Ajker Patrika

লক্ষ্যমাত্রার বেশি ফলনের আশা

আনোয়ার হোসেন, মনিরামপুর
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২২, ১৫: ৪৫
লক্ষ্যমাত্রার বেশি ফলনের আশা

মনিরামপুরে বোরো আবাদের যত্ন নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। চলতি বছরে এ উপজেলায় বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে।

গত ২-৩ বছর ধান ও চালের দাম চড়া হওয়ায় অন্য কিছুর আবাদ ছেড়ে কৃষকেরা বোরোতে ঝুঁকেছেন। ইতিমধ্যে ধানগাছে শিষ বের হতে শুরু করেছে।

তবে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদে উপজেলার দু-একটি মাঠে মাজরা ও ইঁদুরের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন চাষি। নানা কীটনাশক ব্যবহার করেও তাঁরা ধানগাছ রক্ষা করতে পারছেন না।

তবে সার্বিকভাবে অন্য বারের তুলনায় ধানে এবার তেমন কোনো রোগবালাই দেখা যাচ্ছে না। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার বেশি ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা।

এদিকে রোগবালাই কম থাকলেও এবার সার-ওষুধে বাড়তি খরচ লাগছে কৃষকদের। বাজার নিয়ন্ত্রণে না থাকায় তাঁরা সরকারি দামে সার পাচ্ছেন না। বেশি মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দামে সার বিক্রি করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে ২৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যার অর্জিত হয়েছে ২৬ হাজার ৯০০ হেক্টর। জলাবদ্ধতার কারণে উপজেলার হরিদাসকাটি, পাঁচবাড়িয়া, হোগলাডাঙা, মাছনা, ভরতপুর, দূর্বাডাঙা, বাজিতপুর, খাটুয়াডাঙা, সাতগাতী, পোড়াডাঙা, কুলটিয়া, পাঁচাকড়ি, বালিদা, নেহালপুর, খাকুন্দি, মনোহরপুর, কপালিয়া মোট ১৭টি বিলের ৭৯৫ হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতার কারণে এবার বোরো চাষ হয়নি।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিলগুলোর অধিকাংশ এলাকায় কৃষকদের নিজ উদ্যোগে পানি সরিয়ে বোরো আবাদ হয়েছে, যা গতবারের উৎপাদনের চেয়ে বেশি।

মনিরামপুর উপজেলার রোহিতা গ্রামের চাষি গৌতম দাস বলেন, ‘চার বিঘা বোরো চাষ করেছি। দেড়বিঘা জমিতে ইঁদুর হানা দিয়েছে। ইঁদুর ধান গাছ গোড়া থেকে কেটে দিচ্ছে। বারবার ব্যবস্থা নিয়েও কোনো প্রকার ইঁদুর দমন করা যাচ্ছে না।’

মামুদকাটি গ্রামের মতিয়ার রহমান বলেন, ‘জমি ইজারা নিয়ে ১০ বিঘায় বোরো চাষ করেছি। বিলের তিন বিঘা জমিতে ইঁদুর ও মাজরা পোকা হানা দিয়েছে। দুই বিঘায় মাজরা যেভাবে লেগেছে তাতে জমিতে কাঁচি নেওয়া মতো অবস্থা থাকবে না বলে মনে হচ্ছে।’

মতিয়ার রহমান আরও বলেন, ‘বারবার কীটনাশক ছিটিয়ে পোকা দমন করা যাচ্ছে না। কোনো ওষুধ ইঁদুর খাচ্ছে না। মাঠের অনেক কৃষক আমার মতো ইঁদুরের উৎপাতে অতিষ্ঠ। এ অবস্থায় কৃষি অফিসের কাউকে আমরা কাছে পাচ্ছি না। তা ছাড়া এবার বেশি দামে সার কিনতে হয়েছে। বোরো ধানের এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ২-৩ বছর লেগে যাবে।’

রঘুনাথপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘১০ কাঠা জমির একটি খেতে ইঁদুরের উৎপাত খুবই বেড়ে গেছে। কোনোভাবেই দমন করা যাচ্ছে না।’

রোহিতা শেখপাড়া মাঠের চাষি নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘সাড়ে ৪ বিঘা বোরো চাষ করেছি। আমাদের মাঠে ধানে তেমন কোনো রোগবালাই নেই। ধান গাছের লক্ষণও ভালো। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার খুব ভালো ফলনের আশা করছি।’

খেদাপাড়া ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘টুকটাক মাজরার আক্রমণের খবর পাচ্ছি। তবে সেটা মাত্রায় খুব কম। আমাদের পরামর্শে কৃষকেরা কীটনাশক ব্যবহার করে ভালো ফল পাচ্ছেন।’

বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘ইঁদুরের উৎপাতের খবর এবার পাইনি। যদি কোনো খেতে ইঁদুর লাগে তাহলে ‘‘আমরা রোমা’’ নামে এক ধরনের কেক ব্যবহারের পরামর্শ দিই, যা ইঁদুরের খুব পছন্দের।’

মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, ‘এ বছর এখন পর্যন্ত বোরো আবাদে কোনো রোগবালাই দেখা দেয়নি। আবহাওয়া যা আছে, তা বোরো চাষের উপযোগী। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মৌসুমে বোরোর ভালো ফলন হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত