Ajker Patrika

খুলনা সিটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে ভাবনায় প্রার্থীরা

সৌগত বসু, সাইফুল মাসুম ও শেখ আবু হাসান, খুলনা থেকে 
Thumbnail image

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন পরশু সোমবার। এ নিয়ে আলাপকালে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের এক ভোটার বললেন, সেদিন তিনি এলাকায় থাকবেন না। আগের নির্বাচনের ঘটনায় তাঁর পরিবারের অন্য পাঁচজনও ভোট দিতে চাইছেন না। নগরীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে গতকাল শুক্রবার ভোটবিমুখ এমন আরও বেশ কয়েকজনের দেখা মিলল। বিভিন্ন কারণে তাঁরা ভোট দিতে আগ্রহ পাচ্ছেন না। বিষয়টি ভাবাচ্ছে প্রার্থীদেরও। এ কারণে প্রচারে তাঁরা ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ারও অনুরোধ জানাচ্ছেন। কারণ, ভোটারদের কেন্দ্রে নেওয়াই এখন তাঁদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

ভোটারসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কেন্দ্রে যেতে ভোটারদের অনাগ্রহের নানা কারণ রয়েছে। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় দলটির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ভোট নিয়ে আগ্রহ নেই। শক্ত অবস্থান নিয়ে দলটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়া নয়জনকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করেছে। নগরে বিএনপির বড় ভোটব্যাংক থাকলেও। কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। বিএনপির নেতারা ভেতরে ভেতরে ভোটারদের কেন্দ্রে না যেতে প্রচার চালাচ্ছেন।

খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা বলেন, এই নির্বাচনে বিএনপি সম্পৃক্ত হতে চায় না। যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন তাঁদের আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁর মতে, বিএনপির কোনো ভোটার ভোট দিতে যাবেন না। ভোট না দিতে দলের পক্ষ থেকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকাও অনাগ্রহের আরেকটি কারণ। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় আগ্রহ-আবেগ সৃষ্টি হয়েছিল। এরপরও গাজীপুরে ৫০ শতাংশ ভোট পড়েনি। ওই নির্বাচনে হেরেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান। খুলনায় এমন প্রার্থীও নেই। জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাকের পার্টির প্রার্থী থাকলেও এ দলগুলোর অতীতের নির্বাচনে ভোটের পরিসংখ্যান আশাব্যঞ্জক নয়।

২০১৮ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। ভোট পড়েছিল ৫৭ শতাংশ। আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯০২ ভোট ও বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছিলেন ১ লাখ ৯ হাজার ২৫১ ভোট। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুজ্জাম্মিল হক ১৪ হাজার ৩৬৩ ও জাতীয় পার্টির এস এম মুশফিকুর রহমান ১ হাজার ৭২ ভোট পেয়েছিলেন। এবার দুটি দলই প্রার্থী বদল করেছে। জাকের পার্টির প্রার্থীর পাশাপাশি একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন।

এবার ভোটার ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ এবং নারী ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র নাসিরউদ্দিন বলেন, গত সিটি নির্বাচনে অনেক ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পেরে ফিরে এসেছেন। এবারও সে শঙ্কা থাকায় ভোটাররা বিমুখ থাকবেন।

অবশ্য নির্বাচন নিয়ে অভিজ্ঞরা মনে করছেন, মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হলেও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী উত্তাপ সৃষ্টি করেছেন। তাঁরা নিজেদের ভোটের জন্যই ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত করবেন।

ভোটার উপস্থিতি নিয়ে চিন্তার বিষয়টি বোঝা গেল আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর প্রচারের সময়। গতকাল নিউমার্কেটসংলগ্ন বাইতুন নূর জামে মসজিদে তিনি ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান।

ভোটবিমুখ নির্বাচন হবে বলে ধারণা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) খুলনা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এ রশীদেরও।

তবে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা বলেন, বিএনপি না আসায় তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। অন্য দলের প্রার্থীরা আছেন। আশা করা যাচ্ছে, ৬০ শতাংশ ভোট পড়বে।

এদিকে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুধু মেয়র প্রার্থীর ভোট হলে ভোটার অনেক কম থাকত। তবে কাউন্সিলর নির্বাচনও হবে বলে ভোটার একটু বাড়বে। তবে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় আক্ষরিক অর্থে কেন্দ্রে ভোটার কম থাকবে। 

ফেস্টুন ও রঙিন পোস্টার
নির্বাচনী আচরণবিধিতে রঙিন পোস্টার বা ফেস্টুন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রূপসা বাস টার্মিনালে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থনে দুটি রঙিন ফেস্টুন দেখা গেছে। এ ছাড়া লাঙ্গলের প্রার্থীর সমর্থনে লেমিনেটিং রঙিন পোস্টার চোখে পড়েছে।

জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, রঙিন ফেস্টুন তাঁর চোখে পড়েনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত