Ajker Patrika

চোখের জলে আগুন পাখির চিরপ্রস্থান

রাজশাহী ও রাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২১, ১০: ২৭
Thumbnail image

প্রাণোচ্ছল ক্যাম্পাসে অদ্ভুত এক নীরবতা। সবার মুখে বিষণ্নতার ছাপ। এর মধ্যে এলেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক—নিথর দেহে, পিকআপ ভ্যানে। রাখা হলো শহীদ মিনারে। ছায়ানটের শিল্পীরা গাইতে শুরু করলেন ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে। এ জীবন পুণ্য করো...।’ ‘নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো, যেখানে পড়বে সেথায় দেখবে আলো...।’

সব সময় আলো ছড়ানো এই মানুষটিকে দাফন করা হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পাশে। যে বই নিয়েই জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় কেটেছে তাঁর, সেই বইয়ের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার বাদ জোহর তাঁকে এখানে সমাহিত করা হয়। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় কবরস্থানের কথা ভাবা হলেও পরে সিদ্ধান্ত পাল্টে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পাশে তাঁকে সমাহিত করার বিষয়টি চূড়ান্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জানাজার আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, ‘প্রগতিশীল চিন্তার বিকাশ এবং বাংলা সাহিত্যে হাসান আজিজুল হকের যে অবদান, তা প্রজন্মের পর প্রজন্ম মনে রাখবে। তাঁকে যেখানে সমাহিত করা উচিত, সেখানেই হচ্ছে।’

হাসান আজিজুল হক এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৩১ বছর শিক্ষকতা করেছেন। তাঁর অবদান তুলে ধরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘দুই বাংলার জ্যোতির্ময় পুরুষ ছিলেন তিনি। আগুন-পাখি আজ অনন্তলোকে যাত্রা করেছেন। তাঁর অবদান ভুলবার নয়।’ সবার এমন ভালোবাসা নিজেদের জন্য বড় পাওয়া বলে উল্লেখ করেন হাসান আজিজুল হকের ছেলে ড. ইমতিয়াজ হাসান। বলেন, ‘বাবা সব সময় রাজশাহী ভালোবাসতেন, রাজশাহীর মানুষকে ভালোবাসতেন। আজ আপনারা তা ফিরিয়ে দিলেন।’

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা ‘বিহাস’-এর বাসা থেকে হাসান আজিজুল হকের মরদেহ রাবি ক্যাম্পাসে নেওয়া হয়। প্রথমেই মরদেহ নেওয়া হয় দর্শন বিভাগে, যে বিভাগের শিক্ষক ছিলেন তিনি। এরপর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ শহীদ মিনারে রাখা হয়।

সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, সিটি মেয়রের পক্ষে প্যানেল মেয়র-১, সাংসদ আয়েন উদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যরা, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, আবাসিক হল ও ইনস্টিটিউট এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর জানাজা শেষে গ্রন্থাগারের পাশে হাসান আজিজুল হককে সমাহিত করা হয়।

একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা পাওয়া গুণী এই কথাশিল্পীর জন্ম ১৯৩৯ সালে, অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে। তিনি বিহাস আবাসিক এলাকায় নিজের ‘উজান’ নামের বাসায়ই থাকতেন। কিছুদিন ধরে ভুগছিলেন বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে। মাসখানেক ধরে তিনি বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছিলেন না। সপ্তাহখানেক কিছু খেতেও পারছিলেন না। মাঝে মাঝে দু-এক চামচ সাবুদানা আর এক কাপ ডাবের পানি খেতেন। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতেন। সবাইকে কাঁদিয়ে গত সোমবার রাত পৌনে ৯টায় পৃথিবীর মায়া ছেড়ে তিনি চলে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত