Ajker Patrika

১৫ দিনও চলে না পণ্য

মান্দি ডি কস্তা, ঢাকা
Thumbnail image

ভোর ছয়টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে পারভীন আক্তার। সকাল নয়টার দিকে ডিলারের লোকজন এসে সিরিয়াল নম্বর টুকে নেন। পারভীনের ডাক আসবে ৫৮ নম্বরে। রাজধানীর বাসাবো বাজারে গতকাল খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় ওএমএসের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন পারভীন।

আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘সিরিয়াল যেহেতু পাইছি, এখন শিউর ডাকবে।’ পারভীন জানান, ৩০ টাকা কেজি দরে পাঁচ কেজি চাল, আর ১৮ টাকা দরে পাঁচ কেজি আটা কিনলে কিছুটা সাশ্রয় হয়। মাসে চারবার এভাবে পণ্য কিনতে পারেন। তবে এত অল্প পণ্যে পুরো মাস চলে না তাঁর।

নিজের দুর্দশার কথা জানিয়ে পারভীন বলেন, ‘আমার স্বামী প্রাইভেট কার চালায়। মাসে বেতন ১৬ হাজার টাকা। তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, আলাদা সংসার করছেন। মেজ মেয়ে এসএসসি পাস করেছে। আর ছোট ছেলে ক্লাস সেভেনে পড়ছে। মাসে বাসা ভাড়ায় সাড়ে ৮ হাজার টাকা চলে যায়। বাকি টাকা দিয়ে তো সংসার চালানো কষ্ট।’

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য মাসে কার্ডের মাধ্যমে পরিবারপ্রতি লিটারে ২২০ টাকায় ২ লিটার তেল, ১৩০ টাকায় ২ কেজি ডাল, ৫৫ টাকায় ১ কেজি চিনি, ৪০ টাকায় ২ কেজি পেঁয়াজ দিচ্ছে। বাসাবো বাজারে টিসিবির দোকানে সকাল ১০টায় পণ্য নেওয়ার জন্য কার্ড জমা দিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন মো. মোক্তার হোসাইন।

আজকের পত্রিকাকে মোক্তার বলেন, ‘সাইকেল মেরামতের দোকানে কাজ করে মাসে ১১ হাজার টাকা পাই। চারজনের সংসার চলে টিসিবির পণ্যে। তবে একবার পণ্য কিনলে ১৫ দিনও যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছিল মাসে দুইবার পণ্য দিতে। কিন্তু এরা একবার করেই দিতাছে।’ মাসে অন্তত দুইবার পণ্য দিলে সংসারে চাপ কমে আসবে বলে জানান মোক্তার।

টিসিবির এই দোকানে পণ্য বিক্রির দায়িত্বে থাকা হাবিবুর রহমান মুন্না বলেন, `এখানে কার্ডের মাধ্যমে পণ্য দেওয়া হয়। দুইবার পণ্য নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা কার্ড জমা রাখি। কার্ডে প্রত্যেকের মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকে।’ বাসাবোর দোকানটিতে বর্তমানে দুই হাজার জনের কাছে পণ্য বিক্রি করা হয়। চলতি মাসেই আরও এক হাজার জনের নতুন কার্ড করা হবে বলে জানান মুন্না।

এদিকে রামপুরার টিভি রোডে টিসিবির পণ্য নিতে আসা আলী হোসাইন বলেন, চারজনের সংসারে এগুলা দিয়া ১০ দিনও যায় না। পাশে থাকা বেশ কয়েকজন একই কথা বলেন। আলী হোসাইন জানান, তাঁরা গত মাসের পণ্য নিতে এসেছেন। এই মাসের পণ্য এখনো দোকানে আসেনি।

এদিকে বেলা ২টায় বাসাবোর ওএমএসের লাইনে দেখা যায়, কয়েকজন চাল ও আটা না পেয়ে ঘোরাঘুরি করছেন। তাঁদের একজন খাদিজা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা মোট আটজন চাল পাইনি। সকাল ১০টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি। তারা বলছে, পণ্য কাল এসে নিতে।’

খাদিজা আক্তার বলেন, ‘আমার পরিবারে মাসে ৩০ কেজি চাল লাগে। এখানে দাঁড়ালে মাসে বড় জোর ১৫ থেকে ২০ কেজি পাওয়া যায়। আমার স্বামী অসুস্থ, সে কাজ করতে পারে না। আমি আরবি পড়িয়ে সংসার চালাই। সরকার আমাকে প্রতিদিন ১ কেজি করে মাসে ৩০ কেজি চাল একবারে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিক। এতে বারবার লাইনে দাঁড়ানোরও প্রয়োজন হবে না।’

বাসাবোতে ওএমএসের পণ্য বণ্টনের দায়িত্বে থাকা মো. বাবুল হোসাইন বলেন, `সপ্তাহে দুই দিন এখানে চাল ও আটা দেওয়া হয়। এক দিনে ১ হাজার ৫০০ কেজি চাল ও এক হাজার কেজি আটা আমরা দিতে পারি। এখানে টিসিবির মতো কার্ড নেই। তাই যাদের চাহিদা বেশি তারা দুই দিনও নিয়ে যায়। আর এত মুখ তো খেয়াল রাখা সম্ভব হয় না। পণ্য শেষ হয়ে গেলে অনেকেই খালি হাতে ফিরে যায়।’

টিসিবির মিডিয়া মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির আজকের পত্রিকাকে জানান, ১৫ থেকে ২০ দিন চলতে পারে এ লক্ষ্য নিয়ে নিম্ন আয়ের এক কোটি পরিবারের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। টিসিবির পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

সামগ্রিক বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এক কোটি পরিবারের কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার কথা যে বলা হচ্ছে, বাস্তবে সবাই পাচ্ছে না। তা ছাড়া উপকারভোগী সংখ্যাও বাড়াতে হবে। বাড়াতে হবে পণ্যের পরিমাণও। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলে সংকট মোকাবিলা করা সহজ হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

বিয়ে করলেন সারজিস আলম

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়ছে শ্রীলঙ্কা, ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ কোথায় দেখবেন

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

সাবেক শিক্ষার্থীর প্রাইভেট কারে ধাক্কা, জাবিতে ১২ বাস আটকে ক্ষতিপূরণ আদায় ছাত্রদলের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত