মামুনুর রশীদ

মুক্তিযুদ্ধের পরে একুশে ফেব্রুয়ারির পঞ্চাশ বছর সমাপ্ত হলো এবার, একান্ন বছরে পড়েছে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি কেমন ছিল? স্বাধীনতার আনন্দ-বেদনা-অশ্রু—সবকিছু এসে মিশেছিল সেই ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ২৫ মার্চের রাতে ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে পাকিস্তানিরা একুশের মিনারকে ভেঙে দিয়ে সেখানে ভেবেছিল একটি মসজিদ হবে। পুরো নয় মাসে ওখানে মসজিদ করতে পারেনি, কিন্তু ধ্বংসযজ্ঞটা অটুট রেখেছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল এই মিনারগুলোই বাঙালির সব আন্দোলন এবং আকাঙ্ক্ষার প্রেরণাভূমি।
১৯৭২ সালে একুশের ভোরে সারা দেশেই প্রভাতফেরি এবং নানা আয়োজনের মধ্য দিয়েই সেটা শুরু হয়েছিল। আজকের মতো বইমেলা তখন গড়ে ওঠেনি, কিন্তু সেই একুশের চেতনা মানুষের স্বপ্ন সাধের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়েছিল। সেই সময়ে ছোটখাটো অনেক অনেক একুশের সংকলন প্রকাশ হয়েছিল। সেই সব লেখা এখন গবেষণার বিষয়।
একুশের চেতনায় আলোকিত হয়েছিল শিল্প-সাহিত্য। তার একটি বড় ক্ষেত্র তৈরি হলো—নাট্যশিল্পে। মুক্তিযুদ্ধের আগে এ দেশে নাট্যচর্চা ছিল অনিয়মিত। পাকিস্তানি শাসকদের কাছে রবীন্দ্রনাথ একটা বড় শত্রুতে পরিণত হয়েছিলেন। সেই সঙ্গে একটা বড় আক্রমণের বিষয় ছিল এ দেশের অনিয়মিত নাট্যচর্চা। যদিও সাতচল্লিশ সালের পর একটা নিয়মিত নাট্যচর্চার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, শিল্প সংকোচনের ফলে তা বেশি দূর এগোতে পারেনি।
একটা কড়া সেন্সর প্রথা আরোপ করেছিল নাটকের ওপর, আর এ দায়িত্ব দেওয়া ছিল পুলিশ বাহিনীর অধস্তন কর্মচারীর ওপর। এরা নাটক সেন্সর করত এবং যেসব ক্লাব নাট্যাভিনয়ের জন্য নাটকের বই বা পাণ্ডুলিপি জমা দিত, তা দেখার ভার ছিল পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন কর্মচারীর ওপর। খুব অবহেলায় এই বই বা পাণ্ডুলিপিটি তারা ফেলে রাখত। এমনও হয়েছে যে রাতে নাটক অভিনীত হবে, সন্ধ্যাবেলায় পাণ্ডুলিপিটি কেটেকুটে অভিনয়ের অনুমতি দেওয়া হতো। সেই সঙ্গে দেখা হতো সেই রাতটি জ্যোৎস্নালোকিত রাত কি না এবং আরেকটি অনুমতি প্রয়োজন হতো তা হলো, মাইক ব্যবহার। অবশ্য স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকেরা এটা মানতেন না।
সব সময়ই মানুষের আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটে শিল্প-সাহিত্যে। তাই দেখা যায় ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে জেলখানায় কারাবন্দী মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকটি অভিনীত হয়। হারিকেনের স্বল্পালোকে কয়েদিদের দিয়ে তিনি নাটকটি অভিনয় করান। যদিও নাটকটি মৌলিক নয়, কিন্তু এমনভাবে তিনি নাটকটি রচনা করেছিলেন, যা পূর্ব বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে মৌলিক বলেই বিবেচিত হতো। এখনো সেই নাটক অভিনীত হয়।
এবারে এ দেশের নাট্যচর্চার পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। আরণ্যক নাট্যদলের জন্ম ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। সেই সঙ্গে নাট্যচক্রেরও জন্ম এই সালেই। থিয়েটার, নাগরিকসহ বেশ কিছু নাট্যদলেরও পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। অনেকেই পঞ্চাশ বছর পূর্তি উৎসব করছে। বাইশ বছর হলো অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন উঠে গেছে। এর আগেই তা নানাভাবে শিথিল হয়েছে এবং ১৯৮৫ সাল থেকে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন সেন্সরবিহীন নাটক করে আসছে।
বাংলাদেশের সামরিক শাসকেরা দু-চারবার আইনটি প্রয়োগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এবারে আরণ্যকের নাট্য উৎসবে তাদের প্রযোজিত অনেক মঞ্চনাটক, পথনাটকের মধ্যে মাত্র নয়টি মৌলিক নাটক নিয়ে উৎসব সমাপ্ত করেছে। এর আগে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় পাঁচজন তরুণ নির্দেশকের দ্বারা পাঁচটি নতুন নাটকের উৎসব সমাপ্ত করেছে এবং পরে থিয়েটার অন্যান্য দলের বাইশটি নাটক নিয়ে আরও একটি নাট্য উৎসব শুরু করেছে। এর মধ্যে একটিমাত্র থিয়েটারের। যদিও থিয়েটার খণ্ডিত মমতাজ উদদীন আহমেদের অংশ। এ ছাড়া বাংলাদেশে এখন শত শত নাটক মঞ্চায়িত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
এটা স্বাধীনতার এক সুবর্ণ ফসল। পরাধীন দেশে এই শিল্প বিকশিত হতে পারেনি। যদিও এ বছর সাধারণ রঙ্গালয়ের দেড় শ বছর পূর্তি হচ্ছে। পরাধীন ভারতবর্ষের কলকাতায় ১৮৭২ সালে এই নাট্যযাত্রার শুরু, যখন জমিদারের বাগানবাড়ি, উন্মুক্ত স্থান থেকে নাগরিকদের জন্য নাট্যচর্চার সূচনা হয়, যেখানে টিকিটের বিনিময়ে নাটক অভিনীত হতে থাকে। একেবারে শুরুতেই এই রঙ্গালয়ের উদ্বোধন হয় ‘নীল দর্পণ’ নাটক নিয়ে। ইংরেজ নীলকরদের নিষ্ঠুরতার দলিল নীল দর্পণ। এই নাটক পড়লে বা দেখলে সেই সব নির্যাতনের চিত্র স্মরণ করে গা শিউরে ওঠে। সৌভাগ্যের বিষয়, দীনবন্ধু মিত্রের সেই নাটকটি প্রথম মুদ্রিত ও অভিনীত হয় ঢাকা শহরে যথাক্রমে ১৮৬০ ও ১৮৬১ সালে। এই ঢাকা শহরেই পূর্ববঙ্গ রঙ্গভূমি নামে একটি মঞ্চও অল্প কয়েক বছরের জন্য বেঁচে ছিল।
যা-ই হোক, এই যে বাংলাদেশে পঞ্চাশ বছর ধরে এত শত শত নাটক অভিনীত হলো, তার একটা বড় কারণ হলো মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা। দেশ স্বাধীন হলেও শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে ঘাপটি মেরে ছিল সেই নিয়ন্ত্রণকামী একদল দুর্বৃত্ত। যারা নাটককে বেশি দূর এগোতে দেয়নি। এর মধ্যে ছিল বেশ কিছু পাকিস্তানি আমলা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রথম সরকার নাটকের ওপর প্রমোদ কর উঠিয়ে দেয়। কিন্তু দেখা গেল কিছু আমলা এটাকে পুনরায় প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন। মনে পড়ে, আমরা কাগজপত্র নিয়ে অফিস-আদালতে ছোটাছুটি করে বিষয়টির একটি সুরাহা করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এরপর আমাদের দীর্ঘ সময় ধরে কোনো নাট্যমঞ্চও ছিল না। মহিলা সমিতি এবং গাইড হাউসের অপরিসর মঞ্চে নাটকের অভিনয় করেছি এবং ঢাকার বাইরেও একই ঘটনা ঘটেছে। আমলাতন্ত্রের একক সিদ্ধান্তে বিভিন্ন জায়গায় শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চ নির্মাণ করলেও সেগুলো অভিনয় উপযোগী হয়নি, রাজনৈতিক দলের সভা-সমিতির স্থান হয়ে গেছে।
গত শতাব্দীর শেষে ঢাকার কেন্দ্রস্থলে দুটি মঞ্চ নির্মিত হয়, কিন্তু ঢাকার বাইরে এ ধরনের মঞ্চ আর নির্মিত হয়নি। বহু অর্থ ব্যয়ে মহানগর মঞ্চটি বিশাল জায়গা নিয়ে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নির্মিত হলেও সেখানে অভিনয় করার কোনো সুযোগ তৈরি হলো না। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র বলেছিলেন, মঞ্চটি যাঁরা ব্যবহার করবেন তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই তা নির্মিত হবে। প্রচুর অর্থ ব্যয়ে মঞ্চটি নির্মাণ করার পর দেখা গেল তা একেবারেই অভিনয় উপযোগী নয়। পুরান ঢাকায় সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে জহির রায়হান মঞ্চ নামে একটি মঞ্চ নির্মিত হলো, কিন্তু ব্যবস্থাপনার প্রবল অবহেলার কারণে দু-চারটি নাট্য উৎসব হলেও তা আর অভিনয় উপযোগী থাকল না। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কথা হয়েছিল যে কমিউনিটি সেন্টারগুলো শুধু বিয়েবাড়ির কাজে ব্যবহার করা হয়, সেগুলোকেও নাট্যমঞ্চ হিসেবে দাঁড় করানো যায় কি না। দু-চারবার সে প্রচেষ্টা হলেও শেষ পর্যন্ত এটি আর কার্যকর হয়নি।
তারপর আছে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা। একবার নাটকের সমস্যাগুলো নিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এক সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম। আলোচনার একপর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘প্রায়োরিটির দিক থেকে আপনাদের এই নাচ, গান, নাটক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে খাদ্য। খাদ্য আমদানি করতে হয় তার জন্য টাকা লাগে, সেই টাকা কি আমরা নাচ, গান, নাটকের কাজে ব্যবহার করব?’ আমরা আমাদের যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে দুটিরই প্রয়োজন আছে। তবে মানুষ যদি সংস্কৃতিমান হয় তাহলে সে খাদ্যের প্রয়োজন মেটানোর পথ খুঁজে নেবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এসেছে সংস্কৃতি থেকে, সেই সংস্কৃতি রাজনীতির সঙ্গে মিলেমিশে একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিল। তখন ফুড ফর ওয়ার্কস নিয়ে কিছু লেখালেখিও করেছিলাম। পশ্চিমা দেশগুলো কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চালু করে তৃতীয় বিশ্বের মানুষগুলোকে প্রাণিজগতের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। মানুষ কি শুধুই খাবে? তার আর কোনো প্রয়োজন নেই? এখনো দুঃখজনক যে ফুড ফর ওয়ার্কসের বাংলা করে তার নাম দেওয়া হয়েছে কাবিখা। সাধারণ শ্রমিকেরা কাজ করেন। একজন শ্রমিক কিছু চাল নিয়ে ঘরে ফিরবেন, অনাহারী প্রাণীরা কিছু খাদ্য পাবে, কিন্তু তার সঙ্গে আর কিছুর প্রয়োজন নেই? এ নিয়ে বেশ কিছু নাটকেও আমরা সেই সময় অভিনয় করেছিলাম।
সংস্কৃতি না থাকলে কী হয়, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপন। সড়কে প্রতিদিন মানুষ মরছে দুর্ঘটনায়। চালকটির মধ্যে যদি রাস্তা ব্যবহারের সংস্কৃতি থাকত, তাহলে এ ধরনের মৃত্যু কখনোই সম্ভব হতো না। দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে যদি সংস্কৃতির চেতনা থাকত, তাহলে সমাজটা দুর্নীতিতে ভরে যেত না। একটি নাটক, সিনেমা বা গান শুনে যদি মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করত, তাহলে দেশটা আরও সুন্দর হতে পারত। মুক্তিযোদ্ধাদের বা তারও আগে যে সম্পর্ক তাদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল, তার একটা সুন্দর জীবন রচনাকে অনুপ্রাণিত করতে পারত। সংস্কৃতিকে অবহেলার কারণে আজকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি নেন। শিক্ষকেরা শ্রেণিকক্ষে না পড়িয়ে কোচিংয়ের মতো একটি ব্যবস্থা করে শিক্ষাকে ধ্বংস করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈরাজ্য চলছে, অথচ একদা খুব অল্প বেতনে শিক্ষকেরা শিক্ষার ক্ষেত্রে বড় বড় অবদান রেখেছেন। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার আলোকে কীভাবে সমুন্নত রেখেছিলেন।
১৮৭৮ সালে যখন নাটকের শিল্পীদের সমাজ উপেক্ষা করছিল, তখন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেন, নাটকে লোকশিক্ষা হয়। বাংলাদেশের উন্নত সংস্কৃতিকে লোকশিক্ষার কাজে খুব সহজেই ব্যবহার করা যেত। কিন্তু এ ভাবনা কারও কারও মধ্যে থাকলেও অর্থের পেছনে দৌড়ানো রাজনীতিক ও আমলাদের দুর্নীতি করার একটা বড় জায়গা তাঁরা খুঁজে নিয়েছেন শিক্ষায়। সংস্কৃতিকে অবহেলার কারণে সব ধরনের ব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে, অথচ খুব বেশি অর্থও যে প্রয়োজন হয়, তা নয়। এক কিলোমিটার হাইওয়ে তৈরিতে যে ব্যয় হয়, তার সমান অর্থ দিয়ে একটি ভালো মঞ্চ নির্মাণ করা যায়। ঠিক সেই ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের চেয়ে কম টাকা দিয়ে হাজার হাজার নাট্যকর্মীর জীবনধারণের উপায় করা যায়।
জানি, এসব বলে কোনো লাভ নেই। তবু শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা যদি একটুখানি ভাবেন, তাহলে একদিন না একদিন কাজটা হবেই। তবে নাটকের কোনো রথ উল্টো দিকে যাবে না, সেটা সামনের দিকেই এগিয়ে যাবেই।

মুক্তিযুদ্ধের পরে একুশে ফেব্রুয়ারির পঞ্চাশ বছর সমাপ্ত হলো এবার, একান্ন বছরে পড়েছে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি কেমন ছিল? স্বাধীনতার আনন্দ-বেদনা-অশ্রু—সবকিছু এসে মিশেছিল সেই ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ২৫ মার্চের রাতে ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে পাকিস্তানিরা একুশের মিনারকে ভেঙে দিয়ে সেখানে ভেবেছিল একটি মসজিদ হবে। পুরো নয় মাসে ওখানে মসজিদ করতে পারেনি, কিন্তু ধ্বংসযজ্ঞটা অটুট রেখেছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল এই মিনারগুলোই বাঙালির সব আন্দোলন এবং আকাঙ্ক্ষার প্রেরণাভূমি।
১৯৭২ সালে একুশের ভোরে সারা দেশেই প্রভাতফেরি এবং নানা আয়োজনের মধ্য দিয়েই সেটা শুরু হয়েছিল। আজকের মতো বইমেলা তখন গড়ে ওঠেনি, কিন্তু সেই একুশের চেতনা মানুষের স্বপ্ন সাধের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়েছিল। সেই সময়ে ছোটখাটো অনেক অনেক একুশের সংকলন প্রকাশ হয়েছিল। সেই সব লেখা এখন গবেষণার বিষয়।
একুশের চেতনায় আলোকিত হয়েছিল শিল্প-সাহিত্য। তার একটি বড় ক্ষেত্র তৈরি হলো—নাট্যশিল্পে। মুক্তিযুদ্ধের আগে এ দেশে নাট্যচর্চা ছিল অনিয়মিত। পাকিস্তানি শাসকদের কাছে রবীন্দ্রনাথ একটা বড় শত্রুতে পরিণত হয়েছিলেন। সেই সঙ্গে একটা বড় আক্রমণের বিষয় ছিল এ দেশের অনিয়মিত নাট্যচর্চা। যদিও সাতচল্লিশ সালের পর একটা নিয়মিত নাট্যচর্চার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, শিল্প সংকোচনের ফলে তা বেশি দূর এগোতে পারেনি।
একটা কড়া সেন্সর প্রথা আরোপ করেছিল নাটকের ওপর, আর এ দায়িত্ব দেওয়া ছিল পুলিশ বাহিনীর অধস্তন কর্মচারীর ওপর। এরা নাটক সেন্সর করত এবং যেসব ক্লাব নাট্যাভিনয়ের জন্য নাটকের বই বা পাণ্ডুলিপি জমা দিত, তা দেখার ভার ছিল পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন কর্মচারীর ওপর। খুব অবহেলায় এই বই বা পাণ্ডুলিপিটি তারা ফেলে রাখত। এমনও হয়েছে যে রাতে নাটক অভিনীত হবে, সন্ধ্যাবেলায় পাণ্ডুলিপিটি কেটেকুটে অভিনয়ের অনুমতি দেওয়া হতো। সেই সঙ্গে দেখা হতো সেই রাতটি জ্যোৎস্নালোকিত রাত কি না এবং আরেকটি অনুমতি প্রয়োজন হতো তা হলো, মাইক ব্যবহার। অবশ্য স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকেরা এটা মানতেন না।
সব সময়ই মানুষের আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটে শিল্প-সাহিত্যে। তাই দেখা যায় ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে জেলখানায় কারাবন্দী মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকটি অভিনীত হয়। হারিকেনের স্বল্পালোকে কয়েদিদের দিয়ে তিনি নাটকটি অভিনয় করান। যদিও নাটকটি মৌলিক নয়, কিন্তু এমনভাবে তিনি নাটকটি রচনা করেছিলেন, যা পূর্ব বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে মৌলিক বলেই বিবেচিত হতো। এখনো সেই নাটক অভিনীত হয়।
এবারে এ দেশের নাট্যচর্চার পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। আরণ্যক নাট্যদলের জন্ম ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। সেই সঙ্গে নাট্যচক্রেরও জন্ম এই সালেই। থিয়েটার, নাগরিকসহ বেশ কিছু নাট্যদলেরও পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। অনেকেই পঞ্চাশ বছর পূর্তি উৎসব করছে। বাইশ বছর হলো অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন উঠে গেছে। এর আগেই তা নানাভাবে শিথিল হয়েছে এবং ১৯৮৫ সাল থেকে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন সেন্সরবিহীন নাটক করে আসছে।
বাংলাদেশের সামরিক শাসকেরা দু-চারবার আইনটি প্রয়োগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এবারে আরণ্যকের নাট্য উৎসবে তাদের প্রযোজিত অনেক মঞ্চনাটক, পথনাটকের মধ্যে মাত্র নয়টি মৌলিক নাটক নিয়ে উৎসব সমাপ্ত করেছে। এর আগে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় পাঁচজন তরুণ নির্দেশকের দ্বারা পাঁচটি নতুন নাটকের উৎসব সমাপ্ত করেছে এবং পরে থিয়েটার অন্যান্য দলের বাইশটি নাটক নিয়ে আরও একটি নাট্য উৎসব শুরু করেছে। এর মধ্যে একটিমাত্র থিয়েটারের। যদিও থিয়েটার খণ্ডিত মমতাজ উদদীন আহমেদের অংশ। এ ছাড়া বাংলাদেশে এখন শত শত নাটক মঞ্চায়িত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
এটা স্বাধীনতার এক সুবর্ণ ফসল। পরাধীন দেশে এই শিল্প বিকশিত হতে পারেনি। যদিও এ বছর সাধারণ রঙ্গালয়ের দেড় শ বছর পূর্তি হচ্ছে। পরাধীন ভারতবর্ষের কলকাতায় ১৮৭২ সালে এই নাট্যযাত্রার শুরু, যখন জমিদারের বাগানবাড়ি, উন্মুক্ত স্থান থেকে নাগরিকদের জন্য নাট্যচর্চার সূচনা হয়, যেখানে টিকিটের বিনিময়ে নাটক অভিনীত হতে থাকে। একেবারে শুরুতেই এই রঙ্গালয়ের উদ্বোধন হয় ‘নীল দর্পণ’ নাটক নিয়ে। ইংরেজ নীলকরদের নিষ্ঠুরতার দলিল নীল দর্পণ। এই নাটক পড়লে বা দেখলে সেই সব নির্যাতনের চিত্র স্মরণ করে গা শিউরে ওঠে। সৌভাগ্যের বিষয়, দীনবন্ধু মিত্রের সেই নাটকটি প্রথম মুদ্রিত ও অভিনীত হয় ঢাকা শহরে যথাক্রমে ১৮৬০ ও ১৮৬১ সালে। এই ঢাকা শহরেই পূর্ববঙ্গ রঙ্গভূমি নামে একটি মঞ্চও অল্প কয়েক বছরের জন্য বেঁচে ছিল।
যা-ই হোক, এই যে বাংলাদেশে পঞ্চাশ বছর ধরে এত শত শত নাটক অভিনীত হলো, তার একটা বড় কারণ হলো মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা। দেশ স্বাধীন হলেও শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে ঘাপটি মেরে ছিল সেই নিয়ন্ত্রণকামী একদল দুর্বৃত্ত। যারা নাটককে বেশি দূর এগোতে দেয়নি। এর মধ্যে ছিল বেশ কিছু পাকিস্তানি আমলা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রথম সরকার নাটকের ওপর প্রমোদ কর উঠিয়ে দেয়। কিন্তু দেখা গেল কিছু আমলা এটাকে পুনরায় প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন। মনে পড়ে, আমরা কাগজপত্র নিয়ে অফিস-আদালতে ছোটাছুটি করে বিষয়টির একটি সুরাহা করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এরপর আমাদের দীর্ঘ সময় ধরে কোনো নাট্যমঞ্চও ছিল না। মহিলা সমিতি এবং গাইড হাউসের অপরিসর মঞ্চে নাটকের অভিনয় করেছি এবং ঢাকার বাইরেও একই ঘটনা ঘটেছে। আমলাতন্ত্রের একক সিদ্ধান্তে বিভিন্ন জায়গায় শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চ নির্মাণ করলেও সেগুলো অভিনয় উপযোগী হয়নি, রাজনৈতিক দলের সভা-সমিতির স্থান হয়ে গেছে।
গত শতাব্দীর শেষে ঢাকার কেন্দ্রস্থলে দুটি মঞ্চ নির্মিত হয়, কিন্তু ঢাকার বাইরে এ ধরনের মঞ্চ আর নির্মিত হয়নি। বহু অর্থ ব্যয়ে মহানগর মঞ্চটি বিশাল জায়গা নিয়ে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নির্মিত হলেও সেখানে অভিনয় করার কোনো সুযোগ তৈরি হলো না। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র বলেছিলেন, মঞ্চটি যাঁরা ব্যবহার করবেন তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই তা নির্মিত হবে। প্রচুর অর্থ ব্যয়ে মঞ্চটি নির্মাণ করার পর দেখা গেল তা একেবারেই অভিনয় উপযোগী নয়। পুরান ঢাকায় সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে জহির রায়হান মঞ্চ নামে একটি মঞ্চ নির্মিত হলো, কিন্তু ব্যবস্থাপনার প্রবল অবহেলার কারণে দু-চারটি নাট্য উৎসব হলেও তা আর অভিনয় উপযোগী থাকল না। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কথা হয়েছিল যে কমিউনিটি সেন্টারগুলো শুধু বিয়েবাড়ির কাজে ব্যবহার করা হয়, সেগুলোকেও নাট্যমঞ্চ হিসেবে দাঁড় করানো যায় কি না। দু-চারবার সে প্রচেষ্টা হলেও শেষ পর্যন্ত এটি আর কার্যকর হয়নি।
তারপর আছে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা। একবার নাটকের সমস্যাগুলো নিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এক সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম। আলোচনার একপর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘প্রায়োরিটির দিক থেকে আপনাদের এই নাচ, গান, নাটক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে খাদ্য। খাদ্য আমদানি করতে হয় তার জন্য টাকা লাগে, সেই টাকা কি আমরা নাচ, গান, নাটকের কাজে ব্যবহার করব?’ আমরা আমাদের যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে দুটিরই প্রয়োজন আছে। তবে মানুষ যদি সংস্কৃতিমান হয় তাহলে সে খাদ্যের প্রয়োজন মেটানোর পথ খুঁজে নেবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এসেছে সংস্কৃতি থেকে, সেই সংস্কৃতি রাজনীতির সঙ্গে মিলেমিশে একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিল। তখন ফুড ফর ওয়ার্কস নিয়ে কিছু লেখালেখিও করেছিলাম। পশ্চিমা দেশগুলো কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চালু করে তৃতীয় বিশ্বের মানুষগুলোকে প্রাণিজগতের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। মানুষ কি শুধুই খাবে? তার আর কোনো প্রয়োজন নেই? এখনো দুঃখজনক যে ফুড ফর ওয়ার্কসের বাংলা করে তার নাম দেওয়া হয়েছে কাবিখা। সাধারণ শ্রমিকেরা কাজ করেন। একজন শ্রমিক কিছু চাল নিয়ে ঘরে ফিরবেন, অনাহারী প্রাণীরা কিছু খাদ্য পাবে, কিন্তু তার সঙ্গে আর কিছুর প্রয়োজন নেই? এ নিয়ে বেশ কিছু নাটকেও আমরা সেই সময় অভিনয় করেছিলাম।
সংস্কৃতি না থাকলে কী হয়, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপন। সড়কে প্রতিদিন মানুষ মরছে দুর্ঘটনায়। চালকটির মধ্যে যদি রাস্তা ব্যবহারের সংস্কৃতি থাকত, তাহলে এ ধরনের মৃত্যু কখনোই সম্ভব হতো না। দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে যদি সংস্কৃতির চেতনা থাকত, তাহলে সমাজটা দুর্নীতিতে ভরে যেত না। একটি নাটক, সিনেমা বা গান শুনে যদি মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করত, তাহলে দেশটা আরও সুন্দর হতে পারত। মুক্তিযোদ্ধাদের বা তারও আগে যে সম্পর্ক তাদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল, তার একটা সুন্দর জীবন রচনাকে অনুপ্রাণিত করতে পারত। সংস্কৃতিকে অবহেলার কারণে আজকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি নেন। শিক্ষকেরা শ্রেণিকক্ষে না পড়িয়ে কোচিংয়ের মতো একটি ব্যবস্থা করে শিক্ষাকে ধ্বংস করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈরাজ্য চলছে, অথচ একদা খুব অল্প বেতনে শিক্ষকেরা শিক্ষার ক্ষেত্রে বড় বড় অবদান রেখেছেন। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার আলোকে কীভাবে সমুন্নত রেখেছিলেন।
১৮৭৮ সালে যখন নাটকের শিল্পীদের সমাজ উপেক্ষা করছিল, তখন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেন, নাটকে লোকশিক্ষা হয়। বাংলাদেশের উন্নত সংস্কৃতিকে লোকশিক্ষার কাজে খুব সহজেই ব্যবহার করা যেত। কিন্তু এ ভাবনা কারও কারও মধ্যে থাকলেও অর্থের পেছনে দৌড়ানো রাজনীতিক ও আমলাদের দুর্নীতি করার একটা বড় জায়গা তাঁরা খুঁজে নিয়েছেন শিক্ষায়। সংস্কৃতিকে অবহেলার কারণে সব ধরনের ব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে, অথচ খুব বেশি অর্থও যে প্রয়োজন হয়, তা নয়। এক কিলোমিটার হাইওয়ে তৈরিতে যে ব্যয় হয়, তার সমান অর্থ দিয়ে একটি ভালো মঞ্চ নির্মাণ করা যায়। ঠিক সেই ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের চেয়ে কম টাকা দিয়ে হাজার হাজার নাট্যকর্মীর জীবনধারণের উপায় করা যায়।
জানি, এসব বলে কোনো লাভ নেই। তবু শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা যদি একটুখানি ভাবেন, তাহলে একদিন না একদিন কাজটা হবেই। তবে নাটকের কোনো রথ উল্টো দিকে যাবে না, সেটা সামনের দিকেই এগিয়ে যাবেই।

মামুনুর রশীদ

মুক্তিযুদ্ধের পরে একুশে ফেব্রুয়ারির পঞ্চাশ বছর সমাপ্ত হলো এবার, একান্ন বছরে পড়েছে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি কেমন ছিল? স্বাধীনতার আনন্দ-বেদনা-অশ্রু—সবকিছু এসে মিশেছিল সেই ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ২৫ মার্চের রাতে ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে পাকিস্তানিরা একুশের মিনারকে ভেঙে দিয়ে সেখানে ভেবেছিল একটি মসজিদ হবে। পুরো নয় মাসে ওখানে মসজিদ করতে পারেনি, কিন্তু ধ্বংসযজ্ঞটা অটুট রেখেছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল এই মিনারগুলোই বাঙালির সব আন্দোলন এবং আকাঙ্ক্ষার প্রেরণাভূমি।
১৯৭২ সালে একুশের ভোরে সারা দেশেই প্রভাতফেরি এবং নানা আয়োজনের মধ্য দিয়েই সেটা শুরু হয়েছিল। আজকের মতো বইমেলা তখন গড়ে ওঠেনি, কিন্তু সেই একুশের চেতনা মানুষের স্বপ্ন সাধের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়েছিল। সেই সময়ে ছোটখাটো অনেক অনেক একুশের সংকলন প্রকাশ হয়েছিল। সেই সব লেখা এখন গবেষণার বিষয়।
একুশের চেতনায় আলোকিত হয়েছিল শিল্প-সাহিত্য। তার একটি বড় ক্ষেত্র তৈরি হলো—নাট্যশিল্পে। মুক্তিযুদ্ধের আগে এ দেশে নাট্যচর্চা ছিল অনিয়মিত। পাকিস্তানি শাসকদের কাছে রবীন্দ্রনাথ একটা বড় শত্রুতে পরিণত হয়েছিলেন। সেই সঙ্গে একটা বড় আক্রমণের বিষয় ছিল এ দেশের অনিয়মিত নাট্যচর্চা। যদিও সাতচল্লিশ সালের পর একটা নিয়মিত নাট্যচর্চার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, শিল্প সংকোচনের ফলে তা বেশি দূর এগোতে পারেনি।
একটা কড়া সেন্সর প্রথা আরোপ করেছিল নাটকের ওপর, আর এ দায়িত্ব দেওয়া ছিল পুলিশ বাহিনীর অধস্তন কর্মচারীর ওপর। এরা নাটক সেন্সর করত এবং যেসব ক্লাব নাট্যাভিনয়ের জন্য নাটকের বই বা পাণ্ডুলিপি জমা দিত, তা দেখার ভার ছিল পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন কর্মচারীর ওপর। খুব অবহেলায় এই বই বা পাণ্ডুলিপিটি তারা ফেলে রাখত। এমনও হয়েছে যে রাতে নাটক অভিনীত হবে, সন্ধ্যাবেলায় পাণ্ডুলিপিটি কেটেকুটে অভিনয়ের অনুমতি দেওয়া হতো। সেই সঙ্গে দেখা হতো সেই রাতটি জ্যোৎস্নালোকিত রাত কি না এবং আরেকটি অনুমতি প্রয়োজন হতো তা হলো, মাইক ব্যবহার। অবশ্য স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকেরা এটা মানতেন না।
সব সময়ই মানুষের আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটে শিল্প-সাহিত্যে। তাই দেখা যায় ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে জেলখানায় কারাবন্দী মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকটি অভিনীত হয়। হারিকেনের স্বল্পালোকে কয়েদিদের দিয়ে তিনি নাটকটি অভিনয় করান। যদিও নাটকটি মৌলিক নয়, কিন্তু এমনভাবে তিনি নাটকটি রচনা করেছিলেন, যা পূর্ব বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে মৌলিক বলেই বিবেচিত হতো। এখনো সেই নাটক অভিনীত হয়।
এবারে এ দেশের নাট্যচর্চার পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। আরণ্যক নাট্যদলের জন্ম ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। সেই সঙ্গে নাট্যচক্রেরও জন্ম এই সালেই। থিয়েটার, নাগরিকসহ বেশ কিছু নাট্যদলেরও পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। অনেকেই পঞ্চাশ বছর পূর্তি উৎসব করছে। বাইশ বছর হলো অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন উঠে গেছে। এর আগেই তা নানাভাবে শিথিল হয়েছে এবং ১৯৮৫ সাল থেকে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন সেন্সরবিহীন নাটক করে আসছে।
বাংলাদেশের সামরিক শাসকেরা দু-চারবার আইনটি প্রয়োগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এবারে আরণ্যকের নাট্য উৎসবে তাদের প্রযোজিত অনেক মঞ্চনাটক, পথনাটকের মধ্যে মাত্র নয়টি মৌলিক নাটক নিয়ে উৎসব সমাপ্ত করেছে। এর আগে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় পাঁচজন তরুণ নির্দেশকের দ্বারা পাঁচটি নতুন নাটকের উৎসব সমাপ্ত করেছে এবং পরে থিয়েটার অন্যান্য দলের বাইশটি নাটক নিয়ে আরও একটি নাট্য উৎসব শুরু করেছে। এর মধ্যে একটিমাত্র থিয়েটারের। যদিও থিয়েটার খণ্ডিত মমতাজ উদদীন আহমেদের অংশ। এ ছাড়া বাংলাদেশে এখন শত শত নাটক মঞ্চায়িত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
এটা স্বাধীনতার এক সুবর্ণ ফসল। পরাধীন দেশে এই শিল্প বিকশিত হতে পারেনি। যদিও এ বছর সাধারণ রঙ্গালয়ের দেড় শ বছর পূর্তি হচ্ছে। পরাধীন ভারতবর্ষের কলকাতায় ১৮৭২ সালে এই নাট্যযাত্রার শুরু, যখন জমিদারের বাগানবাড়ি, উন্মুক্ত স্থান থেকে নাগরিকদের জন্য নাট্যচর্চার সূচনা হয়, যেখানে টিকিটের বিনিময়ে নাটক অভিনীত হতে থাকে। একেবারে শুরুতেই এই রঙ্গালয়ের উদ্বোধন হয় ‘নীল দর্পণ’ নাটক নিয়ে। ইংরেজ নীলকরদের নিষ্ঠুরতার দলিল নীল দর্পণ। এই নাটক পড়লে বা দেখলে সেই সব নির্যাতনের চিত্র স্মরণ করে গা শিউরে ওঠে। সৌভাগ্যের বিষয়, দীনবন্ধু মিত্রের সেই নাটকটি প্রথম মুদ্রিত ও অভিনীত হয় ঢাকা শহরে যথাক্রমে ১৮৬০ ও ১৮৬১ সালে। এই ঢাকা শহরেই পূর্ববঙ্গ রঙ্গভূমি নামে একটি মঞ্চও অল্প কয়েক বছরের জন্য বেঁচে ছিল।
যা-ই হোক, এই যে বাংলাদেশে পঞ্চাশ বছর ধরে এত শত শত নাটক অভিনীত হলো, তার একটা বড় কারণ হলো মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা। দেশ স্বাধীন হলেও শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে ঘাপটি মেরে ছিল সেই নিয়ন্ত্রণকামী একদল দুর্বৃত্ত। যারা নাটককে বেশি দূর এগোতে দেয়নি। এর মধ্যে ছিল বেশ কিছু পাকিস্তানি আমলা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রথম সরকার নাটকের ওপর প্রমোদ কর উঠিয়ে দেয়। কিন্তু দেখা গেল কিছু আমলা এটাকে পুনরায় প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন। মনে পড়ে, আমরা কাগজপত্র নিয়ে অফিস-আদালতে ছোটাছুটি করে বিষয়টির একটি সুরাহা করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এরপর আমাদের দীর্ঘ সময় ধরে কোনো নাট্যমঞ্চও ছিল না। মহিলা সমিতি এবং গাইড হাউসের অপরিসর মঞ্চে নাটকের অভিনয় করেছি এবং ঢাকার বাইরেও একই ঘটনা ঘটেছে। আমলাতন্ত্রের একক সিদ্ধান্তে বিভিন্ন জায়গায় শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চ নির্মাণ করলেও সেগুলো অভিনয় উপযোগী হয়নি, রাজনৈতিক দলের সভা-সমিতির স্থান হয়ে গেছে।
গত শতাব্দীর শেষে ঢাকার কেন্দ্রস্থলে দুটি মঞ্চ নির্মিত হয়, কিন্তু ঢাকার বাইরে এ ধরনের মঞ্চ আর নির্মিত হয়নি। বহু অর্থ ব্যয়ে মহানগর মঞ্চটি বিশাল জায়গা নিয়ে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নির্মিত হলেও সেখানে অভিনয় করার কোনো সুযোগ তৈরি হলো না। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র বলেছিলেন, মঞ্চটি যাঁরা ব্যবহার করবেন তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই তা নির্মিত হবে। প্রচুর অর্থ ব্যয়ে মঞ্চটি নির্মাণ করার পর দেখা গেল তা একেবারেই অভিনয় উপযোগী নয়। পুরান ঢাকায় সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে জহির রায়হান মঞ্চ নামে একটি মঞ্চ নির্মিত হলো, কিন্তু ব্যবস্থাপনার প্রবল অবহেলার কারণে দু-চারটি নাট্য উৎসব হলেও তা আর অভিনয় উপযোগী থাকল না। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কথা হয়েছিল যে কমিউনিটি সেন্টারগুলো শুধু বিয়েবাড়ির কাজে ব্যবহার করা হয়, সেগুলোকেও নাট্যমঞ্চ হিসেবে দাঁড় করানো যায় কি না। দু-চারবার সে প্রচেষ্টা হলেও শেষ পর্যন্ত এটি আর কার্যকর হয়নি।
তারপর আছে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা। একবার নাটকের সমস্যাগুলো নিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এক সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম। আলোচনার একপর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘প্রায়োরিটির দিক থেকে আপনাদের এই নাচ, গান, নাটক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে খাদ্য। খাদ্য আমদানি করতে হয় তার জন্য টাকা লাগে, সেই টাকা কি আমরা নাচ, গান, নাটকের কাজে ব্যবহার করব?’ আমরা আমাদের যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে দুটিরই প্রয়োজন আছে। তবে মানুষ যদি সংস্কৃতিমান হয় তাহলে সে খাদ্যের প্রয়োজন মেটানোর পথ খুঁজে নেবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এসেছে সংস্কৃতি থেকে, সেই সংস্কৃতি রাজনীতির সঙ্গে মিলেমিশে একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিল। তখন ফুড ফর ওয়ার্কস নিয়ে কিছু লেখালেখিও করেছিলাম। পশ্চিমা দেশগুলো কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চালু করে তৃতীয় বিশ্বের মানুষগুলোকে প্রাণিজগতের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। মানুষ কি শুধুই খাবে? তার আর কোনো প্রয়োজন নেই? এখনো দুঃখজনক যে ফুড ফর ওয়ার্কসের বাংলা করে তার নাম দেওয়া হয়েছে কাবিখা। সাধারণ শ্রমিকেরা কাজ করেন। একজন শ্রমিক কিছু চাল নিয়ে ঘরে ফিরবেন, অনাহারী প্রাণীরা কিছু খাদ্য পাবে, কিন্তু তার সঙ্গে আর কিছুর প্রয়োজন নেই? এ নিয়ে বেশ কিছু নাটকেও আমরা সেই সময় অভিনয় করেছিলাম।
সংস্কৃতি না থাকলে কী হয়, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপন। সড়কে প্রতিদিন মানুষ মরছে দুর্ঘটনায়। চালকটির মধ্যে যদি রাস্তা ব্যবহারের সংস্কৃতি থাকত, তাহলে এ ধরনের মৃত্যু কখনোই সম্ভব হতো না। দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে যদি সংস্কৃতির চেতনা থাকত, তাহলে সমাজটা দুর্নীতিতে ভরে যেত না। একটি নাটক, সিনেমা বা গান শুনে যদি মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করত, তাহলে দেশটা আরও সুন্দর হতে পারত। মুক্তিযোদ্ধাদের বা তারও আগে যে সম্পর্ক তাদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল, তার একটা সুন্দর জীবন রচনাকে অনুপ্রাণিত করতে পারত। সংস্কৃতিকে অবহেলার কারণে আজকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি নেন। শিক্ষকেরা শ্রেণিকক্ষে না পড়িয়ে কোচিংয়ের মতো একটি ব্যবস্থা করে শিক্ষাকে ধ্বংস করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈরাজ্য চলছে, অথচ একদা খুব অল্প বেতনে শিক্ষকেরা শিক্ষার ক্ষেত্রে বড় বড় অবদান রেখেছেন। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার আলোকে কীভাবে সমুন্নত রেখেছিলেন।
১৮৭৮ সালে যখন নাটকের শিল্পীদের সমাজ উপেক্ষা করছিল, তখন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেন, নাটকে লোকশিক্ষা হয়। বাংলাদেশের উন্নত সংস্কৃতিকে লোকশিক্ষার কাজে খুব সহজেই ব্যবহার করা যেত। কিন্তু এ ভাবনা কারও কারও মধ্যে থাকলেও অর্থের পেছনে দৌড়ানো রাজনীতিক ও আমলাদের দুর্নীতি করার একটা বড় জায়গা তাঁরা খুঁজে নিয়েছেন শিক্ষায়। সংস্কৃতিকে অবহেলার কারণে সব ধরনের ব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে, অথচ খুব বেশি অর্থও যে প্রয়োজন হয়, তা নয়। এক কিলোমিটার হাইওয়ে তৈরিতে যে ব্যয় হয়, তার সমান অর্থ দিয়ে একটি ভালো মঞ্চ নির্মাণ করা যায়। ঠিক সেই ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের চেয়ে কম টাকা দিয়ে হাজার হাজার নাট্যকর্মীর জীবনধারণের উপায় করা যায়।
জানি, এসব বলে কোনো লাভ নেই। তবু শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা যদি একটুখানি ভাবেন, তাহলে একদিন না একদিন কাজটা হবেই। তবে নাটকের কোনো রথ উল্টো দিকে যাবে না, সেটা সামনের দিকেই এগিয়ে যাবেই।

মুক্তিযুদ্ধের পরে একুশে ফেব্রুয়ারির পঞ্চাশ বছর সমাপ্ত হলো এবার, একান্ন বছরে পড়েছে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি কেমন ছিল? স্বাধীনতার আনন্দ-বেদনা-অশ্রু—সবকিছু এসে মিশেছিল সেই ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ২৫ মার্চের রাতে ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে পাকিস্তানিরা একুশের মিনারকে ভেঙে দিয়ে সেখানে ভেবেছিল একটি মসজিদ হবে। পুরো নয় মাসে ওখানে মসজিদ করতে পারেনি, কিন্তু ধ্বংসযজ্ঞটা অটুট রেখেছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল এই মিনারগুলোই বাঙালির সব আন্দোলন এবং আকাঙ্ক্ষার প্রেরণাভূমি।
১৯৭২ সালে একুশের ভোরে সারা দেশেই প্রভাতফেরি এবং নানা আয়োজনের মধ্য দিয়েই সেটা শুরু হয়েছিল। আজকের মতো বইমেলা তখন গড়ে ওঠেনি, কিন্তু সেই একুশের চেতনা মানুষের স্বপ্ন সাধের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়েছিল। সেই সময়ে ছোটখাটো অনেক অনেক একুশের সংকলন প্রকাশ হয়েছিল। সেই সব লেখা এখন গবেষণার বিষয়।
একুশের চেতনায় আলোকিত হয়েছিল শিল্প-সাহিত্য। তার একটি বড় ক্ষেত্র তৈরি হলো—নাট্যশিল্পে। মুক্তিযুদ্ধের আগে এ দেশে নাট্যচর্চা ছিল অনিয়মিত। পাকিস্তানি শাসকদের কাছে রবীন্দ্রনাথ একটা বড় শত্রুতে পরিণত হয়েছিলেন। সেই সঙ্গে একটা বড় আক্রমণের বিষয় ছিল এ দেশের অনিয়মিত নাট্যচর্চা। যদিও সাতচল্লিশ সালের পর একটা নিয়মিত নাট্যচর্চার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, শিল্প সংকোচনের ফলে তা বেশি দূর এগোতে পারেনি।
একটা কড়া সেন্সর প্রথা আরোপ করেছিল নাটকের ওপর, আর এ দায়িত্ব দেওয়া ছিল পুলিশ বাহিনীর অধস্তন কর্মচারীর ওপর। এরা নাটক সেন্সর করত এবং যেসব ক্লাব নাট্যাভিনয়ের জন্য নাটকের বই বা পাণ্ডুলিপি জমা দিত, তা দেখার ভার ছিল পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন কর্মচারীর ওপর। খুব অবহেলায় এই বই বা পাণ্ডুলিপিটি তারা ফেলে রাখত। এমনও হয়েছে যে রাতে নাটক অভিনীত হবে, সন্ধ্যাবেলায় পাণ্ডুলিপিটি কেটেকুটে অভিনয়ের অনুমতি দেওয়া হতো। সেই সঙ্গে দেখা হতো সেই রাতটি জ্যোৎস্নালোকিত রাত কি না এবং আরেকটি অনুমতি প্রয়োজন হতো তা হলো, মাইক ব্যবহার। অবশ্য স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকেরা এটা মানতেন না।
সব সময়ই মানুষের আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটে শিল্প-সাহিত্যে। তাই দেখা যায় ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে জেলখানায় কারাবন্দী মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকটি অভিনীত হয়। হারিকেনের স্বল্পালোকে কয়েদিদের দিয়ে তিনি নাটকটি অভিনয় করান। যদিও নাটকটি মৌলিক নয়, কিন্তু এমনভাবে তিনি নাটকটি রচনা করেছিলেন, যা পূর্ব বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে মৌলিক বলেই বিবেচিত হতো। এখনো সেই নাটক অভিনীত হয়।
এবারে এ দেশের নাট্যচর্চার পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। আরণ্যক নাট্যদলের জন্ম ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। সেই সঙ্গে নাট্যচক্রেরও জন্ম এই সালেই। থিয়েটার, নাগরিকসহ বেশ কিছু নাট্যদলেরও পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। অনেকেই পঞ্চাশ বছর পূর্তি উৎসব করছে। বাইশ বছর হলো অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন উঠে গেছে। এর আগেই তা নানাভাবে শিথিল হয়েছে এবং ১৯৮৫ সাল থেকে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন সেন্সরবিহীন নাটক করে আসছে।
বাংলাদেশের সামরিক শাসকেরা দু-চারবার আইনটি প্রয়োগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এবারে আরণ্যকের নাট্য উৎসবে তাদের প্রযোজিত অনেক মঞ্চনাটক, পথনাটকের মধ্যে মাত্র নয়টি মৌলিক নাটক নিয়ে উৎসব সমাপ্ত করেছে। এর আগে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় পাঁচজন তরুণ নির্দেশকের দ্বারা পাঁচটি নতুন নাটকের উৎসব সমাপ্ত করেছে এবং পরে থিয়েটার অন্যান্য দলের বাইশটি নাটক নিয়ে আরও একটি নাট্য উৎসব শুরু করেছে। এর মধ্যে একটিমাত্র থিয়েটারের। যদিও থিয়েটার খণ্ডিত মমতাজ উদদীন আহমেদের অংশ। এ ছাড়া বাংলাদেশে এখন শত শত নাটক মঞ্চায়িত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
এটা স্বাধীনতার এক সুবর্ণ ফসল। পরাধীন দেশে এই শিল্প বিকশিত হতে পারেনি। যদিও এ বছর সাধারণ রঙ্গালয়ের দেড় শ বছর পূর্তি হচ্ছে। পরাধীন ভারতবর্ষের কলকাতায় ১৮৭২ সালে এই নাট্যযাত্রার শুরু, যখন জমিদারের বাগানবাড়ি, উন্মুক্ত স্থান থেকে নাগরিকদের জন্য নাট্যচর্চার সূচনা হয়, যেখানে টিকিটের বিনিময়ে নাটক অভিনীত হতে থাকে। একেবারে শুরুতেই এই রঙ্গালয়ের উদ্বোধন হয় ‘নীল দর্পণ’ নাটক নিয়ে। ইংরেজ নীলকরদের নিষ্ঠুরতার দলিল নীল দর্পণ। এই নাটক পড়লে বা দেখলে সেই সব নির্যাতনের চিত্র স্মরণ করে গা শিউরে ওঠে। সৌভাগ্যের বিষয়, দীনবন্ধু মিত্রের সেই নাটকটি প্রথম মুদ্রিত ও অভিনীত হয় ঢাকা শহরে যথাক্রমে ১৮৬০ ও ১৮৬১ সালে। এই ঢাকা শহরেই পূর্ববঙ্গ রঙ্গভূমি নামে একটি মঞ্চও অল্প কয়েক বছরের জন্য বেঁচে ছিল।
যা-ই হোক, এই যে বাংলাদেশে পঞ্চাশ বছর ধরে এত শত শত নাটক অভিনীত হলো, তার একটা বড় কারণ হলো মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা। দেশ স্বাধীন হলেও শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে ঘাপটি মেরে ছিল সেই নিয়ন্ত্রণকামী একদল দুর্বৃত্ত। যারা নাটককে বেশি দূর এগোতে দেয়নি। এর মধ্যে ছিল বেশ কিছু পাকিস্তানি আমলা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রথম সরকার নাটকের ওপর প্রমোদ কর উঠিয়ে দেয়। কিন্তু দেখা গেল কিছু আমলা এটাকে পুনরায় প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন। মনে পড়ে, আমরা কাগজপত্র নিয়ে অফিস-আদালতে ছোটাছুটি করে বিষয়টির একটি সুরাহা করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এরপর আমাদের দীর্ঘ সময় ধরে কোনো নাট্যমঞ্চও ছিল না। মহিলা সমিতি এবং গাইড হাউসের অপরিসর মঞ্চে নাটকের অভিনয় করেছি এবং ঢাকার বাইরেও একই ঘটনা ঘটেছে। আমলাতন্ত্রের একক সিদ্ধান্তে বিভিন্ন জায়গায় শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চ নির্মাণ করলেও সেগুলো অভিনয় উপযোগী হয়নি, রাজনৈতিক দলের সভা-সমিতির স্থান হয়ে গেছে।
গত শতাব্দীর শেষে ঢাকার কেন্দ্রস্থলে দুটি মঞ্চ নির্মিত হয়, কিন্তু ঢাকার বাইরে এ ধরনের মঞ্চ আর নির্মিত হয়নি। বহু অর্থ ব্যয়ে মহানগর মঞ্চটি বিশাল জায়গা নিয়ে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নির্মিত হলেও সেখানে অভিনয় করার কোনো সুযোগ তৈরি হলো না। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র বলেছিলেন, মঞ্চটি যাঁরা ব্যবহার করবেন তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই তা নির্মিত হবে। প্রচুর অর্থ ব্যয়ে মঞ্চটি নির্মাণ করার পর দেখা গেল তা একেবারেই অভিনয় উপযোগী নয়। পুরান ঢাকায় সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে জহির রায়হান মঞ্চ নামে একটি মঞ্চ নির্মিত হলো, কিন্তু ব্যবস্থাপনার প্রবল অবহেলার কারণে দু-চারটি নাট্য উৎসব হলেও তা আর অভিনয় উপযোগী থাকল না। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কথা হয়েছিল যে কমিউনিটি সেন্টারগুলো শুধু বিয়েবাড়ির কাজে ব্যবহার করা হয়, সেগুলোকেও নাট্যমঞ্চ হিসেবে দাঁড় করানো যায় কি না। দু-চারবার সে প্রচেষ্টা হলেও শেষ পর্যন্ত এটি আর কার্যকর হয়নি।
তারপর আছে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা। একবার নাটকের সমস্যাগুলো নিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এক সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম। আলোচনার একপর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘প্রায়োরিটির দিক থেকে আপনাদের এই নাচ, গান, নাটক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে খাদ্য। খাদ্য আমদানি করতে হয় তার জন্য টাকা লাগে, সেই টাকা কি আমরা নাচ, গান, নাটকের কাজে ব্যবহার করব?’ আমরা আমাদের যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে দুটিরই প্রয়োজন আছে। তবে মানুষ যদি সংস্কৃতিমান হয় তাহলে সে খাদ্যের প্রয়োজন মেটানোর পথ খুঁজে নেবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এসেছে সংস্কৃতি থেকে, সেই সংস্কৃতি রাজনীতির সঙ্গে মিলেমিশে একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিল। তখন ফুড ফর ওয়ার্কস নিয়ে কিছু লেখালেখিও করেছিলাম। পশ্চিমা দেশগুলো কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চালু করে তৃতীয় বিশ্বের মানুষগুলোকে প্রাণিজগতের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। মানুষ কি শুধুই খাবে? তার আর কোনো প্রয়োজন নেই? এখনো দুঃখজনক যে ফুড ফর ওয়ার্কসের বাংলা করে তার নাম দেওয়া হয়েছে কাবিখা। সাধারণ শ্রমিকেরা কাজ করেন। একজন শ্রমিক কিছু চাল নিয়ে ঘরে ফিরবেন, অনাহারী প্রাণীরা কিছু খাদ্য পাবে, কিন্তু তার সঙ্গে আর কিছুর প্রয়োজন নেই? এ নিয়ে বেশ কিছু নাটকেও আমরা সেই সময় অভিনয় করেছিলাম।
সংস্কৃতি না থাকলে কী হয়, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপন। সড়কে প্রতিদিন মানুষ মরছে দুর্ঘটনায়। চালকটির মধ্যে যদি রাস্তা ব্যবহারের সংস্কৃতি থাকত, তাহলে এ ধরনের মৃত্যু কখনোই সম্ভব হতো না। দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে যদি সংস্কৃতির চেতনা থাকত, তাহলে সমাজটা দুর্নীতিতে ভরে যেত না। একটি নাটক, সিনেমা বা গান শুনে যদি মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করত, তাহলে দেশটা আরও সুন্দর হতে পারত। মুক্তিযোদ্ধাদের বা তারও আগে যে সম্পর্ক তাদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল, তার একটা সুন্দর জীবন রচনাকে অনুপ্রাণিত করতে পারত। সংস্কৃতিকে অবহেলার কারণে আজকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি নেন। শিক্ষকেরা শ্রেণিকক্ষে না পড়িয়ে কোচিংয়ের মতো একটি ব্যবস্থা করে শিক্ষাকে ধ্বংস করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈরাজ্য চলছে, অথচ একদা খুব অল্প বেতনে শিক্ষকেরা শিক্ষার ক্ষেত্রে বড় বড় অবদান রেখেছেন। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার আলোকে কীভাবে সমুন্নত রেখেছিলেন।
১৮৭৮ সালে যখন নাটকের শিল্পীদের সমাজ উপেক্ষা করছিল, তখন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেন, নাটকে লোকশিক্ষা হয়। বাংলাদেশের উন্নত সংস্কৃতিকে লোকশিক্ষার কাজে খুব সহজেই ব্যবহার করা যেত। কিন্তু এ ভাবনা কারও কারও মধ্যে থাকলেও অর্থের পেছনে দৌড়ানো রাজনীতিক ও আমলাদের দুর্নীতি করার একটা বড় জায়গা তাঁরা খুঁজে নিয়েছেন শিক্ষায়। সংস্কৃতিকে অবহেলার কারণে সব ধরনের ব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে, অথচ খুব বেশি অর্থও যে প্রয়োজন হয়, তা নয়। এক কিলোমিটার হাইওয়ে তৈরিতে যে ব্যয় হয়, তার সমান অর্থ দিয়ে একটি ভালো মঞ্চ নির্মাণ করা যায়। ঠিক সেই ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের চেয়ে কম টাকা দিয়ে হাজার হাজার নাট্যকর্মীর জীবনধারণের উপায় করা যায়।
জানি, এসব বলে কোনো লাভ নেই। তবু শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা যদি একটুখানি ভাবেন, তাহলে একদিন না একদিন কাজটা হবেই। তবে নাটকের কোনো রথ উল্টো দিকে যাবে না, সেটা সামনের দিকেই এগিয়ে যাবেই।


গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৫ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।


মুক্তিযুদ্ধের পরে একুশে ফেব্রুয়ারির পঞ্চাশ বছর সমাপ্ত হলো এবার, একান্ন বছরে পড়েছে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি কেমন ছিল? স্বাধীনতার আনন্দ-বেদনা-অশ্রু—সবকিছু এসে মিশেছিল সেই ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]


মুক্তিযুদ্ধের পরে একুশে ফেব্রুয়ারির পঞ্চাশ বছর সমাপ্ত হলো এবার, একান্ন বছরে পড়েছে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি কেমন ছিল? স্বাধীনতার আনন্দ-বেদনা-অশ্রু—সবকিছু এসে মিশেছিল সেই ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৫ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।


মুক্তিযুদ্ধের পরে একুশে ফেব্রুয়ারির পঞ্চাশ বছর সমাপ্ত হলো এবার, একান্ন বছরে পড়েছে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি কেমন ছিল? স্বাধীনতার আনন্দ-বেদনা-অশ্রু—সবকিছু এসে মিশেছিল সেই ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৫ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।


মুক্তিযুদ্ধের পরে একুশে ফেব্রুয়ারির পঞ্চাশ বছর সমাপ্ত হলো এবার, একান্ন বছরে পড়েছে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি কেমন ছিল? স্বাধীনতার আনন্দ-বেদনা-অশ্রু—সবকিছু এসে মিশেছিল সেই ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৫ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫