Ajker Patrika

আন্দামান সাগরে লঘুচাপ, যা জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২৫
আন্দামান সাগরে লঘুচাপ, যা জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

দক্ষিণ আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, লঘুচাপটির গতিপথ কোন দিকে হবে, এটি এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে আপাতত মনে হচ্ছে, এটি নিম্নচাপ কিংবা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে বাংলাদেশে আঘাত হানার আশঙ্কা কম। ভারতের তামিলনাড়ুর দিকে যেতে পারে।

আজ রোববার সকালে আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লঘুচাপটি শক্তিশালী হয়ে আরও ঘনীভূত হতে পারে। তবে কোথায় আঘাত হানবে, সে ব্যাপারে এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। আরও পরে এর গতিপথ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।’

এদিকে আজ রোববার সকাল থেকে ঢাকা ও আশপাশের আবহাওয়া রয়েছে রৌদ্রোজ্জ্বল। সারা দিন এই আবহাওয়ার কোনো পরিবর্তন হবে না। তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ সকালে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৮ শতাংশ।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত হবে ৫টা ১১ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় হবে ৬টা ১৯ মিনিটে।

রাজধানী ঢাকায় শীতের তেমন দেখা না মিললেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা কমছে। গতকাল সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ একই এলাকায় তাপমাত্রা কমে হয়েছে ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে আজকের সম্ভাব্য পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় ভূমিকম্পের গভীরতা ১০ কিলোমিটার কেন

মহাখালীতে চলন্ত বাসে দেওয়া হয় আগুন, হুড়োহুড়ি করে নেমে প্রাণে বাঁচলেন যাত্রীরা

বিমানবন্দরে দুই কোটি টাকার স্বর্ণসহ হজের মুয়াল্লিম গ্রেপ্তার

ভূমিকম্প আতঙ্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশ

ট্রাম্প-মামদানির বৈঠকের পর ভারতের জন্য যে বার্তা দিলেন শশী থারুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভয়ে ছোটাছুটিতেই আহত হয় বেশি

রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৬
রাজধানীসহ সারা দেশে গত শুক্রবারের ভূমিকম্পে আহত হয়েছে অনেকে। আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে গিয়ে কারও হাত ভেঙেছে, কারও পা ভেঙেছে। গুরুতর আহতদের অনেকে ভর্তি হয়েছে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে। আকস্মিকভাবে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চাপ বেড়েছে জরুরি বিভাগে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীসহ সারা দেশে গত শুক্রবারের ভূমিকম্পে আহত হয়েছে অনেকে। আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে গিয়ে কারও হাত ভেঙেছে, কারও পা ভেঙেছে। গুরুতর আহতদের অনেকে ভর্তি হয়েছে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে। আকস্মিকভাবে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চাপ বেড়েছে জরুরি বিভাগে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভূমিকম্প হলে করণীয় সম্পর্কে জানা না থাকায় গত শুক্রবার আহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। হঠাৎ প্রবল ঝাঁকুনিতে কী করবেন বুঝতে না পেরে আতঙ্কে কেউ লাফ দেন, কেউ দৌড় দেন, কেউবা দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করেন, আবার কেউ ঝাঁকুনিতে নিচে পড়ে গেছেন। তাঁদের কারও মাথায় আঘাত লেগেছে, অনেকের হাত বা পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ রয়েছেন।

ভূমিকম্পে আহত বেশ কয়েকজন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, ভূমিকম্পের সময় করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা থাকলে আহতের সংখ্যা কম হতো।

রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভূমিকম্পে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ২০০ জন গত শুক্র ও গতকাল শনিবার চিকিৎসা নেন। তাঁদের মধ্যে এ দুই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২৮ জন। আহত অন্যরা অন্যান্য হাসপাতাল-ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। অনেকে সামান্য আহত হওয়ায় হাসপাতালে যাননি। শুক্রবারের ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে শিশুসহ ১০ জন নিহত হন।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, ভূমিকম্পে আহত ব্যক্তিদের ১১৯ জন গত দুদিনে এই হাসপাতালে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে ভর্তি করা হয়েছে ২৩ জনকে। বাকিদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়েছে।

ভূমিকম্পে আহত ব্যক্তিদের কয়েকজন ভর্তি রয়েছেন পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে। গতকাল সেখানে গিয়ে তাঁদের অন্তত আটজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভূমিকম্পের সময় তাঁরা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ভূমিকম্প হলে কী করতে হবে, তা জানতেন না। আতঙ্কিত হয়ে বাঁচার চেষ্টা করে আহত হয়েছেন।

সেখানে চিকিৎসাধীন গাজীপুরের ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (২৫) জানান, ভূমিকম্পের সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলের দ্বিতীয় তলায় নিজের কক্ষে শুয়েছিলেন। হঠাৎ বিছানা নড়ে ওঠে, পুরো ভবন যেন ঝাঁকি খাচ্ছে। এর মধ্যে জানালার কাচ ভাঙার শব্দে তিনি ভয় পেয়ে যান। মনে হচ্ছিল পুরো ভবন বুঝি ভেঙে পড়বে। হলের অনেকে দৌড়ে বাইরে বের হতে থাকেন। কোনো উপায় না দেখে তিনি দোতলা থেকে লাফ দেন। নিচে ঢালাইয়ের ওপর পড়ায় ডান পা ভেঙে গেছে, অস্ত্রোপচার করতে হবে।

আবু সাঈদের পাশেই চিকিৎসা নিচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আব্দুস সোবহান (৫৪)। তিনি শুক্রবার সকালে এলাকার গলির চায়ের দোকানে বসেছিলেন। দেখেন, আশপাশের ভবনগুলো নড়ছে, কাঁপছে। মানুষের চিৎকার ও দৌড়াদৌড়ি শুরু হলে তিনিও দৌড় দিলে পড়ে যান। তাঁর ওপর দিয়ে মানুষ দৌড়াতে থাকে। তাঁর হাঁটুর অংশে একটা হাড়ে ফাটল ধরেছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, দ্রুতই ভালো হয়ে যাবে।

মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজারে একটি নির্মাণাধীন ভবনের চারতলা থেকে ভূমিকম্পের সময় রডের ওপর পড়ে গুরুতর আহত হন শাহাদাত হোসেন (৩৫)। পড়ার পর তিনি অচেতন হয়ে যান। তিনি পঙ্গু হাসপাতালের ‘বি’ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তাঁর পরিবার জানায়, শাহাদাতের ডান পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। কোমর ও বুকের হাড়ে ফাটল আছে। অস্ত্রোপচার করার কথা বলেছেন চিকিৎসকেরা।

আহত শাহাদাত খুব ধীরে ধীরে বললেন, কয়েকজন কাজ করছিলেন। তিনি ভবনের এক পাশে ছিলেন। হঠাৎ ভবন নড়ে যাওয়ায় অন্যরা একদিকে চলে গেছেন। তিনি যেতে পারেননি, ঝাঁকুনিতে নিচে পড়ে যান।

জুরাইন রেলগেট এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের ছয় তলায় কাজ করার সময় ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে রাজমিস্ত্রি ধলা মিয়া পাঁচ তলার ছাদে পড়ে যান, দুই পায়েই আঘাত পান। ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ওই মুহূর্তে কী করব বুঝতে পারছিলাম না।’

১৪ বছরের শিশু সাকিব খান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় নিজ বাসায় সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় ঝাঁকুনিতে সিঁড়িতেই পড়ে যায়। এতে তার বাম ঊরুর ওপরের হাড় ভেঙে যায়। তার পায়ে অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক মো. আবুল কেনান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভূমিকম্পের কারণে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের অবস্থা স্থিতিশীল। কারোর অবস্থাই গুরুতর নয়, মৃত্যুর ঝুঁকি নেই। রোগীদের বেশির ভাগই পায়ে ও মাথায় আঘাত পেয়েছে। বেশির ভাগই ভয়ে নামতে গিয়ে বা লাফ দিয়ে পা ভেঙেছে। সবাইকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল সূত্র জানায়, ভূমিকম্পে আহতদের মধ্যে ৬৬ জন গত দুদিনে এই হাসপাতালে আসেন। তাঁদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীসহ পাঁচজন ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বিকেলে ঢামেক হাসপাতালের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, মাথা, ঘাড় ও বাম পাঁজরে ব্যান্ডেজ নিয়ে শুয়ে আছেন হারুন অর রশীদ (৫৫)। তিনি মালিবাগের চৌধুরীপাড়ার বাসা থেকে বের হওয়ার সময় পাশের ছয় তলার দেয়াল ধসে পড়ে আহত হন।

ভূমিকম্পের সময় গুরুতর আহত মগবাজারের মীরেরবাগের রিকশাচালক আবু বকর সিদ্দিক (৫৫) ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তিনি গতকালও অচেতন ছিলেন। তাঁর ছেলে তৌহিদুল জানান, তাঁর বাবা চা-পান করতে বাইরে বের হয়েছিলেন। এ সময় পাশের নির্মাণাধীন ভবনের ওপর থেকে দেয়াল ধসে তাঁর মাথায় পড়লে গুরুতর আহত হন।

ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ভূমিকম্পের সময় ভবন থেকে লাফ দিয়ে ও মাথায় ইট পড়ে আহত পাঁচজন ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আবু বকর সিদ্দিকের মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিদের সেরে উঠতে সময় লাগবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় ভূমিকম্পের গভীরতা ১০ কিলোমিটার কেন

মহাখালীতে চলন্ত বাসে দেওয়া হয় আগুন, হুড়োহুড়ি করে নেমে প্রাণে বাঁচলেন যাত্রীরা

বিমানবন্দরে দুই কোটি টাকার স্বর্ণসহ হজের মুয়াল্লিম গ্রেপ্তার

ভূমিকম্প আতঙ্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশ

ট্রাম্প-মামদানির বৈঠকের পর ভারতের জন্য যে বার্তা দিলেন শশী থারুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অনভ্যস্ত দুর্যোগে মানসিক আঘাত

  • কারও কারও ক্ষেত্রে আঘাত কাটতে সময় লাগতে পারে
  • কাউন্সেলিংসহ মানসিক সহায়তা প্রয়োজন
  • মহড়ার ব্যবস্থা থাকলে মানসিক আঘাত কমাতে সহায়ক হবে
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ০০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গত শুক্রবার সকালে ছুটির দিনের আমেজটি ভেঙে খান খান করে দিয়েছে সারা দেশ কাঁপিয়ে তোলা ভূমিকম্প। অগুনতি মানুষ নিশ্চয়ই নানা পারিবারিক বা বিশেষ সামাজিক আয়োজনে দিনটি কাটাবেন বলে ভেবে রেখেছিলেন। পায়ের নিচে পৃথিবী পাগলের মতো দুলে উঠে মুহূর্তেই ছড়িয়ে দিল আতঙ্ক। অবকাঠামো ভেঙে প্রাণও হারাল শিশুসহ কয়েকজন। উঁচু স্থান থেকে লাফিয়ে পড়ে বা হুড়োহুড়ি করে ঘর ছাড়তে গিয়ে আহত হয়েছে আতঙ্কিত অনেক মানুষ।

ভূমিকম্পের পরও বিশেষ করে রাজধানীসহ দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। পারস্পরিক আলাপ ছাড়াও গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে তার নমুনা। ভূমিকম্পের প্রবল কম্পনে অনেকেই তীব্র মানসিক আঘাত পেয়েছে। ঘটনার এক দিন পর গতকাল শনিবারও অনেকে স্বাভাবিক হতে পারেনি। গতকালই আবার সকাল-সন্ধ্যা দুই দফা মৃদু পরাঘাত অনুভূত হওয়ায় তাদের অস্বস্তি বেড়েছে বৈ কমেনি। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশে ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে অপরিচিত দুর্যোগ হওয়ায় এতে মানসিক আঘাতের প্রভাব বেশি। ভূমিকম্পের গাণিতিক মাত্রার তুলনায় কম্পনটা অনেক বেশি অনুভূত হওয়ায় সবার মনে তা বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে।

রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের (ইউএসজিএসের হিসাবে ৫.৫) দুলুনি শুরু হতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘরে থাকা মানুষ সাধ্যমতো দ্রুত বাইরে বেরিয়ে আসে। খোলা জায়গা সীমিত যেসব জায়গায়, সেখানে আবার ভয় ছিল মাথার ওপর আশপাশ থেকে কিছু ভেঙে পড়ে কি না। ওপরের তলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নামতে গিয়ে নানা মাত্রায় আহত হয়েছে কয়েক শ মানুষ। শুক্রবার রাত ৮টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে বলা হয়েছিল, ভূমিকম্পে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ৬০৬ জন আহত রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা নেয় আরও অনেকে। কিছু রোগী ভর্তিও রয়েছে।

হাত-পা ভাঙা বা মচকানোর মতো দৃশ্যমান শারীরিক আঘাতের ধকল সামলানো গেলেও বিশেষজ্ঞদের এখন ভাবাচ্ছে মানসিক আঘাতের বিষয়টি। গতকালও অনেকেই মানসিক ধাক্কার আঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

রাজধানীর কলাবাগান এলাকার বেসরকারি চাকরিজীবী আতাউর রহমান জানান, তিনি একটি ১০ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় থাকেন। ভূমিকম্প শুরু হতেই সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তিনি দ্রুত পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিচে নেমে যান।

আতাউর রহমান বলেন, ‘ওই রাতে ঘুমাতে গেলে মনে হয় খাট দুলছে। চোখ খুললেও মনে হয় পুরো ঘর যেন কাঁপছে। সারা রাত ঠিকমতো ঘুম হয়নি। সকালে ওঠার পরও শরীর দুর্বল, মাথা ঘোরে, চারপাশ দুলছে মনে হয়। পরিবারের আরও কয়েকজনের কমবেশি একই অবস্থা। ওদের সাহস দিতে নিজের ভয় লুকিয়ে রেখেছি।’

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে ভূমিকম্প খুব ঘন ঘন না ঘটায় মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে স্বাভাবিক প্রস্তুতি বা ঝুঁকিবোধও তুলনামূলক কম। শুক্রবারের ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে ব্যাপক মাত্রায়। অনেকের মতে, কয়েক দশকের মধ্যে দেশে কোনো ভূমিকম্প এত শক্তিশালীভাবে অনুভূত হয়নি। আবার এর উৎপত্তিস্থল দেশের অভ্যন্তরে, রাজধানীর অদূরে। সব মিলিয়ে এই ‘অপরিচিত দুর্যোগ’ মানুষের মনে আচমকা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এমন অপ্রত্যাশিত ও আকস্মিক দুর্যোগ মানুষের মধ্যে অতিরিক্ত ভীতি, বিভ্রান্তি, উদ্বেগ ও মানসিক অস্থিরতা তৈরি করে। কারও কারও ক্ষেত্রে এই মানসিক আঘাত কাটতে সময় লাগতে পারে।

দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা করেছেন—এমন কয়েকজন চিকিৎসক আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, এ ধরনের দুর্যোগে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক, মৃত্যুভীতি ও নিয়ন্ত্রণ হারানোর অনুভূতি সৃষ্টি হয়। শিশু, বৃদ্ধ, একা থাকা বা পূর্বে আঘাতের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ওপর প্রভাব তীব্র হয়। এদের ট্রমা কাউন্সেলিংসহ মানসিক সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পের সময় পুরো ভবন কেঁপে ওঠা, সবার দ্রুত পালানোর চেষ্টা, চারপাশের বিশৃঙ্খলা এবং পরে সম্ভাব্য পরাঘাতের আশঙ্কা—এসব মিলিয়ে একটি তীব্র মানসিক অভিঘাত সৃষ্টি হয়। এই অভিঘাত অনেক সময় সাধারণ আতঙ্কের বাইরে গিয়ে অ্যাংজাইটি (গভীর উদ্বেগ), প্যানিক অ্যাটাক, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি), ঘুমের ব্যাঘাত, মাথাঘোরা বা দুলুনি অনুভবের মতো লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অপ্রত্যাশিত দুর্যোগ মানসিক স্বাস্থ্যে গুরুতর প্রভাব ফেলে। অনেকের প্যানিক অ্যাটাক বা ঘুমের ব্যাঘাত হয় এবং সারাক্ষণ ভয় বা আতঙ্কে দিন কাটে, যা স্বাভাবিক। এটা কাটিয়ে ওঠার একমাত্র উপায় হলো স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া এবং সেই সময় ঘটে যাওয়া ইতিবাচক বিষয়গুলো মনে রাখা। নেতিবাচক স্মৃতিগুলো এড়িয়ে চলা জরুরি। যাঁদের মানসিক আঘাত বেশি, তারা অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।’

ভূমিকম্পের পর মানসিক আঘাতের প্রমাণ বহু গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বৈজ্ঞানিক সাময়িকী বায়োমেড সেন্টারের বিএমসি সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ৪০টি প্রাসঙ্গিক গবেষণায় ভূমিকম্প-পরবর্তী পৌনে এক লাখ বেঁচে থাকা ব্যক্তির তথ্য পরীক্ষা করে প্রায় ১৮ হাজারের মধ্যে পিটিএসডি নির্ণয় করা হয়েছে।

তুরস্কের ২০২৩ সালের ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পর উপদ্রুত এলাকার মানুষের মানসিক আঘাত নিয়ে একটি গবেষণা গত জুলাইতে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশ করেছে। ওই ঘটনার এক বছর পরও স্থানীয় মানুষের মধ্যে মানসিক আঘাত দেখা গেছে গবেষণায়। দেখা গেছে, গবেষণায় অংশগ্রহণ করা আড়াই হাজার ব্যক্তির অর্ধেকের মধ্যেই উচ্চমাত্রার মানসিক ট্রমা ছিল। ৬০ শতাংশের মধ্যে উচ্চমাত্রার পোস্ট-ট্রমাটিক উপসর্গ, ৪৪ শতাংশের মধ্যে উচ্চ উদ্বেগ এবং ৬১ শতাংশের মধ্যে উচ্চ বিষণ্নতার উপসর্গ ছিল। ৩৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর মধ্যে তিনটি উপসর্গই লক্ষ করা গেছে।

জাপান, চীন, নেপালসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভূমিকম্পের পর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর চালানো আরও অনেক গবেষণাতেই প্রায় একই ধরনের ফলাফল পাওয়া গেছে।

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি মানসিক আঘাত একসময় উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি করে, যা ডায়াবেটিসকে প্রভাবিত করতে পারে। পরে হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। কিডনির সমস্যাসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. লেলিন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভূমিকম্প কখন হবে, তা আগে থেকে জানা সম্ভব হয় না। এতে প্রথম অবস্থায় অবকাঠামো ধ্বংস হয় এবং মানুষের ও অন্যান্য প্রাণীর প্রাণহানি ঘটে। তবে তাৎক্ষণিক এই শারীরিক-মানসিক আঘাতের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক প্রভাবও থাকে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক, প্রিয়জন হারানো ও সম্পদ বিধ্বস্ত হওয়ার আশঙ্কাসহ নানা মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যার মধ্যে অনিদ্রা, পিটিএসডি ও উদ্বেগ অন্তর্ভুক্ত।’

লেলিন চৌধুরী সরকারি কর্তৃপক্ষকে ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন দুর্যোগের সময় কী করতে হবে, তা মহড়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে শেখানোর পরামর্শ দেন। তাঁর মতে, এতে মানুষ মাথা ঠান্ডা রেখে বিপদের সময় সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারবে। তাতে মানসিক আঘাতের আশঙ্কা কমবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় ভূমিকম্পের গভীরতা ১০ কিলোমিটার কেন

মহাখালীতে চলন্ত বাসে দেওয়া হয় আগুন, হুড়োহুড়ি করে নেমে প্রাণে বাঁচলেন যাত্রীরা

বিমানবন্দরে দুই কোটি টাকার স্বর্ণসহ হজের মুয়াল্লিম গ্রেপ্তার

ভূমিকম্প আতঙ্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশ

ট্রাম্প-মামদানির বৈঠকের পর ভারতের জন্য যে বার্তা দিলেন শশী থারুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভয়ের মধ্যে ৩ দফা ভূমিকম্প

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ০০
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

শুক্রবারের দেশ কাঁপানো ভূমিকম্পের পরদিন গতকাল শনিবার আবার তিন দফা পরাঘাত হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে সাড়ে সাত ঘণ্টায় তিনবার মৃদু ভূমিকম্প হয়েছে। গতকালের বারবার ভূমিকম্পের সময় ভয়ে অনেকে বাড়িঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। তুলনামূলক ভূমিকম্পের পর এ ধরনের পরাঘাত স্বাভাবিক হলেও কম্পনের ধরনের কারণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বড় ভূমিকম্পেরই আভাস।

শুক্রবারের ভূমিকম্পে শিশুসহ ১০ জন নিহত এবং ছয় শতাধিক লোক আহত হলেও গতকালের তিন দফা ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বলেছে, গতকাল শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে ৩ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর পলাশ। এর পর সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটের দিকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝাঁকুনি অনুভূত হয়। এক সেকেন্ডের ব্যবধানে দু দফা ভূমিকম্প হয়। প্রথমটির উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানীর বাড্ডা। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৭। পরেরটির মাত্রা ছিল বেশি, ৪ দশমিক ৩। এটির উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী।

বারবার ভূমিকম্প হওয়াটা উদ্বেগের বিষয় বলে জানিয়েছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতারও। গতকাল রাতে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে বহু বছর ধরে বিপুল শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে। তার হিসাবে মৃদু ভূমিকম্পের মাধ্যমে এ শক্তির মাত্র ১ শতাংশও এ পর্যন্ত বেরিয়ে যায়নি। এতে বলা যায়, আগামীতে একটি বড় ভূমিকম্পের দিকে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে।

হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘শুক্রবারের ভূমিকম্পের পর পরাঘাত বা ‘আফটার শক’ হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। তবে ঘন ঘন পরাঘাতের অর্থ হচ্ছে ভূগর্ভের চ্যুতি নড়তে শুরু করেছে। সঞ্চিত শক্তি নির্গমনের একটি প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। এমন পরাঘাত হতে হতে একসময় বড় ভূমিকম্প হবে। সেটা খুব অল্প সময়ের মধ্যেও হতে পারে।’

শুক্রবার সকালে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ কেঁপে ওঠে। এটির উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী। মাত্রা মাঝারি ধরনের হলেও ঝাঁকুনির প্রবল মাত্রার জন্য এ ভূমিকম্প দেশজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তার পরদিন তিন পরাঘাত মানুষের উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে অনেকেই নিজেদের মানসিক অবস্থা তুলে ধরেছেন। অনেকে ফোন করে আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নিয়েছেন এবং সাবধানে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।

আশিক ইলাহী সাব্বির নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ঢাকায় যে হারে বিল্ডিং নির্মাণ আর খোঁড়াখুঁড়ি চলছে, মনে হচ্ছে কোনো একদিন পুরো শহরটাই মাটির নিচে দেবে যাবে।’ কাইয়ুম খান তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যাঁরা বড় বড় বিল্ডিংয়ের আশেপাশে থাকেন বা ওই সব ভবনে বসবাস করেন, তাঁরা ভীষণ আতঙ্কে আছেন। ঢাকার বাসিন্দাদের অনেকেই ভূমিকম্পের সময় কী করতে হবে, সে বিষয়ে অসচেতন। তাই সরকারের পক্ষ থেকে জরুরিভিত্তিতে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন, যাতে মানুষ শুধু আতঙ্কিত না হয়ে করণীয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পায়।’

ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ ফকিরেরপুল এলাকায় থাকেন তরুণ সাব্বির মাহমুদ। তাঁর বড় ভাই নিজের পরিবার নিয়ে থাকেন শেওড়াপাড়ায়। সাব্বির বলেন, ‘শনিবারের (গতকাল) তিনবার ভূমিকম্পের পর বড় ভাই ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন। আমিও আমার বন্ধুদের খোঁজ নিয়েছি। শুক্রবারের ভূমিকম্পের কথা মনে হলেই ভয় লাগছে।’

ঢাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত

গতকাল সন্ধ্যার ভূমিকম্পের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলগুলোতে আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় কয়েক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শামসুন নাহার, কুয়েত মৈত্রী ও রোকেয়া হলের কয়েকজন রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজমান আতঙ্ক এবং কয়েক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আজ রোববারের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থগিত হওয়া পরীক্ষার নতুন সময়সূচি পরে জানানো হবে।

এর আগে শুক্রবার সকালের ভূমিকম্পের সময় ভয়ে ছাত্র হল ভবনের ওপরের তলা থেকে লাফ দিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত চার শিক্ষার্থী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় ভূমিকম্পের গভীরতা ১০ কিলোমিটার কেন

মহাখালীতে চলন্ত বাসে দেওয়া হয় আগুন, হুড়োহুড়ি করে নেমে প্রাণে বাঁচলেন যাত্রীরা

বিমানবন্দরে দুই কোটি টাকার স্বর্ণসহ হজের মুয়াল্লিম গ্রেপ্তার

ভূমিকম্প আতঙ্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশ

ট্রাম্প-মামদানির বৈঠকের পর ভারতের জন্য যে বার্তা দিলেন শশী থারুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় ভূমিকম্পের গভীরতা ১০ কিলোমিটার কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫০
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে হঠাৎ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। স্যার এএফ রহমান হলের ১০৫ নম্বর কক্ষে ফাঁটল দেখা দেয়, আসবাবপত্র ভেঙে পড়ে যায়। ছবি: ফোকাসবাংলা
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে হঠাৎ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। স্যার এএফ রহমান হলের ১০৫ নম্বর কক্ষে ফাঁটল দেখা দেয়, আসবাবপত্র ভেঙে পড়ে যায়। ছবি: ফোকাসবাংলা

দুই দিনে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলে চারটি ভূমিকম্প হয়ে গেল। এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি ১০ জনের প্রাণহানি ঘটিয়েছে। উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার অদূরে নরসিংদীর ঘোড়াশালে। আর আজ সকাল ও সন্ধ্যায় তিন দফায় মৃদু ভূমিকম্প হয়েছে, ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায়। এগুলোর মাত্রা রিখটার স্কেলে ৫ এর নিচে ছিল। লক্ষ্যণীয় হলো— এই ভূমিকম্পগুলোর সবকটির গভীরতা ১০ কিলোমিটার।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, ১০ কিলোমিটার ভূমিকম্পের সাধারণ গভীরতা। এটিকে ‘নির্ধারিত গভীরতা’ হিসেবে ধরা হয়। অনেক সময় ভূমিকম্পের তথ্য এতটাই অপর্যাপ্ত হয় যে, সঠিক গভীরতা নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। তখন ভূমিকম্পের গভীরতাকে ১০ কিলোমিটার ধরা হয়। কিন্তু কেন?

ভূমিকম্পের সাধারণ গভীরতা ১০ কিলোমিটার কেন

পৃথিবীর নানা অঞ্চলের ভূমিকম্পের নির্ভরযোগ্য ডেটা বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ভূমিকম্পের অধিকাংশই প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে ঘটেছে। কোনো অঞ্চলের ভূকম্পনের গভীরতার নির্ভরতার হিসাব নিয়ে হিস্টোগ্রাম তৈরি করলে দেখা যাবে, ১০ কিলোমিটার সর্বোচ্চ শিখরে থাকবে। সেকারণে গভীরতা জানা না থাকলে ১০ কিলোমিটারকে যুক্তিসঙ্গত গভীরতা হিসেবে দেখা হয়।

ইউএসজিএস আগে ৩৩ কিলোমিটারকে নির্ধারিত গভীরতা হিসেবে ধরত। কিন্তু আধুনিক গবেষণার তথ্য বলে, ১০ কিলোমিটারই বেশি বাস্তবসম্মত। তবে সাবডাকশন জোনসহ কিছু অঞ্চলে অনেক ভূমিকম্প ১০ কিলোমিটারেরও বহু গভীরে ঘটে। সেসব জায়গায় বাড়তি গভীরতা নির্ধারণ বেশি যৌক্তিক। সাবডাকশন জোন হলো এমন এলাকা, যেখানে পৃথিবীর দুটি টেকটোনিক প্লেট পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খায় এবং একটি অন্যটির নিচে ঢুকে পড়ে বা নেমে যায়।

গভীরতা নির্ধারণের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো— ভূমিকম্পের উপকেন্দ্রের কাছাকাছি পর্যাপ্ত সিসমিক স্টেশন না থাকা। সাধারণ নিয়ম হলো— ভূমিকম্পের গভীরতা নির্ভুলভাবে জানতে হলে উপকেন্দ্র থেকে নিকটতম সিসমিক স্টেশনের দূরত্ব ও ভূমিকম্পের গভীরতার চেয়ে কম হতে হবে।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে হঠাৎ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। স্যার এএফ রহমান হলের ১০৫ নম্বর কক্ষে ফাঁটল দেখা দেয়, আসবাবপত্র ভেঙে পড়ে যায়। ছবি: ফোকাসবাংলা
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে হঠাৎ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। স্যার এএফ রহমান হলের ১০৫ নম্বর কক্ষে ফাঁটল দেখা দেয়, আসবাবপত্র ভেঙে পড়ে যায়। ছবি: ফোকাসবাংলা

আধুনিক কম্পিউটিং ও তাত্ত্বিক উন্নতির কারণে এখন অনেক ক্ষেত্রে দূরের স্টেশন থেকেও গভীরতা নির্ণয় করা সম্ভব। তবুও বাস্তব নিয়ম হচ্ছে— ভূমিকম্প পরিমাপে নির্ধারিত গভীরতা ধরার ঘটনা অগভীর ভূমিকম্পের বেশি ঘটে, গভীর ভূমিকম্পে নয়।

ইউএসজিএসের সাম্প্রতিক নির্দেশনা বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রচুর ছোট ও অগভীর ভূমিকম্পের নির্ভরযোগ্য গভীরতা নির্ণয় করা যায় না। বিশেষ করে যখন নিকটতম সিসমিক স্টেশন ভূমিকম্পের উৎসবিন্দু থেকে অনেক দূরে থাকে। তখন কম্পিউটার অ্যালগরিদম ডিফল্ট গভীরতা ১০ কিলোমিটার ধরে নেয়। অতীতে ৩৩ কিলোমিটার ব্যবহৃত হলেও গবেষণায় দেখায় গেছে, বেশিরভাগ অগভীর ভূমিকম্পের গড় গভীরতা ৮–১২ কিলোমিটার। সেই কারণে এখন ১০ কিলোমিটারকেই সাধারণ মান হিসেবে ধরা হয়।

কেন নির্ভরযোগ্য গভীরতা নির্ধারণ করা কঠিন

ভূমিকম্পের গভীরতা নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজন হয় অন্তত তিন দিক থেকে শক্তিশালী সিসমিক সিগনাল। সিসমোলজিস্ট বা ভূকম্পবিদদের অনুসৃত নীতি হচ্ছে, যদি নিকটতম সিসমিক স্টেশন ভূমিকম্পের প্রকৃত গভীরতার চেয়ে দূরে থাকে, তাহলে নির্ভরযোগ্য ফল পাওয়া কঠিন।

এ কারণে—

ছোট মাত্রার কম্পন হলে সিগনাল দুর্বল হয়।

দূরবর্তী স্টেশনগুলোতে কম্পন পৌঁছায় বিকৃতভাবে।

অ্যালগরিদম সঠিক গভীরতা গণনা করতে ব্যর্থ হয়।

ফলে অনেক ছোট বা স্থানীয় ভূমিকম্পে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১০ কিমি গভীরতা দেখা যায়।

ঢাকার মতো সিসমিক অবজার্ভেশন স্টেশন কম থাকা এলাকায় এই নির্ধারিত গভীরতা ঘন ঘন দেখা যায়।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে শক্তিশালী ভূমিকম্পে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কয়েকটি স্থাপনায় ফাটল দেখা দিয়েছে। বহির্গমন গেইটের সংযোগ অংশে ফাটল, সেখানে কিছু অংশের সিলিং প্যানেলও খসে পড়েছে। ছবি: সংগৃহীত
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে শক্তিশালী ভূমিকম্পে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কয়েকটি স্থাপনায় ফাটল দেখা দিয়েছে। বহির্গমন গেইটের সংযোগ অংশে ফাটল, সেখানে কিছু অংশের সিলিং প্যানেলও খসে পড়েছে। ছবি: সংগৃহীত

তাহলে প্রকৃত ভূমিকম্পগুলো ১০ কিলোমিটার গভীরে?

সবসময় না। ভূমিকম্পের বাস্তব গভীরতা ০ থেকে ৭০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে পৃথিবীর ভূত্বক সাধারণত ৫–৭০ কিমি পুরু, এবং তার মধ্যে ঘটে যাওয়া অধিকাংশ ভূমিকম্পই অগভীর ভূমিকম্প, যার গভীরতা সাধারণত ০–৭০ কিলোমিটার।

এর মধ্যে—

০–২০ কিমি → সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প

২০–৭০ কিমি → মাঝারি গভীরতার

৭০ কিমির বেশি → সাবডাকশন জোনে দুর্লভ গভীর ভূমিকম্প

অতএব, ১০ কিলোমিটার বাস্তবে একটি সাধারণ অগভীর সিসমিক স্তর হলেও, ডেটা শতভাগ নির্ভুল না হলে এটি অ্যালগরিদমিক অনুমানও হতে পারে।

অগভীর ভূমিকম্পের প্রভাব

যখন ভূমিকম্পের উৎসবিন্দু মাটির কাছাকাছি—মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে—তখন তার কম্পন খুব দ্রুত পৃষ্ঠে পৌঁছে।

এর ফলে—

১. ঝাঁকুনি বেশি তীব্র হয়। একই মাত্রার ভূমিকম্প যদি ১০ কিমিতে হয়, তার কাঁপুনি ৫০ কিমি গভীরতায় হওয়া ভূমিকম্পের তুলনায় অনেক বেশি অনুভূত হয়।

২. জনবহুল নগরীগুলো বেশি ঝুঁকিতে। ঢাকার মতো মেগাসিটিতে লাখো ভবন, ভরাট করা নরম মাটি, অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ— সব মিলে অগভীর ভূমিকম্পে ক্ষতি গুরুতর হতে পারে।

৩. লিকুইফ্যাকশন ও ফাটল বাড়ার আশঙ্কা। নরম পলিতে মাটি তরলসদৃশ হয়ে ভবনের ফাউন্ডেশন দুর্বল হতে পারে।

৪. দুর্বল ভবনে কাঠামোগত ক্ষতি। একই মাত্রার ভূমিকম্প বেশি গভীরতা হলে যেটি হয়তো টের পাওয়া যেত না, অগভীর হওয়ার কারণে তাতে দেয়াল ধস, প্লাস্টার খসে পড়া বা ফাটল দেখা দিতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূমিকম্পের ঝুঁকি নির্ভর করে মূলত তিনটি বিষয়ের ওপর—

১. ম্যাগনিচ্যু ড (মাত্রা)

২. উপকেন্দ্র থেকে দূরত্ব

৩. ভবনের কাঠামোগত মান

গভীরতা তার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মাত্র।

অতএব ১০ কিলোমিটার গভীরতা মানেই ভয়ঙ্কর নয়। কিন্তু মাত্রা বেশি (৫.৫ বা তার বেশি) হলে ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ নগরীতে অগভীর ভূমিকম্পে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় ভূমিকম্পের গভীরতা ১০ কিলোমিটার কেন

মহাখালীতে চলন্ত বাসে দেওয়া হয় আগুন, হুড়োহুড়ি করে নেমে প্রাণে বাঁচলেন যাত্রীরা

বিমানবন্দরে দুই কোটি টাকার স্বর্ণসহ হজের মুয়াল্লিম গ্রেপ্তার

ভূমিকম্প আতঙ্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশ

ট্রাম্প-মামদানির বৈঠকের পর ভারতের জন্য যে বার্তা দিলেন শশী থারুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত