Ajker Patrika

ব্লাস্টের আক্রমণে চাষির স্বপ্নভঙ্গ

শেখ শাহিনুর ইসলাম শাহিন, মোল্লাহাট (বাগেরহাট)
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ৩০
Thumbnail image

প্রতিবছর বোরো আবাদ করে পুরো সংসারের চাহিদা পূরণ করেন কৃষক আরবিন শেখ। চলতি বছর বোরো মৌসুমে প্রায় দুই বিঘা জমিতে ‘ব্রি-ধান ২৮ (ভিত্তি)’ আবাদ করেন। স্বপ্ন ছিল অন্যান্য বছরের মতো এবারও পরিবারের চাহিদা মেটাবেন। কিন্তু তা আর হচ্ছে না। তাঁর আবাদ করা পুরো জমির ধানই ব্লাস্টের আক্রমণে চিটা হয়ে গেছে। এতে চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন তিনি। হতাশায় দিন কাটাচ্ছে আরবিনের পরিবার।

আরবিন শেখ বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার দারিয়ালা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ছাড়াও উপজেলার অনেক কৃষকের ধান ব্লাস্টের আক্রমণে চিটা হয়ে গেছে। এতে তাঁরা চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ৮ হাজার ৩৪২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ২৮, ২৯, ৫৮, ৮১, ৮৬, ৮৮, ৮৯ ও হাইব্রিডসহ জাতের ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে ব্লাস্টের আক্রমণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ‘ব্রি-ধান ২৮-এর।

চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে ব্রি-ধান ২৮ আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ব্লাস্টের কারণে আংশিক ক্ষতি হয়েছে ২০ হেক্টর ও পুরো ক্ষতি হয়েছে এক হেক্টর জমির ধান। নতুন করে আরও দুজন কৃষকের ধানে ব্লাস্টের আক্রমণের কথা শোনা গেছে। কয়েকজন কৃষকের জমিতে ২৮ ধানে দেখা দিয়েছে চিটা।

কৃষক আরবিন শেখ বলেন, দুই বিঘা জমিতে ভালো ফলনের আশায় ব্রি ধান-২৮ (ভিত্তি) আবাদ করেন। শিষ বের হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে ধানগুলো পাকতে শুরু করে। ধানগুলোতে ক্রমেই চিটা দেখা দেয়। এরপর বিএডিসি নির্ধারিত স্থানীয় ডিলারের সঙ্গে পরামর্শ করে ধানে ওষুধ ব্যবহার করেন। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। এখন সব ধান চিটা হয়ে গেছে। দুই বিঘা জমির ধান কাটলে এক মণও হবে না।

তিনি আরও বলেন, দুই বিঘা জমিতে সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবাদ করা ধান থেকেই তাঁর সংসারের পুরো বছরের চালের জোগান হয়। এখন তাঁর পথে বসা ছাড়া উপায় নেই। সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানান তিনি।

কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, তিনি জাহাজে শ্রমিকের কাজ করে যা আয় করেছেন, তার সব জমির পেছনে ব্যয় করেছেন। চাষাবাদ করেই তাঁর সংসার চলে। প্রতিবছর তাঁর জমিতে ২৯ জাতের ধানের আবাদ করেন। কিন্তু ভালো ফলনের আশায় এ বছর নতুন জাতের ‘ব্রি-ধান ২৮ (ভিত্তি) আবাদ করেছেন।

জসিম উদ্দিনের ২৫ কাঠা জমির সব ধান চিটা হয়েছে। ২৫ কাঠা জমিতে এক মণ ধানও হবে না। চিটা হওয়ায় জমির ধান কেটে গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে। এখন সরকার থেকে অনুদান না দিলে তাঁর চলার মতো উপায় থাকবে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অনিমেষ বালা বলেন, উপজেলায় এবার ৮ হাজার ৩৪২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ২৫০ হেক্টর জমিতে ব্রি-ধান ২৮ আবাদ হয়েছে। ব্লাস্টের কারণে যার ২০ হেক্টর আংশিক ও এক হেক্টর জমির ধানের পুরো ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ব্রি-ধান ২৮ জাতটা অনেক পুরোনো। এই জাতের ধানে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম। যার কারণে ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছে। তাঁরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণে কৃষকদের ব্রি-ধান ২৮ আবাদ করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। এর বিকল্প হিসেবে ব্রি-৮১ আবাদের কথা বলেছেন। তবে কিছু জায়গায় তাঁরা বিভিন্ন ধরনের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখেছেন। ব্লাস্ট, ব্যাকটেরিয়া, পাতাপোড়া বা অনেক সময় চিটা হতে পারে; সে কারণে কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ব্রি-ধান ২৮ চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় তালিকা করে সার ও বীজের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণের ১৩০০ কোটির এক টাকাও দেননি হলিডে ইনের মালিক

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

গণ–সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলেন বিএনপি নেতা

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত