Ajker Patrika

স্বামীর অপেক্ষায় ১৭ বছর

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ১৬
Thumbnail image

২০০৪ সালে কোরবানির ঈদের কয়েক দিন পর বন্ধুর সঙ্গে বেরিয়ে নিখোঁজ হন যশোরের চৌগাছার যুবক আব্দুল মান্নান। এ ঘটনায় করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) অপহরণ মামলায় রূপান্তরের পর পাঁচ বছরের সাজাও হয়েছে তাঁর বন্ধু সোলাইমান হোসেনের। কিন্তু ১৭ বছর ধরে অপেক্ষা করেও স্বামীর সন্ধান পাননি চায়না বেগম। এমনকি ২০২০ সালে এ ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত সোলাইমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও তিনি লাপাত্তা আছেন।

জানা গেছে, আব্দুল মান্নান উপজেলার সিংহঝুলি ইউনিয়নের গরীবপুর গ্রামের মৃত সায়েদ আলীর এবং সোলামাইমান হোসেন একই গ্রামের মৃত জাহাবক্সের ছেলে। উভয়েই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কর্মী ছিলেন বলে পরিবার ও স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।

আব্দুল মান্নানের স্ত্রী চায়না বেগম, স্থানীয় বিএনপি নেতা এবং গ্রামবাসীদের সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালের কোরবানির ঈদের কয়েক দিন পর একদিন দুপুরে বন্ধু সোলাইমানের সঙ্গে নিজ বাড়ি থেকে বের হন দুই সন্তানের জনক আব্দুল মান্নান। এর পর আর তাঁর খোঁজ মেলেনি।

মান্নানের স্ত্রী চায়না বেগম বলেন, ‘সেদিন দুপুরের দিকে সোলইমানের সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান আব্দুল মান্নান। পরে সোলাইমান একা ফিরে আসে। মান্নান ফিরে না আসায় সে সময় শ্বশুর সায়েদ আলী চৌগাছা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। যেখানে সোলাইমানের নাম উল্লেখ করা হয়।’

চায়না বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী কোনো দিন বাড়ির বাইরে রাত কাটাত না। ১৭ বছর ধরে তাঁর অপেক্ষায় আছি। আজও ফিরে এলেন না। যেহেতু দীর্ঘ সময় পার হয়েছে, তাই ধরে নিচ্ছি তিনি বেঁচে নেই। তবুও আমার স্বামীর সঙ্গে কী ঘটেছে তা জানতে চাই।’

সাজাপ্রাপ্ত সোলাইমানের বড় ভাই সুলতান ওরফে ভাদুড়ি বলেন, ‘ছেলে নিখোঁজের ঘটনায় চৌগাছা থানায় সোলাইমানের বিরুদ্ধে আব্দুল মান্নানের বাবা সায়েদ আলী একটি জিডি করেন। বিষয়টি নিয়ে তখন ৫/৭ দিন খুব ঝামেলার সৃষ্টি হয়। সে সময়ের ক্ষমতাসীন দল বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের নেতারা গ্রামে একটি সভা করেন। সেখানে আমরা সোলাইমানকে হাজির করেছিলাম।’

তবে সেই সভায় অংশ নেওয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) গ্রাম পুলিশ (দফাদার) শাহাজাহান আলী জানিয়েছেন, ওই দিনের সভায় সোলাইমান উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর পরিবার সেদিন তাঁকে হাজির করেনি।

গ্রাম পুলিশ শাহাজাহান আলী আরও বলেন, ‘সেই থেকে আজ পর্যন্ত সোলাইমানের কোনো খোঁজ নেই। এমনকি নিজের বাবা-মায়ের মৃত্যুতেও সোলাইমানকে আসতে দেখা যায়নি।’

চৌগাছা থানা ও যশোর আদালত সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল মান্নান নিখোঁজের সেই জিডি পরে অপহরণ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। দোষ প্রমাণিত হওয়ায় ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর যুগ্ম ও জেলা দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালত সোলাইমানকে ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। পালাতক থকায় সোলাইমানের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তবে এখনো সোলাইমান গ্রেপ্তার হননি বা আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি।

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘১৭ বছর আগে আব্দুল মান্নান নিখোঁজের ঘটনায় তাঁর বন্ধু সোলাইমানের পাঁচ বছরের সাজা হয়েছে। কিন্তু তিনি পলাতক থাকায় এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত