Ajker Patrika

বয়স চল্লিশ, স্থির থাকুন

অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
বয়স চল্লিশ, স্থির থাকুন

পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি বৈশ্বিক মানচিত্রে অবহেলিত। যদিও মিডলাইফ ক্রাইসিস মানসিক রোগ বলে চিহ্নিত নয়, তবু দেখা যায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পুরুষ অবচেতনভাবে এই ক্রান্তিকাল পার করেন।

জীবনের এই পর্যায়ে পুরুষের নতুন মাত্রায় স্ট্রেস, হতাশা ও অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরে। ৩০ বছরের শেষের দিক থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত একজন পুরুষ এই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু পুরুষেরা নিজেরাই ‘কাপুরুষ’ হওয়ার ভয়ে নিজেই নিজের কাছে এই অভিজ্ঞতা স্বীকার করতে চান না।

যা ঘটে মিডলাইফ ক্রাইসিসে 
এ সময় পুরুষেরা তাঁদের সাফল্য ও ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদন শুরু করেন। জীবনের রোম্যান্টিক ও অর্থনৈতিক মানেগুলো স্পষ্ট হয়ে যায়। কী পেয়েছি, কী পাইনি তার হিসাব মন চট করে মিলিয়ে ফেলতে পারে। শারীরিক সক্ষমতাও চমৎকার থাকে। নিজেকে নতুন করে গুছিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ নেই বলে ধীরে ধীরে শুরু হয় একঘেয়েমির পরিচিত পথচলা।

ফলে মাঝে মাঝে ক্যারিয়ার, বিয়ে বা স্বাস্থ্য নিয়ে অপ্রাপ্তির অস্বস্তি তৈরি হয়। পেছন থেকে ঘুরে দেখলে কারও কারও মনে হয়, জীবনে কিছু কিছু সিদ্ধান্ত পরিবর্তন খুব জরুরি, কারণ সময় কমে যাচ্ছে। উদ্য়ম কমে যায়। চুল পড়ে যাচ্ছে বলে সৌন্দর্য নিয়ে অস্থিরতা তৈরি হয়। জীবনে বৈচিত্র্য আনতে কেউ কেউ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কেও জড়িয়ে যান। কারণ এ সময় তরুণকালের মতো ক্ষমতা ও অর্থের সীমাবদ্ধতা নেই। 

এই মিডলাইফ ক্রাইসিস বিষণ্নতায় পরিণত হতে পারে।

মিডলাইফ ক্রাইসিসের লক্ষণ

  • খাদ্যাভ্যাস ও ঘুমের অভ্যাসের পরিবর্তন।
  • আগের আনন্দ নিয়ে করা কাজগুলোতে আনন্দ খুঁজে না পাওয়া।
  • ক্লান্তি লাগা। কিন্তু কেন ক্লান্তি লাগছে তার কারণ না জানা।
  • দুশ্চিন্তা।
  • হতাশাবোধ।
  • নিরাশবোধ।
  • অস্থিরতা।
  • খিটখিটে মেজাজ।
  • নিঃসঙ্গতা।
  • তৃপ্তি কমে যায়।
  • মাঝে মাঝে মৃত্যুচিন্তা ঢুকে পড়া।
  • নতুন কিছু করার উৎসাহ হারিয়ে যাওয়া।
  • মুড বদল হতে থাকে। কখনো রাগ, কখনো ভয়, কখনো দুঃখ অনুভব করে।
  • যৌন চাহিদায় পরিবর্তন আসা।
  • কোনো কারণ ছাড়াই নিজেকে দোষী ভাবা।
  • কখনো কখনো আত্মহত্যার চিন্তা কাজ করে।

সাধারণত দেখা যায়, যাঁরা মিডলাইফ ক্রাইসিসে ভুগছেন, তাঁরা তিনটি স্টেজের ভেতর দিয়ে যান।

ট্রিগার
কোনো একটি জিনিস টোকা দেয় বা ট্রিগার করে। যেমন—ঘনিষ্ঠজনের মৃত্যু বা অসুস্থতা, সন্তানের বাড়ি ছেড়ে হোস্টেলে থাকা বা বিয়ে করে আলাদা হয়ে যাওয়ার ঘটনা হতাশা তৈরি করতে পারে।

সংকটকাল
দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয় নিজের আন্তসম্পর্কগুলোতে, যাপিত জীবনের মূল্যবোধে। আমি কি আসলেই এ রকম? নিজেকে নিয়েও আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হই। যৌন আগ্রহ, রুচি, রোম্যান্টিক যোগাযোগগুলো কেমন যেন বদলে যেতে থাকে।

সমাধান
এই সংকটকাল কিছুদিন পর আবার একটা সমাধানের পথ নিজেই খুঁজে নেয়। তখন আবার একটু স্বস্তি বোধ করা এবং বারবার সংকট সমাধান ট্রিগার এই চক্রে ঘুরতে ঘুরতে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় শুরু হয়।

ভালো থাকতে ৫ উপায়
মনে রাখতে হবে, মিডলাইফ ক্রাইসিস ভালো এবং খারাপ দুই ধরনের আচরণের দিকেই মানুষকে ঠেলে দিতে পারে। ভালো আচরণে সমস্যা হয় না। সমস্যা হয় যখন আচরণ নেতিবাচক হয়, তখন। এ থেকে মুক্ত থাকতে পাঁচটি বিষয় মনে রাখুন। 

১. নিজের অনুভূতি দ্বারা প্রভাবিত হবেন না। আপনার ইমোশনের রিমোট কন্ট্রোলটি নিজের হাতে রাখুন। আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আপনার অনুভূতিগুলোর হাতে রিমোট কন্ট্রোল তুলে দেবেন না। 
২. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। কাজেই জীবনের প্রতিটি জিনিসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা একটি চমৎকার অ্যাটিচিউড। 
৩. খোলামেলা ও স্বচ্ছ আলোচনার মানুষ নির্বাচন প্রয়োজন। কাছের মানুষ বা বন্ধুদের মধ্যে হলে চমৎকার। যাঁকে নির্বাচন করবেন, তিনি যেন আপনার গোপন তথ্য আজকে জেনে ভবিষ্যতে আপনাকে ব্ল্যাকমেল না করে—এই জায়গাটা খেয়াল রাখবেন। যদি কাছের মানুষ বা বন্ধুদের কাছে সব খুলে বলতে না পারেন, তবে প্রয়োজনে কাউন্সেলর বা সাইকোথেরাপিস্টের সাহায্য নিন। 
৪. আপনি যা চাইছেন, সেটা বাস্তবসম্মত কি না, চাহিদা আর প্রাপ্যতা বাস্তবতার নিরিখে বুঝে নিন।
৫. ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে গোলমাল থাকলে মিটিয়ে ফেলুন। এ রকম সময়ে পরিবার কিন্তু খুব জরুরি।

যা করবেন, যা করবেন না

  • উত্তেজিত হবেন না। এটি কোনো সমাধান নয়।
  • অস্থির হয়ে সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেবেন না।
  • ভুল করে ফেললে ক্ষমা চাইবেন। ক্ষমা চাওয়া মানেই নত হওয়া নয়।
  • নিয়মিত হাঁটা, সুষম খাদ্য গ্রহণ, ঘুম, শারীরিক চেকআপ শুরু করা জরুরি।

অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া, চিকিৎসক, কাউন্সেলর সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বিডি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত