Ajker Patrika

ঢাকা যাওয়া ‘যখন-তখন’

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
Thumbnail image

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে শিবচরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা দোকানিদের জন্য দোকানের মালামাল আনা বেশ সহজতর হয়ে উঠেছে। জরুরি পণ্য আনতেও এখন মুহূর্তে ছুটে যাচ্ছেন রাজধানী ঢাকায়। এ ছাড়া পছন্দের পণ্যের কথা জানিয়ে দিলেও ঢাকা থেকে সহজেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন দোকানিরা। এক্সপ্রেসওয়ের নির্দিষ্ট স্থানগুলো থেকে সেসব সংগ্রহ করতে পারছেন এখানকার দোকানিরা।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকায় যাওয়া এখন হয়ে উঠেছে ‘যখন-তখন’ বিষয়। শিবচরের বিভিন্ন স্থানের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও দোকানিরা এসব কথা বলেন। তাঁদের মতে 
সেতু চালুর পর স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি এসেছে। এখন সহজেই রাজধানীতে ছুটে যেতে পারছেন তাঁরা।

শিবচরের সূর্যনগর বাজারের তৈরি পোশাক ও জুতা-স্যান্ডেলের একাধিক বিক্রেতা জানান, আগে সপ্তাহে এক দিন ঢাকায় গিয়ে মালামাল কিনে ট্রলারে দিয়ে আসা হতো। সপ্তাহের শনিবার ঢাকায় বাজার করে ট্রলারে মালামাল উঠিয়ে দিলে সোমবার-মঙ্গলবার সেই পণ্য হাতে আসত। এ ক্ষেত্রে বেশি পণ্য কেনার প্রয়োজন পড়লেই ঢাকায় যাওয়া হতো। বর্তমানে যেকোনো পরিমাণ মালামালের প্রয়োজন হলে ঢাকায় গিয়ে কিনে নিয়ে আসা যাচ্ছে। এতে করে ক্রেতারা দোকানে সব সময় নিত্যনতুন মালামাল পাচ্ছেন। বিক্রিও বেড়েছে।

জানা গেছে, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পদ্মা সেতু হয়ে রয়েছে এক্সপ্রেসওয়ে। ভাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী বাস শিবচরের সূর্যনগর, পাঁচ্চর এলাকা থেকে যাত্রী ওঠায়। প্রতি ১০ মিনিটে একাধিক বাস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে। এই এলাকার মানুষের কাছে এখন ঢাকায় যাওয়া-আসা সহজ হয়ে গেছে। সময় লাগছে ৮-১০ মিনিট।

পদ্মা সেতু যোগাযোগের নতুন মাত্রা তৈরি করেছে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে শিবচরের যোগাযোগ এখন সময়ের ব্যাপার। উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার ব্যবসায়ীরা এখন সরাসরি ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে। এ ছাড়া গ্রামে উৎপাদিত নানা কৃষিজ পণ্য সহজেই শহরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।

শাহাদাত হোসেন নামের সূর্যনগর বাজারের এক তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী বলেন, এখন দোকানে কাউকে বসিয়ে রেখে কয়েক ঘণ্টার জন্য ঢাকায় গিয়ে পণ্য কিনে আনা যাচ্ছে। বাজারের সামনে থেকে বাসে উঠলে সরাসরি ঢাকায় পৌঁছানো যাচ্ছে। আবার ফোন করে দিলে পণ্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় যেকোনো বাসে। সেতু চালুর পর যোগাযোগ সহজ হয়ে গেছে।

উজ্জ্বল নামের এক কনফেকশনারির দোকানি বলেন, ‘সেতু চালুর পর ঢাকা থেকে পাউরুটি, বিস্কুটসহ যেকোনো খাদ্যদ্রব্য দ্রুত স্থানীয় বাজারে চলে আসছে। এর ফলে স্থানীয় বেকারি পণ্য ইদানীং বেশ মানসম্মতভাবে তৈরি করছে। তা ছাড়া ঢাকার নামীদামি বেকারির পণ্য এখন গ্রামের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।’

অন্যদিকে পদ্মার চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত নানা ধরনের সবজি ঢাকার বাজারে নিয়ে বিক্রি শুরু হয়েছে। গাভির দুগ্ধও এখন রাজধানীতে যাচ্ছে। দুধ বিক্রেতারা স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে প্রতিদিন ঢাকায় পৌঁছে দিচ্ছেন।

এদিকে প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ঘরমুখী মানুষের চাপ বেশি থাকে ঢাকার বাসগুলোতে। ঢাকায় চাকরিরত অনেককেই শুক্রবার বাড়িতে দেখা যাচ্ছে। 
পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার ব্যবস্থাপক মো. কামাল হোসেন বলেন, প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার গাড়ির চাপ বেশি থাকে। ছুটির দিনে ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যাও বেড়ে যায়। ছুটির দিনে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

শিবচর হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার এক্সপ্রেসওয়েতে যাত্রী এবং যানবাহনের বাড়তি চাপ থাকে। এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের পাঁচ্চর, সূর্যনগর, কাঁঠালবাড়ী-সংলগ্ন সীমানাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে। কোথাও যাতে যানজট বা ভিড় তৈরি না হয়, সেদিকে তৎপর রয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।

শিবচর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মিসবাহ্ উদ্দিন বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে বাসে যাত্রী ওঠানো-নামানোতে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। সেতুর ফলে এক্সপ্রেসওয়েতে চাপ বেড়েছে। হাইওয়ে পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত