Ajker Patrika

ভালোবেসে কোটিপতি তাঁরা

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ ওআব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া (রংপুর)
আপডেট : ০৫ জুন ২০২২, ১৭: ০১
ভালোবেসে কোটিপতি তাঁরা

কলেজে পড়ার সময় গড়ে ওঠে তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতে সেই সম্পর্কের কথা জেনে যায় পরিবারের লোকজন। বিপাকে পড়েন তাঁরা। সাহস করে মুখোমুখি হন পরিবারের। মা-বাবাকে বোঝান, সময় চেয়ে নেন। পরিবার জানিয়ে দেয়, নিজেদের যোগ্য করে গড়তে পারলে আর বাধা থাকবে না। সেই থেকে শুরু হয় নিজেদের প্রমাণ করার পালা।

সেটা ছিল ২০১১ সাল। এখন ২০২২। কেটে গেছে ১১ বছর। এর মধ্যে ভালোবাসার সেই চ্যালেঞ্জ উতরে গেছেন আগেই। ভালোবাসা, পরিশ্রম আর উদ্যোগে গড়েছেন স্টেডফাস্ট নামের প্রতিষ্ঠান। কুরিয়ার সেবাদাতা এই প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে দেড় হাজার মানুষের। ভালোবাসার এই উদ্যোগে এখন তাঁরা কোটিপতি। এই গল্প রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার দম্পতি কে এম রেদওয়ান বারি জিয়ন ও জোয়াইরিয়া মোস্তারি জ্যোতির। দেড় বছর বয়সী মেয়ে জাইয়ানা মুনজারিনকে নিয়ে এখন সুখের সংসার তাঁদের।

উচ্চশিক্ষিত পরিবারের সন্তান জিয়ন। পরিবারে সবাই চাকরিজীবী। বাবা কাজী মো. শরীফুজ্জামান ও মা নিলুফা ইয়াছমিন দুজনই স্কুলশিক্ষক। এমন পরিবারের সন্তান হয়ে লেখাপড়া শেষ করে তাঁরও চাকরিজীবী হওয়ার কথা। কিন্তু জিয়ন তা হননি। হয়েছেন উদ্যোক্তা। সৃষ্টি করেছেন হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। নিজের চেষ্টায় আজ সফল ব্যবসায়ী তিনি।

সম্প্রতি রংপুর স্টেডফাস্ট কুরিয়ার অফিসে কথা হয় জিয়নের সঙ্গে। তিনি জানান, ২০০৯ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় পাড়ি জমান তিনি। ইলেকট্রিক্যাল ইলেক্ট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিষয়ে ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইউএপি)। এ সময় পরিবারের লোকজন জ্যোতির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পারেন। দুজনেরই ডাক পড়ে বাড়িতে। এরপর পরিবারকে বুঝিয়ে শুরু করেন পথচলা। জিয়ন পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন। শিখে নেন ওয়েব ডেভেলপিং। ২০১৪ সালে হাটবাজার ডটকম নামের ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করেন। এ ব্যবসা করতে গিয়ে নানান সমস্যার সম্মুখীন হন। সেগুলো চিহ্নিত করে ২০১৬ সালে ঢাকার জিগাতলা এলাকায় মাত্র চারজন ডেলিভারি ম্যান দিয়ে নিজের তৈরি ওয়েবসাইটে শুরু করেন কুরিয়ার সার্ভিস স্টেডফাস্ট। ঢাকা শহরে শুরুতে হোম ডেলিভারি শুরু করেন। ধীরে ধীরে পুরো ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুরসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে এ সার্ভিস চালু করেন।

বর্তমানে দেশের ৪৯৫টি উপজেলাতে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পণ্যসহ লেনদেন চালু রয়েছে। ঢাকায় ২৬টি অফিস রয়েছে তাঁর। সারা দেশে ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেতনে ১ হাজার ৫০০ জন কর্মী কাজ করছেন। নিজস্ব ৩৯টি কাভার্ড ভ্যান, ৬০টি মোটরসাইকেল এবং কর্মীদের জন্য বাইসাইকেল রয়েছে। বর্তমানে জিয়ন স্টেডফাস্ট কুরিয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং স্ত্রী জ্যোতি চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছেন।

জিয়ন জানান, শুরুতে ঢাকা শহরে সবকিছু এত সহজ ছিল না।

যখন তিনি ঢাকায় যান, থাকার জায়গা ছিল না। নানান রোগে আক্রান্ত হন। একপ্রকার যুদ্ধ করে তাঁকে টিকতে হয়েছে ঢাকা শহরে। তাই ঢাকা শহরে তিনি যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন, তা যেন তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের হতে না হয়, সে জন্য তিনি কর্মীদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। যতক্ষণ পর্যন্ত কাজের উপযুক্ত না হন, ততক্ষণ পর্যন্ত নিজ খরচে করান প্রশিক্ষণ। ঢাকার ৫০টি ফ্ল্যাটে কর্মীরা থাকেন। শুধু উচ্চশিক্ষিত নন, কম শিক্ষিত লোকেরাও তাঁর প্রতিষ্ঠান কাজ করছেন। সব ধরনের যোগ্যতার মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি করতে চান তিনি।

জিয়ন বলেন, ‘যখন ধীরে ধীরে কুরিয়ার সার্ভিসের পরিধি বাড়ছিল। গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করছিলাম। তখন কর্মী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। মানুষ বিশ্বাসই করত না আমার প্রতিষ্ঠানে চাকরির কথা। এলাকার লোকজন ভাবত ঢাকায় নিয়ে তাদের ঠকাব। একজন-দুজন করে এখন গঙ্গাচড়া উপজেলারই ৭০০-এর অধিক কর্মী আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে।’

জিয়ন গঙ্গাচড়াকে বেকারমুক্ত করতে চান। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববাজারে কীভাবে কাজ করা যায়, সেই স্বপ্ন দেখছেন। স্বপ্ন দেখেন নিজের প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত উচ্চপ্রযুক্তি সেবা চালু করবেন। ভবিষ্যতে অটোমেশনের মাধ্যমে কাজ করবেন। তাঁর ইচ্ছে ট্রান্সপোর্টেশনে সেরা প্রতিষ্ঠান হওয়ার।

উদ্যোক্তাদের নিয়ে সর্বশেষ সংবাদ পেতে - এখানে ক্লিক করুন

গঙ্গাচড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বলেন, ‘জিয়ন গঙ্গাচড়ার গর্ব। সে লেখাপড়া করে অন্যদের মতো চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে কিছু করার চেষ্টা করেছে। সে আজ সফল। তাঁর গড়া প্রতিষ্ঠানে গঙ্গাচড়ার কয়েক শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।’

এই সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত