Ajker Patrika

গঙ্গাচড়ায় চোখ ধাঁধানো লাল শাপলা বিল

আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া (রংপুর)
গঙ্গাচড়ায় চোখ ধাঁধানো লাল শাপলা বিল

লাল শাপলার বিল। দূর থেকে দেখলে মনে হয় পানির ওপরে লাল গালিচা বিছানো রয়েছে। বিশাল এলাকা জুড়ে বিছানো সেই মনোহর গালিচা। এক পলক দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। এ বিলটি রয়েছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘন্টা ইউনিয়নের রাজবল্লভ উত্তরপাড়া গ্রামে। তিস্তা নদীর তীরের ডানে প্রতিরক্ষা বাঁধের পাশেই এ বিল অবস্থিত। 

তিস্তা নদীর কোল ঘেঁষে এ লাল শাপলা বিলের ইতিহাস খুব পুরোনো নয়। এ বিলের জন্ম ১৫ বছর আগে। ব্যক্তি মালিকানা এ বিলটির বর্তমান আয়তন প্রায় ২৫ একর। আগে অবশ্য বিলটিকে ‘উত্তরপাড়া বিল’ বলেই চিনত সবাই। বিলটি লাল শাপলায় পরিপূর্ণ থাকায় বর্তমানে হারিয়ে গেছে আগের সে নামটি। এখন এটি ‘লাল শাপলা বিল’ নামেই সর্বত্র পরিচিত। গ্রামীণ প্রকৃতিতে এ শাপলার অবারিত রঙিন রূপ যে কাউকে মুগ্ধ করে। 

সাধারণত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে এ বিলে লাল শাপলা ফুল ফোঁটে। এ সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক পর্যটক আসেন ফুটন্ত লাল শাপলা ফুল দেখতে। 

সরেজমিন উপস্থিত হলে লাল শাপলা বিলের জন্ম কাহিনি সম্পর্কে কথা হয় স্থানীয় কৃষক জমসের আলীর (৬৫) সঙ্গে। তিনি জানান, এ বিলের সামান্য অংশের মালিক তিনি। অবশিষ্ট অংশ তাঁর অংশীদারদের। 

নীল আকাশ আর লাল শাপলার অপরূপ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে উপজেলার গজঘন্টা ইউনিয়নের রাজবল্লভ উত্তরপাড়া গ্রামেজমসের আলী জানান, ১৫ বছর আগে তাঁর স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেক চিকিৎসার পরও তাঁর অসুখ ভালো হয় না। অবশেষে এক কবিরাজ তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। ওই চিকিৎসায় প্রয়োজন লাল শাপলা। স্বামী জমসের অনেক খুঁজে শেষমেশ মাত্র একটি লাল শাপলা সংগ্রহ করতে পেয়েছিলেন। শাপলার শালুক দিয়ে তৈরি ওষুধ খাওয়ানো হয় জমসেরের স্ত্রীকে। এতে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের কথা ভেবেই জমসের আলী তাঁর বাড়ির পাশে বিলে পুঁতে রাখেন শাপলা গাছটি। তা থেকে ফোঁটে অনেক লাল শাপলা ফুল। এভাবে মাত্র ৪-৫ বছরেই প্রায় ১০ একর বিল লাল শাপলার বিলে পরিণত হয়। এভাবে বাড়তে থাকলে ১৫ বছরে লাল শাপলা বিল কমপক্ষে ২৫ একর জায়গা বিস্তার করবে। 

এ সময় স্থানীয় কৃষক ছকমেল (৬০), ইসলাম উদ্দিন (৬০), শাহিনসহ (৬৫) অনেকে জানান, লাল শাপলা বিলের মালিকেরা সবাই কৃষক শ্রেণির লোক। এরা সবাই নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির লোক। তাঁরা আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ বিলটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্রে রূপ দিতে পারতেন। 

লাল শাপলা বিলটি শুধু সৌন্দর্যই নয়, বিল থেকে শাপলা তুলে রংপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন এলাকার কয়েকটি দরিদ্র পরিবার। ডিসেম্বর মাসে শীতের শুরুতে বিলের পানি কমে যায়। তখন শাপলা গাছও মরে যায়। সে সময় কৃষকেরা এখানে বোরো ধান চাষ করেন। একই জমিতে ধান ও শাপলার এ সহাবস্থান উত্তরাঞ্চলের আর কোথাও দেখা যায়নি। 

এ বিলটি গঙ্গাচড়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত। রংপুর মহানগরী থেকে অটোরিকশা যোগে বুড়িরহাট হয়ে সরাসরি এখানে যাওয়া যায়। গঙ্গাচড়া উপজেলা সদর থেকেও বালারঘাট হয়ে সরাসরি অটোরিকশায় যাওয়া যায়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত