Ajker Patrika

আহত যোদ্ধাদের তিনি চিকিৎসা দিতেন

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ৪৮
আহত যোদ্ধাদের তিনি চিকিৎসা দিতেন

যুদ্ধ শুরুর আগে নিবেদিত ছিলেন সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবায়। চিকিৎসার পাশাপাশি রাজনীতির প্রতি ছিল তাঁর ভালোবাসা। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের জুলুম-নিপীড়ন তাঁকে দারুণভাবে পীড়া দিত। তাই ১৯৭১ সালে যোগ দেন স্বাধীনতাযুদ্ধে। চিকিৎসা দিয়েছেন যুদ্ধে আহত সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের। সাহসী এই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম ডা. মো. এখলাস উদ্দিন।

এখলাস উদ্দিন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বহরপুর গ্রামের সৈয়দুর রহমানের ছেলে। ৮৪-ঊর্ধ্ব বয়সের মানুষটি এখনো আগের মতো ভালোবাসেন দেশকে।

সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলো নিয়ে কথা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা এখলাস উদ্দিনের সঙ্গে। যুদ্ধকালীন দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন ও শেষে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগে ১৯৬৮ সালে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী জেলে, তখন তিনি সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেই থেকে দলকে সুসংহত করতে থাকেন। ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম জেলা সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য হয়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ স্বাধীনতাকামী অন্য রাজনৈতিক দলের নেতা ও জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন এবং নিজে যুদ্ধে যোগ দেন। ২৬ মার্চেই সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পাকিস্তানি সেনাকে চলাচল বন্ধ করতে নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

বীর মুক্তিযোদ্ধার এখলাস উদ্দিন আরও বলেন, যুদ্ধের একপর্যায়ে তাঁকে হরিণা শরণার্থী ক্যাম্পের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের চিকিৎসা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখান থেকে তিনি ত্রিপুরার আগরতলায় থাকা জননেতা জহুর আহম্মদ চৌধুরীর ও দিল্লিতে অবস্থানরত জননেতা এম আর সিদ্দিকীকে নিজেদের কার্যক্রম জানাতেন। কৃষ্ণনগরের পূর্বাঞ্চলীয় কার্যালয় ও মুখ্যমন্ত্রী শচীন সিংহের কার্যালয়েও যোগাযোগ রেখেছিলেন তিনি। পরে দেশে ফিরে ৬ ডিসেম্বর বিলোনিয়া পরশুরামে এক যুদ্ধে তিনি তাঁর চিকিৎসক দল নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। ১৩ ডিসেম্বর তিনিসহ মুক্তিযোদ্ধারা ১১ রেজিমেন্টসহ শুভপুর সেতু পার হয়ে মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জে আসেন। পরের দিন সীতাকুণ্ড বাজারে আলিয়া মাদ্রাসায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে যুদ্ধোত্তর প্রথম বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বেসামরিক প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু করেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বিজয় সুনিশ্চিত হলে তিনি নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। কিন্তু গ্রামে ফেরার পর দেখেন রাজাকার, আলবদররা তাঁর গ্রামের বাড়ি গান পাউডার দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে।

সাহসী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, যুদ্ধকালীন সময়ে আহত সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করার সময় নিজের জীবনের কথা ভাবিনি। শুধু একটাই লক্ষ্য ছিল সবাই মিলে এ দেশকে শত্রুমুক্ত করতে হবে। সেই লক্ষ্য পূরণ হওয়ায় গর্ব করেন তিনি।

সংসারে তাঁর এক ছেলে ও পাঁচ মেয়েসন্তান ছিল। সম্প্রতি তাঁর একমাত্র ছেলে ডা. মাসুদ পারভেজ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বর্তমানে বই পড়ে ও পরিবারের সঙ্গে আড্ডায় সময় কাটে বলে জানান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এখলাস উদ্দিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত