Ajker Patrika

অনিয়ম ও দুর্নীতি: এশিয়ান ইউনিভার্সিটির বোর্ড পুনর্গঠনের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
অনিয়ম ও দুর্নীতি: এশিয়ান ইউনিভার্সিটির বোর্ড পুনর্গঠনের নির্দেশ

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (এইউবি) ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এসব অভিযোগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি) পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব ড. মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে বিওটি পুনর্গঠন ছাড়াও অডিট ফার্ম দিয়ে হিসাব পুনর্নিরীক্ষণসহ মোট আট দফা ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের ওই অফিস আদেশ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়টির বিওটি পুনর্গঠন, পুনরায় নিরীক্ষা কার্যক্রম বা কমিশনের পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ শুধু শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও জরুরি একাডেমিক ব্যয় করতে পারবে। এর বাইরে অন্য কোনো খাতে ব্যয়, বিনিয়োগ বা তহবিল স্থানান্তর করতে পারবে না।

আদেশে আরও বলা হয়, অন্যায়ভাবে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের স্বপদে বহাল, সাবেক উপাচার্য ড. আবুল হাসান মোহাম্মদ সাদেক অবৈধভাবে আসীন থেকে যেসব কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন তা বাতিল এবং বেতন-ভাতাসহ যেসব সুবিধা নিয়েছেন, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলে ফেরত প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ জাফর সাদেক ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান খানকে একাধিকবার ফোন ও এসএমএস করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি। পরে সিন্ডিকেট সদস্য এম ইয়াসিন আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছি, বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক আলাপ-আলোচনাও হয়েছে। সিন্ডিকেটে বিষয়টি পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানা যায়, ১৯৯৬ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী রয়েছেন ২ হাজার ৮৪৫ জন, শিক্ষক ১২৮ জন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ১৩টি বিভাগ, ২৩টি কোর্স এবং ১টি ইনস্টিটিউটে পাঠদান করানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসি। গত ৯ ফেব্রুয়ারি এ-সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে কমিশন।

ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে বাড়িভাড়ার নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে, ক্যাম্পাস না থাকা সত্ত্বেও ক্যাম্পাস দেখিয়ে ভাড়ার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় ব্যক্তির নামে ফ্ল্যাট কেনা, ট্রাস্টের অনুকূলে বাড়িভাড়া পরিশোধ, বৈধতা না থাকা সত্ত্বেও সনদে অবৈধভাবে স্বাক্ষর করা, নামমাত্র বেতনে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়টি শুরু থেকেই সরকার, কমিশন ও আইনকে পাশ কাটিয়ে গুণগত শিক্ষার দিকে গুরুত্ব না দিয়ে সার্টিফিকেটসর্বস্ব শিক্ষাব্যবস্থার দিকে মনোযোগী হয়েছে। এ জন্য তারা দেশের আনাচকানাচে দূরশিক্ষণ কেন্দ্র চালু, এমনকি সৌদি আরবেও আউটার ক্যাম্পাস খুলে বসে। এতে সরকার বা কমিশনের অনুমতি ছিল না।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিজের বাসাকে ক্যাম্পাস হিসেবে দেখিয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল হাসান মোহাম্মদ সাদেক ১০ বছরে অন্তত ২০ কোটি ৬৪ লাখ ৫২ হাজার ৪৬২ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ২৮ নম্বর রোডের বাড়িকে ক্যাম্পাস হিসেবে দেখিয়ে নিয়েছেন ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৮ টাকা। অথচ এই দুই বাড়ি ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহার হয়নি। ইউজিসি থেকেও ক্যাম্পাস হিসেবে এগুলোর অনুমোদন ছিল না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, তদন্তে এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় আট দফা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত সে মোতাবেক পদক্ষেপ নেওয়া। না হলে ইউজিসি আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পাড়া দিয়ে অটোরিকশায় শহর ঘোরাল ছাত্রদল, সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত