চিররঞ্জন সরকার

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ২৪ দিন পর পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের স্বাধীনতার মতোই তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঘটনা। তিনি যদি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে না আসতেন আর পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা তাঁকে হত্যা করত, তাহলে আমরা আজকের এই বাংলাদেশ পেতাম কি না, সন্দেহ আছে। বঙ্গবন্ধুর সমালোচকদের কেউ কেউ এখনো বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি শাসকদের গ্রেপ্তারের সুযোগ না দিয়ে আত্মগোপন করতে পারতেন।
আত্মগোপনে থেকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে পারতেন। যাঁরা এ ধরনের কথা বলেন, তাঁরা আসলে সেই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা সম্পর্কে জানেন না। প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো, বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছেন সিংহ ও বীরের মতো। তিনি লুকোচুরি পছন্দ করতেন না। তিনি তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘আমি পালিয়ে থাকার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। কারণ আমি গোপন রাজনীতি পছন্দ করি না, আর বিশ্বাসও করি না (পৃ. ১৩৪)।’ ব্রিটিশ ধাঁচের সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছিল বঙ্গবন্ধুর পছন্দ।
আত্মগোপন না করে গ্রেপ্তার হওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তের একটি। তিনি সাংবিধানিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথে ছিলেন বলেই সেদিন আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন মিলেছিল। আর মুক্তিসংগ্রামে বিশ্বজনমত বাংলাদেশের পক্ষে ছিল।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হাতে গ্রেপ্তার হওয়া, পাকিস্তানের কারাগারে বন্দিত্ব, বন্দিদশা থেকে মুক্তি, মুক্তির পর লন্ডনে যাওয়া, সেখান থেকে দিল্লি হয়ে বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে সবার পর্যবেক্ষণ এক রকম নয়। তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় একাত্তরের ১ মার্চ থেকে বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার প্রতিটিই যথার্থ ছিল।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গ্রেপ্তার হওয়া সম্পর্কে ১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারি ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘সেদিন সন্ধ্যায় আমার বাড়ি পাকিস্তান সামরিক জান্তার কমান্ডো বাহিনী ঘেরাও করেছিল। ওরা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। প্রথমে ওরা ভেবেছিল, আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলে ওরা আমায় হত্যা করবে এবং প্রচার করে দেবে যে, ‘‘তারা যখন আমার সঙ্গে রাজনৈতিক আপসের আলোচনা করছিল, তখন দেশের চরমপন্থীরাই আমাকে হত্যা করেছে।’’ আমি বাড়ি থেকে বের হওয়া নিয়ে চিন্তা করলাম। আমি স্থির করলাম, আমি মরি, তবু আমার প্রিয় দেশবাসী রক্ষা পাক।...আমি ইচ্ছা করলে যেকোনো জায়গায় যেতে পারতাম। কিন্তু আমার দেশবাসীকে ছেড়ে আমি কেমন করে যাব? আমি তাদের নেতা। আমি সংগ্রাম করব। মৃত্যুবরণ করব। পালিয়ে যাব কেন? দেশবাসীর কাছে আমার আহ্বান ছিল তোমরা প্রতিরোধ গড়ে তোলো।...আমার মনের কথা ছিল, আজ আমি যদি আমার দেশের নেতা হিসেবে মাথা উঁচু রেখে মরতে পারি, তাহলে আমার দেশের মানুষের অন্তত লজ্জার কোনো কারণ থাকবে না। কিন্তু আমি ওদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে, আমার দেশবাসী পৃথিবীর সামনে আর মুখ তুলে দাঁড়াতে পারবে না। আমি মরি, তাও ভালো। তবু আমার দেশবাসীর যেন মর্যাদার কোনো হানি না ঘটে।’
রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর আত্মমর্যাদাবোধ এবং দেশবাসীর সম্মানকে তিনি যেভাবে দেখেছেন, তার তুলনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও মানুষের মনে ছিল শঙ্কা ও বিষাদের ছাপ। এ ছাড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের পুনর্গঠন ও প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শারীরিক উপস্থিতি ছিল অনিবার্য। সেদিন বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি যে কতটা প্রয়োজন ছিল, তা বর্তমান সময়ে বসে অনুভব করা যাবে না। তখন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অনেকেই মনে করেছিলেন, ‘আমরা সবাই রাজা’। কেউ কাউকে মানছিলেন না।
তরুণ নেতারা অস্থায়ী সরকারের কোনো কথা শুনছিলেন না। একটি নৈরাজ্যের মতো অবস্থা ছিল ২৫টি দিন। তিনি না এলে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র জমা দিতেন কি না, সন্দেহ ছিল। ভারতীয় সৈন্যরাও হয়তো অত তাড়াতাড়ি ফিরে যেত না। অনেক দেশের স্বীকৃতি পেতেও বেগ পেতে হতো। তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আরও সংহত হয়। ১০ জানুয়ারি আসলে বাঙালি জাতির স্বাধীনতাসংগ্রামের পরিপূর্ণতা লাভের দিন। এ দিন দেশবাসী তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে প্রাণভরে বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ উপভোগ করেন। এ দিন থেকে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রবেশ করে গণতন্ত্রের এক আলোকিত অভিযাত্রায়
ইতিহাসকে বিচার করতে হয় সময়ের নিরিখে। আজ বসে বসে হয়তো অনেক কথাই বলা যায়। কিন্তু সেদিনের ঘটনাগুলোকে মূল্যায়ন করতে হবে সেই সময়ের আলোকে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য রেহমান সোবহান সেই সময়ের মূল্যায়ন করে বলেছেন, ‘সাধারণ লোকজন তো শুধু মনে করেছে একটা যুদ্ধের মধ্যে আমরা স্বাধীন হয়ে গেছি। আমাদের আর ভাবনা-চিন্তা কী? আমাদের নাগালে সবকিছুই চলে আসবে। দেশের ওই সব সাধারণ লোকের মধ্যে এ ভাবনাটাই স্বাভাবিক ছিল। কারণ, বঙ্গবন্ধুর প্রতি জনগণের ভালোবাসা ছিল তীব্র। মানুষ মনে করত তিনি সবকিছু করে ফেলতে পারবেন।
সত্যিকার অর্থে ১৯৭২ সালে আমাদের অর্থনীতি পুরোপুরি ধ্বংস বা বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। আমাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার, রাস্তাঘাট ধ্বংস করে, দুটো বড় ব্রিজ পাকিস্তানিরা সাবোট্যাজ করে চলে যায়। হাইওয়েতে কোনো গাড়ি চলে না। যোগাযোগব্যবস্থা বলতে কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। ...প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য হিসেবে বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন, “তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দাঁড় করাও, অর্থাৎ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অ্যালোকেট করে রিভাইভ করো।’’ সব তো তখন আমার হাতেই ছিল। এসব কঠিন কাজ তিন বছরের মধ্যে যে কিছু একটা হয়েছে, এটা তো কল্পনার বাইরে, এত শিগগিরই আমরা কিছু একটা দাঁড় করাতে পেরেছিলাম, এটাই তো অনেক। তারপর তিন বছরের মধ্যে সবকিছু কি গোলাপবাগান হয়ে যাবে, এটা তো সম্ভব নয়। যত কিছু হয়েছে, সবই চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্যে হয়েছে। তবে হয়েছে অনেক কিছুই, ওটা তো সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য, তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন প্ল্যানিং কমিশন নিয়ে। তাঁর নজরে ছিল কীভাবে দেশের মজবুত অর্থনীতির ভিত রচনা করা যায়। তবে তাঁর আরও চাপ ছিল ডোনারের সঙ্গে, আমেরিকা তো ফুড শিপমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশে। ওই সময় ফুডের একটা সংকট বাইরে থেকে চলে আসে। ফলে সবকিছু তো তাঁকেই সামলাতে হচ্ছে। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে তখন আমরা এগোচ্ছিলাম। দেশ ও দেশের বাইরের নানা বৈরী পরিস্থিতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সামাল দিতে হচ্ছিল। তবে এর মধ্য থেকেও সবার সঙ্গে তিনি পারসোনাল সম্পর্ক বজায় রাখতেন। ...যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন, তবে সাড়ে তিন বছরের কষ্টের ফসলের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির মজবুত ভিত তৈরি হতো। সব তো ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশ যে পথে গেল, হয়তো সে পথে যেত না। তিনি দেশকে একটা পূর্ণতা দিতে পারতেন, এটা আমার স্পেকুলেশন। আমার মনে হয়, আরেকটা ইতিহাস হতো। এত সংকটের দিন থাকত না। এত মারামারি, এত কষ্ট, এত রক্তপাত হয়তো হতো না (বণিক বার্তা, ১০ জানুয়ারি ২০২০)।’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের রাজনীতি ক্রমেই অবক্ষয়গ্রস্ত হয়েছে। সুবিধাবাদিতা রাজনীতির মূল আদর্শ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দল, দেশ বা দেশের মানুষ নয়, সবার ওপরে স্থান পাচ্ছে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সুবিধা। এ জন্য এখন সবাই নেতা হতে মরিয়া। কর্মীর চেয়ে দলে এখন নেতা বেশি। অধিক নেতার সমারোহে মঞ্চও ভেঙে পড়ছে। গণমানুষের রাজনীতি, মানুষের জন্য আত্মত্যাগ ও স্বার্থত্যাগ, যা ছিল বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের আদর্শ, সেই রাজনীতি থেকে খোদ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ যেন সচেতনভাবে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে নিজেদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক দাবি করছেন।
বঙ্গবন্ধু তাঁর আত্মজীবনীতে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘তিনি সব সময় শোষকের বিরুদ্ধে, শোষিতের পক্ষে।’ এখনকার নেতাদের অনেকেই যেন উল্টো পথের যাত্রী।বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে এখন একদিকে যেমন অনেক উন্নয়ন ঘটছে, অন্যদিকে বাড়ছে ধনবৈষম্য। বঙ্গবন্ধু শোষিতের পক্ষে যেভাবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব কি সেটা সেভাবে করছেন? মঞ্চের শোভা ও ভিড় বাড়ানো স্বার্থপর নেতা দিয়ে আদৌ দলের বা দেশের কোনো উপকার হবে কি? বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন এই প্রশ্ন নিয়ে সবারই ভাবা দরকার।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ২৪ দিন পর পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের স্বাধীনতার মতোই তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঘটনা। তিনি যদি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে না আসতেন আর পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা তাঁকে হত্যা করত, তাহলে আমরা আজকের এই বাংলাদেশ পেতাম কি না, সন্দেহ আছে। বঙ্গবন্ধুর সমালোচকদের কেউ কেউ এখনো বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি শাসকদের গ্রেপ্তারের সুযোগ না দিয়ে আত্মগোপন করতে পারতেন।
আত্মগোপনে থেকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে পারতেন। যাঁরা এ ধরনের কথা বলেন, তাঁরা আসলে সেই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা সম্পর্কে জানেন না। প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো, বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছেন সিংহ ও বীরের মতো। তিনি লুকোচুরি পছন্দ করতেন না। তিনি তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘আমি পালিয়ে থাকার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। কারণ আমি গোপন রাজনীতি পছন্দ করি না, আর বিশ্বাসও করি না (পৃ. ১৩৪)।’ ব্রিটিশ ধাঁচের সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছিল বঙ্গবন্ধুর পছন্দ।
আত্মগোপন না করে গ্রেপ্তার হওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তের একটি। তিনি সাংবিধানিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথে ছিলেন বলেই সেদিন আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন মিলেছিল। আর মুক্তিসংগ্রামে বিশ্বজনমত বাংলাদেশের পক্ষে ছিল।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হাতে গ্রেপ্তার হওয়া, পাকিস্তানের কারাগারে বন্দিত্ব, বন্দিদশা থেকে মুক্তি, মুক্তির পর লন্ডনে যাওয়া, সেখান থেকে দিল্লি হয়ে বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে সবার পর্যবেক্ষণ এক রকম নয়। তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় একাত্তরের ১ মার্চ থেকে বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার প্রতিটিই যথার্থ ছিল।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গ্রেপ্তার হওয়া সম্পর্কে ১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারি ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘সেদিন সন্ধ্যায় আমার বাড়ি পাকিস্তান সামরিক জান্তার কমান্ডো বাহিনী ঘেরাও করেছিল। ওরা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। প্রথমে ওরা ভেবেছিল, আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলে ওরা আমায় হত্যা করবে এবং প্রচার করে দেবে যে, ‘‘তারা যখন আমার সঙ্গে রাজনৈতিক আপসের আলোচনা করছিল, তখন দেশের চরমপন্থীরাই আমাকে হত্যা করেছে।’’ আমি বাড়ি থেকে বের হওয়া নিয়ে চিন্তা করলাম। আমি স্থির করলাম, আমি মরি, তবু আমার প্রিয় দেশবাসী রক্ষা পাক।...আমি ইচ্ছা করলে যেকোনো জায়গায় যেতে পারতাম। কিন্তু আমার দেশবাসীকে ছেড়ে আমি কেমন করে যাব? আমি তাদের নেতা। আমি সংগ্রাম করব। মৃত্যুবরণ করব। পালিয়ে যাব কেন? দেশবাসীর কাছে আমার আহ্বান ছিল তোমরা প্রতিরোধ গড়ে তোলো।...আমার মনের কথা ছিল, আজ আমি যদি আমার দেশের নেতা হিসেবে মাথা উঁচু রেখে মরতে পারি, তাহলে আমার দেশের মানুষের অন্তত লজ্জার কোনো কারণ থাকবে না। কিন্তু আমি ওদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে, আমার দেশবাসী পৃথিবীর সামনে আর মুখ তুলে দাঁড়াতে পারবে না। আমি মরি, তাও ভালো। তবু আমার দেশবাসীর যেন মর্যাদার কোনো হানি না ঘটে।’
রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর আত্মমর্যাদাবোধ এবং দেশবাসীর সম্মানকে তিনি যেভাবে দেখেছেন, তার তুলনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও মানুষের মনে ছিল শঙ্কা ও বিষাদের ছাপ। এ ছাড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের পুনর্গঠন ও প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শারীরিক উপস্থিতি ছিল অনিবার্য। সেদিন বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি যে কতটা প্রয়োজন ছিল, তা বর্তমান সময়ে বসে অনুভব করা যাবে না। তখন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অনেকেই মনে করেছিলেন, ‘আমরা সবাই রাজা’। কেউ কাউকে মানছিলেন না।
তরুণ নেতারা অস্থায়ী সরকারের কোনো কথা শুনছিলেন না। একটি নৈরাজ্যের মতো অবস্থা ছিল ২৫টি দিন। তিনি না এলে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র জমা দিতেন কি না, সন্দেহ ছিল। ভারতীয় সৈন্যরাও হয়তো অত তাড়াতাড়ি ফিরে যেত না। অনেক দেশের স্বীকৃতি পেতেও বেগ পেতে হতো। তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আরও সংহত হয়। ১০ জানুয়ারি আসলে বাঙালি জাতির স্বাধীনতাসংগ্রামের পরিপূর্ণতা লাভের দিন। এ দিন দেশবাসী তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে প্রাণভরে বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ উপভোগ করেন। এ দিন থেকে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রবেশ করে গণতন্ত্রের এক আলোকিত অভিযাত্রায়
ইতিহাসকে বিচার করতে হয় সময়ের নিরিখে। আজ বসে বসে হয়তো অনেক কথাই বলা যায়। কিন্তু সেদিনের ঘটনাগুলোকে মূল্যায়ন করতে হবে সেই সময়ের আলোকে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য রেহমান সোবহান সেই সময়ের মূল্যায়ন করে বলেছেন, ‘সাধারণ লোকজন তো শুধু মনে করেছে একটা যুদ্ধের মধ্যে আমরা স্বাধীন হয়ে গেছি। আমাদের আর ভাবনা-চিন্তা কী? আমাদের নাগালে সবকিছুই চলে আসবে। দেশের ওই সব সাধারণ লোকের মধ্যে এ ভাবনাটাই স্বাভাবিক ছিল। কারণ, বঙ্গবন্ধুর প্রতি জনগণের ভালোবাসা ছিল তীব্র। মানুষ মনে করত তিনি সবকিছু করে ফেলতে পারবেন।
সত্যিকার অর্থে ১৯৭২ সালে আমাদের অর্থনীতি পুরোপুরি ধ্বংস বা বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। আমাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার, রাস্তাঘাট ধ্বংস করে, দুটো বড় ব্রিজ পাকিস্তানিরা সাবোট্যাজ করে চলে যায়। হাইওয়েতে কোনো গাড়ি চলে না। যোগাযোগব্যবস্থা বলতে কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। ...প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য হিসেবে বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন, “তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দাঁড় করাও, অর্থাৎ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অ্যালোকেট করে রিভাইভ করো।’’ সব তো তখন আমার হাতেই ছিল। এসব কঠিন কাজ তিন বছরের মধ্যে যে কিছু একটা হয়েছে, এটা তো কল্পনার বাইরে, এত শিগগিরই আমরা কিছু একটা দাঁড় করাতে পেরেছিলাম, এটাই তো অনেক। তারপর তিন বছরের মধ্যে সবকিছু কি গোলাপবাগান হয়ে যাবে, এটা তো সম্ভব নয়। যত কিছু হয়েছে, সবই চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্যে হয়েছে। তবে হয়েছে অনেক কিছুই, ওটা তো সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য, তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন প্ল্যানিং কমিশন নিয়ে। তাঁর নজরে ছিল কীভাবে দেশের মজবুত অর্থনীতির ভিত রচনা করা যায়। তবে তাঁর আরও চাপ ছিল ডোনারের সঙ্গে, আমেরিকা তো ফুড শিপমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশে। ওই সময় ফুডের একটা সংকট বাইরে থেকে চলে আসে। ফলে সবকিছু তো তাঁকেই সামলাতে হচ্ছে। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে তখন আমরা এগোচ্ছিলাম। দেশ ও দেশের বাইরের নানা বৈরী পরিস্থিতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সামাল দিতে হচ্ছিল। তবে এর মধ্য থেকেও সবার সঙ্গে তিনি পারসোনাল সম্পর্ক বজায় রাখতেন। ...যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন, তবে সাড়ে তিন বছরের কষ্টের ফসলের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির মজবুত ভিত তৈরি হতো। সব তো ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশ যে পথে গেল, হয়তো সে পথে যেত না। তিনি দেশকে একটা পূর্ণতা দিতে পারতেন, এটা আমার স্পেকুলেশন। আমার মনে হয়, আরেকটা ইতিহাস হতো। এত সংকটের দিন থাকত না। এত মারামারি, এত কষ্ট, এত রক্তপাত হয়তো হতো না (বণিক বার্তা, ১০ জানুয়ারি ২০২০)।’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের রাজনীতি ক্রমেই অবক্ষয়গ্রস্ত হয়েছে। সুবিধাবাদিতা রাজনীতির মূল আদর্শ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দল, দেশ বা দেশের মানুষ নয়, সবার ওপরে স্থান পাচ্ছে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সুবিধা। এ জন্য এখন সবাই নেতা হতে মরিয়া। কর্মীর চেয়ে দলে এখন নেতা বেশি। অধিক নেতার সমারোহে মঞ্চও ভেঙে পড়ছে। গণমানুষের রাজনীতি, মানুষের জন্য আত্মত্যাগ ও স্বার্থত্যাগ, যা ছিল বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের আদর্শ, সেই রাজনীতি থেকে খোদ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ যেন সচেতনভাবে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে নিজেদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক দাবি করছেন।
বঙ্গবন্ধু তাঁর আত্মজীবনীতে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘তিনি সব সময় শোষকের বিরুদ্ধে, শোষিতের পক্ষে।’ এখনকার নেতাদের অনেকেই যেন উল্টো পথের যাত্রী।বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে এখন একদিকে যেমন অনেক উন্নয়ন ঘটছে, অন্যদিকে বাড়ছে ধনবৈষম্য। বঙ্গবন্ধু শোষিতের পক্ষে যেভাবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব কি সেটা সেভাবে করছেন? মঞ্চের শোভা ও ভিড় বাড়ানো স্বার্থপর নেতা দিয়ে আদৌ দলের বা দেশের কোনো উপকার হবে কি? বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন এই প্রশ্ন নিয়ে সবারই ভাবা দরকার।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

চিররঞ্জন সরকার

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ২৪ দিন পর পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের স্বাধীনতার মতোই তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঘটনা। তিনি যদি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে না আসতেন আর পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা তাঁকে হত্যা করত, তাহলে আমরা আজকের এই বাংলাদেশ পেতাম কি না, সন্দেহ আছে। বঙ্গবন্ধুর সমালোচকদের কেউ কেউ এখনো বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি শাসকদের গ্রেপ্তারের সুযোগ না দিয়ে আত্মগোপন করতে পারতেন।
আত্মগোপনে থেকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে পারতেন। যাঁরা এ ধরনের কথা বলেন, তাঁরা আসলে সেই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা সম্পর্কে জানেন না। প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো, বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছেন সিংহ ও বীরের মতো। তিনি লুকোচুরি পছন্দ করতেন না। তিনি তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘আমি পালিয়ে থাকার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। কারণ আমি গোপন রাজনীতি পছন্দ করি না, আর বিশ্বাসও করি না (পৃ. ১৩৪)।’ ব্রিটিশ ধাঁচের সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছিল বঙ্গবন্ধুর পছন্দ।
আত্মগোপন না করে গ্রেপ্তার হওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তের একটি। তিনি সাংবিধানিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথে ছিলেন বলেই সেদিন আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন মিলেছিল। আর মুক্তিসংগ্রামে বিশ্বজনমত বাংলাদেশের পক্ষে ছিল।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হাতে গ্রেপ্তার হওয়া, পাকিস্তানের কারাগারে বন্দিত্ব, বন্দিদশা থেকে মুক্তি, মুক্তির পর লন্ডনে যাওয়া, সেখান থেকে দিল্লি হয়ে বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে সবার পর্যবেক্ষণ এক রকম নয়। তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় একাত্তরের ১ মার্চ থেকে বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার প্রতিটিই যথার্থ ছিল।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গ্রেপ্তার হওয়া সম্পর্কে ১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারি ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘সেদিন সন্ধ্যায় আমার বাড়ি পাকিস্তান সামরিক জান্তার কমান্ডো বাহিনী ঘেরাও করেছিল। ওরা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। প্রথমে ওরা ভেবেছিল, আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলে ওরা আমায় হত্যা করবে এবং প্রচার করে দেবে যে, ‘‘তারা যখন আমার সঙ্গে রাজনৈতিক আপসের আলোচনা করছিল, তখন দেশের চরমপন্থীরাই আমাকে হত্যা করেছে।’’ আমি বাড়ি থেকে বের হওয়া নিয়ে চিন্তা করলাম। আমি স্থির করলাম, আমি মরি, তবু আমার প্রিয় দেশবাসী রক্ষা পাক।...আমি ইচ্ছা করলে যেকোনো জায়গায় যেতে পারতাম। কিন্তু আমার দেশবাসীকে ছেড়ে আমি কেমন করে যাব? আমি তাদের নেতা। আমি সংগ্রাম করব। মৃত্যুবরণ করব। পালিয়ে যাব কেন? দেশবাসীর কাছে আমার আহ্বান ছিল তোমরা প্রতিরোধ গড়ে তোলো।...আমার মনের কথা ছিল, আজ আমি যদি আমার দেশের নেতা হিসেবে মাথা উঁচু রেখে মরতে পারি, তাহলে আমার দেশের মানুষের অন্তত লজ্জার কোনো কারণ থাকবে না। কিন্তু আমি ওদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে, আমার দেশবাসী পৃথিবীর সামনে আর মুখ তুলে দাঁড়াতে পারবে না। আমি মরি, তাও ভালো। তবু আমার দেশবাসীর যেন মর্যাদার কোনো হানি না ঘটে।’
রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর আত্মমর্যাদাবোধ এবং দেশবাসীর সম্মানকে তিনি যেভাবে দেখেছেন, তার তুলনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও মানুষের মনে ছিল শঙ্কা ও বিষাদের ছাপ। এ ছাড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের পুনর্গঠন ও প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শারীরিক উপস্থিতি ছিল অনিবার্য। সেদিন বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি যে কতটা প্রয়োজন ছিল, তা বর্তমান সময়ে বসে অনুভব করা যাবে না। তখন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অনেকেই মনে করেছিলেন, ‘আমরা সবাই রাজা’। কেউ কাউকে মানছিলেন না।
তরুণ নেতারা অস্থায়ী সরকারের কোনো কথা শুনছিলেন না। একটি নৈরাজ্যের মতো অবস্থা ছিল ২৫টি দিন। তিনি না এলে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র জমা দিতেন কি না, সন্দেহ ছিল। ভারতীয় সৈন্যরাও হয়তো অত তাড়াতাড়ি ফিরে যেত না। অনেক দেশের স্বীকৃতি পেতেও বেগ পেতে হতো। তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আরও সংহত হয়। ১০ জানুয়ারি আসলে বাঙালি জাতির স্বাধীনতাসংগ্রামের পরিপূর্ণতা লাভের দিন। এ দিন দেশবাসী তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে প্রাণভরে বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ উপভোগ করেন। এ দিন থেকে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রবেশ করে গণতন্ত্রের এক আলোকিত অভিযাত্রায়
ইতিহাসকে বিচার করতে হয় সময়ের নিরিখে। আজ বসে বসে হয়তো অনেক কথাই বলা যায়। কিন্তু সেদিনের ঘটনাগুলোকে মূল্যায়ন করতে হবে সেই সময়ের আলোকে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য রেহমান সোবহান সেই সময়ের মূল্যায়ন করে বলেছেন, ‘সাধারণ লোকজন তো শুধু মনে করেছে একটা যুদ্ধের মধ্যে আমরা স্বাধীন হয়ে গেছি। আমাদের আর ভাবনা-চিন্তা কী? আমাদের নাগালে সবকিছুই চলে আসবে। দেশের ওই সব সাধারণ লোকের মধ্যে এ ভাবনাটাই স্বাভাবিক ছিল। কারণ, বঙ্গবন্ধুর প্রতি জনগণের ভালোবাসা ছিল তীব্র। মানুষ মনে করত তিনি সবকিছু করে ফেলতে পারবেন।
সত্যিকার অর্থে ১৯৭২ সালে আমাদের অর্থনীতি পুরোপুরি ধ্বংস বা বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। আমাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার, রাস্তাঘাট ধ্বংস করে, দুটো বড় ব্রিজ পাকিস্তানিরা সাবোট্যাজ করে চলে যায়। হাইওয়েতে কোনো গাড়ি চলে না। যোগাযোগব্যবস্থা বলতে কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। ...প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য হিসেবে বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন, “তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দাঁড় করাও, অর্থাৎ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অ্যালোকেট করে রিভাইভ করো।’’ সব তো তখন আমার হাতেই ছিল। এসব কঠিন কাজ তিন বছরের মধ্যে যে কিছু একটা হয়েছে, এটা তো কল্পনার বাইরে, এত শিগগিরই আমরা কিছু একটা দাঁড় করাতে পেরেছিলাম, এটাই তো অনেক। তারপর তিন বছরের মধ্যে সবকিছু কি গোলাপবাগান হয়ে যাবে, এটা তো সম্ভব নয়। যত কিছু হয়েছে, সবই চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্যে হয়েছে। তবে হয়েছে অনেক কিছুই, ওটা তো সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য, তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন প্ল্যানিং কমিশন নিয়ে। তাঁর নজরে ছিল কীভাবে দেশের মজবুত অর্থনীতির ভিত রচনা করা যায়। তবে তাঁর আরও চাপ ছিল ডোনারের সঙ্গে, আমেরিকা তো ফুড শিপমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশে। ওই সময় ফুডের একটা সংকট বাইরে থেকে চলে আসে। ফলে সবকিছু তো তাঁকেই সামলাতে হচ্ছে। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে তখন আমরা এগোচ্ছিলাম। দেশ ও দেশের বাইরের নানা বৈরী পরিস্থিতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সামাল দিতে হচ্ছিল। তবে এর মধ্য থেকেও সবার সঙ্গে তিনি পারসোনাল সম্পর্ক বজায় রাখতেন। ...যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন, তবে সাড়ে তিন বছরের কষ্টের ফসলের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির মজবুত ভিত তৈরি হতো। সব তো ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশ যে পথে গেল, হয়তো সে পথে যেত না। তিনি দেশকে একটা পূর্ণতা দিতে পারতেন, এটা আমার স্পেকুলেশন। আমার মনে হয়, আরেকটা ইতিহাস হতো। এত সংকটের দিন থাকত না। এত মারামারি, এত কষ্ট, এত রক্তপাত হয়তো হতো না (বণিক বার্তা, ১০ জানুয়ারি ২০২০)।’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের রাজনীতি ক্রমেই অবক্ষয়গ্রস্ত হয়েছে। সুবিধাবাদিতা রাজনীতির মূল আদর্শ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দল, দেশ বা দেশের মানুষ নয়, সবার ওপরে স্থান পাচ্ছে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সুবিধা। এ জন্য এখন সবাই নেতা হতে মরিয়া। কর্মীর চেয়ে দলে এখন নেতা বেশি। অধিক নেতার সমারোহে মঞ্চও ভেঙে পড়ছে। গণমানুষের রাজনীতি, মানুষের জন্য আত্মত্যাগ ও স্বার্থত্যাগ, যা ছিল বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের আদর্শ, সেই রাজনীতি থেকে খোদ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ যেন সচেতনভাবে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে নিজেদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক দাবি করছেন।
বঙ্গবন্ধু তাঁর আত্মজীবনীতে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘তিনি সব সময় শোষকের বিরুদ্ধে, শোষিতের পক্ষে।’ এখনকার নেতাদের অনেকেই যেন উল্টো পথের যাত্রী।বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে এখন একদিকে যেমন অনেক উন্নয়ন ঘটছে, অন্যদিকে বাড়ছে ধনবৈষম্য। বঙ্গবন্ধু শোষিতের পক্ষে যেভাবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব কি সেটা সেভাবে করছেন? মঞ্চের শোভা ও ভিড় বাড়ানো স্বার্থপর নেতা দিয়ে আদৌ দলের বা দেশের কোনো উপকার হবে কি? বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন এই প্রশ্ন নিয়ে সবারই ভাবা দরকার।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ২৪ দিন পর পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের স্বাধীনতার মতোই তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঘটনা। তিনি যদি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে না আসতেন আর পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা তাঁকে হত্যা করত, তাহলে আমরা আজকের এই বাংলাদেশ পেতাম কি না, সন্দেহ আছে। বঙ্গবন্ধুর সমালোচকদের কেউ কেউ এখনো বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি শাসকদের গ্রেপ্তারের সুযোগ না দিয়ে আত্মগোপন করতে পারতেন।
আত্মগোপনে থেকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে পারতেন। যাঁরা এ ধরনের কথা বলেন, তাঁরা আসলে সেই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা সম্পর্কে জানেন না। প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো, বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছেন সিংহ ও বীরের মতো। তিনি লুকোচুরি পছন্দ করতেন না। তিনি তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘আমি পালিয়ে থাকার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। কারণ আমি গোপন রাজনীতি পছন্দ করি না, আর বিশ্বাসও করি না (পৃ. ১৩৪)।’ ব্রিটিশ ধাঁচের সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছিল বঙ্গবন্ধুর পছন্দ।
আত্মগোপন না করে গ্রেপ্তার হওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তের একটি। তিনি সাংবিধানিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথে ছিলেন বলেই সেদিন আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন মিলেছিল। আর মুক্তিসংগ্রামে বিশ্বজনমত বাংলাদেশের পক্ষে ছিল।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হাতে গ্রেপ্তার হওয়া, পাকিস্তানের কারাগারে বন্দিত্ব, বন্দিদশা থেকে মুক্তি, মুক্তির পর লন্ডনে যাওয়া, সেখান থেকে দিল্লি হয়ে বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে সবার পর্যবেক্ষণ এক রকম নয়। তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় একাত্তরের ১ মার্চ থেকে বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার প্রতিটিই যথার্থ ছিল।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গ্রেপ্তার হওয়া সম্পর্কে ১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারি ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘সেদিন সন্ধ্যায় আমার বাড়ি পাকিস্তান সামরিক জান্তার কমান্ডো বাহিনী ঘেরাও করেছিল। ওরা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। প্রথমে ওরা ভেবেছিল, আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলে ওরা আমায় হত্যা করবে এবং প্রচার করে দেবে যে, ‘‘তারা যখন আমার সঙ্গে রাজনৈতিক আপসের আলোচনা করছিল, তখন দেশের চরমপন্থীরাই আমাকে হত্যা করেছে।’’ আমি বাড়ি থেকে বের হওয়া নিয়ে চিন্তা করলাম। আমি স্থির করলাম, আমি মরি, তবু আমার প্রিয় দেশবাসী রক্ষা পাক।...আমি ইচ্ছা করলে যেকোনো জায়গায় যেতে পারতাম। কিন্তু আমার দেশবাসীকে ছেড়ে আমি কেমন করে যাব? আমি তাদের নেতা। আমি সংগ্রাম করব। মৃত্যুবরণ করব। পালিয়ে যাব কেন? দেশবাসীর কাছে আমার আহ্বান ছিল তোমরা প্রতিরোধ গড়ে তোলো।...আমার মনের কথা ছিল, আজ আমি যদি আমার দেশের নেতা হিসেবে মাথা উঁচু রেখে মরতে পারি, তাহলে আমার দেশের মানুষের অন্তত লজ্জার কোনো কারণ থাকবে না। কিন্তু আমি ওদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে, আমার দেশবাসী পৃথিবীর সামনে আর মুখ তুলে দাঁড়াতে পারবে না। আমি মরি, তাও ভালো। তবু আমার দেশবাসীর যেন মর্যাদার কোনো হানি না ঘটে।’
রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর আত্মমর্যাদাবোধ এবং দেশবাসীর সম্মানকে তিনি যেভাবে দেখেছেন, তার তুলনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও মানুষের মনে ছিল শঙ্কা ও বিষাদের ছাপ। এ ছাড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের পুনর্গঠন ও প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শারীরিক উপস্থিতি ছিল অনিবার্য। সেদিন বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি যে কতটা প্রয়োজন ছিল, তা বর্তমান সময়ে বসে অনুভব করা যাবে না। তখন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অনেকেই মনে করেছিলেন, ‘আমরা সবাই রাজা’। কেউ কাউকে মানছিলেন না।
তরুণ নেতারা অস্থায়ী সরকারের কোনো কথা শুনছিলেন না। একটি নৈরাজ্যের মতো অবস্থা ছিল ২৫টি দিন। তিনি না এলে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র জমা দিতেন কি না, সন্দেহ ছিল। ভারতীয় সৈন্যরাও হয়তো অত তাড়াতাড়ি ফিরে যেত না। অনেক দেশের স্বীকৃতি পেতেও বেগ পেতে হতো। তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আরও সংহত হয়। ১০ জানুয়ারি আসলে বাঙালি জাতির স্বাধীনতাসংগ্রামের পরিপূর্ণতা লাভের দিন। এ দিন দেশবাসী তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে প্রাণভরে বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ উপভোগ করেন। এ দিন থেকে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রবেশ করে গণতন্ত্রের এক আলোকিত অভিযাত্রায়
ইতিহাসকে বিচার করতে হয় সময়ের নিরিখে। আজ বসে বসে হয়তো অনেক কথাই বলা যায়। কিন্তু সেদিনের ঘটনাগুলোকে মূল্যায়ন করতে হবে সেই সময়ের আলোকে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য রেহমান সোবহান সেই সময়ের মূল্যায়ন করে বলেছেন, ‘সাধারণ লোকজন তো শুধু মনে করেছে একটা যুদ্ধের মধ্যে আমরা স্বাধীন হয়ে গেছি। আমাদের আর ভাবনা-চিন্তা কী? আমাদের নাগালে সবকিছুই চলে আসবে। দেশের ওই সব সাধারণ লোকের মধ্যে এ ভাবনাটাই স্বাভাবিক ছিল। কারণ, বঙ্গবন্ধুর প্রতি জনগণের ভালোবাসা ছিল তীব্র। মানুষ মনে করত তিনি সবকিছু করে ফেলতে পারবেন।
সত্যিকার অর্থে ১৯৭২ সালে আমাদের অর্থনীতি পুরোপুরি ধ্বংস বা বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। আমাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার, রাস্তাঘাট ধ্বংস করে, দুটো বড় ব্রিজ পাকিস্তানিরা সাবোট্যাজ করে চলে যায়। হাইওয়েতে কোনো গাড়ি চলে না। যোগাযোগব্যবস্থা বলতে কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। ...প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য হিসেবে বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন, “তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দাঁড় করাও, অর্থাৎ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অ্যালোকেট করে রিভাইভ করো।’’ সব তো তখন আমার হাতেই ছিল। এসব কঠিন কাজ তিন বছরের মধ্যে যে কিছু একটা হয়েছে, এটা তো কল্পনার বাইরে, এত শিগগিরই আমরা কিছু একটা দাঁড় করাতে পেরেছিলাম, এটাই তো অনেক। তারপর তিন বছরের মধ্যে সবকিছু কি গোলাপবাগান হয়ে যাবে, এটা তো সম্ভব নয়। যত কিছু হয়েছে, সবই চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্যে হয়েছে। তবে হয়েছে অনেক কিছুই, ওটা তো সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য, তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন প্ল্যানিং কমিশন নিয়ে। তাঁর নজরে ছিল কীভাবে দেশের মজবুত অর্থনীতির ভিত রচনা করা যায়। তবে তাঁর আরও চাপ ছিল ডোনারের সঙ্গে, আমেরিকা তো ফুড শিপমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশে। ওই সময় ফুডের একটা সংকট বাইরে থেকে চলে আসে। ফলে সবকিছু তো তাঁকেই সামলাতে হচ্ছে। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে তখন আমরা এগোচ্ছিলাম। দেশ ও দেশের বাইরের নানা বৈরী পরিস্থিতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সামাল দিতে হচ্ছিল। তবে এর মধ্য থেকেও সবার সঙ্গে তিনি পারসোনাল সম্পর্ক বজায় রাখতেন। ...যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন, তবে সাড়ে তিন বছরের কষ্টের ফসলের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির মজবুত ভিত তৈরি হতো। সব তো ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশ যে পথে গেল, হয়তো সে পথে যেত না। তিনি দেশকে একটা পূর্ণতা দিতে পারতেন, এটা আমার স্পেকুলেশন। আমার মনে হয়, আরেকটা ইতিহাস হতো। এত সংকটের দিন থাকত না। এত মারামারি, এত কষ্ট, এত রক্তপাত হয়তো হতো না (বণিক বার্তা, ১০ জানুয়ারি ২০২০)।’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের রাজনীতি ক্রমেই অবক্ষয়গ্রস্ত হয়েছে। সুবিধাবাদিতা রাজনীতির মূল আদর্শ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দল, দেশ বা দেশের মানুষ নয়, সবার ওপরে স্থান পাচ্ছে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সুবিধা। এ জন্য এখন সবাই নেতা হতে মরিয়া। কর্মীর চেয়ে দলে এখন নেতা বেশি। অধিক নেতার সমারোহে মঞ্চও ভেঙে পড়ছে। গণমানুষের রাজনীতি, মানুষের জন্য আত্মত্যাগ ও স্বার্থত্যাগ, যা ছিল বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের আদর্শ, সেই রাজনীতি থেকে খোদ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ যেন সচেতনভাবে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে নিজেদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক দাবি করছেন।
বঙ্গবন্ধু তাঁর আত্মজীবনীতে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘তিনি সব সময় শোষকের বিরুদ্ধে, শোষিতের পক্ষে।’ এখনকার নেতাদের অনেকেই যেন উল্টো পথের যাত্রী।বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে এখন একদিকে যেমন অনেক উন্নয়ন ঘটছে, অন্যদিকে বাড়ছে ধনবৈষম্য। বঙ্গবন্ধু শোষিতের পক্ষে যেভাবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব কি সেটা সেভাবে করছেন? মঞ্চের শোভা ও ভিড় বাড়ানো স্বার্থপর নেতা দিয়ে আদৌ দলের বা দেশের কোনো উপকার হবে কি? বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন এই প্রশ্ন নিয়ে সবারই ভাবা দরকার।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট


গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৫ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।


মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ২৪ দিন পর পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের স্বাধীনতার মতোই তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঘটনা। তিনি যদি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে না আসতেন আর পাক
১০ জানুয়ারি ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]


মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ২৪ দিন পর পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের স্বাধীনতার মতোই তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঘটনা। তিনি যদি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে না আসতেন আর পাক
১০ জানুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৫ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।


মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ২৪ দিন পর পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের স্বাধীনতার মতোই তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঘটনা। তিনি যদি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে না আসতেন আর পাক
১০ জানুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৫ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।


মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ২৪ দিন পর পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের স্বাধীনতার মতোই তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঘটনা। তিনি যদি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে না আসতেন আর পাক
১০ জানুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৫ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫