Ajker Patrika

‘বাসমালিকেরা সব গরিব তাঁদের চলবে কী করে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২১, ১০: ৩১
‘বাসমালিকেরা সব গরিব তাঁদের চলবে কী করে’

শিক্ষার্থীদের জন্য বাসে অর্ধেক বা হাফ ভাড়া চালুর বিষয়ে বিআরটিএ ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দ্বিতীয় বৈঠকেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। গতকাল শনিবার বৈঠক শেষে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ দাবি করেন, ঢাকায় চলাচলকারী পরিবহন মালিকদের ৮০ শতাংশ গরিব। একটি বাস দিয়ে নিজের সংসার চালান কেউ কেউ। তাঁরা কীভাবে ক্ষতি সামলাবেন?

হাফ ভাড়ার দাবিতে ১৩ দিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআরটিসির বাসে কিছু শর্তসাপেক্ষে হাফ ভাড়া দিয়ে চলতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু বেসরকারি বাস মালিকেরা প্রথম থেকে এ দাবি নাকচ করে আসছেন। গত বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন সচিবের সভাপতিত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকনেতারা বৈঠকে অংশ নেন। সেদিনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

গতকালের বৈঠকেও কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় হতাশ শিক্ষার্থীরা। তাঁরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। গতকালও রাজধানীর শাহবাগ, আসাদগেট, উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকা, যাত্রাবাড়ী এবং পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার, শাঁখারী বাজার ও রায়সাহেব বাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় হাফ ভাড়াসহ নয় দফা দাবি বাস্তবায়নে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছেন তাঁরা। তবে আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবার রাজপথে বিক্ষোভ করে গাড়ির ফিটনেস ও চালকের সনদ পরীক্ষা করবেন তাঁরা।

২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় নয় দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। ওই সময় সরকারের পক্ষ থেকে দাবিগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এসব দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় গাড়ির ফিটনেস ও চালকের সনদও পরীক্ষা করেন তাঁরা। যাঁরা সব কাগজপত্র দেখাতে পারেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেন পুলিশ সার্জেন্ট।

দুপুরে আন্দোলনকারীদের এক প্রতিনিধি বলেন, ‘নয় দফা দাবি আদায়ে গত বৃহস্পতিবার বিআরটিএ কার্যালয়ে বৈঠকে আমরা যোগ দিয়েছিলাম। বিআরটিএ আমাদের কাছে এক সপ্তাহ সময় চেয়েছিল। আমরা বিআরটিএকে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে দাবি পূরণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিআরটিএ কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।’ তার আগে রবি ও সোমবার সড়কে বিক্ষোভ করা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।

ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকদের চাপে বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ায় সরকার। এরপর ১৫ নভেম্বর থেকে বাসে অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের এই আন্দোলনের মধ্যে ২৪ নভেম্বর গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হলে হাফ পাসের দাবির আন্দোলনে আরও গতি আসে।

‘গরিব’ বাসমালিকেরা ভর্তুকি চান

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বনানীর বিআরটিএ প্রধান কার্যালয়ে পরিবহন নেতাদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসে বিআরটিএ। কিন্তু দুই ঘণ্টা আলোচনা করেও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি তারা।

বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কত ছাত্র, কয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী গণপরিবহন ব্যবহার করে, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ছাত্রসংখ্যা বেশি হলে ভর্তুকি কীভাবে দেওয়া হবে, পরিমাণ কী হবে, তা-ও আলোচনায় এসেছে। শিক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ ও পরিবহন-সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।’

কবে নাগাদ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি নতুন প্রস্তাব। আরও কিছুটা সময় লাগবে। টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে।

ছাত্রদের এই দাবি যৌক্তিকভাবে সমাধানের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে জানিয়ে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, সবার সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

তবে এনায়েত উল্লাহ দাবি করেন, ঢাকার ৮০ শতাংশ বাসমালিকই ‘গরিব’। তিনি বলেন, ঢাকায় অনেকেই একটি বাস দিয়ে কোনোমতে সংসার চালান। হাফ পাস দেওয়া হলে তাঁদের ব্যবসায় টিকে থাকাই কষ্টকর হয়ে যাবে।

এনায়েত উল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য বেসরকারি স্কুল-কলেজে টিউশন ফি কমানো যেতে পারে। বিআরটিসির গাড়ির সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজস্ব বাস বাড়ানোরও আহ্বান জানান তিনি।

হাফ পাসের পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাসের ব্যবস্থা থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সড়কমন্ত্রীর সঙ্গে পরিবহন মালিকদের বোধ হয় একটা সমঝোতা হয়েছে। ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ওনার মুখ থেকে শোনাই ভালো। ছোটবেলায় আমরাও হাফ ভাড়ায় চলেছি। আমি মনে করি, কম ভাড়ায় তাদের চলাচল নিশ্চিত করা উচিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত