Ajker Patrika

ভবন নেই, মিলনায়তনে পাঠ

আব্দুর রব, মৌলভীবাজার
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২২, ১৫: ৩৮
ভবন নেই, মিলনায়তনে পাঠ

ভবন পরিত্যক্ত হয়েছে ১৫ মাস আগে। শ্রেণিকক্ষ না থাকায় স্কুল মিলনায়তনকে তিন ভাগ করে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে। এমন চিত্র জেলা শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত মৌলভীবাজার শিশু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে এখানে পাঠদান বন্ধ। ওই সময় লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। প্রকৌশল বিভাগ থেকে মৌখিকভাবে এই ভবন ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এদিকে করোনাকালে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর দুই ধাপে খুলে দেওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীরা স্কুল মিলনায়তনে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা যায়, তিনতলাবিশিষ্ট ভবন স্যাঁতসেঁতে হয়ে পলেস্তারা খসে পড়েছে। স্কুলের টিনশেড মিলনায়তনকে টিন ও কাপড় দিয়ে তিন ভাগ করে চলছে পাঠদান। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় গরমে গাদাগাদি করে বসেছে শিক্ষার্থীরা। ব্যাগসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখা তো দূরের কথা, শিক্ষার্থীরা স্বস্তিতে বসতেও পারছে না।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১২টি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন, সেখানে অস্থায়ী ও অনুপযোগী তিনটি শ্রেণিকক্ষে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে। এতে স্বস্তিতে নেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বেঞ্চে দুজনের জায়গায় চার-পাঁচ শিক্ষার্থী বসছে।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় তা লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। কিন্তু এখনো নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেই।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আখলাকুল আম্বিয়া জানান, শ্রেণিকক্ষ না থাকায় সেকশন করা যাচ্ছে না। মানসম্মত পাঠদানও সম্ভব হচ্ছে না। বেঞ্চে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের বসতে হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যবস্থাপনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এ শিশু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬২০। প্রাক-প্রাথমিকে আছে ৮৫, প্রথম শ্রেণিতে ১১৫, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৯৯, তৃতীয় শ্রেণিতে ৯৭, চতুর্থ শ্রেণিতে ১১৮ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ১০৬ জন।

সকালে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় এবং বিকেলে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রাক-প্রাথমিকের ক্লাস মেঝেতে করানোর কথা। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না। শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকায় অন্য শ্রেণির ক্লাসও ওই কক্ষে বেঞ্চ বসিয়ে নিতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুযায়ী শিক্ষকেরও সংকট রয়েছে। ৯ জন শিক্ষকের পদে বর্তমানে ক্লাস নিচ্ছেন ছয়জন।

অভিভাবক তমাল ফেরদৌস বলেন, ‘আমার সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত। এই পরিবেশে কীভাবে বাচ্চাদের লেখাপড়া হয়? নতুন ভবনও নির্মাণ করছে না। এক বেঞ্চে পাঁচজন পর্যন্ত বসছে। পড়ার পরিবেশ নেই।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাশ্বতী দাস বলেন, ভবনটি ক্লাস করার অযোগ্য। দেয়াল ও ছাদ থেকে প্লাস্টার খসে পড়ছে। বিমে ফাটল ধরেছে। সিঁড়ির ওপরও প্লাস্টার খসে পড়ছে। ক্লাসরুম ড্যামেজ।

এই শিক্ষক বলেন, ‘আমরা লিখিতভাবে জানানোর পর প্রকৌশল বিভাগ থেকে সয়েল টেস্ট করা হয়েছে। ম্যাপে আমাদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। এরপর আর কিছু হয়নি। ১২টি ক্লাসরুমের জায়গায় মাত্র তিনতে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী সামাল দিতে হচ্ছে।’

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, বাচ্চাদের গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সবার সমস্যা হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর মৌলভীবাজার সদর উপজেলা অফিস সূত্র জানা গেছে, ফিজিবিলিটি স্টাডি, সয়েল টেস্ট করে সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের অনুমোদন আসেনি।

মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ইতিমধ্যে সমস্যার কথা জানিয়ে এলজিইডির কাছে আবেদন করেছি। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কিছু জটিলতা থাকায় দেরি হচ্ছে। তবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত