আফরিদা সামিহা নাবিলাহ্

দরিদ্র ঘরে জন্ম নেওয়া আসমা। মায়ের সঙ্গে বেড়ে উঠেছে রাজধানীর ভাষানটেক বস্তিতে। একদিন এলাকার পরিচিত বাড়ির কর্ত্রী আসমার মাকে বলেন, তাঁর বাড়ির কাজকর্মে সাহায্যের জন্য একজন কম বয়সী মেয়ের প্রয়োজন। অভাবের তাড়নায় মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে অপারগ মা, সংসারে কিছু আয় হওয়ার কথা ভেবে মেয়ে আসমাকে কাজে পাঠাতে রাজি হন। মাত্র ১১ বছরের আসমা নিজ বাসা ছেড়ে, অন্যের বাড়ির সব কাজ করতে শুরু করে।
কাজ শুরুর কিছুদিন পর থেকেই আসমা গৃহকর্তার আচরণে অনিরাপদ ও ভয় অনুভব করত। আসমা ঘুমিয়ে থাকলে গৃহকর্তা গায়ে হাত দেওয়ার মতো নানা রকম যৌন হয়রানিমূলক আচরণ করতেন। স্বামীর আচরণ সম্পর্কে গৃহকর্ত্রীকে জানানো হলে তিনি আসমাকে চুপ থাকার নির্দেশ দেন। তবে গৃহকর্তার বাজে আচরণের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে, আসমা তার মাকে জানায়। আসমার মা গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি আসমাকে তার বাড়িতে আর কাজে রাখবেন না বলে জানিয়ে দেন। বাধ্য হয়ে তিনি মেয়েকে নিয়ে আসেন। জীবিকার তাড়নায় আসমার মা এরূপ অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও মেয়ের যত্ন নিতে পারেননি; বরং অল্প কিছুদিনের মাথায় পুনরায় অন্য বাড়িতে কাজে পাঠিয়ে দেন।
আসমা ১৬ বছর বয়সে মায়ের ঠিক করা ছেলেকে বিয়ে করে নেন। তবে বিয়ের বিষয়ে তার মতামত কেউ জানতে চাননি। বছরখানেকের মধ্যে আসমা অন্তঃসত্ত্বা হয় এবং তখনো গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োজিত ছিল। সন্তান প্রসবের কাছাকাছি সময়ে আসমা ভারী কাজ করতে অস্বস্তি অনুভব করার কারণে সপ্তাহখানেকের ছুটি চায়। তবে তার গৃহকর্ত্রী ছুটি নেওয়ার অনুমতি দেননি এবং ছুটি নিলে কাজ হারানোর আশঙ্কা আছে বলেন। এতে ভয় পেয়ে আসমা ছুটি ছাড়াই কাজ চালিয়ে যায়।
একদিন কাজের ফাঁকে আসমার মনে পড়ে সে এই বাড়িতে কাজ শুরু করার পর শুনেছে গৃহকর্ত্রী তার কর্মস্থল থেকে চার মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি পেয়েছিলেন। আসমা তখন ভাবে, কেবল অফিসে চাকরি করলেই এমন ছুটি পাওয়া যায়, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য এ রকম ছুটি নিয়ে কেউ ভাবে না। কিন্তু আসমা জানে না যে বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান [অনুচ্ছেদ ২৭] এবং সকল জবরদস্তি শ্রমও দণ্ডনীয় অপরাধ [অনুচ্ছেদ ৩৪]।
উদ্বেগের বিষয় এই, গৃহকর্মীদের সমস্যার সমাধান, সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং তাদের অধিকার রক্ষার জন্য আমাদের দেশে কোনো বিশেষ আইন নেই। এমনকি, দেশের শ্রম আইনেও তাদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ১৯৬১ সালে প্রণীত গৃহকর্মী নিবন্ধন অর্ডিন্যান্সে বাসায় কাজ করা কর্মীদের নিবন্ধনের কথা বলা হলেও, বাস্তবে এই আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। ২০১৫ সালে প্রণীত ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি’ কিছুটা স্বস্তি দিলেও, ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জাহান আরা হকের যৌথ রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট ওই নীতিকে ‘অসম্পূর্ণ’ ও ‘অস্পষ্ট’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আসমার ঘটনার বিশ্লেষণ এই নীতিমালার অসম্পূর্ণতা উন্মোচিত করে। ১১ বছর বয়সে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করা আসমা নীতিমালায় নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের (হালকা কাজের ক্ষেত্রে ১২ বছর) চেয়ে কম। কিন্তু নীতিমালায় কম বয়সী শিশুদের নিয়োগের বৈধতা সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই। শ্রম আইনে ১৪ বছর পর্যন্ত শিশুদের নিয়োগকে শিশুশ্রম হিসেবে গণ্য করা হলেও, গৃহকর্মীদের ক্ষেত্রে নীতিমালায় কেন ১২ বছরকে সর্বনিম্ন বয়স ধরা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
আসমার মতো বহু গৃহকর্মী প্রতিনিয়ত কাজের সময় নানা সহিংসতার শিকার হন। নীতিমালা অনুসারে, নিয়োগকর্তার কাছে যৌন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মীরা প্রচলিত আইনানুযায়ী বিচার পাবেন এবং সরকার তাঁদের মামলার খরচ বহন করবে। তবে এই অভিযোগ কোথায় করবেন, সে বিষয়ে কোনো নির্দেশিকা নেই। শুধু একটি মনিটরিং সেল গঠনের কথা বলা হয়েছে, যেখানে গৃহকর্মীরা টেলিফোন, মৌখিক বা লিখিতভাবে অভিযোগ করতে পারবেন।
ওই মনিটরিং সেলের গঠন এবং কার্যকারিতাও প্রশ্নবিদ্ধ। জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের বক্তব্যে জানা যায়, কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল নীতিমালা বাস্তবায়ন তদারকির জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা হলেও এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা উচিত এবং কমিটির পরিদর্শন টিমের কর্মতৎপরতাও নিশ্চিত করা উচিত। কেননা, নিষ্ক্রিয় সেল এবং টিমের ক্ষেত্রে নির্যাতিত গৃহকর্মীদের অভিযোগ দাখিল করা এবং বিচার পাওয়া অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া গৃহকর্মীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার কারণে তাঁদের পক্ষে প্রচলিত আইনব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়ে বিচার চাওয়া অনেকটাই দুষ্কর। নীতিমালায় তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো আদালত কিংবা সুস্পষ্ট প্রক্রিয়া উল্লেখ থাকা জরুরি ছিল।
গৃহকর্ত্রী আসমাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ করার জন্য কাজ থেকে বের করে দেন। নীতিমালা অনুসারে, গৃহকর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণের এক মাস আগে নোটিশ দিতে হবে এবং তাৎক্ষণিক বরখাস্তের ক্ষেত্রে এক মাসের অগ্রিম মজুরি দিতে হবে, যা আসমা পায়নি। তবে এই বিধি লঙ্ঘন করলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বলা হয়নি।
নীতিমালায় উল্লেখ আছে, গৃহকর্মীরা বেতনের সুবিধাসহ ১৬ সপ্তাহের (প্রসবের আগে ৪ সপ্তাহ, পরে ১২ সপ্তাহ অথবা গৃহকর্মীর সুবিধা অনুসারে) প্রসূতিকালীন ছুটি পাবেন। এ ক্ষেত্রে আসমা এরূপ ছুটির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তবে নীতিমালায় এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া গৃহকর্মী কোন কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানাবেন, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দেওয়া নেই।
নীতিমালাটির বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, উদাহরণস্বরূপ—গৃহকর্মীদের ন্যূনতম মজুরি, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ও পদ্ধতি এবং তাঁদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। একই সঙ্গে নীতিমালার অবশিষ্ট বিধি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও সরকারপক্ষ থেকে তৎপরতার অভাব লক্ষণীয়। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এর দায়ের করা জনস্বার্থ মামলায়, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৬ মাসের মধ্যে নীতিমালা অনুযায়ী সারা দেশে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে মনিটরিং সেল গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন মহামান্য হাইকোর্ট। এই নির্দেশনার অনুসরণ করে ওই সেল গঠনের মাধ্যমে কমিটির কার্যকারিতা নিশ্চিত করা হলে তা গৃহকর্মীদের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য আইনের দাবি বহুদিনের। আসমা দেশের অসংখ্য গৃহকর্মীর বর্তমান দুর্দশার প্রতিচ্ছবি। হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে, নীতিমালার কার্যকর বাস্তবায়ন, স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। নীতিমালার অসম্পূর্ণতা দূর করে এটিকে আইনে রূপান্তরিত করাও জরুরি। গৃহকর্মীদের শ্রম আইনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং গৃহকর্মকে একটি পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া সময়ের দাবি।
লেখক: আফরিদা সামিহা নাবিলাহ্, সহকারী গবেষক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ লেখায় উল্লিখিত আসমা চরিত্রটি কাল্পনিক।

দরিদ্র ঘরে জন্ম নেওয়া আসমা। মায়ের সঙ্গে বেড়ে উঠেছে রাজধানীর ভাষানটেক বস্তিতে। একদিন এলাকার পরিচিত বাড়ির কর্ত্রী আসমার মাকে বলেন, তাঁর বাড়ির কাজকর্মে সাহায্যের জন্য একজন কম বয়সী মেয়ের প্রয়োজন। অভাবের তাড়নায় মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে অপারগ মা, সংসারে কিছু আয় হওয়ার কথা ভেবে মেয়ে আসমাকে কাজে পাঠাতে রাজি হন। মাত্র ১১ বছরের আসমা নিজ বাসা ছেড়ে, অন্যের বাড়ির সব কাজ করতে শুরু করে।
কাজ শুরুর কিছুদিন পর থেকেই আসমা গৃহকর্তার আচরণে অনিরাপদ ও ভয় অনুভব করত। আসমা ঘুমিয়ে থাকলে গৃহকর্তা গায়ে হাত দেওয়ার মতো নানা রকম যৌন হয়রানিমূলক আচরণ করতেন। স্বামীর আচরণ সম্পর্কে গৃহকর্ত্রীকে জানানো হলে তিনি আসমাকে চুপ থাকার নির্দেশ দেন। তবে গৃহকর্তার বাজে আচরণের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে, আসমা তার মাকে জানায়। আসমার মা গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি আসমাকে তার বাড়িতে আর কাজে রাখবেন না বলে জানিয়ে দেন। বাধ্য হয়ে তিনি মেয়েকে নিয়ে আসেন। জীবিকার তাড়নায় আসমার মা এরূপ অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও মেয়ের যত্ন নিতে পারেননি; বরং অল্প কিছুদিনের মাথায় পুনরায় অন্য বাড়িতে কাজে পাঠিয়ে দেন।
আসমা ১৬ বছর বয়সে মায়ের ঠিক করা ছেলেকে বিয়ে করে নেন। তবে বিয়ের বিষয়ে তার মতামত কেউ জানতে চাননি। বছরখানেকের মধ্যে আসমা অন্তঃসত্ত্বা হয় এবং তখনো গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োজিত ছিল। সন্তান প্রসবের কাছাকাছি সময়ে আসমা ভারী কাজ করতে অস্বস্তি অনুভব করার কারণে সপ্তাহখানেকের ছুটি চায়। তবে তার গৃহকর্ত্রী ছুটি নেওয়ার অনুমতি দেননি এবং ছুটি নিলে কাজ হারানোর আশঙ্কা আছে বলেন। এতে ভয় পেয়ে আসমা ছুটি ছাড়াই কাজ চালিয়ে যায়।
একদিন কাজের ফাঁকে আসমার মনে পড়ে সে এই বাড়িতে কাজ শুরু করার পর শুনেছে গৃহকর্ত্রী তার কর্মস্থল থেকে চার মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি পেয়েছিলেন। আসমা তখন ভাবে, কেবল অফিসে চাকরি করলেই এমন ছুটি পাওয়া যায়, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য এ রকম ছুটি নিয়ে কেউ ভাবে না। কিন্তু আসমা জানে না যে বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান [অনুচ্ছেদ ২৭] এবং সকল জবরদস্তি শ্রমও দণ্ডনীয় অপরাধ [অনুচ্ছেদ ৩৪]।
উদ্বেগের বিষয় এই, গৃহকর্মীদের সমস্যার সমাধান, সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং তাদের অধিকার রক্ষার জন্য আমাদের দেশে কোনো বিশেষ আইন নেই। এমনকি, দেশের শ্রম আইনেও তাদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ১৯৬১ সালে প্রণীত গৃহকর্মী নিবন্ধন অর্ডিন্যান্সে বাসায় কাজ করা কর্মীদের নিবন্ধনের কথা বলা হলেও, বাস্তবে এই আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। ২০১৫ সালে প্রণীত ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি’ কিছুটা স্বস্তি দিলেও, ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জাহান আরা হকের যৌথ রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট ওই নীতিকে ‘অসম্পূর্ণ’ ও ‘অস্পষ্ট’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আসমার ঘটনার বিশ্লেষণ এই নীতিমালার অসম্পূর্ণতা উন্মোচিত করে। ১১ বছর বয়সে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করা আসমা নীতিমালায় নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের (হালকা কাজের ক্ষেত্রে ১২ বছর) চেয়ে কম। কিন্তু নীতিমালায় কম বয়সী শিশুদের নিয়োগের বৈধতা সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই। শ্রম আইনে ১৪ বছর পর্যন্ত শিশুদের নিয়োগকে শিশুশ্রম হিসেবে গণ্য করা হলেও, গৃহকর্মীদের ক্ষেত্রে নীতিমালায় কেন ১২ বছরকে সর্বনিম্ন বয়স ধরা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
আসমার মতো বহু গৃহকর্মী প্রতিনিয়ত কাজের সময় নানা সহিংসতার শিকার হন। নীতিমালা অনুসারে, নিয়োগকর্তার কাছে যৌন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মীরা প্রচলিত আইনানুযায়ী বিচার পাবেন এবং সরকার তাঁদের মামলার খরচ বহন করবে। তবে এই অভিযোগ কোথায় করবেন, সে বিষয়ে কোনো নির্দেশিকা নেই। শুধু একটি মনিটরিং সেল গঠনের কথা বলা হয়েছে, যেখানে গৃহকর্মীরা টেলিফোন, মৌখিক বা লিখিতভাবে অভিযোগ করতে পারবেন।
ওই মনিটরিং সেলের গঠন এবং কার্যকারিতাও প্রশ্নবিদ্ধ। জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের বক্তব্যে জানা যায়, কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল নীতিমালা বাস্তবায়ন তদারকির জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা হলেও এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা উচিত এবং কমিটির পরিদর্শন টিমের কর্মতৎপরতাও নিশ্চিত করা উচিত। কেননা, নিষ্ক্রিয় সেল এবং টিমের ক্ষেত্রে নির্যাতিত গৃহকর্মীদের অভিযোগ দাখিল করা এবং বিচার পাওয়া অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া গৃহকর্মীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার কারণে তাঁদের পক্ষে প্রচলিত আইনব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়ে বিচার চাওয়া অনেকটাই দুষ্কর। নীতিমালায় তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো আদালত কিংবা সুস্পষ্ট প্রক্রিয়া উল্লেখ থাকা জরুরি ছিল।
গৃহকর্ত্রী আসমাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ করার জন্য কাজ থেকে বের করে দেন। নীতিমালা অনুসারে, গৃহকর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণের এক মাস আগে নোটিশ দিতে হবে এবং তাৎক্ষণিক বরখাস্তের ক্ষেত্রে এক মাসের অগ্রিম মজুরি দিতে হবে, যা আসমা পায়নি। তবে এই বিধি লঙ্ঘন করলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বলা হয়নি।
নীতিমালায় উল্লেখ আছে, গৃহকর্মীরা বেতনের সুবিধাসহ ১৬ সপ্তাহের (প্রসবের আগে ৪ সপ্তাহ, পরে ১২ সপ্তাহ অথবা গৃহকর্মীর সুবিধা অনুসারে) প্রসূতিকালীন ছুটি পাবেন। এ ক্ষেত্রে আসমা এরূপ ছুটির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তবে নীতিমালায় এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া গৃহকর্মী কোন কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানাবেন, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দেওয়া নেই।
নীতিমালাটির বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, উদাহরণস্বরূপ—গৃহকর্মীদের ন্যূনতম মজুরি, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ও পদ্ধতি এবং তাঁদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। একই সঙ্গে নীতিমালার অবশিষ্ট বিধি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও সরকারপক্ষ থেকে তৎপরতার অভাব লক্ষণীয়। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এর দায়ের করা জনস্বার্থ মামলায়, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৬ মাসের মধ্যে নীতিমালা অনুযায়ী সারা দেশে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে মনিটরিং সেল গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন মহামান্য হাইকোর্ট। এই নির্দেশনার অনুসরণ করে ওই সেল গঠনের মাধ্যমে কমিটির কার্যকারিতা নিশ্চিত করা হলে তা গৃহকর্মীদের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য আইনের দাবি বহুদিনের। আসমা দেশের অসংখ্য গৃহকর্মীর বর্তমান দুর্দশার প্রতিচ্ছবি। হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে, নীতিমালার কার্যকর বাস্তবায়ন, স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। নীতিমালার অসম্পূর্ণতা দূর করে এটিকে আইনে রূপান্তরিত করাও জরুরি। গৃহকর্মীদের শ্রম আইনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং গৃহকর্মকে একটি পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া সময়ের দাবি।
লেখক: আফরিদা সামিহা নাবিলাহ্, সহকারী গবেষক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ লেখায় উল্লিখিত আসমা চরিত্রটি কাল্পনিক।
আফরিদা সামিহা নাবিলাহ্

দরিদ্র ঘরে জন্ম নেওয়া আসমা। মায়ের সঙ্গে বেড়ে উঠেছে রাজধানীর ভাষানটেক বস্তিতে। একদিন এলাকার পরিচিত বাড়ির কর্ত্রী আসমার মাকে বলেন, তাঁর বাড়ির কাজকর্মে সাহায্যের জন্য একজন কম বয়সী মেয়ের প্রয়োজন। অভাবের তাড়নায় মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে অপারগ মা, সংসারে কিছু আয় হওয়ার কথা ভেবে মেয়ে আসমাকে কাজে পাঠাতে রাজি হন। মাত্র ১১ বছরের আসমা নিজ বাসা ছেড়ে, অন্যের বাড়ির সব কাজ করতে শুরু করে।
কাজ শুরুর কিছুদিন পর থেকেই আসমা গৃহকর্তার আচরণে অনিরাপদ ও ভয় অনুভব করত। আসমা ঘুমিয়ে থাকলে গৃহকর্তা গায়ে হাত দেওয়ার মতো নানা রকম যৌন হয়রানিমূলক আচরণ করতেন। স্বামীর আচরণ সম্পর্কে গৃহকর্ত্রীকে জানানো হলে তিনি আসমাকে চুপ থাকার নির্দেশ দেন। তবে গৃহকর্তার বাজে আচরণের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে, আসমা তার মাকে জানায়। আসমার মা গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি আসমাকে তার বাড়িতে আর কাজে রাখবেন না বলে জানিয়ে দেন। বাধ্য হয়ে তিনি মেয়েকে নিয়ে আসেন। জীবিকার তাড়নায় আসমার মা এরূপ অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও মেয়ের যত্ন নিতে পারেননি; বরং অল্প কিছুদিনের মাথায় পুনরায় অন্য বাড়িতে কাজে পাঠিয়ে দেন।
আসমা ১৬ বছর বয়সে মায়ের ঠিক করা ছেলেকে বিয়ে করে নেন। তবে বিয়ের বিষয়ে তার মতামত কেউ জানতে চাননি। বছরখানেকের মধ্যে আসমা অন্তঃসত্ত্বা হয় এবং তখনো গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োজিত ছিল। সন্তান প্রসবের কাছাকাছি সময়ে আসমা ভারী কাজ করতে অস্বস্তি অনুভব করার কারণে সপ্তাহখানেকের ছুটি চায়। তবে তার গৃহকর্ত্রী ছুটি নেওয়ার অনুমতি দেননি এবং ছুটি নিলে কাজ হারানোর আশঙ্কা আছে বলেন। এতে ভয় পেয়ে আসমা ছুটি ছাড়াই কাজ চালিয়ে যায়।
একদিন কাজের ফাঁকে আসমার মনে পড়ে সে এই বাড়িতে কাজ শুরু করার পর শুনেছে গৃহকর্ত্রী তার কর্মস্থল থেকে চার মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি পেয়েছিলেন। আসমা তখন ভাবে, কেবল অফিসে চাকরি করলেই এমন ছুটি পাওয়া যায়, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য এ রকম ছুটি নিয়ে কেউ ভাবে না। কিন্তু আসমা জানে না যে বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান [অনুচ্ছেদ ২৭] এবং সকল জবরদস্তি শ্রমও দণ্ডনীয় অপরাধ [অনুচ্ছেদ ৩৪]।
উদ্বেগের বিষয় এই, গৃহকর্মীদের সমস্যার সমাধান, সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং তাদের অধিকার রক্ষার জন্য আমাদের দেশে কোনো বিশেষ আইন নেই। এমনকি, দেশের শ্রম আইনেও তাদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ১৯৬১ সালে প্রণীত গৃহকর্মী নিবন্ধন অর্ডিন্যান্সে বাসায় কাজ করা কর্মীদের নিবন্ধনের কথা বলা হলেও, বাস্তবে এই আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। ২০১৫ সালে প্রণীত ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি’ কিছুটা স্বস্তি দিলেও, ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জাহান আরা হকের যৌথ রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট ওই নীতিকে ‘অসম্পূর্ণ’ ও ‘অস্পষ্ট’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আসমার ঘটনার বিশ্লেষণ এই নীতিমালার অসম্পূর্ণতা উন্মোচিত করে। ১১ বছর বয়সে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করা আসমা নীতিমালায় নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের (হালকা কাজের ক্ষেত্রে ১২ বছর) চেয়ে কম। কিন্তু নীতিমালায় কম বয়সী শিশুদের নিয়োগের বৈধতা সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই। শ্রম আইনে ১৪ বছর পর্যন্ত শিশুদের নিয়োগকে শিশুশ্রম হিসেবে গণ্য করা হলেও, গৃহকর্মীদের ক্ষেত্রে নীতিমালায় কেন ১২ বছরকে সর্বনিম্ন বয়স ধরা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
আসমার মতো বহু গৃহকর্মী প্রতিনিয়ত কাজের সময় নানা সহিংসতার শিকার হন। নীতিমালা অনুসারে, নিয়োগকর্তার কাছে যৌন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মীরা প্রচলিত আইনানুযায়ী বিচার পাবেন এবং সরকার তাঁদের মামলার খরচ বহন করবে। তবে এই অভিযোগ কোথায় করবেন, সে বিষয়ে কোনো নির্দেশিকা নেই। শুধু একটি মনিটরিং সেল গঠনের কথা বলা হয়েছে, যেখানে গৃহকর্মীরা টেলিফোন, মৌখিক বা লিখিতভাবে অভিযোগ করতে পারবেন।
ওই মনিটরিং সেলের গঠন এবং কার্যকারিতাও প্রশ্নবিদ্ধ। জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের বক্তব্যে জানা যায়, কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল নীতিমালা বাস্তবায়ন তদারকির জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা হলেও এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা উচিত এবং কমিটির পরিদর্শন টিমের কর্মতৎপরতাও নিশ্চিত করা উচিত। কেননা, নিষ্ক্রিয় সেল এবং টিমের ক্ষেত্রে নির্যাতিত গৃহকর্মীদের অভিযোগ দাখিল করা এবং বিচার পাওয়া অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া গৃহকর্মীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার কারণে তাঁদের পক্ষে প্রচলিত আইনব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়ে বিচার চাওয়া অনেকটাই দুষ্কর। নীতিমালায় তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো আদালত কিংবা সুস্পষ্ট প্রক্রিয়া উল্লেখ থাকা জরুরি ছিল।
গৃহকর্ত্রী আসমাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ করার জন্য কাজ থেকে বের করে দেন। নীতিমালা অনুসারে, গৃহকর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণের এক মাস আগে নোটিশ দিতে হবে এবং তাৎক্ষণিক বরখাস্তের ক্ষেত্রে এক মাসের অগ্রিম মজুরি দিতে হবে, যা আসমা পায়নি। তবে এই বিধি লঙ্ঘন করলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বলা হয়নি।
নীতিমালায় উল্লেখ আছে, গৃহকর্মীরা বেতনের সুবিধাসহ ১৬ সপ্তাহের (প্রসবের আগে ৪ সপ্তাহ, পরে ১২ সপ্তাহ অথবা গৃহকর্মীর সুবিধা অনুসারে) প্রসূতিকালীন ছুটি পাবেন। এ ক্ষেত্রে আসমা এরূপ ছুটির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তবে নীতিমালায় এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া গৃহকর্মী কোন কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানাবেন, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দেওয়া নেই।
নীতিমালাটির বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, উদাহরণস্বরূপ—গৃহকর্মীদের ন্যূনতম মজুরি, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ও পদ্ধতি এবং তাঁদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। একই সঙ্গে নীতিমালার অবশিষ্ট বিধি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও সরকারপক্ষ থেকে তৎপরতার অভাব লক্ষণীয়। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এর দায়ের করা জনস্বার্থ মামলায়, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৬ মাসের মধ্যে নীতিমালা অনুযায়ী সারা দেশে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে মনিটরিং সেল গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন মহামান্য হাইকোর্ট। এই নির্দেশনার অনুসরণ করে ওই সেল গঠনের মাধ্যমে কমিটির কার্যকারিতা নিশ্চিত করা হলে তা গৃহকর্মীদের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য আইনের দাবি বহুদিনের। আসমা দেশের অসংখ্য গৃহকর্মীর বর্তমান দুর্দশার প্রতিচ্ছবি। হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে, নীতিমালার কার্যকর বাস্তবায়ন, স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। নীতিমালার অসম্পূর্ণতা দূর করে এটিকে আইনে রূপান্তরিত করাও জরুরি। গৃহকর্মীদের শ্রম আইনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং গৃহকর্মকে একটি পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া সময়ের দাবি।
লেখক: আফরিদা সামিহা নাবিলাহ্, সহকারী গবেষক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ লেখায় উল্লিখিত আসমা চরিত্রটি কাল্পনিক।

দরিদ্র ঘরে জন্ম নেওয়া আসমা। মায়ের সঙ্গে বেড়ে উঠেছে রাজধানীর ভাষানটেক বস্তিতে। একদিন এলাকার পরিচিত বাড়ির কর্ত্রী আসমার মাকে বলেন, তাঁর বাড়ির কাজকর্মে সাহায্যের জন্য একজন কম বয়সী মেয়ের প্রয়োজন। অভাবের তাড়নায় মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে অপারগ মা, সংসারে কিছু আয় হওয়ার কথা ভেবে মেয়ে আসমাকে কাজে পাঠাতে রাজি হন। মাত্র ১১ বছরের আসমা নিজ বাসা ছেড়ে, অন্যের বাড়ির সব কাজ করতে শুরু করে।
কাজ শুরুর কিছুদিন পর থেকেই আসমা গৃহকর্তার আচরণে অনিরাপদ ও ভয় অনুভব করত। আসমা ঘুমিয়ে থাকলে গৃহকর্তা গায়ে হাত দেওয়ার মতো নানা রকম যৌন হয়রানিমূলক আচরণ করতেন। স্বামীর আচরণ সম্পর্কে গৃহকর্ত্রীকে জানানো হলে তিনি আসমাকে চুপ থাকার নির্দেশ দেন। তবে গৃহকর্তার বাজে আচরণের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে, আসমা তার মাকে জানায়। আসমার মা গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি আসমাকে তার বাড়িতে আর কাজে রাখবেন না বলে জানিয়ে দেন। বাধ্য হয়ে তিনি মেয়েকে নিয়ে আসেন। জীবিকার তাড়নায় আসমার মা এরূপ অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও মেয়ের যত্ন নিতে পারেননি; বরং অল্প কিছুদিনের মাথায় পুনরায় অন্য বাড়িতে কাজে পাঠিয়ে দেন।
আসমা ১৬ বছর বয়সে মায়ের ঠিক করা ছেলেকে বিয়ে করে নেন। তবে বিয়ের বিষয়ে তার মতামত কেউ জানতে চাননি। বছরখানেকের মধ্যে আসমা অন্তঃসত্ত্বা হয় এবং তখনো গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োজিত ছিল। সন্তান প্রসবের কাছাকাছি সময়ে আসমা ভারী কাজ করতে অস্বস্তি অনুভব করার কারণে সপ্তাহখানেকের ছুটি চায়। তবে তার গৃহকর্ত্রী ছুটি নেওয়ার অনুমতি দেননি এবং ছুটি নিলে কাজ হারানোর আশঙ্কা আছে বলেন। এতে ভয় পেয়ে আসমা ছুটি ছাড়াই কাজ চালিয়ে যায়।
একদিন কাজের ফাঁকে আসমার মনে পড়ে সে এই বাড়িতে কাজ শুরু করার পর শুনেছে গৃহকর্ত্রী তার কর্মস্থল থেকে চার মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি পেয়েছিলেন। আসমা তখন ভাবে, কেবল অফিসে চাকরি করলেই এমন ছুটি পাওয়া যায়, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য এ রকম ছুটি নিয়ে কেউ ভাবে না। কিন্তু আসমা জানে না যে বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান [অনুচ্ছেদ ২৭] এবং সকল জবরদস্তি শ্রমও দণ্ডনীয় অপরাধ [অনুচ্ছেদ ৩৪]।
উদ্বেগের বিষয় এই, গৃহকর্মীদের সমস্যার সমাধান, সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং তাদের অধিকার রক্ষার জন্য আমাদের দেশে কোনো বিশেষ আইন নেই। এমনকি, দেশের শ্রম আইনেও তাদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ১৯৬১ সালে প্রণীত গৃহকর্মী নিবন্ধন অর্ডিন্যান্সে বাসায় কাজ করা কর্মীদের নিবন্ধনের কথা বলা হলেও, বাস্তবে এই আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। ২০১৫ সালে প্রণীত ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি’ কিছুটা স্বস্তি দিলেও, ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জাহান আরা হকের যৌথ রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট ওই নীতিকে ‘অসম্পূর্ণ’ ও ‘অস্পষ্ট’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আসমার ঘটনার বিশ্লেষণ এই নীতিমালার অসম্পূর্ণতা উন্মোচিত করে। ১১ বছর বয়সে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করা আসমা নীতিমালায় নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের (হালকা কাজের ক্ষেত্রে ১২ বছর) চেয়ে কম। কিন্তু নীতিমালায় কম বয়সী শিশুদের নিয়োগের বৈধতা সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই। শ্রম আইনে ১৪ বছর পর্যন্ত শিশুদের নিয়োগকে শিশুশ্রম হিসেবে গণ্য করা হলেও, গৃহকর্মীদের ক্ষেত্রে নীতিমালায় কেন ১২ বছরকে সর্বনিম্ন বয়স ধরা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
আসমার মতো বহু গৃহকর্মী প্রতিনিয়ত কাজের সময় নানা সহিংসতার শিকার হন। নীতিমালা অনুসারে, নিয়োগকর্তার কাছে যৌন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মীরা প্রচলিত আইনানুযায়ী বিচার পাবেন এবং সরকার তাঁদের মামলার খরচ বহন করবে। তবে এই অভিযোগ কোথায় করবেন, সে বিষয়ে কোনো নির্দেশিকা নেই। শুধু একটি মনিটরিং সেল গঠনের কথা বলা হয়েছে, যেখানে গৃহকর্মীরা টেলিফোন, মৌখিক বা লিখিতভাবে অভিযোগ করতে পারবেন।
ওই মনিটরিং সেলের গঠন এবং কার্যকারিতাও প্রশ্নবিদ্ধ। জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের বক্তব্যে জানা যায়, কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল নীতিমালা বাস্তবায়ন তদারকির জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা হলেও এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা উচিত এবং কমিটির পরিদর্শন টিমের কর্মতৎপরতাও নিশ্চিত করা উচিত। কেননা, নিষ্ক্রিয় সেল এবং টিমের ক্ষেত্রে নির্যাতিত গৃহকর্মীদের অভিযোগ দাখিল করা এবং বিচার পাওয়া অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া গৃহকর্মীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার কারণে তাঁদের পক্ষে প্রচলিত আইনব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়ে বিচার চাওয়া অনেকটাই দুষ্কর। নীতিমালায় তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো আদালত কিংবা সুস্পষ্ট প্রক্রিয়া উল্লেখ থাকা জরুরি ছিল।
গৃহকর্ত্রী আসমাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ করার জন্য কাজ থেকে বের করে দেন। নীতিমালা অনুসারে, গৃহকর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণের এক মাস আগে নোটিশ দিতে হবে এবং তাৎক্ষণিক বরখাস্তের ক্ষেত্রে এক মাসের অগ্রিম মজুরি দিতে হবে, যা আসমা পায়নি। তবে এই বিধি লঙ্ঘন করলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বলা হয়নি।
নীতিমালায় উল্লেখ আছে, গৃহকর্মীরা বেতনের সুবিধাসহ ১৬ সপ্তাহের (প্রসবের আগে ৪ সপ্তাহ, পরে ১২ সপ্তাহ অথবা গৃহকর্মীর সুবিধা অনুসারে) প্রসূতিকালীন ছুটি পাবেন। এ ক্ষেত্রে আসমা এরূপ ছুটির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তবে নীতিমালায় এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া গৃহকর্মী কোন কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানাবেন, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দেওয়া নেই।
নীতিমালাটির বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, উদাহরণস্বরূপ—গৃহকর্মীদের ন্যূনতম মজুরি, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ও পদ্ধতি এবং তাঁদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। একই সঙ্গে নীতিমালার অবশিষ্ট বিধি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও সরকারপক্ষ থেকে তৎপরতার অভাব লক্ষণীয়। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এর দায়ের করা জনস্বার্থ মামলায়, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৬ মাসের মধ্যে নীতিমালা অনুযায়ী সারা দেশে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে মনিটরিং সেল গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন মহামান্য হাইকোর্ট। এই নির্দেশনার অনুসরণ করে ওই সেল গঠনের মাধ্যমে কমিটির কার্যকারিতা নিশ্চিত করা হলে তা গৃহকর্মীদের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য আইনের দাবি বহুদিনের। আসমা দেশের অসংখ্য গৃহকর্মীর বর্তমান দুর্দশার প্রতিচ্ছবি। হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে, নীতিমালার কার্যকর বাস্তবায়ন, স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। নীতিমালার অসম্পূর্ণতা দূর করে এটিকে আইনে রূপান্তরিত করাও জরুরি। গৃহকর্মীদের শ্রম আইনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং গৃহকর্মকে একটি পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া সময়ের দাবি।
লেখক: আফরিদা সামিহা নাবিলাহ্, সহকারী গবেষক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ লেখায় উল্লিখিত আসমা চরিত্রটি কাল্পনিক।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

দরিদ্র ঘরে জন্ম নেওয়া আসমা। মায়ের সঙ্গে বেড়ে উঠেছে রাজধানীর ভাষানটেক বস্তিতে। একদিন এলাকার পরিচিত বাড়ির কর্ত্রী আসমার মাকে বলেন, তাঁর বাড়ির কাজকর্মে সাহায্যের জন্য একজন কম বয়সী মেয়ের প্রয়োজন। অভাবের তাড়নায় মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে অপারগ মা, সংসারে কিছু আয় হওয়ার কথা ভেবে মেয়ে আসমাকে কাজে পাঠাতে রাজি হন।
১৮ এপ্রিল ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

দরিদ্র ঘরে জন্ম নেওয়া আসমা। মায়ের সঙ্গে বেড়ে উঠেছে রাজধানীর ভাষানটেক বস্তিতে। একদিন এলাকার পরিচিত বাড়ির কর্ত্রী আসমার মাকে বলেন, তাঁর বাড়ির কাজকর্মে সাহায্যের জন্য একজন কম বয়সী মেয়ের প্রয়োজন। অভাবের তাড়নায় মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে অপারগ মা, সংসারে কিছু আয় হওয়ার কথা ভেবে মেয়ে আসমাকে কাজে পাঠাতে রাজি হন।
১৮ এপ্রিল ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

দরিদ্র ঘরে জন্ম নেওয়া আসমা। মায়ের সঙ্গে বেড়ে উঠেছে রাজধানীর ভাষানটেক বস্তিতে। একদিন এলাকার পরিচিত বাড়ির কর্ত্রী আসমার মাকে বলেন, তাঁর বাড়ির কাজকর্মে সাহায্যের জন্য একজন কম বয়সী মেয়ের প্রয়োজন। অভাবের তাড়নায় মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে অপারগ মা, সংসারে কিছু আয় হওয়ার কথা ভেবে মেয়ে আসমাকে কাজে পাঠাতে রাজি হন।
১৮ এপ্রিল ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

দরিদ্র ঘরে জন্ম নেওয়া আসমা। মায়ের সঙ্গে বেড়ে উঠেছে রাজধানীর ভাষানটেক বস্তিতে। একদিন এলাকার পরিচিত বাড়ির কর্ত্রী আসমার মাকে বলেন, তাঁর বাড়ির কাজকর্মে সাহায্যের জন্য একজন কম বয়সী মেয়ের প্রয়োজন। অভাবের তাড়নায় মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে অপারগ মা, সংসারে কিছু আয় হওয়ার কথা ভেবে মেয়ে আসমাকে কাজে পাঠাতে রাজি হন।
১৮ এপ্রিল ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫