Ajker Patrika

সবখানে শুধু নেই আর নেই

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, মধুপুর
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২২, ১৪: ২৯
সবখানে শুধু নেই আর নেই

চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ, শ্রেণিকক্ষ—সবই অপ্রতুল। নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। শিক্ষাসহায়ক উপকরণ নেই, নেই বিজ্ঞানাগার, গ্রন্থাগার, খেলার সামগ্রী। সবখানে শুধু নেই আর নেই। এর মধ্যেই চালাতে হচ্ছে সম্প্রসারিত শিক্ষা কার্যক্রম। নানা সংকটে বিবর্ণ সরকারি এই উদ্যোগ ইতিমধ্যে হোঁচট খাওয়ার পথে। সংকটের কারণে ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থী। ব্যর্থ হতে চলছে সরকারের পরীক্ষামূলক এই কর্মসূচি।

জানা যায়, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করে। ২০১৭ সালে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করলেও মধুপুরে ২০১৮ সালে তিনটি বিদ্যালয় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত হয়। বিদ্যালয়গুলো হলো গাছাবাড়ী, পচিশা ও গোপদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এই কার্যক্রম শুরু হওয়ায় সৃষ্টি হয় দ্বৈত অভিভাবকত্ব। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর দেখভাল করে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত দেখভালের দায়িত্ব বর্তায় উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওপর। তবে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বৈত অভিভাবক হলেও সমস্যা সমাধানে দুই অধিদপ্তরই বেখেয়াল বলে মনে করছেন শিক্ষক ও অভিভাবকেরা।

গাছাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেলা আড়াইটায় গিয়ে দেখা যায়, অফিস কক্ষে প্রধান শিক্ষক বসে আছেন। পাঁচজন শিক্ষকের তিনজন ক্লাস নিচ্ছেন। মাঠের পশ্চিমাংশে দুটি টিনের ঘর ও একটি একতলা ভবন। বিদ্যালয়ের ছয়টি কক্ষের মধ্যে একটিতে অফিস কক্ষ, আরেকটিতে পরিত্যক্ত মালামাল রাখা হয়েছে। অপরটিতে শিক্ষার্থীদের ওয়াশ ব্লক। তিনটি কক্ষে চলছে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির কোনো শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি। প্রায়ই একই অবস্থা অন্য দুই বিদ্যালয়ের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, অষ্টম শ্রেণির পাঠদান শুরু হলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা করা হয়নি। সাড়ে তিন বছরেও শিক্ষক, অফিস সহকারী ও পিয়ন পদায়ন করা হয়নি। শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ, শিক্ষা উপকরণ সরবরাহের বিষয়টি কোনো দপ্তর আমলে নিচ্ছে না। কেবল বই সরবরাহ করেই দায়িত্ব শেষ করেছে তারা। ফলে অভিভাবকহীন এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাথমিক স্তরের কার্যক্রম গতানুগতিকভাবে চলছে। মাধ্যমিক স্তরেরগুলোও বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এমনকি গাছাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করেনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষকেরা আক্ষেপের সুরে জানান, বর্তমানে ৯টি শ্রেণির জন্য প্রতিদিন ৫১টি ক্লাস হওয়ার কথা। সেখানে মাধ্যমিক স্তরের ৩টি করে ক্লাস কমিয়ে ৫টি করে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তারপরও ৯টি শ্রেণিতে ৪২টি ক্লাস মাত্র ৫-৬ জন শিক্ষক দিয়ে কীভাবে নেওয়া সম্ভব? এ ছাড়া হোম ভিজিট করতে হয়। দাপ্তরিক কাজে উপজেলা শহরে যেতে হয়। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কাজে অংশ নিতে হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হয়। এমন পরিস্থিতিতে এখানকার শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। অভিভাবকেরাও হতাশা প্রকাশ করেছেন।

বিদ্যালয়গুলোর ১০ জন শিক্ষার্থী ও ৫ জন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজ্ঞান, ইংরেজি ও গণিত ক্লাস নিয়ে থাকেন। অন্য স্যার, ম্যাডামরাও ক্লাস নেন। স্যাররা কাজে বাইরে গেলে ক্লাস ঠিকমতো হয় না। তাই অনেক ছাত্র অন্য বিদ্যালয়ে চলে গেছে।

গোপদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহজাহান আলী বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করা বিদ্যালয়গুলোর সমস্যা সমাধানের জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ দায় নেয় না। আমাদের সমস্যার পরিত্রাণদাতা কোনো দপ্তরকেই মনে হচ্ছে না।’

মধুপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। নতুন শিক্ষক নিয়োগ হলে শিক্ষকসংকট কেটে যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত