Ajker Patrika

এক প্রকল্পের জট খুলেছে অন্যটির জমিই মেলেনি

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৩৩
এক প্রকল্পের জট খুলেছে অন্যটির জমিই মেলেনি

অবশেষে মহেশখালীর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য ২৮৩ একর জমি বুঝে পেল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ জন্য ১৬২ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে বন্দরকে। জমির শ্রেণি নির্ধারণ নিয়ে জটিলতায় এত দিন আটকে ছিল অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া।

প্রথমে জেলা প্রশাসন এই জমিকে নাল হিসেবে অধিগ্রহণ করে। পরে জমির মালিকদের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি সেই জমিকে লবণ মাঠ হিসেবে চিহ্নিত করে অধিগ্রহণ সম্পন্ন করে। এখন দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের মূল কাজ শুরু করতে আর কোনো বাধা রইল না।

মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার জট খুললেও চট্টগ্রাম বন্দরের বাস্তবায়নাধীন আরেক প্রকল্প বে টার্মিনালের জমি অধিগ্রহণ জটিলতা কাটছে না। গত বছরের ২২ জুন ভূমি মন্ত্রণালয় ৭ শর্তে জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দিলেও এখন পর্যন্ত বে টার্মিনালের জমি বুঝে পায়নি চট্টগ্রাম বন্দর।

ওই চিঠিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে ৮০৩.১৭ একর জমি অনুমোদন দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা না নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি ৩৬ শ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য চিঠি দেয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ ৩ ফেব্রুয়ারি বে টার্মিনালের জমি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জমির দাবি করা অর্থ বুঝে না পাওয়ায় মতামত চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে উল্টো চিঠি পাঠান। এভাবেই বে টার্মিনালে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া এই দপ্তর থেকে ওই দপ্তরে ঘুরছে।

বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, গত ২০২১ সালের জুন এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুই দফায় ১৬২ কোটি টাকা অধিগ্রহণের জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে জমা দেওয়া হয়। আর ৩০ মার্চ কক্সবাজার জেলা প্রশাসন মাতারবাড়ী বন্দর প্রকল্পের জমির দখল বুঝিয়ে দেয়। তবে বে টার্মিনালের অধিগ্রহণ এখনো প্রক্রিয়াধীন।

বন্দর সূত্র জানায়, বে টার্মিনালটি হবে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় সাত গুণ বড়। তিনটি অংশে এই বে টার্মিনাল নির্মাণ হবে। এর মধ্যে ৫৬ হেক্টর জমির ওপর নির্মাণ হবে বে-মাল্টিপারপাস টার্মিনাল। ২০২৬ সালে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। শিগগিরই তিনটি প্যাকেজে দরপত্র আহ্বান করা হবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সহকারী কমিশনার আরাফাত সিদ্দিকী বলেন, প্রকল্প এলাকায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে জমির দখল আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের জমির শ্রেণি পরিবর্তন হওয়ায় ক্ষতিপূরণ মূল্য নির্ধারিত হয় ১৬২ কোটি ৫৮ লাখ ১৪ হাজার ২৭১ টাকা। ক্ষতিপূরণ বাবদ অতিরিক্ত আরও ৮৭ কোটি ৪৬ লাখ ৫৪ হাজার ৯৯৬ টাকা গত ১৩ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়। এরপরই ক্ষতিগ্রস্তদের অধিগ্রহণের টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার ধলঘাট এলাকায় নির্মিত হচ্ছে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর। ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২৬ সালে নির্মাণকাজ শেষ হলে মাতারবাড়ী বন্দরের টার্মিনালে ভিড়তে পারবে ১৮ মিটার গভীরতার ৮ থেকে ১০ হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজ।

মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত