শফিকুল কবীর চন্দন

টাঙ্গাইল শাড়ি পাথরাইল, নলশোদা, বাজিতপুর, চণ্ডীর নাকি ফুলিয়া, কালনা, ধাত্রীগ্রাম, নবদ্বীপ, সমুদ্রগড়ের, নাকি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার? নাকি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া বা বর্ধমান জেলার?
কয়েক দিন ধরে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই সনদ নিয়ে বেশ কিছু গবেষক কথা বলছেন। কিন্তু যাঁদের শ্রম, ঘাম ও মেধায় এই বয়নশিল্প গড়ে উঠেছে, সেই কারিগরদের কোনো বয়ান নেই কেন? আসলে এই কারিগরদের জোরের জায়গাটা হলো তাঁদের পরম্পরা কাজের নির্ভীক দক্ষতা।
আমি নিজে কারিগর কিসিমের মানুষ। প্রায় তিরিশ বছর ধরে তাঁত বুনি। তবে পরম্পরা কারিগর নই। আমি ব্যক্তিগতভাবে কারিগরের স্বাধীনতা খর্বকারী এই ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য সনদের পক্ষে নই। থাকার কোনো কারণ অন্তত স্বাধীন কোনো কারুশিল্পীর নেই। এই যে হাজার বছর ধরে কারিগরেরা দিব্যি টিকে আছেন, তাঁদের জোরের জায়গাটা একবার যদি চিন্তা করি, তাহলে দেখব তাঁদের জিআই সনদ নিয়ে ভাবনা আর ভদ্রলোকীয়দের ভাবনার মধ্যে ফারাক আছে। সামগ্রিকভাবে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতির প্রতি কারিগরদের বিরোধিতা তাঁদের শৈল্পিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক জীবিকা, সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং বৈশ্বিক বাজারের জটিলতাগুলো মোকাবিলা করার ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রক কাঠামোর প্রভাব সম্পর্কে তাঁদের উদ্বেগকে প্রতিফলিত করে।
ক্রমেই জিআই সনদ যেন ভদ্রলোকীয় পরিভাষায় ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্বীকৃতির পাকা সড়ক ধরে উপস্থিত হচ্ছে! অথচ পণ্য আগে না উৎপাদক আগে—এর মীমাংসা তাদের কাছে কেমন? ফলে জিআই স্বীকৃতি মিললেও, হস্তচালিত তাঁতে বোনা টাঙ্গাইল শাড়ির ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে সেখানকার হস্ত তাঁত কারিগরদের।
ফলে জিআই সনদের বিরোধিতা মানে, বাজারে একচেটিয়া পণ্যের আধিপত্যকে বাতিল করে কারিগরি দক্ষতা এবং পণ্যের মানের উৎকর্ষের প্রতিযোগিতা, যা আবার উৎপাদন করণকৌশল হিসেবে সামাজিক সম্পদে পরিণত হচ্ছে। আমরা তো দেখছি কীভাবে বড় পুঁজি নীরবে, সরবে ও সবলে দখল করে সমগ্র উৎপাদক কারিগরি পেশার মানুষদের বাপ-দাদার পেশা থেকে উচ্ছেদ করে তথাকথিত অদক্ষ শ্রমিকে পরিণত করছে; নিজেদের অর্জিত পরম্পরা জ্ঞান, দক্ষতা বাজারের অহংকার হারিয়ে দিনমজুরে পরিণত হচ্ছে।
তাঁদের জন্য ভদ্রবিত্তরা কী চিন্তাভাবনা করছেন? আছে কোনো সরকারি হিসাব? স্বাধীনতার ৫২ বছরে উন্নয়ন উদ্বাস্তুদের জীবনে কী ঘটেছে, আমরা ভদ্রবিত্তরা কেউ জানি না। একটা মামুলি প্রশ্ন করে রাখা দরকার, এই সনদে কারিগরের কী লাভ? ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে, আপনার দেখা ২০-৪০ বছর আগের চাষি, কারিগরদের অবস্থা কি আগের মতো আছে? জাতিবাদী, আঞ্চলিকতার দুষ্টপাকে আকণ্ঠ নিমজ্জিত আরবান ভদ্রবিত্তের জন্য জিআই, মসলিন রিভাইভাল স্রেফ ‘লেবেঞ্চুস’ মাত্র নয় কি?
পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উৎসাহী মানুষজন টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই বিষয় নিয়ে যারপরনাই ভাবিত, কিন্তু তাঁরা এর কিয়দংশও যদি ভাবিত হতো—তাঁতিদের সব কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে পাওয়ারলুমের (যান্ত্রিক তাঁত) দৌরাত্ম্য! উচ্ছেদের আশঙ্কা মাথায় নিয়েও, রাষ্ট্র প্রতিমুহূর্তে তাঁর রুটি ও রুজি খেয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে জেনেও চাষি ও কারিগরেরা ঘাড় গুঁজেই কাজ করে যাচ্ছেন। কারণ তাঁরা তাঁদের কাজ ও পেশাকে ভালোবাসেন। তাঁরা তাঁদের পেশার প্রতি বিশ্বস্ত। তাই তো তাঁরা পারিবারিক অবশেষের পেশায় হাত চালাতে চালাতে বলেন, ‘কী করমু, বাপ-দাদার পেশা ছাড়তে তো পারি না, অন্য কোনো কাজ তো শিখি নাই!’
পশ্চিমবঙ্গের টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই পাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের ভদ্রবিত্তের লোকদের অতি উৎসাহের নিদান হলো, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদের ছিল, আমাদেরই থাকবে’গোছের আপ্তবাক্য! তাঁত বিষয়ে রাষ্ট্রের বৈমাত্রেয় নীতি আর পাওয়ারলুমের ঠেলায় টাঙ্গাইলে তাঁতি আছে কি নেই, সে বিষয়ে না জেনে শিক্ষিত ভদ্রবিত্তের কথায় আমরা অনেকে বেহুঁশ হয়ে পড়েছি।
আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে পেটেন্টস, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক বিভাগ (ডিপিডিটি) এই স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে। শত বা হাজার বছর যে পণ্যের এমন সনদ লাগল না, তা আজ কেন লাগছে? কারা এর জন্য বেশি উৎসাহী? বলা হয়, কোনো পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেলে পণ্যগুলো বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়। এই পণ্যগুলোর আলাদা কদর থাকে। ওই অঞ্চল বাণিজ্যিকভাবে পণ্যটি উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পায়।
এবার দেখা যাক জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন রেজিস্ট্রি দিয়েছে যে ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি ইন্ডিয়া, তাদের ওয়েবসাইটে যেসব তথ্য জুড়ে দিয়েছে, তা খুব আগ্রহোদ্দীপক। যেমন ভৌগোলিক নির্দেশক বিষয় হিসেবে ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব বেঙ্গল’ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রশ্ন এই ‘বেঙ্গল’ কোথায়? ভারতবর্ষে অফিশিয়ালি ‘বেঙ্গল’ বলে কোন জায়গাকে চিহ্নিত করা হচ্ছে? আসলে ফাঁকিটাই বা কোথায়? ফলে বাণিজ্য বুদ্ধির চক্রে কিছু গোলমাল হয়ে থাকতে পারে। সত্যই কি তাই নয়? এ মিথ্যাচার নাকি অতি উৎসাহী কর্মকর্তাদের অজ্ঞতা?
শ্রী রবীন্দ্রনাথ রায় ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি যে নোটারি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেছেন, সেখানে উল্লিখিত ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব বেঙ্গল’।নথিতে ম্যাপ যুক্ত করে, সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল’। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে ওয়েস্ট বেঙ্গল বাদ দিয়ে বেঙ্গল হয়েছে। আর বাংলায় করা হয়েছে ‘বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি’।
৭০২ নম্বর আবেদনপত্রের বিপরীতে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য আবেদনে জুড়ে দেওয়া ‘রিপোর্ট অন টাঙ্গাইল শাড়ি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল, স্টেটমেন্ট অব কেস’-এ বলা হচ্ছে, ‘ইট মে বি সারপ্রাইজিং টু নোট দ্যাট টাঙ্গাইল শাড়ি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ডিড নট কাম ফ্রম টাঙ্গাইল ইন ইস্টওয়েস্ট (নাও বাংলাদেশ), র্যাদার ইট ইজ এ হাইব্রিড অব শান্তিপুর ডিজাইন অ্যান্ড ঢাকা-টাঙ্গাইল’।
‘বেঙ্গল’ যদি হাইব্রিডই হবে তাহলে আসলের নকল হিসেবে এখানে টাঙ্গাইল নাম ব্যবহারের ন্যায্যতা থাকে কি? বুঝতে হবে কাজটি হাইব্রিড হলেও, ভৌগোলিক স্থান-নাম হিসেবে টাঙ্গাইল হাইব্রিড নয়, এই যা রক্ষে! এবার আসা যাক কতিপয় ভাষ্যের ব্যবচ্ছেদে। অনেকে মধ্যপন্থায় আশ্রয় খোঁজে, ‘কাঁটাতার পেরিয়ে টাঙ্গাইলের যে তাঁতিরা এপারে এসেছেন, তাঁরাও বুকের ভেতর জন্মের ভূমি টাঙ্গাইলকে লালন করেন, তাঁদেরও স্বত্ব পাওয়ার অধিকার আছে। দুই দেশেই থাকুক স্বত্ব।’ এই মধ্যপন্থা মাঝটুকুতে ভরসা রাখে, আগে-পিছে দায় নিতে জানে না।
বিবিসি বাংলা অনলাইনের বরাতে পাওয়া আরও কিছু খোঁড়া যুক্তির নমুনা—‘অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে মুর্শিদাবাদ জেলার বালুচর এলাকায় এই শাড়ির জন্ম হলেও, পরবর্তীকালে বন্যার কারণে বালুচরি তাঁতিরা বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে চলে আসেন। পরে সেখানে এই শাড়ির প্রসার ঘটে।’ আর ‘স্থানান্তরিত হলেও বালুচরি শাড়ি “বিষ্ণুপুরি” বা অন্য কোনো নাম পরিগ্রহ করেনি; বরং বালুচরি নামেই জিআই পেয়েছে’ বলে জানান ফুলিয়ার এক তাঁতশিল্প গবেষক। খুবই খোঁড়া যুক্তি! বালুচরে অবশিষ্ট তাঁতিরা ছিলেন নাকি সবাই চলে এসেছিলেন বিষ্ণুপুরে? আর বালুচর ও বিষ্ণুপুর দুটি আলাদা সার্বভৌম দেশের জায়গা তো নয়!
আরেকজন বলছেন, দেশভাগের বলি হয়ে ভারতে চলে এলেও ‘টাঙ্গাইল’ শব্দটি ছিল বসাক তাঁতিদের অস্থিমজ্জাগত। ফলে উদ্বাস্তু এই তাঁতিরা নিজেদের বয়নীকৃত শাড়ির নাম বা বয়নকৌশল পরিবর্তন করার কথা কল্পনাও করেননি। এই যে কল্পনাও করেননি তা কি টাঙ্গাইল শাড়ির প্রয়োজনে, নাকি নিজেদের রুটি রুজির প্রয়োজনে? নাকি বলা যায়, শাড়ির নাম বা বয়নকৌশল পরিবর্তন করার কথা কল্পনাও করতে পারেননি? তা তো বটেই, পারেননি বলেই না ফুলিয়ায় ‘টাঙ্গাইল তন্তুজীবী উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামের সমবায় প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়! টাঙ্গাইল শাড়ির সাকিন ‘টাঙ্গাইল’ এখানে ‘ব্র্যান্ড নেইম’। নইলে ভারতে বোনা শাড়ির নাম হতো ভিন্ন।
ফুলিয়ার তাঁতিদের প্রতি কোনো বিরূপতা নেই। তাঁরা বাংলাদেশ (টাঙ্গাইল) থেকে গেছেন, কিন্তু স্বতন্ত্র একটা ধারা কিন্তু গড়ে তুলেছেন, যা টাঙ্গাইলের ধারা থেকে গ্রহণ করা আবার আলাদাও। যেমন বেনারসির ডিজাইনে বাংলাদেশে শাড়ি বানালেও সেটা বেনারসির বড়জোর রেপ্লিকা। মানে-গুণে যদি ভালোও হয়, তবু আসল বেনারসি নয়। এভাবে না বুঝলে তো আপনি না বুঝে এঁড়েতর্ক করছেন। অথবা বুঝেশুনে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন।
টাঙ্গাইল শাড়ি ব্যক্তিনির্ভর নয়, তা স্থাননির্ভর কৃষ্টির পর্যায়ে উপনীত। পরম্পরা জ্ঞানের এই এক প্রক্রিয়া। কারিগরেরা সচরাচর বাপ-দাদার কারিগরি কৌশল, মুনশিয়ানা পুঁজি করেই এগোতে চান। এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। অভিবাসী হিসেবে ভূগোল টপকে পারিবারিক, আঞ্চলিক পেশার অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গের ‘বাঙাল তাঁতিরা’ টাঙ্গাইল শাড়ি বুনেছেন, বুনছেন, বুনবেন, এর উৎকর্ষ আরোপ করবেন—এমনটাই হোক। আর এটা হলে টাঙ্গাইলের মূলভূমিপুত্রসহ শাড়ির কারিগরেরা তথা ভূভাগের মানুষেরা গর্বিত হবেন বইকি।
ফুলিয়ার তন্তুবায়রা আমাদের স্বজন। তাঁরা পরম্পরা দক্ষতায় শাড়ি বোনেন কুরুম-ধলেশ্বরীর জল-তাপ হৃদয়ে ধারণ করে, রং আর নকশা মিশিয়ে। আমরা একই বয়ন কারিগরির উত্তরাধিকার, এখানেই আমাদের অভিন্নতা।
টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য। কারণ এলাকা, অঞ্চল বা নগর হিসেবে টাঙ্গাইলের অবস্থান পৃথিবীর আর কোথাও নয়। এ সহজ কথাটা বুঝতে হবে, মানতে হবে। এখানে কোনো বিতর্ক চলে না।
শফিকুল কবীর চন্দন, চারুশিল্পী, লেখক ও গবেষক

টাঙ্গাইল শাড়ি পাথরাইল, নলশোদা, বাজিতপুর, চণ্ডীর নাকি ফুলিয়া, কালনা, ধাত্রীগ্রাম, নবদ্বীপ, সমুদ্রগড়ের, নাকি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার? নাকি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া বা বর্ধমান জেলার?
কয়েক দিন ধরে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই সনদ নিয়ে বেশ কিছু গবেষক কথা বলছেন। কিন্তু যাঁদের শ্রম, ঘাম ও মেধায় এই বয়নশিল্প গড়ে উঠেছে, সেই কারিগরদের কোনো বয়ান নেই কেন? আসলে এই কারিগরদের জোরের জায়গাটা হলো তাঁদের পরম্পরা কাজের নির্ভীক দক্ষতা।
আমি নিজে কারিগর কিসিমের মানুষ। প্রায় তিরিশ বছর ধরে তাঁত বুনি। তবে পরম্পরা কারিগর নই। আমি ব্যক্তিগতভাবে কারিগরের স্বাধীনতা খর্বকারী এই ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য সনদের পক্ষে নই। থাকার কোনো কারণ অন্তত স্বাধীন কোনো কারুশিল্পীর নেই। এই যে হাজার বছর ধরে কারিগরেরা দিব্যি টিকে আছেন, তাঁদের জোরের জায়গাটা একবার যদি চিন্তা করি, তাহলে দেখব তাঁদের জিআই সনদ নিয়ে ভাবনা আর ভদ্রলোকীয়দের ভাবনার মধ্যে ফারাক আছে। সামগ্রিকভাবে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতির প্রতি কারিগরদের বিরোধিতা তাঁদের শৈল্পিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক জীবিকা, সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং বৈশ্বিক বাজারের জটিলতাগুলো মোকাবিলা করার ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রক কাঠামোর প্রভাব সম্পর্কে তাঁদের উদ্বেগকে প্রতিফলিত করে।
ক্রমেই জিআই সনদ যেন ভদ্রলোকীয় পরিভাষায় ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্বীকৃতির পাকা সড়ক ধরে উপস্থিত হচ্ছে! অথচ পণ্য আগে না উৎপাদক আগে—এর মীমাংসা তাদের কাছে কেমন? ফলে জিআই স্বীকৃতি মিললেও, হস্তচালিত তাঁতে বোনা টাঙ্গাইল শাড়ির ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে সেখানকার হস্ত তাঁত কারিগরদের।
ফলে জিআই সনদের বিরোধিতা মানে, বাজারে একচেটিয়া পণ্যের আধিপত্যকে বাতিল করে কারিগরি দক্ষতা এবং পণ্যের মানের উৎকর্ষের প্রতিযোগিতা, যা আবার উৎপাদন করণকৌশল হিসেবে সামাজিক সম্পদে পরিণত হচ্ছে। আমরা তো দেখছি কীভাবে বড় পুঁজি নীরবে, সরবে ও সবলে দখল করে সমগ্র উৎপাদক কারিগরি পেশার মানুষদের বাপ-দাদার পেশা থেকে উচ্ছেদ করে তথাকথিত অদক্ষ শ্রমিকে পরিণত করছে; নিজেদের অর্জিত পরম্পরা জ্ঞান, দক্ষতা বাজারের অহংকার হারিয়ে দিনমজুরে পরিণত হচ্ছে।
তাঁদের জন্য ভদ্রবিত্তরা কী চিন্তাভাবনা করছেন? আছে কোনো সরকারি হিসাব? স্বাধীনতার ৫২ বছরে উন্নয়ন উদ্বাস্তুদের জীবনে কী ঘটেছে, আমরা ভদ্রবিত্তরা কেউ জানি না। একটা মামুলি প্রশ্ন করে রাখা দরকার, এই সনদে কারিগরের কী লাভ? ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে, আপনার দেখা ২০-৪০ বছর আগের চাষি, কারিগরদের অবস্থা কি আগের মতো আছে? জাতিবাদী, আঞ্চলিকতার দুষ্টপাকে আকণ্ঠ নিমজ্জিত আরবান ভদ্রবিত্তের জন্য জিআই, মসলিন রিভাইভাল স্রেফ ‘লেবেঞ্চুস’ মাত্র নয় কি?
পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উৎসাহী মানুষজন টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই বিষয় নিয়ে যারপরনাই ভাবিত, কিন্তু তাঁরা এর কিয়দংশও যদি ভাবিত হতো—তাঁতিদের সব কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে পাওয়ারলুমের (যান্ত্রিক তাঁত) দৌরাত্ম্য! উচ্ছেদের আশঙ্কা মাথায় নিয়েও, রাষ্ট্র প্রতিমুহূর্তে তাঁর রুটি ও রুজি খেয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে জেনেও চাষি ও কারিগরেরা ঘাড় গুঁজেই কাজ করে যাচ্ছেন। কারণ তাঁরা তাঁদের কাজ ও পেশাকে ভালোবাসেন। তাঁরা তাঁদের পেশার প্রতি বিশ্বস্ত। তাই তো তাঁরা পারিবারিক অবশেষের পেশায় হাত চালাতে চালাতে বলেন, ‘কী করমু, বাপ-দাদার পেশা ছাড়তে তো পারি না, অন্য কোনো কাজ তো শিখি নাই!’
পশ্চিমবঙ্গের টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই পাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের ভদ্রবিত্তের লোকদের অতি উৎসাহের নিদান হলো, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদের ছিল, আমাদেরই থাকবে’গোছের আপ্তবাক্য! তাঁত বিষয়ে রাষ্ট্রের বৈমাত্রেয় নীতি আর পাওয়ারলুমের ঠেলায় টাঙ্গাইলে তাঁতি আছে কি নেই, সে বিষয়ে না জেনে শিক্ষিত ভদ্রবিত্তের কথায় আমরা অনেকে বেহুঁশ হয়ে পড়েছি।
আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে পেটেন্টস, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক বিভাগ (ডিপিডিটি) এই স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে। শত বা হাজার বছর যে পণ্যের এমন সনদ লাগল না, তা আজ কেন লাগছে? কারা এর জন্য বেশি উৎসাহী? বলা হয়, কোনো পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেলে পণ্যগুলো বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়। এই পণ্যগুলোর আলাদা কদর থাকে। ওই অঞ্চল বাণিজ্যিকভাবে পণ্যটি উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পায়।
এবার দেখা যাক জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন রেজিস্ট্রি দিয়েছে যে ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি ইন্ডিয়া, তাদের ওয়েবসাইটে যেসব তথ্য জুড়ে দিয়েছে, তা খুব আগ্রহোদ্দীপক। যেমন ভৌগোলিক নির্দেশক বিষয় হিসেবে ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব বেঙ্গল’ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রশ্ন এই ‘বেঙ্গল’ কোথায়? ভারতবর্ষে অফিশিয়ালি ‘বেঙ্গল’ বলে কোন জায়গাকে চিহ্নিত করা হচ্ছে? আসলে ফাঁকিটাই বা কোথায়? ফলে বাণিজ্য বুদ্ধির চক্রে কিছু গোলমাল হয়ে থাকতে পারে। সত্যই কি তাই নয়? এ মিথ্যাচার নাকি অতি উৎসাহী কর্মকর্তাদের অজ্ঞতা?
শ্রী রবীন্দ্রনাথ রায় ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি যে নোটারি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেছেন, সেখানে উল্লিখিত ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব বেঙ্গল’।নথিতে ম্যাপ যুক্ত করে, সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল’। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে ওয়েস্ট বেঙ্গল বাদ দিয়ে বেঙ্গল হয়েছে। আর বাংলায় করা হয়েছে ‘বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি’।
৭০২ নম্বর আবেদনপত্রের বিপরীতে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য আবেদনে জুড়ে দেওয়া ‘রিপোর্ট অন টাঙ্গাইল শাড়ি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল, স্টেটমেন্ট অব কেস’-এ বলা হচ্ছে, ‘ইট মে বি সারপ্রাইজিং টু নোট দ্যাট টাঙ্গাইল শাড়ি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ডিড নট কাম ফ্রম টাঙ্গাইল ইন ইস্টওয়েস্ট (নাও বাংলাদেশ), র্যাদার ইট ইজ এ হাইব্রিড অব শান্তিপুর ডিজাইন অ্যান্ড ঢাকা-টাঙ্গাইল’।
‘বেঙ্গল’ যদি হাইব্রিডই হবে তাহলে আসলের নকল হিসেবে এখানে টাঙ্গাইল নাম ব্যবহারের ন্যায্যতা থাকে কি? বুঝতে হবে কাজটি হাইব্রিড হলেও, ভৌগোলিক স্থান-নাম হিসেবে টাঙ্গাইল হাইব্রিড নয়, এই যা রক্ষে! এবার আসা যাক কতিপয় ভাষ্যের ব্যবচ্ছেদে। অনেকে মধ্যপন্থায় আশ্রয় খোঁজে, ‘কাঁটাতার পেরিয়ে টাঙ্গাইলের যে তাঁতিরা এপারে এসেছেন, তাঁরাও বুকের ভেতর জন্মের ভূমি টাঙ্গাইলকে লালন করেন, তাঁদেরও স্বত্ব পাওয়ার অধিকার আছে। দুই দেশেই থাকুক স্বত্ব।’ এই মধ্যপন্থা মাঝটুকুতে ভরসা রাখে, আগে-পিছে দায় নিতে জানে না।
বিবিসি বাংলা অনলাইনের বরাতে পাওয়া আরও কিছু খোঁড়া যুক্তির নমুনা—‘অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে মুর্শিদাবাদ জেলার বালুচর এলাকায় এই শাড়ির জন্ম হলেও, পরবর্তীকালে বন্যার কারণে বালুচরি তাঁতিরা বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে চলে আসেন। পরে সেখানে এই শাড়ির প্রসার ঘটে।’ আর ‘স্থানান্তরিত হলেও বালুচরি শাড়ি “বিষ্ণুপুরি” বা অন্য কোনো নাম পরিগ্রহ করেনি; বরং বালুচরি নামেই জিআই পেয়েছে’ বলে জানান ফুলিয়ার এক তাঁতশিল্প গবেষক। খুবই খোঁড়া যুক্তি! বালুচরে অবশিষ্ট তাঁতিরা ছিলেন নাকি সবাই চলে এসেছিলেন বিষ্ণুপুরে? আর বালুচর ও বিষ্ণুপুর দুটি আলাদা সার্বভৌম দেশের জায়গা তো নয়!
আরেকজন বলছেন, দেশভাগের বলি হয়ে ভারতে চলে এলেও ‘টাঙ্গাইল’ শব্দটি ছিল বসাক তাঁতিদের অস্থিমজ্জাগত। ফলে উদ্বাস্তু এই তাঁতিরা নিজেদের বয়নীকৃত শাড়ির নাম বা বয়নকৌশল পরিবর্তন করার কথা কল্পনাও করেননি। এই যে কল্পনাও করেননি তা কি টাঙ্গাইল শাড়ির প্রয়োজনে, নাকি নিজেদের রুটি রুজির প্রয়োজনে? নাকি বলা যায়, শাড়ির নাম বা বয়নকৌশল পরিবর্তন করার কথা কল্পনাও করতে পারেননি? তা তো বটেই, পারেননি বলেই না ফুলিয়ায় ‘টাঙ্গাইল তন্তুজীবী উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামের সমবায় প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়! টাঙ্গাইল শাড়ির সাকিন ‘টাঙ্গাইল’ এখানে ‘ব্র্যান্ড নেইম’। নইলে ভারতে বোনা শাড়ির নাম হতো ভিন্ন।
ফুলিয়ার তাঁতিদের প্রতি কোনো বিরূপতা নেই। তাঁরা বাংলাদেশ (টাঙ্গাইল) থেকে গেছেন, কিন্তু স্বতন্ত্র একটা ধারা কিন্তু গড়ে তুলেছেন, যা টাঙ্গাইলের ধারা থেকে গ্রহণ করা আবার আলাদাও। যেমন বেনারসির ডিজাইনে বাংলাদেশে শাড়ি বানালেও সেটা বেনারসির বড়জোর রেপ্লিকা। মানে-গুণে যদি ভালোও হয়, তবু আসল বেনারসি নয়। এভাবে না বুঝলে তো আপনি না বুঝে এঁড়েতর্ক করছেন। অথবা বুঝেশুনে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন।
টাঙ্গাইল শাড়ি ব্যক্তিনির্ভর নয়, তা স্থাননির্ভর কৃষ্টির পর্যায়ে উপনীত। পরম্পরা জ্ঞানের এই এক প্রক্রিয়া। কারিগরেরা সচরাচর বাপ-দাদার কারিগরি কৌশল, মুনশিয়ানা পুঁজি করেই এগোতে চান। এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। অভিবাসী হিসেবে ভূগোল টপকে পারিবারিক, আঞ্চলিক পেশার অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গের ‘বাঙাল তাঁতিরা’ টাঙ্গাইল শাড়ি বুনেছেন, বুনছেন, বুনবেন, এর উৎকর্ষ আরোপ করবেন—এমনটাই হোক। আর এটা হলে টাঙ্গাইলের মূলভূমিপুত্রসহ শাড়ির কারিগরেরা তথা ভূভাগের মানুষেরা গর্বিত হবেন বইকি।
ফুলিয়ার তন্তুবায়রা আমাদের স্বজন। তাঁরা পরম্পরা দক্ষতায় শাড়ি বোনেন কুরুম-ধলেশ্বরীর জল-তাপ হৃদয়ে ধারণ করে, রং আর নকশা মিশিয়ে। আমরা একই বয়ন কারিগরির উত্তরাধিকার, এখানেই আমাদের অভিন্নতা।
টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য। কারণ এলাকা, অঞ্চল বা নগর হিসেবে টাঙ্গাইলের অবস্থান পৃথিবীর আর কোথাও নয়। এ সহজ কথাটা বুঝতে হবে, মানতে হবে। এখানে কোনো বিতর্ক চলে না।
শফিকুল কবীর চন্দন, চারুশিল্পী, লেখক ও গবেষক
শফিকুল কবীর চন্দন

টাঙ্গাইল শাড়ি পাথরাইল, নলশোদা, বাজিতপুর, চণ্ডীর নাকি ফুলিয়া, কালনা, ধাত্রীগ্রাম, নবদ্বীপ, সমুদ্রগড়ের, নাকি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার? নাকি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া বা বর্ধমান জেলার?
কয়েক দিন ধরে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই সনদ নিয়ে বেশ কিছু গবেষক কথা বলছেন। কিন্তু যাঁদের শ্রম, ঘাম ও মেধায় এই বয়নশিল্প গড়ে উঠেছে, সেই কারিগরদের কোনো বয়ান নেই কেন? আসলে এই কারিগরদের জোরের জায়গাটা হলো তাঁদের পরম্পরা কাজের নির্ভীক দক্ষতা।
আমি নিজে কারিগর কিসিমের মানুষ। প্রায় তিরিশ বছর ধরে তাঁত বুনি। তবে পরম্পরা কারিগর নই। আমি ব্যক্তিগতভাবে কারিগরের স্বাধীনতা খর্বকারী এই ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য সনদের পক্ষে নই। থাকার কোনো কারণ অন্তত স্বাধীন কোনো কারুশিল্পীর নেই। এই যে হাজার বছর ধরে কারিগরেরা দিব্যি টিকে আছেন, তাঁদের জোরের জায়গাটা একবার যদি চিন্তা করি, তাহলে দেখব তাঁদের জিআই সনদ নিয়ে ভাবনা আর ভদ্রলোকীয়দের ভাবনার মধ্যে ফারাক আছে। সামগ্রিকভাবে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতির প্রতি কারিগরদের বিরোধিতা তাঁদের শৈল্পিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক জীবিকা, সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং বৈশ্বিক বাজারের জটিলতাগুলো মোকাবিলা করার ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রক কাঠামোর প্রভাব সম্পর্কে তাঁদের উদ্বেগকে প্রতিফলিত করে।
ক্রমেই জিআই সনদ যেন ভদ্রলোকীয় পরিভাষায় ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্বীকৃতির পাকা সড়ক ধরে উপস্থিত হচ্ছে! অথচ পণ্য আগে না উৎপাদক আগে—এর মীমাংসা তাদের কাছে কেমন? ফলে জিআই স্বীকৃতি মিললেও, হস্তচালিত তাঁতে বোনা টাঙ্গাইল শাড়ির ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে সেখানকার হস্ত তাঁত কারিগরদের।
ফলে জিআই সনদের বিরোধিতা মানে, বাজারে একচেটিয়া পণ্যের আধিপত্যকে বাতিল করে কারিগরি দক্ষতা এবং পণ্যের মানের উৎকর্ষের প্রতিযোগিতা, যা আবার উৎপাদন করণকৌশল হিসেবে সামাজিক সম্পদে পরিণত হচ্ছে। আমরা তো দেখছি কীভাবে বড় পুঁজি নীরবে, সরবে ও সবলে দখল করে সমগ্র উৎপাদক কারিগরি পেশার মানুষদের বাপ-দাদার পেশা থেকে উচ্ছেদ করে তথাকথিত অদক্ষ শ্রমিকে পরিণত করছে; নিজেদের অর্জিত পরম্পরা জ্ঞান, দক্ষতা বাজারের অহংকার হারিয়ে দিনমজুরে পরিণত হচ্ছে।
তাঁদের জন্য ভদ্রবিত্তরা কী চিন্তাভাবনা করছেন? আছে কোনো সরকারি হিসাব? স্বাধীনতার ৫২ বছরে উন্নয়ন উদ্বাস্তুদের জীবনে কী ঘটেছে, আমরা ভদ্রবিত্তরা কেউ জানি না। একটা মামুলি প্রশ্ন করে রাখা দরকার, এই সনদে কারিগরের কী লাভ? ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে, আপনার দেখা ২০-৪০ বছর আগের চাষি, কারিগরদের অবস্থা কি আগের মতো আছে? জাতিবাদী, আঞ্চলিকতার দুষ্টপাকে আকণ্ঠ নিমজ্জিত আরবান ভদ্রবিত্তের জন্য জিআই, মসলিন রিভাইভাল স্রেফ ‘লেবেঞ্চুস’ মাত্র নয় কি?
পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উৎসাহী মানুষজন টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই বিষয় নিয়ে যারপরনাই ভাবিত, কিন্তু তাঁরা এর কিয়দংশও যদি ভাবিত হতো—তাঁতিদের সব কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে পাওয়ারলুমের (যান্ত্রিক তাঁত) দৌরাত্ম্য! উচ্ছেদের আশঙ্কা মাথায় নিয়েও, রাষ্ট্র প্রতিমুহূর্তে তাঁর রুটি ও রুজি খেয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে জেনেও চাষি ও কারিগরেরা ঘাড় গুঁজেই কাজ করে যাচ্ছেন। কারণ তাঁরা তাঁদের কাজ ও পেশাকে ভালোবাসেন। তাঁরা তাঁদের পেশার প্রতি বিশ্বস্ত। তাই তো তাঁরা পারিবারিক অবশেষের পেশায় হাত চালাতে চালাতে বলেন, ‘কী করমু, বাপ-দাদার পেশা ছাড়তে তো পারি না, অন্য কোনো কাজ তো শিখি নাই!’
পশ্চিমবঙ্গের টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই পাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের ভদ্রবিত্তের লোকদের অতি উৎসাহের নিদান হলো, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদের ছিল, আমাদেরই থাকবে’গোছের আপ্তবাক্য! তাঁত বিষয়ে রাষ্ট্রের বৈমাত্রেয় নীতি আর পাওয়ারলুমের ঠেলায় টাঙ্গাইলে তাঁতি আছে কি নেই, সে বিষয়ে না জেনে শিক্ষিত ভদ্রবিত্তের কথায় আমরা অনেকে বেহুঁশ হয়ে পড়েছি।
আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে পেটেন্টস, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক বিভাগ (ডিপিডিটি) এই স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে। শত বা হাজার বছর যে পণ্যের এমন সনদ লাগল না, তা আজ কেন লাগছে? কারা এর জন্য বেশি উৎসাহী? বলা হয়, কোনো পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেলে পণ্যগুলো বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়। এই পণ্যগুলোর আলাদা কদর থাকে। ওই অঞ্চল বাণিজ্যিকভাবে পণ্যটি উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পায়।
এবার দেখা যাক জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন রেজিস্ট্রি দিয়েছে যে ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি ইন্ডিয়া, তাদের ওয়েবসাইটে যেসব তথ্য জুড়ে দিয়েছে, তা খুব আগ্রহোদ্দীপক। যেমন ভৌগোলিক নির্দেশক বিষয় হিসেবে ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব বেঙ্গল’ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রশ্ন এই ‘বেঙ্গল’ কোথায়? ভারতবর্ষে অফিশিয়ালি ‘বেঙ্গল’ বলে কোন জায়গাকে চিহ্নিত করা হচ্ছে? আসলে ফাঁকিটাই বা কোথায়? ফলে বাণিজ্য বুদ্ধির চক্রে কিছু গোলমাল হয়ে থাকতে পারে। সত্যই কি তাই নয়? এ মিথ্যাচার নাকি অতি উৎসাহী কর্মকর্তাদের অজ্ঞতা?
শ্রী রবীন্দ্রনাথ রায় ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি যে নোটারি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেছেন, সেখানে উল্লিখিত ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব বেঙ্গল’।নথিতে ম্যাপ যুক্ত করে, সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল’। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে ওয়েস্ট বেঙ্গল বাদ দিয়ে বেঙ্গল হয়েছে। আর বাংলায় করা হয়েছে ‘বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি’।
৭০২ নম্বর আবেদনপত্রের বিপরীতে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য আবেদনে জুড়ে দেওয়া ‘রিপোর্ট অন টাঙ্গাইল শাড়ি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল, স্টেটমেন্ট অব কেস’-এ বলা হচ্ছে, ‘ইট মে বি সারপ্রাইজিং টু নোট দ্যাট টাঙ্গাইল শাড়ি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ডিড নট কাম ফ্রম টাঙ্গাইল ইন ইস্টওয়েস্ট (নাও বাংলাদেশ), র্যাদার ইট ইজ এ হাইব্রিড অব শান্তিপুর ডিজাইন অ্যান্ড ঢাকা-টাঙ্গাইল’।
‘বেঙ্গল’ যদি হাইব্রিডই হবে তাহলে আসলের নকল হিসেবে এখানে টাঙ্গাইল নাম ব্যবহারের ন্যায্যতা থাকে কি? বুঝতে হবে কাজটি হাইব্রিড হলেও, ভৌগোলিক স্থান-নাম হিসেবে টাঙ্গাইল হাইব্রিড নয়, এই যা রক্ষে! এবার আসা যাক কতিপয় ভাষ্যের ব্যবচ্ছেদে। অনেকে মধ্যপন্থায় আশ্রয় খোঁজে, ‘কাঁটাতার পেরিয়ে টাঙ্গাইলের যে তাঁতিরা এপারে এসেছেন, তাঁরাও বুকের ভেতর জন্মের ভূমি টাঙ্গাইলকে লালন করেন, তাঁদেরও স্বত্ব পাওয়ার অধিকার আছে। দুই দেশেই থাকুক স্বত্ব।’ এই মধ্যপন্থা মাঝটুকুতে ভরসা রাখে, আগে-পিছে দায় নিতে জানে না।
বিবিসি বাংলা অনলাইনের বরাতে পাওয়া আরও কিছু খোঁড়া যুক্তির নমুনা—‘অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে মুর্শিদাবাদ জেলার বালুচর এলাকায় এই শাড়ির জন্ম হলেও, পরবর্তীকালে বন্যার কারণে বালুচরি তাঁতিরা বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে চলে আসেন। পরে সেখানে এই শাড়ির প্রসার ঘটে।’ আর ‘স্থানান্তরিত হলেও বালুচরি শাড়ি “বিষ্ণুপুরি” বা অন্য কোনো নাম পরিগ্রহ করেনি; বরং বালুচরি নামেই জিআই পেয়েছে’ বলে জানান ফুলিয়ার এক তাঁতশিল্প গবেষক। খুবই খোঁড়া যুক্তি! বালুচরে অবশিষ্ট তাঁতিরা ছিলেন নাকি সবাই চলে এসেছিলেন বিষ্ণুপুরে? আর বালুচর ও বিষ্ণুপুর দুটি আলাদা সার্বভৌম দেশের জায়গা তো নয়!
আরেকজন বলছেন, দেশভাগের বলি হয়ে ভারতে চলে এলেও ‘টাঙ্গাইল’ শব্দটি ছিল বসাক তাঁতিদের অস্থিমজ্জাগত। ফলে উদ্বাস্তু এই তাঁতিরা নিজেদের বয়নীকৃত শাড়ির নাম বা বয়নকৌশল পরিবর্তন করার কথা কল্পনাও করেননি। এই যে কল্পনাও করেননি তা কি টাঙ্গাইল শাড়ির প্রয়োজনে, নাকি নিজেদের রুটি রুজির প্রয়োজনে? নাকি বলা যায়, শাড়ির নাম বা বয়নকৌশল পরিবর্তন করার কথা কল্পনাও করতে পারেননি? তা তো বটেই, পারেননি বলেই না ফুলিয়ায় ‘টাঙ্গাইল তন্তুজীবী উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামের সমবায় প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়! টাঙ্গাইল শাড়ির সাকিন ‘টাঙ্গাইল’ এখানে ‘ব্র্যান্ড নেইম’। নইলে ভারতে বোনা শাড়ির নাম হতো ভিন্ন।
ফুলিয়ার তাঁতিদের প্রতি কোনো বিরূপতা নেই। তাঁরা বাংলাদেশ (টাঙ্গাইল) থেকে গেছেন, কিন্তু স্বতন্ত্র একটা ধারা কিন্তু গড়ে তুলেছেন, যা টাঙ্গাইলের ধারা থেকে গ্রহণ করা আবার আলাদাও। যেমন বেনারসির ডিজাইনে বাংলাদেশে শাড়ি বানালেও সেটা বেনারসির বড়জোর রেপ্লিকা। মানে-গুণে যদি ভালোও হয়, তবু আসল বেনারসি নয়। এভাবে না বুঝলে তো আপনি না বুঝে এঁড়েতর্ক করছেন। অথবা বুঝেশুনে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন।
টাঙ্গাইল শাড়ি ব্যক্তিনির্ভর নয়, তা স্থাননির্ভর কৃষ্টির পর্যায়ে উপনীত। পরম্পরা জ্ঞানের এই এক প্রক্রিয়া। কারিগরেরা সচরাচর বাপ-দাদার কারিগরি কৌশল, মুনশিয়ানা পুঁজি করেই এগোতে চান। এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। অভিবাসী হিসেবে ভূগোল টপকে পারিবারিক, আঞ্চলিক পেশার অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গের ‘বাঙাল তাঁতিরা’ টাঙ্গাইল শাড়ি বুনেছেন, বুনছেন, বুনবেন, এর উৎকর্ষ আরোপ করবেন—এমনটাই হোক। আর এটা হলে টাঙ্গাইলের মূলভূমিপুত্রসহ শাড়ির কারিগরেরা তথা ভূভাগের মানুষেরা গর্বিত হবেন বইকি।
ফুলিয়ার তন্তুবায়রা আমাদের স্বজন। তাঁরা পরম্পরা দক্ষতায় শাড়ি বোনেন কুরুম-ধলেশ্বরীর জল-তাপ হৃদয়ে ধারণ করে, রং আর নকশা মিশিয়ে। আমরা একই বয়ন কারিগরির উত্তরাধিকার, এখানেই আমাদের অভিন্নতা।
টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য। কারণ এলাকা, অঞ্চল বা নগর হিসেবে টাঙ্গাইলের অবস্থান পৃথিবীর আর কোথাও নয়। এ সহজ কথাটা বুঝতে হবে, মানতে হবে। এখানে কোনো বিতর্ক চলে না।
শফিকুল কবীর চন্দন, চারুশিল্পী, লেখক ও গবেষক

টাঙ্গাইল শাড়ি পাথরাইল, নলশোদা, বাজিতপুর, চণ্ডীর নাকি ফুলিয়া, কালনা, ধাত্রীগ্রাম, নবদ্বীপ, সমুদ্রগড়ের, নাকি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার? নাকি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া বা বর্ধমান জেলার?
কয়েক দিন ধরে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই সনদ নিয়ে বেশ কিছু গবেষক কথা বলছেন। কিন্তু যাঁদের শ্রম, ঘাম ও মেধায় এই বয়নশিল্প গড়ে উঠেছে, সেই কারিগরদের কোনো বয়ান নেই কেন? আসলে এই কারিগরদের জোরের জায়গাটা হলো তাঁদের পরম্পরা কাজের নির্ভীক দক্ষতা।
আমি নিজে কারিগর কিসিমের মানুষ। প্রায় তিরিশ বছর ধরে তাঁত বুনি। তবে পরম্পরা কারিগর নই। আমি ব্যক্তিগতভাবে কারিগরের স্বাধীনতা খর্বকারী এই ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য সনদের পক্ষে নই। থাকার কোনো কারণ অন্তত স্বাধীন কোনো কারুশিল্পীর নেই। এই যে হাজার বছর ধরে কারিগরেরা দিব্যি টিকে আছেন, তাঁদের জোরের জায়গাটা একবার যদি চিন্তা করি, তাহলে দেখব তাঁদের জিআই সনদ নিয়ে ভাবনা আর ভদ্রলোকীয়দের ভাবনার মধ্যে ফারাক আছে। সামগ্রিকভাবে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতির প্রতি কারিগরদের বিরোধিতা তাঁদের শৈল্পিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক জীবিকা, সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং বৈশ্বিক বাজারের জটিলতাগুলো মোকাবিলা করার ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রক কাঠামোর প্রভাব সম্পর্কে তাঁদের উদ্বেগকে প্রতিফলিত করে।
ক্রমেই জিআই সনদ যেন ভদ্রলোকীয় পরিভাষায় ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্বীকৃতির পাকা সড়ক ধরে উপস্থিত হচ্ছে! অথচ পণ্য আগে না উৎপাদক আগে—এর মীমাংসা তাদের কাছে কেমন? ফলে জিআই স্বীকৃতি মিললেও, হস্তচালিত তাঁতে বোনা টাঙ্গাইল শাড়ির ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে সেখানকার হস্ত তাঁত কারিগরদের।
ফলে জিআই সনদের বিরোধিতা মানে, বাজারে একচেটিয়া পণ্যের আধিপত্যকে বাতিল করে কারিগরি দক্ষতা এবং পণ্যের মানের উৎকর্ষের প্রতিযোগিতা, যা আবার উৎপাদন করণকৌশল হিসেবে সামাজিক সম্পদে পরিণত হচ্ছে। আমরা তো দেখছি কীভাবে বড় পুঁজি নীরবে, সরবে ও সবলে দখল করে সমগ্র উৎপাদক কারিগরি পেশার মানুষদের বাপ-দাদার পেশা থেকে উচ্ছেদ করে তথাকথিত অদক্ষ শ্রমিকে পরিণত করছে; নিজেদের অর্জিত পরম্পরা জ্ঞান, দক্ষতা বাজারের অহংকার হারিয়ে দিনমজুরে পরিণত হচ্ছে।
তাঁদের জন্য ভদ্রবিত্তরা কী চিন্তাভাবনা করছেন? আছে কোনো সরকারি হিসাব? স্বাধীনতার ৫২ বছরে উন্নয়ন উদ্বাস্তুদের জীবনে কী ঘটেছে, আমরা ভদ্রবিত্তরা কেউ জানি না। একটা মামুলি প্রশ্ন করে রাখা দরকার, এই সনদে কারিগরের কী লাভ? ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে, আপনার দেখা ২০-৪০ বছর আগের চাষি, কারিগরদের অবস্থা কি আগের মতো আছে? জাতিবাদী, আঞ্চলিকতার দুষ্টপাকে আকণ্ঠ নিমজ্জিত আরবান ভদ্রবিত্তের জন্য জিআই, মসলিন রিভাইভাল স্রেফ ‘লেবেঞ্চুস’ মাত্র নয় কি?
পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উৎসাহী মানুষজন টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই বিষয় নিয়ে যারপরনাই ভাবিত, কিন্তু তাঁরা এর কিয়দংশও যদি ভাবিত হতো—তাঁতিদের সব কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে পাওয়ারলুমের (যান্ত্রিক তাঁত) দৌরাত্ম্য! উচ্ছেদের আশঙ্কা মাথায় নিয়েও, রাষ্ট্র প্রতিমুহূর্তে তাঁর রুটি ও রুজি খেয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে জেনেও চাষি ও কারিগরেরা ঘাড় গুঁজেই কাজ করে যাচ্ছেন। কারণ তাঁরা তাঁদের কাজ ও পেশাকে ভালোবাসেন। তাঁরা তাঁদের পেশার প্রতি বিশ্বস্ত। তাই তো তাঁরা পারিবারিক অবশেষের পেশায় হাত চালাতে চালাতে বলেন, ‘কী করমু, বাপ-দাদার পেশা ছাড়তে তো পারি না, অন্য কোনো কাজ তো শিখি নাই!’
পশ্চিমবঙ্গের টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই পাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের ভদ্রবিত্তের লোকদের অতি উৎসাহের নিদান হলো, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদের ছিল, আমাদেরই থাকবে’গোছের আপ্তবাক্য! তাঁত বিষয়ে রাষ্ট্রের বৈমাত্রেয় নীতি আর পাওয়ারলুমের ঠেলায় টাঙ্গাইলে তাঁতি আছে কি নেই, সে বিষয়ে না জেনে শিক্ষিত ভদ্রবিত্তের কথায় আমরা অনেকে বেহুঁশ হয়ে পড়েছি।
আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে পেটেন্টস, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক বিভাগ (ডিপিডিটি) এই স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে। শত বা হাজার বছর যে পণ্যের এমন সনদ লাগল না, তা আজ কেন লাগছে? কারা এর জন্য বেশি উৎসাহী? বলা হয়, কোনো পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেলে পণ্যগুলো বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়। এই পণ্যগুলোর আলাদা কদর থাকে। ওই অঞ্চল বাণিজ্যিকভাবে পণ্যটি উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পায়।
এবার দেখা যাক জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন রেজিস্ট্রি দিয়েছে যে ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি ইন্ডিয়া, তাদের ওয়েবসাইটে যেসব তথ্য জুড়ে দিয়েছে, তা খুব আগ্রহোদ্দীপক। যেমন ভৌগোলিক নির্দেশক বিষয় হিসেবে ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব বেঙ্গল’ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রশ্ন এই ‘বেঙ্গল’ কোথায়? ভারতবর্ষে অফিশিয়ালি ‘বেঙ্গল’ বলে কোন জায়গাকে চিহ্নিত করা হচ্ছে? আসলে ফাঁকিটাই বা কোথায়? ফলে বাণিজ্য বুদ্ধির চক্রে কিছু গোলমাল হয়ে থাকতে পারে। সত্যই কি তাই নয়? এ মিথ্যাচার নাকি অতি উৎসাহী কর্মকর্তাদের অজ্ঞতা?
শ্রী রবীন্দ্রনাথ রায় ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি যে নোটারি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেছেন, সেখানে উল্লিখিত ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব বেঙ্গল’।নথিতে ম্যাপ যুক্ত করে, সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল’। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে ওয়েস্ট বেঙ্গল বাদ দিয়ে বেঙ্গল হয়েছে। আর বাংলায় করা হয়েছে ‘বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি’।
৭০২ নম্বর আবেদনপত্রের বিপরীতে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য আবেদনে জুড়ে দেওয়া ‘রিপোর্ট অন টাঙ্গাইল শাড়ি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল, স্টেটমেন্ট অব কেস’-এ বলা হচ্ছে, ‘ইট মে বি সারপ্রাইজিং টু নোট দ্যাট টাঙ্গাইল শাড়ি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ডিড নট কাম ফ্রম টাঙ্গাইল ইন ইস্টওয়েস্ট (নাও বাংলাদেশ), র্যাদার ইট ইজ এ হাইব্রিড অব শান্তিপুর ডিজাইন অ্যান্ড ঢাকা-টাঙ্গাইল’।
‘বেঙ্গল’ যদি হাইব্রিডই হবে তাহলে আসলের নকল হিসেবে এখানে টাঙ্গাইল নাম ব্যবহারের ন্যায্যতা থাকে কি? বুঝতে হবে কাজটি হাইব্রিড হলেও, ভৌগোলিক স্থান-নাম হিসেবে টাঙ্গাইল হাইব্রিড নয়, এই যা রক্ষে! এবার আসা যাক কতিপয় ভাষ্যের ব্যবচ্ছেদে। অনেকে মধ্যপন্থায় আশ্রয় খোঁজে, ‘কাঁটাতার পেরিয়ে টাঙ্গাইলের যে তাঁতিরা এপারে এসেছেন, তাঁরাও বুকের ভেতর জন্মের ভূমি টাঙ্গাইলকে লালন করেন, তাঁদেরও স্বত্ব পাওয়ার অধিকার আছে। দুই দেশেই থাকুক স্বত্ব।’ এই মধ্যপন্থা মাঝটুকুতে ভরসা রাখে, আগে-পিছে দায় নিতে জানে না।
বিবিসি বাংলা অনলাইনের বরাতে পাওয়া আরও কিছু খোঁড়া যুক্তির নমুনা—‘অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে মুর্শিদাবাদ জেলার বালুচর এলাকায় এই শাড়ির জন্ম হলেও, পরবর্তীকালে বন্যার কারণে বালুচরি তাঁতিরা বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে চলে আসেন। পরে সেখানে এই শাড়ির প্রসার ঘটে।’ আর ‘স্থানান্তরিত হলেও বালুচরি শাড়ি “বিষ্ণুপুরি” বা অন্য কোনো নাম পরিগ্রহ করেনি; বরং বালুচরি নামেই জিআই পেয়েছে’ বলে জানান ফুলিয়ার এক তাঁতশিল্প গবেষক। খুবই খোঁড়া যুক্তি! বালুচরে অবশিষ্ট তাঁতিরা ছিলেন নাকি সবাই চলে এসেছিলেন বিষ্ণুপুরে? আর বালুচর ও বিষ্ণুপুর দুটি আলাদা সার্বভৌম দেশের জায়গা তো নয়!
আরেকজন বলছেন, দেশভাগের বলি হয়ে ভারতে চলে এলেও ‘টাঙ্গাইল’ শব্দটি ছিল বসাক তাঁতিদের অস্থিমজ্জাগত। ফলে উদ্বাস্তু এই তাঁতিরা নিজেদের বয়নীকৃত শাড়ির নাম বা বয়নকৌশল পরিবর্তন করার কথা কল্পনাও করেননি। এই যে কল্পনাও করেননি তা কি টাঙ্গাইল শাড়ির প্রয়োজনে, নাকি নিজেদের রুটি রুজির প্রয়োজনে? নাকি বলা যায়, শাড়ির নাম বা বয়নকৌশল পরিবর্তন করার কথা কল্পনাও করতে পারেননি? তা তো বটেই, পারেননি বলেই না ফুলিয়ায় ‘টাঙ্গাইল তন্তুজীবী উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামের সমবায় প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়! টাঙ্গাইল শাড়ির সাকিন ‘টাঙ্গাইল’ এখানে ‘ব্র্যান্ড নেইম’। নইলে ভারতে বোনা শাড়ির নাম হতো ভিন্ন।
ফুলিয়ার তাঁতিদের প্রতি কোনো বিরূপতা নেই। তাঁরা বাংলাদেশ (টাঙ্গাইল) থেকে গেছেন, কিন্তু স্বতন্ত্র একটা ধারা কিন্তু গড়ে তুলেছেন, যা টাঙ্গাইলের ধারা থেকে গ্রহণ করা আবার আলাদাও। যেমন বেনারসির ডিজাইনে বাংলাদেশে শাড়ি বানালেও সেটা বেনারসির বড়জোর রেপ্লিকা। মানে-গুণে যদি ভালোও হয়, তবু আসল বেনারসি নয়। এভাবে না বুঝলে তো আপনি না বুঝে এঁড়েতর্ক করছেন। অথবা বুঝেশুনে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন।
টাঙ্গাইল শাড়ি ব্যক্তিনির্ভর নয়, তা স্থাননির্ভর কৃষ্টির পর্যায়ে উপনীত। পরম্পরা জ্ঞানের এই এক প্রক্রিয়া। কারিগরেরা সচরাচর বাপ-দাদার কারিগরি কৌশল, মুনশিয়ানা পুঁজি করেই এগোতে চান। এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। অভিবাসী হিসেবে ভূগোল টপকে পারিবারিক, আঞ্চলিক পেশার অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গের ‘বাঙাল তাঁতিরা’ টাঙ্গাইল শাড়ি বুনেছেন, বুনছেন, বুনবেন, এর উৎকর্ষ আরোপ করবেন—এমনটাই হোক। আর এটা হলে টাঙ্গাইলের মূলভূমিপুত্রসহ শাড়ির কারিগরেরা তথা ভূভাগের মানুষেরা গর্বিত হবেন বইকি।
ফুলিয়ার তন্তুবায়রা আমাদের স্বজন। তাঁরা পরম্পরা দক্ষতায় শাড়ি বোনেন কুরুম-ধলেশ্বরীর জল-তাপ হৃদয়ে ধারণ করে, রং আর নকশা মিশিয়ে। আমরা একই বয়ন কারিগরির উত্তরাধিকার, এখানেই আমাদের অভিন্নতা।
টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য। কারণ এলাকা, অঞ্চল বা নগর হিসেবে টাঙ্গাইলের অবস্থান পৃথিবীর আর কোথাও নয়। এ সহজ কথাটা বুঝতে হবে, মানতে হবে। এখানে কোনো বিতর্ক চলে না।
শফিকুল কবীর চন্দন, চারুশিল্পী, লেখক ও গবেষক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

টাঙ্গাইল শাড়ি পাথরাইল, নলশোদা, বাজিতপুর, চণ্ডীর নাকি ফুলিয়া, কালনা, ধাত্রীগ্রাম, নবদ্বীপ, সমুদ্রগড়ের, নাকি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার? নাকি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া বা বর্ধমান জেলার?
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

টাঙ্গাইল শাড়ি পাথরাইল, নলশোদা, বাজিতপুর, চণ্ডীর নাকি ফুলিয়া, কালনা, ধাত্রীগ্রাম, নবদ্বীপ, সমুদ্রগড়ের, নাকি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার? নাকি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া বা বর্ধমান জেলার?
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

টাঙ্গাইল শাড়ি পাথরাইল, নলশোদা, বাজিতপুর, চণ্ডীর নাকি ফুলিয়া, কালনা, ধাত্রীগ্রাম, নবদ্বীপ, সমুদ্রগড়ের, নাকি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার? নাকি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া বা বর্ধমান জেলার?
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

টাঙ্গাইল শাড়ি পাথরাইল, নলশোদা, বাজিতপুর, চণ্ডীর নাকি ফুলিয়া, কালনা, ধাত্রীগ্রাম, নবদ্বীপ, সমুদ্রগড়ের, নাকি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার? নাকি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া বা বর্ধমান জেলার?
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫