Ajker Patrika

‘ম্যানেজ করে’ মাছ শিকার

তারিকুল ইসলাম কাজী রাকিব, পাথরঘাটা (বরগুনা)
‘ম্যানেজ করে’ মাছ শিকার

দেশের মৎস্য সম্পদের সুরক্ষা ও মাছের বংশ বিস্তারে বঙ্গোপসাগরে চলছে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। গত ২০ মে শুরু হওয়া এ নিষেধাজ্ঞা চলবে ২৩ জুলাই পর্যন্ত। অভিযোগ উঠেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই প্রতিদিন গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করছেন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার জেলেরা।

জেলেদের দাবি, নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ড সদস্যদের ম্যানেজ করেই তাঁরা মাছ ধরছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে নৌপুলিশ। কোস্টগার্ড বলছে, প্রমাণ পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করতে যাওয়া সোহরাব মাঝি ও কবির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গভীর বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় দেশীয় ট্রলারের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভারতীয় ট্রলার মাছ শিকার করছে।’ তাঁরা বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমানায় জাল ফেলে মাছের জন্য অপেক্ষা করলে ভারতীয়রা আমাদের তাড়িয়ে দেয়। তারা বলে, তোদের দেশে অবরোধ তোরা মাছ শিকার করও কেন? আমাদের জলসীমায় আমাদের মাছ ধরতে দেয় না। তবে অবরোধ দিয়ে লাভ কি?’

গভীর বঙ্গোপসাগরে কোস্টগার্ডের নিয়মিত পেট্রল টহল চলছে বলে আজকের পত্রিকা জানিয়েছেন কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কে এম শফিউল কিঞ্জল। তিনি বলেন, ‘কোস্টগার্ডের কাউকে ম্যানেজ করে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সাগরে মাছ শিকারের প্রমাণ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করে ঘাটে বিক্রি করতে এসে মৎস্য বিভাগের অভিযানের আটকা পড়ে গুনতে হচ্ছে জরিমানা। সঙ্গে নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ। তিন দিনে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য বিভাগের অভিযানে সাতটি ট্রলার থেকে আদায় হয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে এবং মৎস্য ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। এসব কর্তৃপক্ষ দেখেও দেখছে না। জেলেরা জানান, দুই দিন আগে মোংলায় নৌবাহিনী অভিযান চালিয়ে ১৩৫ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে। কিন্তু পাথরঘাটার কোস্টগার্ড সদস্যরা নদীতে টহল না দিয়ে স্থলে অভিযান চালান। আর তাঁদের সোর্সদের মাধ্যমে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেন জেলেরা।

জেলেদের অভিযোগের সত্যতা মিলে পাথরঘাটা মৎস্য ঘাট এলাকায় কোনো মাছ ধরা ট্রলার না দেখে। জানা যায়, এসব ট্রলার মাছ শিকার করে গভীর রাতে ঘাটে ফিরে। পরে মাছ বিক্রি করে আবার সমুদ্রে চলে যায়।

চরদুয়ানী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইশান বলেন, ‘আমিও লোকমুখে ম্যানেজের বলতে শুনেছি। মূলত অভিযানে আটক হয়ে জেলেরা নিজেদের বাঁচাতে আমাদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন। নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড ও মৎস্য বিভাগের সমন্বয়ে নিয়মিত আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।’ 
এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য দপ্তরের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার দায়ে আমরা থানা-পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে উপকূলীয় এলাকায় রাতে অভিযান চালাই। তিন দিনে আটক ৭টি ট্রলারের মাছ নিলামে বিক্রি করে তাঁদের জরিমানা করি। এতে সাড়ে ৪ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত