Ajker Patrika

বিতর্কিত লোকজনে ঠাসা স্বাচিপ কমিটি

রাশেদ রাব্বি, ঢাকা
বিতর্কিত লোকজনে ঠাসা স্বাচিপ কমিটি

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে সম্মেলনের ৭ মাস পর। সেই কমিটি নিয়ে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাঁরা বলছেন, সংগঠনের রীতি অনুসারে বিদায়ী কমিটির সভাপতি ও মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

তাতে রাখা হয়েছে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ, ঘুষখোর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বহু মামলার আসামিদের। এমনকি সাবেক ছাত্রদল ও শিবির কর্মীদের স্থান দেওয়া হয়েছে। এতে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।

সংগঠনের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্য জানান, গত বছরের ২৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে স্বাচিপের সাংগঠনিক প্রধান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৌখিক নির্দেশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সভাপতি পদে ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ডা. কামরুল হাসান মিলনের নাম ঘোষণা করেন। তিনি বিদায়ী সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজের সঙ্গে আলোচনা করে কমিটির বাকি নেতৃবৃন্দ ও সদস্যদের নাম চূড়ান্ত করতে বলেন। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার আগে বিদায়ী সভাপতি ও মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। এমনকি আগের কমিটির ন্যূনতম ৪০ শতাংশ সদস্য নতুন কমিটিতে রাখার সাংগঠনিক রেওয়াজও মানা হয়নি।

বিদায়ী কমিটির সভাপতি অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যাঁদের ওপর সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেটা ভালো মনে করেছেন, তা-ই করেছেন। সংগঠনের রেওয়াজ অনুসারে বিদায়ী সভাপতি ও মহাসচিব হিসেবে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। একই রকম তথ্য দিয়েছেন স্বাচিপের বিদায়ী মহাসচিব অধ্যাপক এম এ আজিজও।’

স্বাচিপের একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য জানান, নতুন কমিটিতে চার ধরনের লোক প্রাধান্য পেয়েছেন; যেমন দুদকের চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, অনৈতিক কাজে যুক্ত থেকে জেল খাটা আসামি, মাদকাসক্ত এবং সংগঠনের আদর্শবিরোধী।

তবে বর্তমান কমিটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁরাই এসব কথা বলছেন। ১ হাজার ২০০ আবেদনকারীর মধ্য থেকে ১৫০ জনকে বাছাই করা কঠিন। কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে মাত্র এক সপ্তাহ। পরে ঠিক হয়ে যাবে।’

জানা যায়, নতুন কমিটির অন্যতম নেতা ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুদকের তিনটি মামলা আছে।অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাঁকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক পদ থেকে সরানো হয়। নতুন সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, বদলি, নিয়োগ-বাণিজ্যসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক সত্যতা মেলায় দুদক পাঁচটি মামলা করতে যাচ্ছে।

জানা যায়, নতুন কমিটির প্রথম যুগ্ম মহাসচিব ডা. সোহেল মাহমুদ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে চাকরি করার সময় টাকার বিনিময়ে হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা এবং ধর্ষণ মামলার ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে উল্টো রিপোর্ট দিয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন। সেই অভিযোগে এক-এগারোর পর তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল র‍্যাব। নতুন কমিটির সহসভাপতি ডা. আবু রায়হানের বিরুদ্ধে শ্যামলী টিবি হাসপাতালে কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে দুদক তিনটি মামলা করেছে।

নতুন সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মো. জাবেদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সরবরাহ ও বদলি-বাণিজ্যের একটি চক্রের নিয়ন্ত্রক বলে অভিযোগ আছে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্যের বিশেষ আস্থাভাজন হিসেবে তিনি সিন্ডিকেটের পক্ষে অর্থ সংগ্রহকারী হিসেবে অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে পরিচিত। দুদক তাঁর দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে। জানা যায়, নতুন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মাহবুবুর রহমান বাবুর দুর্নীতির অনুসন্ধান শেষ পর্যায়ে। নতুন কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া ডা. ইসমে আজম জিকো ও ডা. মোহাম্মদ রাকিব ঢাকা মেডিকেল কলেজে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন।

বিদায়ী মহাসচিব অধ্যাপক এম এ আজিজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উভয় কমিটির নেতৃবৃন্দের যৌথ স্বাক্ষরে কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও সেটি হয়নি। বিতর্কিত ব্যক্তি, প্রাক্তন ছাত্রদল ও শিবির কর্মীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার তথ্য আমাদের কাছে এসেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত