Ajker Patrika

পাহাড়ে মাতৃভাষা রক্ষায় পাঠদান

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ৫১
Thumbnail image

দেশের পার্বত্যাঞ্চলে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ অসংখ্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাস। এসব নৃগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব মাতৃভাষা। পাহাড়ের এসব নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষাকে টিকিয়ে রাখতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন পাড়াকেন্দ্রে শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদান করানো হচ্ছে। টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের আওতায় প্রাক-প্রাথমিকে তিন থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের মাতৃভাষার পাশাপাশি বাংলাও পড়ানো হয়। যাতে পরে প্রাথমিকের পাঠদান পদ্ধতির সঙ্গে দ্রুত খাপ খাওয়াতে পারে শিক্ষার্থীরা।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘১৯৮৫ সালে এ কার্যক্রম স্বল্প পরিসরে শুরু হলেও বর্তমানে তা বৃহৎ আকারে হচ্ছে। সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে সরকারি অর্থায়নে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। এ কাজে সহায়তা করেছে ইউনিসেফ। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা—খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে বর্তমানে ৪ হাজার ৭০০ পাড়াকেন্দ্রে মাতৃভাষায় পাঠদান কার্যক্রম চালু রয়েছে। বর্তমানে এসব কেন্দ্রে কেবল খাগড়াছড়িতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১ হাজার ৭৯০ জন। তিন পার্বত্য জেলায় এ সংখ্যা ৬১ হাজারের ওপরে।

এসব পাড়াকেন্দ্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সপ্তাহের ছুটির দিন ব্যতীত প্রায় প্রতিদিনই সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শিশুদের পাঠদান শুরু হয়। পাড়াকেন্দ্রগুলোতে একজন পাড়াকর্মী বা শিক্ষিকা রয়েছে। শিশুদের ইচ্ছা অনুযায়ী কুশল বিনিময় করে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পরপরই শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু করেন। এসব কোমলমতি শিশুকে দুই ঘণ্টার পাঠদানের মধ্যে রয়েছে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জন বর্ণ ও ছড়া।

খাগড়াছড়ি থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে ভাইবোন বাজার। বাজারের অদূরের ভাইবোনছড়া মারমা পাড়াকেন্দ্র। ২০০৯ সালে এই কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত। পাড়াকেন্দ্রের কর্মী আনুচিং মারমা ও মাঠ সংগঠক লিলিপ্রু মারমা বলেন, পাড়াকেন্দ্রে শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদান করানো হয়। তারা মাতৃভাষা সম্পর্কে জানতে পারে। একই সঙ্গে বাংলাও পড়ানো হয়। প্রাক-প্রাথমিক মাতৃভাষা সম্পর্কে জানার ফলে প্রাথমিকে ভর্তি শিক্ষার্থীরা আর ঝরে পড়ে না। মাতৃভাষায় পাঠদানের কারণে শিক্ষার্থীরা নিজেদের বর্ণমালা চিনতে, লিখতে ও বলতে পারে।

দুর্গম এলাকায় শিশুদের বিনা মূল্যে লেখাপড়া শেখাতে পেরে খুশি অভিভাবকরাও। ভাইবোন পাড়াকেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক রাংহ্লা মারমা, সাইহ্লাউ মারমা, মংসাহ্লা মারমা বলেন, বাংলার পাশাপাশি পাড়াকেন্দ্রে মারমা, চাকমা ও ত্রিপুরা ভাষায় বাচ্চাদের শেখানো হয়। পরে তারা প্রাইমারিতে ভর্তি হলে সহজে বুঝতে পারে। প্রাথমিকে আর ঝরে পড়ে না। এটা বাচ্চাদের জন্য খুব ভালো একটা উদ্যোগ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের খাগড়াছড়ির প্রকল্প ব্যবস্থাপক মতিউর রহমান বলেন, পাড়াকেন্দ্র পার্বত্য চট্টগ্রামের শিশুদের বাতিঘর। এ কেন্দ্রের মাধ্যমে মাতৃভাষার পাশাপাশি বাংলা পড়ার কারণে শিশুরা স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর দ্রুত প্রচলিত পাঠদানের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে পারছে। এতে কমে গেছে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার। পাড়াকেন্দ্রে রয়েছে কিশোরী ক্লাব। যেখানে প্রতি সপ্তাহে দুদিন পাড়ার কিশোরীদের নিয়ে নাচ, গান, খেলাধুলা ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক সব শিক্ষাই দিচ্ছে এ পাড়াকেন্দ্র। পাড়াকেন্দ্রের এই প্রকল্পের জন্মলগ্ন থেকেই সহযোগিতা করছে ইউনিসে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত