Ajker Patrika

উচ্চমাত্রার সারে পরাগায়নকারী পোকামাকড় অর্ধেকে নেমেছে: বিশ্বের দীর্ঘতম গবেষণার ফল

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উচ্চমাত্রার সার ব্যবহারের ফলে তৃণভূমিতে পরাগায়নকারী পোকামাকড়ের সংখ্যা শুধু অর্ধেকে নেমে আসাই নয়, এর পাশাপাশি ফুলের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সময় ধরে চলা একটি গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি এমন আশঙ্কার কথাই জানিয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্স এবং রথামস্টেড রিসার্চ পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, কৃষিজ ঘাসের জমিতে নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম এবং ফসফরাসযুক্ত সারের পরিমাণ বৃদ্ধি করলে ফুলের সংখ্যা পাঁচ গুণ কমে যায় এবং পরাগায়নকারী পোকামাকড়ের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে।

গবেষণাটি ‘এনপিজে বায়োডাইভার্সিটি’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা গেছে, সার ব্যবহার করা হয়নি এমন জমিতে মৌমাছির সংখ্যা সার সর্বোচ্চ মাত্রায় ব্যবহৃত হয়েছে এমন জমির তুলনায় ৯ গুণ বেশি।

গবেষণার প্রধান লেখক ড. নিকোলাস ব্যালফোর বলেন, ‘সারের ব্যবহার বাড়ালে পরাগায়নকারীর সংখ্যা কমে যায়। এটি সরাসরি একটি সম্পর্ক, যা আগে কখনো এমনভাবে দেখা হয়নি।’

নিকোলাস জানান, সার ব্যবহারের ফলে দ্রুত বর্ধনশীল ঘাস অন্য গাছপালা ও ফুলকে দমিয়ে রাখে। এর ফলে ফুল এবং পোকামাকড় উভয়ের সংখ্যা হ্রাস পায়। ফুলের বৈচিত্র্য যত বেশি, পরাগায়নকারীদের বৈচিত্র্যও তত বেশি। কারণ একেক পোকা-মাকড় একেক ফুলের মধু খেয়ে বাঁচে।

গবেষণাটি যুক্তরাজ্যের হার্টফোর্ডশায়ারের রথামস্টেড পার্ক গ্রাসে পরিচালিত হয়েছে। ১৮৫৬ সাল থেকে এটি অধ্যয়ন করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যে চাষের জমিতে গড়ে প্রতি হেক্টরে ১০০ কেজি সার ব্যবহার করা হয়। গবেষণায় সর্বোচ্চ ১৪৪ কেজি পর্যন্ত সার ব্যবহার লক্ষ্য করা হয়েছে। এমন জমিগুলোতে পরাগায়নকারী পোকামাকড়ের সংখ্যা ৫০ শতাংশ বা তারও বেশি হ্রাস পেয়েছে।

এমনকি গড় মাত্রায় সার ব্যবহৃত হয় এমন জমিতেও সার ব্যবহার হয় না এমন জমির তুলনায় ৪২ শতাংশ কম পরাগায়নকারী এবং পাঁচ গুণ কম ফুল ছিল।

গবেষণার আওতাধীন রথামস্টেডের তৃণভূমি। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
গবেষণার আওতাধীন রথামস্টেডের তৃণভূমি। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

নাইট্রোজেন-সমৃদ্ধ সারে সবচেয়ে বেশি প্রভাব দেখা গেছে। তবে নাইট্রোজেন বাদ দিয়ে তৈরি সারের মিশ্রণে তুলনামূলক বেশি পরাগায়নকারী এবং ফুল পাওয়া গেছে।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ তৃণভূমি উচ্চ-মানের প্রজাতি-সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে বিবেচিত। ১৯৩০ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের ৯৭ শতাংশ বুনোফুলের ঘাসভূমি হারিয়ে গেছে। পাশাপাশি পরাগায়নকারী পোকামাকড়ের সংখ্যাও ব্যাপকভাবে কমে গেছে।

গবেষণায় প্রতিটি প্লটের উৎপাদনশীলতা মাপা হয় মৌসুম শেষে খড়ের পরিমাণের মাধ্যমে। বিভিন্ন সারের প্রয়োগে ১৮টি জমি এই পরীক্ষার আওতায় ছিল, যেখানে—মৌমাছি, প্রজাপতি, ভ্রমর এবং অন্যান্য পরাগায়নকারীদের সংখ্যা গণনা করা হয়।

গবেষণাটি কৃষকদের দোটানার মধ্যে ফেলে দিতে পারে। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
গবেষণাটি কৃষকদের দোটানার মধ্যে ফেলে দিতে পারে। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

গবেষণাটি কৃষকদের জন্য একটি বড় দোটানার কারণ হতে পারে। কারণ বেশি পরিমাণ ফুল এবং পরাগায়নকারী পেতে জমিকে কম উর্বর রাখতে হয়। এতে ফলনের পরিমাণ কমে।

গবেষকেরা মত দিয়েছেন, ফুল এবং পরাগায়নকারীর বৈচিত্র্য এবং ঘাসের উৎপাদনশীলতার মধ্যে একটি ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। এই ভারসাম্য বজায় রাখতে রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ড. নিকোলাস বলেন, ‘ফলন কমে যাওয়াকে ভালো হিসেবে ধরা হয় না যদিও, তবে ফলন কিছুটা কম পেলেও পরাগায়নকারী, মাটির স্বাস্থ্য, বায়ুর মান এবং চরম আবহাওয়া মোকাবিলায় সহনশীলতা বাড়ানোর মতো সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।’

ল্যাংকাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফিলিপ ডনকার্সলি বলেন, ‘এই গবেষণার সময়কাল অত্যন্ত চমকপ্রদ। সাধারণত আমাদের গবেষণা চার থেকে পাঁচ বছর চলে। কিন্তু এটি প্রায় ১৫০ বছরের সার প্রয়োগ এবং এর প্রভাব প্রতিফলিত করেছে। ব্রিটিশ কৃষি জমিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের এটি একটি বাস্তব চিত্র।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ৪ বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র

প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার পর যা বলল ইইউ

আপনাদের সঙ্গে হাত মেলাব না, বিস্ফোরক তামিম

কাগজে-কলমে মেয়র হওয়ায় দায়িত্ব পালন করলাম: জাতীয় ঈদগাহ পরিদর্শন শেষে ইশরাক

এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণায় বিএনপি ও জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত