতা ছিল তুচ্ছ।
মেয়েরা নেপাল থেকে দেশে ফিরে আসার পর ‘ক্রেডিট’ নেওয়ার জন্য ভরে গেল বিমানবন্দর, ভরে গেল বাফুফের সংবাদ সম্মেলন। বিমানবন্দরে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পদচারণে ঢাকা পড়ে গেলেন মেয়েরা, মালা পরে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন সংগঠকের দল, বাফুফের সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারগুলো দখল করে নিলেন পৃষ্ঠপোষকেরাই। চেয়ার থেকে উঠিয়ে দেওয়া হলো নারী ফুটবল দলের কোচ ও অধিনায়ককে। এই রুচিহীনতাই প্রমাণ করে, কেন আসলে আমাদের খেলাধুলা এ রকম কাদার মধ্যে পড়েছে।
দুই. ঘটনার উল্টো দিকও আছে। যেকোনো বিষয়েই অতি আবেগ বস্তুনিষ্ঠতাকে ম্লান করে দেয়। আবেগের ঘায়ে সত্য পালায়। আমাদের সমাজজীবনে আবেগের ঘনঘটা নতুন এক সত্যের জন্ম দিচ্ছে। এ সত্য বড়ই লজ্জার। যে কেউ যে কাউকে যুক্তিহীনভাবে আঘাত করতে পারবে, কিন্তু তার দায় নেবে না। কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিজের কথা বলে দিয়েই যেন মুক্তি। এ কথাগুলো যদি আসে এমন কারও মুখ থেকে, যিনি সমাজে প্রতিষ্ঠিত কিংবা যাঁকে শ্রদ্ধা করে আমজনতা, তাহলে তিনি ভুল তথ্য ছড়িয়ে যতটা ক্ষতি করতে পারেন, তা কোনো পরিমাপেই ধরা যায় না।
অনেকের মতো, একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হঠাৎ করে কাজী সালাউদ্দিনের নামে ছড়িয়ে পড়া একটি ট্রল শেয়ার করে নিজেই কাজী সালাউদ্দিনকে নিয়ে অবমাননাকর কিছু কথা লিখে দিয়েছিলেন। বাফুফে নাকি মেয়েদের বিয়ের খরচ বহন করবে, এ রকম ছিল ট্রলের ভাষা। যেকোনো স্বাভাবিক বিচারেই এটা বোঝা কঠিন নয় যে বাফুফে সভাপতি এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। এ কথা ভেবে আমি স্ট্যাটাসটিতে অনেকটা এ ধরনের মন্তব্য করেছিলাম, ‘কাজী সালাউদ্দিন কি সত্যিই এ রকম কথা বলেছেন? কথাটা কি ভ্যারিফাই করা হয়েছে?’
উত্তরে পোস্টদাতা বলেছেন, তিনি ভ্যারিফাই করেননি। আমি চাইলে ভ্যারিফাই করে তাঁকে জানাতে পারি।একজন মানুষ কোনো কথা বলেছেন কি বলেননি, সেটা যাচাই না করেই ফেসবুকে দিচ্ছেন, আবার সেটা প্রমাণ করার দায়িত্বও তাঁর নয়, এ রকম কথা বলে দিচ্ছেন তাঁরাও, যাঁদের প্রতি আস্থা রাখতে চায় মানুষ!
পরে যখন প্রমাণ হলো, সালাউদ্দিন এ রকম কোনো কথা বলেননি, সেই ব্যক্তি তখন ফেসবুক পোস্ট দিলেন যে তিনি স্ট্যাটাসটি প্রত্যাহার করে নিলেন এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য ক্ষমাও চাইলেন না। শুধু প্রত্যাহার করে নেওয়াই যেন তাঁর মহানুভবতার প্রকাশ। এরই মধ্যে তাঁর ছড়ানো হাস্যরসে যে অগণিত মানুষ মন মজাল এবং যিনি যা ঘটাননি, তাঁকে সেই ঘটনায় দোষী করল, এই দায় কে নেবে? মানসিক এই বন্ধ্যত্বকেও তাহলে বরণ করে নেওয়ার রেওয়াজ গড়ে ওঠা শুরু হয়ে গেছে আমাদের মধ্যে!
তিন. আমরা যে ক্রমেই চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছি, সেটা নিজেরাই বুঝতে পারছি না। যেকোনো বিষয়ে নিজেদের মতামত দেওয়ার জন্য সবাই যেন উদগ্রীব হয়ে আছে। কী বলবে, তা নিয়ে ভাবছেও না। বলে ফেলছে দ্রুত। কোনো ঘটনা ঘটার পর তা বুঝে নিয়ে যুক্তিসংগত মন্তব্য না করে গড্ডলিকা প্রবাহে ভাসিয়ে দিচ্ছে নিজেকে। সব বিষয়ে সবারই মতামত কেন দিতে হচ্ছে? না দিলে কি পিছিয়ে পড়বে মানুষ? অন্যদের চোখে হেয় হয়ে যাবে?
এই তো কদিন ধরে মরিয়ম নামের একটি মেয়ে ছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এক মাস ধরে মাকে খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়ার বাড়ি থেকে পানি তুলতে গিয়ে মরিয়ম মান্নানের মা কি তবে গুম হয়েছিলেন? ক্রন্দনরত মরিয়মের ছবি হাহাকার তুলেছিল মানুষের হৃদয়ে। একসময় ময়মনসিংহে একটি বস্তাবন্দী লাশের সন্ধান পাওয়ার পর মরিয়ম নিশ্চিত হয়ে বলেছিলেন, এটা তাঁর মায়েরই লাশ। অথচ তাঁর মা রহিমা বেগমকে ফরিদপুর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি নাকি স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছিলেন।
মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম কেন স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছিলেন, তাঁর চার মেয়ে কেন অন্য একটি লাশকেই তাঁদের মায়ের লাশ বলে শনাক্ত করেছিলেন, জমিজমা-সংক্রান্ত কোনো ঘাপলা আছে কি না—সে রহস্যও একসময় উদ্ঘাটিত হবে নিশ্চয়ই। কিন্তু মরিয়মের আহাজারির পর কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাবড় তাবড় ব্যক্তিরা যখন ‘গুম’ শব্দটির নানাবিধ ব্যবহার করছিলেন এবং ইঙ্গিত করছিলেন এর সঙ্গে সরকারি সংশ্লিষ্টতার, তখন বুঝতে হবে, যে চোরাবালিতে ডুবে যাওয়ার কথা বলছিলাম, এই হচ্ছে সেই চোরাবালি। যেকোনো বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে শক্ত ভিতে পা পড়ে না। তখনই চোরাবালিতে ডুবে যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়।
একটি স্বনামধন্য পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক এবং অর্থনীতিতে পড়া আরেকজন মেধাবী সাংবাদিকের ফেসবুক দেয়ালেও মরিয়মকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দেখেছি। আজ তাঁদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখি, তাঁরা সেই পোস্ট উধাও করে দিয়েছেন!
চার. ‘ধীরে চলো’ নীতিটা এখন আর কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে না। এখন তো সবাই শিক্ষক, শিক্ষার্থী কেউ নেই। তাই সবাই একই সঙ্গে শিক্ষা দিতে থাকেন। নিজের মনে যা আছে, সেটাই বলতে থাকেন। তাতে যুক্তি থাকল কি থাকল না, সেটা বড় কোনো ব্যাপার নয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা ইচ্ছে তা-ই লেখার অধিকার কী করে জন্মাচ্ছে, সেটাও তো দেখা দরকার। রাজনীতি, ধর্ম, সমাজনীতি, অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক জীবন—সবটাই দখল করে নিচ্ছে পেশিশক্তি। যেদিকে তাকায় মানুষ, সেদিকেই দেখতে পায় ক্ষমতাবানদের আস্ফালন। তখন নিজেকে হেয় মনে হতে থাকে। মানুষ মনের সে জ্বালা জুড়ায় ফেসবুক বা অন্য কোনো যোগাযোগমাধ্যমে এসে।
তাই বলে ফেসবুকে কি শুধুই যুক্তিহীন কথকতার চাষবাস হয়? একেবারেই নয়। গত কয়েক বছরে সরকারি মহলেও এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের চাপে পড়ে। সংবাদমাধ্যম এ ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। সংবাদপত্রে কিংবা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে এমন কোনো সুগভীর ভাবনারও তো প্রকাশ দেখা যাচ্ছে না। মানুষ নির্ভর করবে কার ওপর? কোথাও তো জ্ঞানচর্চা বা জ্ঞান সৃষ্টির কাজটা হচ্ছে না। ফলে মাথায় যদি মধ্যযুগ এসে স্থায়ী আসন গাড়তে চায়, হাজার বছর আগের জীবনযাপন পদ্ধতিকে আজকের জীবনের মধ্যে জোর করে প্রয়োগ করতে চায়, তাহলে যেমন বিপদ, তেমনি বিপদ কোনো রাজনৈতিক মতবাদকে একমাত্র মতবাদ হিসেবে অন্যকে মানতে বাধ্য করার প্রবণতার প্রসার ঘটলে।
যেহেতু যৌক্তিকভাবে কোনো আলোচনায় বসার সুযোগ নেই, সেহেতু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে যার স্বাধীন মত প্রকাশ করতে থাকে। ফেসবুক গভীর ভাবনার প্রকাশক নয়। যার মনে যা আছে, তারই প্রতিচ্ছবি দেখা যায় সেখানে। সেটাই সংগত। কিন্তু ‘যার মন’ বলে যা বলা হচ্ছে, সেই মনগুলোকে ঠিকপথে চালিত করার জন্য যে শিক্ষার আবহ গড়ে তোলা দরকার ছিল, সেটা কেন গড়ে উঠল না বা যেটুকু ছিল, সেটুকুও কেন প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল, সেটাও তো ভাবা দরকার। শেষ একটা কথা বলি। এ নিয়ে ভাবতে পারেন। আমাদের দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বেড়ে যাওয়ার পেছনে কি শুধু ধর্মব্যবসায়ীরাই দায়ী? যাঁরা এই ধর্ম-উন্মাদনাকে সহিষ্ণুতার দিকে নিয়ে যেতে পারতেন, তাঁরা হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলেন? এ প্রশ্নটির যৌক্তিক কোনো উত্তর দেওয়া গেলেই বোঝা যাবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেন এত অস্থিরতা!
লেখক: উপসম্পাদক আজকের পত্রিকা
জাহীদ রেজা নূর

সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে অবিশ্বাস্য আনন্দের জন্ম দিয়ে আমাদের মেয়েরা যেদিন ঢাকায় ফিরে এলেন, সেদিন বাফুফের প্রধান কাজী সালাউদ্দিনের একটা কথা ভেসে বেড়াতে লাগল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সংবাদ সম্মেলনে হাস্যকর কিছু কথা বলেছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। তিনি নাকি তিনবার নেপালে যাওয়ার জন্য টিকিট করেছেন, কিন্তু তিনি নেপালে তাঁর উপস্থিতিতে মেয়েরা নাকি বাড়তি চাপ অনুভব করতেন। আর এই চাপ মেয়েদের খেলাকে ব্যাহত করত। এ কারণেই নাকি তিনি নেপালে যাননি।
বাফুফে সভাপতি আবার সাফেরও সভাপতি। ফলে ট্রফি তো তাঁর হাত থেকেই মেয়েরা নেবেন। কিন্তু মেয়েদের বাড়তি চাপ না দেওয়ার জন্য তিনি যাননি নেপালে।স্বভাবতই বাফুফে প্রধানের এ কথা নিয়ে তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। কে কার আগে নিজের অনুভূতি জানাতে পারে, তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল। যাঁরা প্রতিক্রিয়া দেননি, তাঁদের সিংহভাগও বাফুফে সভাপতির বক্তব্যে কষ্ট পেয়েছেন। আসলে আমাদের নারীরা উল্লেখযোগ্য পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই শত প্রতিকূলতা ঠেলে যেভাবে নিজেদের প্রমাণ করছেন বারবার, তাতে আমাদের বাফুফে সভাপতির কোনো অবদান আছে কি না, তা আমাদের জানা নেই। তবে ফুটবল খেলে নারী ও পুরুষ যে আয় করেন, সেই আয়ের বৈষম্যই তো বলে দেয়, আসলে আমাদের মেয়েদের সাফল্যের পেছনে সেই মেয়েদেরই মেধা, পরিশ্রম এবং প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠার জেদটা কাজ করেছে বেশি, তুলনায় পৃষ্ঠপোষকতা ছিল তুচ্ছ।
মেয়েরা নেপাল থেকে দেশে ফিরে আসার পর ‘ক্রেডিট’ নেওয়ার জন্য ভরে গেল বিমানবন্দর, ভরে গেল বাফুফের সংবাদ সম্মেলন। বিমানবন্দরে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পদচারণে ঢাকা পড়ে গেলেন মেয়েরা, মালা পরে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন সংগঠকের দল, বাফুফের সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারগুলো দখল করে নিলেন পৃষ্ঠপোষকেরাই। চেয়ার থেকে উঠিয়ে দেওয়া হলো নারী ফুটবল দলের কোচ ও অধিনায়ককে। এই রুচিহীনতাই প্রমাণ করে, কেন আসলে আমাদের খেলাধুলা এ রকম কাদার মধ্যে পড়েছে।
দুই. ঘটনার উল্টো দিকও আছে। যেকোনো বিষয়েই অতি আবেগ বস্তুনিষ্ঠতাকে ম্লান করে দেয়। আবেগের ঘায়ে সত্য পালায়। আমাদের সমাজজীবনে আবেগের ঘনঘটা নতুন এক সত্যের জন্ম দিচ্ছে। এ সত্য বড়ই লজ্জার। যে কেউ যে কাউকে যুক্তিহীনভাবে আঘাত করতে পারবে, কিন্তু তার দায় নেবে না। কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিজের কথা বলে দিয়েই যেন মুক্তি। এ কথাগুলো যদি আসে এমন কারও মুখ থেকে, যিনি সমাজে প্রতিষ্ঠিত কিংবা যাঁকে শ্রদ্ধা করে আমজনতা, তাহলে তিনি ভুল তথ্য ছড়িয়ে যতটা ক্ষতি করতে পারেন, তা কোনো পরিমাপেই ধরা যায় না।
অনেকের মতো, একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হঠাৎ করে কাজী সালাউদ্দিনের নামে ছড়িয়ে পড়া একটি ট্রল শেয়ার করে নিজেই কাজী সালাউদ্দিনকে নিয়ে অবমাননাকর কিছু কথা লিখে দিয়েছিলেন। বাফুফে নাকি মেয়েদের বিয়ের খরচ বহন করবে, এ রকম ছিল ট্রলের ভাষা। যেকোনো স্বাভাবিক বিচারেই এটা বোঝা কঠিন নয় যে বাফুফে সভাপতি এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। এ কথা ভেবে আমি স্ট্যাটাসটিতে অনেকটা এ ধরনের মন্তব্য করেছিলাম, ‘কাজী সালাউদ্দিন কি সত্যিই এ রকম কথা বলেছেন? কথাটা কি ভ্যারিফাই করা হয়েছে?’
উত্তরে পোস্টদাতা বলেছেন, তিনি ভ্যারিফাই করেননি। আমি চাইলে ভ্যারিফাই করে তাঁকে জানাতে পারি।একজন মানুষ কোনো কথা বলেছেন কি বলেননি, সেটা যাচাই না করেই ফেসবুকে দিচ্ছেন, আবার সেটা প্রমাণ করার দায়িত্বও তাঁর নয়, এ রকম কথা বলে দিচ্ছেন তাঁরাও, যাঁদের প্রতি আস্থা রাখতে চায় মানুষ!
পরে যখন প্রমাণ হলো, সালাউদ্দিন এ রকম কোনো কথা বলেননি, সেই ব্যক্তি তখন ফেসবুক পোস্ট দিলেন যে তিনি স্ট্যাটাসটি প্রত্যাহার করে নিলেন এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য ক্ষমাও চাইলেন না। শুধু প্রত্যাহার করে নেওয়াই যেন তাঁর মহানুভবতার প্রকাশ। এরই মধ্যে তাঁর ছড়ানো হাস্যরসে যে অগণিত মানুষ মন মজাল এবং যিনি যা ঘটাননি, তাঁকে সেই ঘটনায় দোষী করল, এই দায় কে নেবে? মানসিক এই বন্ধ্যত্বকেও তাহলে বরণ করে নেওয়ার রেওয়াজ গড়ে ওঠা শুরু হয়ে গেছে আমাদের মধ্যে!
তিন. আমরা যে ক্রমেই চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছি, সেটা নিজেরাই বুঝতে পারছি না। যেকোনো বিষয়ে নিজেদের মতামত দেওয়ার জন্য সবাই যেন উদগ্রীব হয়ে আছে। কী বলবে, তা নিয়ে ভাবছেও না। বলে ফেলছে দ্রুত। কোনো ঘটনা ঘটার পর তা বুঝে নিয়ে যুক্তিসংগত মন্তব্য না করে গড্ডলিকা প্রবাহে ভাসিয়ে দিচ্ছে নিজেকে। সব বিষয়ে সবারই মতামত কেন দিতে হচ্ছে? না দিলে কি পিছিয়ে পড়বে মানুষ? অন্যদের চোখে হেয় হয়ে যাবে?
এই তো কদিন ধরে মরিয়ম নামের একটি মেয়ে ছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এক মাস ধরে মাকে খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়ার বাড়ি থেকে পানি তুলতে গিয়ে মরিয়ম মান্নানের মা কি তবে গুম হয়েছিলেন? ক্রন্দনরত মরিয়মের ছবি হাহাকার তুলেছিল মানুষের হৃদয়ে। একসময় ময়মনসিংহে একটি বস্তাবন্দী লাশের সন্ধান পাওয়ার পর মরিয়ম নিশ্চিত হয়ে বলেছিলেন, এটা তাঁর মায়েরই লাশ। অথচ তাঁর মা রহিমা বেগমকে ফরিদপুর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি নাকি স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছিলেন।
মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম কেন স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছিলেন, তাঁর চার মেয়ে কেন অন্য একটি লাশকেই তাঁদের মায়ের লাশ বলে শনাক্ত করেছিলেন, জমিজমা-সংক্রান্ত কোনো ঘাপলা আছে কি না—সে রহস্যও একসময় উদ্ঘাটিত হবে নিশ্চয়ই। কিন্তু মরিয়মের আহাজারির পর কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাবড় তাবড় ব্যক্তিরা যখন ‘গুম’ শব্দটির নানাবিধ ব্যবহার করছিলেন এবং ইঙ্গিত করছিলেন এর সঙ্গে সরকারি সংশ্লিষ্টতার, তখন বুঝতে হবে, যে চোরাবালিতে ডুবে যাওয়ার কথা বলছিলাম, এই হচ্ছে সেই চোরাবালি। যেকোনো বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে শক্ত ভিতে পা পড়ে না। তখনই চোরাবালিতে ডুবে যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়।
একটি স্বনামধন্য পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক এবং অর্থনীতিতে পড়া আরেকজন মেধাবী সাংবাদিকের ফেসবুক দেয়ালেও মরিয়মকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দেখেছি। আজ তাঁদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখি, তাঁরা সেই পোস্ট উধাও করে দিয়েছেন!
চার. ‘ধীরে চলো’ নীতিটা এখন আর কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে না। এখন তো সবাই শিক্ষক, শিক্ষার্থী কেউ নেই। তাই সবাই একই সঙ্গে শিক্ষা দিতে থাকেন। নিজের মনে যা আছে, সেটাই বলতে থাকেন। তাতে যুক্তি থাকল কি থাকল না, সেটা বড় কোনো ব্যাপার নয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা ইচ্ছে তা-ই লেখার অধিকার কী করে জন্মাচ্ছে, সেটাও তো দেখা দরকার। রাজনীতি, ধর্ম, সমাজনীতি, অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক জীবন—সবটাই দখল করে নিচ্ছে পেশিশক্তি। যেদিকে তাকায় মানুষ, সেদিকেই দেখতে পায় ক্ষমতাবানদের আস্ফালন। তখন নিজেকে হেয় মনে হতে থাকে। মানুষ মনের সে জ্বালা জুড়ায় ফেসবুক বা অন্য কোনো যোগাযোগমাধ্যমে এসে।
তাই বলে ফেসবুকে কি শুধুই যুক্তিহীন কথকতার চাষবাস হয়? একেবারেই নয়। গত কয়েক বছরে সরকারি মহলেও এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের চাপে পড়ে। সংবাদমাধ্যম এ ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। সংবাদপত্রে কিংবা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে এমন কোনো সুগভীর ভাবনারও তো প্রকাশ দেখা যাচ্ছে না। মানুষ নির্ভর করবে কার ওপর? কোথাও তো জ্ঞানচর্চা বা জ্ঞান সৃষ্টির কাজটা হচ্ছে না। ফলে মাথায় যদি মধ্যযুগ এসে স্থায়ী আসন গাড়তে চায়, হাজার বছর আগের জীবনযাপন পদ্ধতিকে আজকের জীবনের মধ্যে জোর করে প্রয়োগ করতে চায়, তাহলে যেমন বিপদ, তেমনি বিপদ কোনো রাজনৈতিক মতবাদকে একমাত্র মতবাদ হিসেবে অন্যকে মানতে বাধ্য করার প্রবণতার প্রসার ঘটলে।
যেহেতু যৌক্তিকভাবে কোনো আলোচনায় বসার সুযোগ নেই, সেহেতু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে যার স্বাধীন মত প্রকাশ করতে থাকে। ফেসবুক গভীর ভাবনার প্রকাশক নয়। যার মনে যা আছে, তারই প্রতিচ্ছবি দেখা যায় সেখানে। সেটাই সংগত। কিন্তু ‘যার মন’ বলে যা বলা হচ্ছে, সেই মনগুলোকে ঠিকপথে চালিত করার জন্য যে শিক্ষার আবহ গড়ে তোলা দরকার ছিল, সেটা কেন গড়ে উঠল না বা যেটুকু ছিল, সেটুকুও কেন প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল, সেটাও তো ভাবা দরকার। শেষ একটা কথা বলি। এ নিয়ে ভাবতে পারেন। আমাদের দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বেড়ে যাওয়ার পেছনে কি শুধু ধর্মব্যবসায়ীরাই দায়ী? যাঁরা এই ধর্ম-উন্মাদনাকে সহিষ্ণুতার দিকে নিয়ে যেতে পারতেন, তাঁরা হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলেন? এ প্রশ্নটির যৌক্তিক কোনো উত্তর দেওয়া গেলেই বোঝা যাবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেন এত অস্থিরতা!
লেখক: উপসম্পাদক আজকের পত্রিকা

সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে অবিশ্বাস্য আনন্দের জন্ম দিয়ে আমাদের মেয়েরা যেদিন ঢাকায় ফিরে এলেন, সেদিন বাফুফের প্রধান কাজী সালাউদ্দিনের একটা কথা ভেসে বেড়াতে লাগল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সংবাদ সম্মেলনে হাস্যকর কিছু কথা বলেছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। তিনি নাকি তিনবার নেপালে যাওয়ার জন্য টিকিট করেছেন, কিন্তু তিনি নেপালে তাঁর উপস্থিতিতে মেয়েরা নাকি বাড়তি চাপ অনুভব করতেন। আর এই চাপ মেয়েদের খেলাকে ব্যাহত করত। এ কারণেই নাকি তিনি নেপালে যাননি।
বাফুফে সভাপতি আবার সাফেরও সভাপতি। ফলে ট্রফি তো তাঁর হাত থেকেই মেয়েরা নেবেন। কিন্তু মেয়েদের বাড়তি চাপ না দেওয়ার জন্য তিনি যাননি নেপালে।স্বভাবতই বাফুফে প্রধানের এ কথা নিয়ে তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। কে কার আগে নিজের অনুভূতি জানাতে পারে, তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল। যাঁরা প্রতিক্রিয়া দেননি, তাঁদের সিংহভাগও বাফুফে সভাপতির বক্তব্যে কষ্ট পেয়েছেন। আসলে আমাদের নারীরা উল্লেখযোগ্য পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই শত প্রতিকূলতা ঠেলে যেভাবে নিজেদের প্রমাণ করছেন বারবার, তাতে আমাদের বাফুফে সভাপতির কোনো অবদান আছে কি না, তা আমাদের জানা নেই। তবে ফুটবল খেলে নারী ও পুরুষ যে আয় করেন, সেই আয়ের বৈষম্যই তো বলে দেয়, আসলে আমাদের মেয়েদের সাফল্যের পেছনে সেই মেয়েদেরই মেধা, পরিশ্রম এবং প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠার জেদটা কাজ করেছে বেশি, তুলনায় পৃষ্ঠপোষকতা ছিল তুচ্ছ।
মেয়েরা নেপাল থেকে দেশে ফিরে আসার পর ‘ক্রেডিট’ নেওয়ার জন্য ভরে গেল বিমানবন্দর, ভরে গেল বাফুফের সংবাদ সম্মেলন। বিমানবন্দরে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পদচারণে ঢাকা পড়ে গেলেন মেয়েরা, মালা পরে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন সংগঠকের দল, বাফুফের সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারগুলো দখল করে নিলেন পৃষ্ঠপোষকেরাই। চেয়ার থেকে উঠিয়ে দেওয়া হলো নারী ফুটবল দলের কোচ ও অধিনায়ককে। এই রুচিহীনতাই প্রমাণ করে, কেন আসলে আমাদের খেলাধুলা এ রকম কাদার মধ্যে পড়েছে।
দুই. ঘটনার উল্টো দিকও আছে। যেকোনো বিষয়েই অতি আবেগ বস্তুনিষ্ঠতাকে ম্লান করে দেয়। আবেগের ঘায়ে সত্য পালায়। আমাদের সমাজজীবনে আবেগের ঘনঘটা নতুন এক সত্যের জন্ম দিচ্ছে। এ সত্য বড়ই লজ্জার। যে কেউ যে কাউকে যুক্তিহীনভাবে আঘাত করতে পারবে, কিন্তু তার দায় নেবে না। কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিজের কথা বলে দিয়েই যেন মুক্তি। এ কথাগুলো যদি আসে এমন কারও মুখ থেকে, যিনি সমাজে প্রতিষ্ঠিত কিংবা যাঁকে শ্রদ্ধা করে আমজনতা, তাহলে তিনি ভুল তথ্য ছড়িয়ে যতটা ক্ষতি করতে পারেন, তা কোনো পরিমাপেই ধরা যায় না।
অনেকের মতো, একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হঠাৎ করে কাজী সালাউদ্দিনের নামে ছড়িয়ে পড়া একটি ট্রল শেয়ার করে নিজেই কাজী সালাউদ্দিনকে নিয়ে অবমাননাকর কিছু কথা লিখে দিয়েছিলেন। বাফুফে নাকি মেয়েদের বিয়ের খরচ বহন করবে, এ রকম ছিল ট্রলের ভাষা। যেকোনো স্বাভাবিক বিচারেই এটা বোঝা কঠিন নয় যে বাফুফে সভাপতি এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। এ কথা ভেবে আমি স্ট্যাটাসটিতে অনেকটা এ ধরনের মন্তব্য করেছিলাম, ‘কাজী সালাউদ্দিন কি সত্যিই এ রকম কথা বলেছেন? কথাটা কি ভ্যারিফাই করা হয়েছে?’
উত্তরে পোস্টদাতা বলেছেন, তিনি ভ্যারিফাই করেননি। আমি চাইলে ভ্যারিফাই করে তাঁকে জানাতে পারি।একজন মানুষ কোনো কথা বলেছেন কি বলেননি, সেটা যাচাই না করেই ফেসবুকে দিচ্ছেন, আবার সেটা প্রমাণ করার দায়িত্বও তাঁর নয়, এ রকম কথা বলে দিচ্ছেন তাঁরাও, যাঁদের প্রতি আস্থা রাখতে চায় মানুষ!
পরে যখন প্রমাণ হলো, সালাউদ্দিন এ রকম কোনো কথা বলেননি, সেই ব্যক্তি তখন ফেসবুক পোস্ট দিলেন যে তিনি স্ট্যাটাসটি প্রত্যাহার করে নিলেন এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য ক্ষমাও চাইলেন না। শুধু প্রত্যাহার করে নেওয়াই যেন তাঁর মহানুভবতার প্রকাশ। এরই মধ্যে তাঁর ছড়ানো হাস্যরসে যে অগণিত মানুষ মন মজাল এবং যিনি যা ঘটাননি, তাঁকে সেই ঘটনায় দোষী করল, এই দায় কে নেবে? মানসিক এই বন্ধ্যত্বকেও তাহলে বরণ করে নেওয়ার রেওয়াজ গড়ে ওঠা শুরু হয়ে গেছে আমাদের মধ্যে!
তিন. আমরা যে ক্রমেই চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছি, সেটা নিজেরাই বুঝতে পারছি না। যেকোনো বিষয়ে নিজেদের মতামত দেওয়ার জন্য সবাই যেন উদগ্রীব হয়ে আছে। কী বলবে, তা নিয়ে ভাবছেও না। বলে ফেলছে দ্রুত। কোনো ঘটনা ঘটার পর তা বুঝে নিয়ে যুক্তিসংগত মন্তব্য না করে গড্ডলিকা প্রবাহে ভাসিয়ে দিচ্ছে নিজেকে। সব বিষয়ে সবারই মতামত কেন দিতে হচ্ছে? না দিলে কি পিছিয়ে পড়বে মানুষ? অন্যদের চোখে হেয় হয়ে যাবে?
এই তো কদিন ধরে মরিয়ম নামের একটি মেয়ে ছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এক মাস ধরে মাকে খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়ার বাড়ি থেকে পানি তুলতে গিয়ে মরিয়ম মান্নানের মা কি তবে গুম হয়েছিলেন? ক্রন্দনরত মরিয়মের ছবি হাহাকার তুলেছিল মানুষের হৃদয়ে। একসময় ময়মনসিংহে একটি বস্তাবন্দী লাশের সন্ধান পাওয়ার পর মরিয়ম নিশ্চিত হয়ে বলেছিলেন, এটা তাঁর মায়েরই লাশ। অথচ তাঁর মা রহিমা বেগমকে ফরিদপুর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি নাকি স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছিলেন।
মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম কেন স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছিলেন, তাঁর চার মেয়ে কেন অন্য একটি লাশকেই তাঁদের মায়ের লাশ বলে শনাক্ত করেছিলেন, জমিজমা-সংক্রান্ত কোনো ঘাপলা আছে কি না—সে রহস্যও একসময় উদ্ঘাটিত হবে নিশ্চয়ই। কিন্তু মরিয়মের আহাজারির পর কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাবড় তাবড় ব্যক্তিরা যখন ‘গুম’ শব্দটির নানাবিধ ব্যবহার করছিলেন এবং ইঙ্গিত করছিলেন এর সঙ্গে সরকারি সংশ্লিষ্টতার, তখন বুঝতে হবে, যে চোরাবালিতে ডুবে যাওয়ার কথা বলছিলাম, এই হচ্ছে সেই চোরাবালি। যেকোনো বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে শক্ত ভিতে পা পড়ে না। তখনই চোরাবালিতে ডুবে যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়।
একটি স্বনামধন্য পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক এবং অর্থনীতিতে পড়া আরেকজন মেধাবী সাংবাদিকের ফেসবুক দেয়ালেও মরিয়মকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দেখেছি। আজ তাঁদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখি, তাঁরা সেই পোস্ট উধাও করে দিয়েছেন!
চার. ‘ধীরে চলো’ নীতিটা এখন আর কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে না। এখন তো সবাই শিক্ষক, শিক্ষার্থী কেউ নেই। তাই সবাই একই সঙ্গে শিক্ষা দিতে থাকেন। নিজের মনে যা আছে, সেটাই বলতে থাকেন। তাতে যুক্তি থাকল কি থাকল না, সেটা বড় কোনো ব্যাপার নয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা ইচ্ছে তা-ই লেখার অধিকার কী করে জন্মাচ্ছে, সেটাও তো দেখা দরকার। রাজনীতি, ধর্ম, সমাজনীতি, অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক জীবন—সবটাই দখল করে নিচ্ছে পেশিশক্তি। যেদিকে তাকায় মানুষ, সেদিকেই দেখতে পায় ক্ষমতাবানদের আস্ফালন। তখন নিজেকে হেয় মনে হতে থাকে। মানুষ মনের সে জ্বালা জুড়ায় ফেসবুক বা অন্য কোনো যোগাযোগমাধ্যমে এসে।
তাই বলে ফেসবুকে কি শুধুই যুক্তিহীন কথকতার চাষবাস হয়? একেবারেই নয়। গত কয়েক বছরে সরকারি মহলেও এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের চাপে পড়ে। সংবাদমাধ্যম এ ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। সংবাদপত্রে কিংবা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে এমন কোনো সুগভীর ভাবনারও তো প্রকাশ দেখা যাচ্ছে না। মানুষ নির্ভর করবে কার ওপর? কোথাও তো জ্ঞানচর্চা বা জ্ঞান সৃষ্টির কাজটা হচ্ছে না। ফলে মাথায় যদি মধ্যযুগ এসে স্থায়ী আসন গাড়তে চায়, হাজার বছর আগের জীবনযাপন পদ্ধতিকে আজকের জীবনের মধ্যে জোর করে প্রয়োগ করতে চায়, তাহলে যেমন বিপদ, তেমনি বিপদ কোনো রাজনৈতিক মতবাদকে একমাত্র মতবাদ হিসেবে অন্যকে মানতে বাধ্য করার প্রবণতার প্রসার ঘটলে।
যেহেতু যৌক্তিকভাবে কোনো আলোচনায় বসার সুযোগ নেই, সেহেতু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে যার স্বাধীন মত প্রকাশ করতে থাকে। ফেসবুক গভীর ভাবনার প্রকাশক নয়। যার মনে যা আছে, তারই প্রতিচ্ছবি দেখা যায় সেখানে। সেটাই সংগত। কিন্তু ‘যার মন’ বলে যা বলা হচ্ছে, সেই মনগুলোকে ঠিকপথে চালিত করার জন্য যে শিক্ষার আবহ গড়ে তোলা দরকার ছিল, সেটা কেন গড়ে উঠল না বা যেটুকু ছিল, সেটুকুও কেন প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল, সেটাও তো ভাবা দরকার। শেষ একটা কথা বলি। এ নিয়ে ভাবতে পারেন। আমাদের দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বেড়ে যাওয়ার পেছনে কি শুধু ধর্মব্যবসায়ীরাই দায়ী? যাঁরা এই ধর্ম-উন্মাদনাকে সহিষ্ণুতার দিকে নিয়ে যেতে পারতেন, তাঁরা হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলেন? এ প্রশ্নটির যৌক্তিক কোনো উত্তর দেওয়া গেলেই বোঝা যাবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেন এত অস্থিরতা!
লেখক: উপসম্পাদক আজকের পত্রিকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে অবিশ্বাস্য আনন্দের জন্ম দিয়ে আমাদের মেয়েরা যেদিন ঢাকায় ফিরে এলেন, সেদিন বাফুফের প্রধান কাজী সালাউদ্দিনের একটা কথা ভেসে বেড়াতে লাগল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সংবাদ সম্মেলনে হাস্যকর কিছু কথা বলেছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। তিনি নাকি তিনবার নেপালে যাওয়ার জন্য টিকিট করেছেন, কিন্তু তিনি
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে অবিশ্বাস্য আনন্দের জন্ম দিয়ে আমাদের মেয়েরা যেদিন ঢাকায় ফিরে এলেন, সেদিন বাফুফের প্রধান কাজী সালাউদ্দিনের একটা কথা ভেসে বেড়াতে লাগল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সংবাদ সম্মেলনে হাস্যকর কিছু কথা বলেছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। তিনি নাকি তিনবার নেপালে যাওয়ার জন্য টিকিট করেছেন, কিন্তু তিনি
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে অবিশ্বাস্য আনন্দের জন্ম দিয়ে আমাদের মেয়েরা যেদিন ঢাকায় ফিরে এলেন, সেদিন বাফুফের প্রধান কাজী সালাউদ্দিনের একটা কথা ভেসে বেড়াতে লাগল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সংবাদ সম্মেলনে হাস্যকর কিছু কথা বলেছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। তিনি নাকি তিনবার নেপালে যাওয়ার জন্য টিকিট করেছেন, কিন্তু তিনি
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে অবিশ্বাস্য আনন্দের জন্ম দিয়ে আমাদের মেয়েরা যেদিন ঢাকায় ফিরে এলেন, সেদিন বাফুফের প্রধান কাজী সালাউদ্দিনের একটা কথা ভেসে বেড়াতে লাগল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সংবাদ সম্মেলনে হাস্যকর কিছু কথা বলেছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। তিনি নাকি তিনবার নেপালে যাওয়ার জন্য টিকিট করেছেন, কিন্তু তিনি
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫