Ajker Patrika

সিংহের গর্জনের চেয়ে মানুষের কণ্ঠকে বেশি ভয় পায় বন্য প্রাণীরা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ১৫: ২৬
Thumbnail image

বনের পরাক্রমশালী সম্রাট সিংহ। তার ভয়ে তটস্থ থাকবে বন্য প্রাণীরা, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্তন্যপায়ী বন্য প্রাণীরা সিংহের চেয়ে মানুষের কণ্ঠকে বেশি ভয় পায়। এ তথ্য জানা গেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কের বিভিন্ন ওয়াটার হোল বা জলাশয়ের আশপাশে লুকিয়ে রাখা বিভিন্ন স্পিকারের মাধ্যমে মানুষের সাধারণ কথাবার্তার রেকর্ডিং শোনান বিজ্ঞানীরা। শতকরা ৯৫ শতাংশ বন্য প্রাণীই এ শব্দ শুনে প্রচণ্ড ভয় পায় এবং পালিয়ে যায়। 

এর বিপরীতে সিংহের গর্জনের রেকর্ডিং শুনে বন্য প্রাণীদের মধ্যে অনেক কম সতর্কতা বা আতঙ্ক চোখে পড়ে।

এখানে জানিয়ে রাখা ভালো, মানুষের যেসব কথা ব্যবহার করা হয়, সেগুলো ওই সব এলাকার স্থানীয়দের ব্যবহার করা বিভিন্ন ভাষার। 

গবেষণাটি চালানোর সময় আরেকটি মজার বিষয় উঠে আসে। সিংহের গর্জনে কোনো কোনো হাতি ভয় তো পায়ইনি, উল্টো প্রতিক্রিয়া হিসেবে শব্দের উৎসের সন্ধানে তৎপর হয়ে ওঠে।

গবেষণার ফলাফলগুলো থেকে মনে করা হয়, অ্যান্টিলোপ, হাতি, জিরাফ, চিতাবাঘ, ওয়ার্টহগের মতো প্রাণীরা বুঝে গেছে যে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ কিংবা মানুষ ধারেকাছে থাকাটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ বন্য প্রাণী শিকার, বন্দুকের ব্যবহার এবং তাদের ধরতে কুকুরের সাহায্য নেয় মানুষ।

গবেষণাটির এলাকা ক্রুগার জাতীয় উদ্যান হলেও এটি এর সীমানা ছাড়িয়ে পুরো বিশ্বের অবস্থাই তুলে ধরে বলে মনে করা হয় এর ফলাফলে। কারণ, অন্য সব শিকারি প্রাণীর চেয়ে বন্য প্রাণীরা গোটা বিশ্বেই এখন মানুষকে বেশি ভয় পায়।

ক্রুগার জাতীয় উদ্যানে একটি চিতাবাঘগবেষকেরা উল্লেখ করেন, বিষয়টি যেসব এলাকা বন্য প্রাণী বা ওয়াইল্ডলাইফ পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল, সেখানে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করছে। কারণ পর্যটকেরা যেসব বন্য প্রাণীর আকর্ষণে সেখানে যান, অসাবধানতাবশত তাদেরই ভয় পাইয়ে দিচ্ছেন।

গবেষণাপত্রটির একজন লেখক ড. লিয়ানা জ্যানেট বিবিসিকে জানান, তাঁদের গবেষণায় মনোযোগ দেওয়া হয়েছে ‘ইকোলজি অব ফিয়ার’ বা ‘ভয়ের বাস্তুবিদ্যা’র ওপর। এটি এমন একটি ধারণা, যার মাধ্যমে পরিবেশে শিকারি-শিকারের সম্পর্কের প্রভাবকে বোঝায়। 

‘আমরা বন্য প্রাণীদের যে ধরনের ভয় পেতে অনুপ্রাণিত করি, তা পরিমাপ করা, প্রশমিত করা এবং কাজে লাগানো একটি চ্যালেঞ্জ। আমরা যে সুযোগগুলোর কথা বলছি, সেগুলো এখন সংরক্ষণের পরিকল্পনা এবং সুরক্ষিত এলাকাগুলোর ব্যবস্থাপনার অবিচ্ছেদ্য উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।’ বলেন তিনি।

গবেষণার ফলাফল ঝুঁকিতে থাকা বন্য প্রাণীদের রক্ষায় নতুন একটি দুয়ারও উন্মুক্ত করছে। মানুষের শব্দ বা কণ্ঠ যদি ঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়, তবে সেটি বন্য প্রাণী চোরা শিকার বন্ধেও কাজে লাগতে পারে। ‘আমরা চোরা শিকারের জন্য পরিচিত জায়গাগুলো থেকে গন্ডারদের এভাবে দূরে সরিয়ে রাখা যায় কি না, সে বিষয়টিও পরীক্ষা করছি।’ বলেন লিয়ানা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত