Ajker Patrika

পেঁয়াজ চাষের খরচও ওঠেনি

আজিজুর রহমান, চৌগাছা
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ৫৩
পেঁয়াজ চাষের খরচও ওঠেনি

প্রতি বছরের মতো এবারও লাভের আশায় পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন যশোরের চৌগাছার কৃষকেরা। কিন্তু এবার লাভ বা খরচের টাকা ওঠা তো দূরের কথা উল্টো বিঘাপ্রতি অন্তত ১৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে পেঁয়াজচাষিদের।

কৃষকেরা বলছেন, চাষের মৌসুমের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা ভারী বৃষ্টির কারণেই এই লোকসান গুনতে হচ্ছে। সে সময় বৃষ্টিতে বহু পেঁয়াজের খেত আংশিক নষ্ট হয়ে যায়। কারও কারও খেত পুরোপুরিই নষ্ট হয়ে যায়।

কিন্তু বৃষ্টিতে যাঁদের খেত আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁদের পেঁয়াজ উৎপাদন এবার একেবারেই কম হয়েছে। এ ছাড়া অন্য বছরের চেয়ে এবার বীজের দাম বেশি থাকায় উৎপাদন খরচও ছিল।

আর ফলন ওঠার পর দামও পড়ে গেছে। সবকিছু মিলে তাঁদের খরচার টাকাও এবার আর উঠছে না। এতে কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

উপজেলার বিভিন্ন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা পেঁয়াজ চাষে খরচ হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা।

অন্যান্য বছর বিঘাপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছি এক বিঘায়। তবে এ বছর ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের টানা বর্ষণে এবারে পর্যাপ্ত উৎপাদন হয়নি। বিঘাপ্রতি ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে।

গত কয়েক দিনে চৌগাছার পাইকারি বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১০০ টাকায়। সেই হাসাবে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম পড়ে ২২ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৮ টাকা। গত শুক্রবার পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল ২৩ থেকে ২৭ টাকা কেজি।

কৃষকদের হিসাব অনুযায়ী, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষের জন্য ৫ থেকে ৬ মণ বীজ দরকার হয়। এ বছর প্রতি মণ বীজ সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাবে পাঁচ মণ বীজে দাম পড়ে সাড়ে ১৭ হাজার টাকা। জমি চাষের খরচ ছিল ২ হাজার টাকা। রোপণ বাবদ খরচ পেড়েছে ৪ হাজার টাকা এবং সার-কীটনাশক বাবদ খরচ গেছে ৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া সেচ, নিড়ানি, পেঁয়াজ তোলাসহ আরও খরচ রয়েছে।

চৌগাছা পৌরসভার বিশ্বাসপাড়া গ্রামের চাষি টিপু সুলতান বলেন, ‘আমি দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। যাতে খরচ হয়েছে ৯২ হাজার টাকা। এখনো পেঁয়াজ ওঠানোর খরচ রয়েছে। দুই বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ পেঁয়াজ হবে ৬০ মণ।’

টিপু সুলতান বলেন, ‘শুক্রবারের বাজার দর অনুযায়ী যা বিক্রি হবে সর্বোচ্চ ৬৪ হাজার ৮০০ টাকায়। এতে দুই বিঘা পেঁয়াজে আমার ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লোকসান হবে।’

পাঁচবাড়িয়া গ্রামের মুকুল হোসেন বলেন, ‘আমি ২৭ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। এতে আমার সর্বোচ্চ ৩০ মণ পেঁয়াজ হবে। বাজার দর অনুযায়ী ৩০ হাজার ৮০০ টাকায় বেচতে পারব। ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারলে আমার খরচ উঠত।’

পেঁয়াজচাষি মুকুল হোসেন আরও বলেন, ‘অন্যান্য বছর পেঁয়াজের ফুল (কলি) বিক্রি করে জমির চাষ খরচ উঠে যেত। এ বছর পেঁয়াজের ফুলের দামও অনেক কম। সোম, বুধ ও শুক্রবার চৌগাছা পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের ফুল দুই থেকে তিন টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।’

চাষি ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা কম থাকাতেই এই মূল্যহ্রাস। এতে চাষিরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলেও জানান তাঁরা।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য প্রদানকারী উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলায় চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ হয় ৩২০ হেক্টর জমিতে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে যার ১০০ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘এর মধ্যে ২৫ হেক্টর জমির পেঁয়াজ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। আংশিক নষ্ট হয় ৭৫ হেক্টর জমির পেঁয়াজ। ফলে উপজেলার ৪০০ পেঁয়াজচাষি সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত