Ajker Patrika

মাদকের টাকা জোগাতে ঘরের টিন বিক্রি

মির্জাপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২১, ১৫: ৩৫
Thumbnail image

জেগে ওঠা নদীর চরে ছোট্ট একচালা একটি ঘর। ছয় মাস আগে ধার দেনা করে রঙিন টিন দিয়ে ১৮ হাত জায়গায় ঘরটি নির্মাণ করেছিলেন ভূমিহীন আবু সাইদ। নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় লাখ টাকা। তবে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে আবু সাইদ বৃদ্ধ স্ত্রীকে নিয়ে সরকারের দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে উঠে পড়েন।

আর ঋণের টাকা গড়ে তোলা ঘরে থাকতে দেন ছেলে নাজিম মিয়াকে। নাজিম নতুন ঘরের চাল ও বেড়ার টিন খুলে দিয়েছেন বিক্রি করে। মূলত মাদকের টাকা জোগাড় করতেই তিনি টিনের বেড়া ও চাল খুলে বিক্রি করেছেন। ছেলের এ কাণ্ডে ক্ষুব্ধ টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বাসিন্দা বাবা আবু সাইদ। মাদকের টাকা জোগাড় করতে অনেক সময় নাজিম মিয়া করেন চুরি। এ জন্য তাঁর নামে রয়েছে দুটি মামলাও। মাদকসেবী ছেলের এমন কাণ্ডে ভীত মা-বাবাসহ প্রতিবেশী।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আবু সাইদের পাঁচ ছেলের মধ্যে নাজিম পেশায় মেক্সি (লেগুনা) চালক। বন্ধুদের খপ্পরে পড়ে তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। মাদকের টাকা জোগাড় করতে নানা অপরাধের জড়িয়ে পড়েন তিনি।

নাজিমের বাবা ভূমিহীন আবু সাইদ বলেন, ‘ছয় মাস আগে ধার দেনা করে ঘরটি তৈরি করি। দেওহাটা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়ায় স্ত্রীকে নিয়ে ওখানে উঠি। কিন্তু নাজিম তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে থেকে যান। তিনি মাদকের টাকা জোগাড় করতে না পেরে ঘরের বেড়ার টিন খুলে বিক্রি করেন। গত তিন মাসে বিক্রি করতে করতে এখন ঘরের চাল ও বেড়ার টিন শেষ।’

গতকাল রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চাল ও বেড়াহীন ঘরের নিচে চাদর দিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনে থাকছেন। ঘরের বারান্দার চালে মাত্র দুই টিন অবশিষ্ট রয়েছে। ওই অংশে বিদ্যুতের মিটার থাকায় তা বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। তবে এখন ঘরের খুঁটি খুলে ভেতরের রড বিক্রি করছেন নাজিম মিয়া। কেউ বাঁধা দিয়ে চাকু দিয়ে মেরে ফেলাল হুমকি দেন নাজিম।

নাজিমের চাচা আমজাদ হোসেন বলেন, বিক্রির জন্য ঘরটি দাম উঠেছিল ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু তাঁর মা বিক্রি করেননি।

পাশেই নাজিমের বড় ভাই সাইফুল দোচালা টিনের ঘরে বাস করতেন। তিনিও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে চলে যান। সেই সুযোগে ভাইয়ের ঘরের টিন খুলে বিক্রি করেছেন নাজিম। বাঁধা দেওয়ায় তাঁকেও চাকু নিয়ে মারতে আসেন বলে অভিযোগ করেন ভাই সাইফুল।

প্রতিবেশী আবদুল করিম বলেন, ঘরটি একেবারে বিক্রি করলে ওই টাকা কোনো কাজ লাগাতে পারতেন। কিন্তু তা না করে টিন খুলে বিক্রি করে তিনি হেরোইন খেয়েছে।

নাজিমের বাবা সাইদ মিয়া কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাঁধা দিলে ছেলে চাকু নিয়ে মারতে আসে। বড় ছেলে সাইফুলের ঘরের টিনও বিক্রি করে ফেলেছেন। একাধিকবার থানায় যোগাযোগ করা হলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

নাজিম বলেন, ‘ঘরটি বিক্রি করে একটি অটোরিকশা কিনে দিতে বলেছিলাম। বাবা মা তা করেননি। টাকার প্রয়োজন হওয়ায় টিন খুলে বিক্রি করেছি।’

মির্জাপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ রিজাউল হক দিপু বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত