Ajker Patrika

ভারত থেকে আসা দূষিত ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে অতিষ্ঠ বাংলাদেশের গ্রাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার আবদুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিদিনের ক্লাস শুরু হয় পাশের ‘কাটাখাল’ থেকে আসা বর্জ্য পদার্থের দুর্গন্ধ নিয়ে। ছবি: মঙ্গাবে
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার আবদুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিদিনের ক্লাস শুরু হয় পাশের ‘কাটাখাল’ থেকে আসা বর্জ্য পদার্থের দুর্গন্ধ নিয়ে। ছবি: মঙ্গাবে

প্রতিদিন সকালে দুর্গন্ধ নিয়ে ক্লাস শুরু হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার আবদুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয়ের পাশেই বয়ে চলেছে দুর্গন্ধময় কালো পানিভর্তি ‘কাটাখাল’ নামের একটি খাল, যার উৎস ভারতের আগরতলা শহর। ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে আসা ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের প্রায় আট কিলোমিটার বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়ে মিশেছে তিতাস নদীতে। এই খালের একটি অংশকে বলা হয় আখাউড়া চ্যানেল।

বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মাহমুদা আখতার বলেন, ‘এই খালের পানির দুর্গন্ধের কারণে পড়ালেখায় মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। শিক্ষকেরা সব সময় সতর্ক থাকেন, যেন কোনো শিশু খালের ধারে না যায়।’ মার্কিন পরিবেশবিষয়ক গবেষণাধর্মী ওয়েবসাইট মঙ্গাবের একটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রায় সারা বছরই খালে কালো পানি প্রবাহিত হয়। স্থানীয় কৃষক জান মিয়া ও নজরুল ইসলাম জানান, তাঁরা কখনো এই খালের পানি পরিষ্কার দেখেননি। বিশেষ করে, শুষ্ক মৌসুমে পানির অবস্থা আরও খারাপ হয়।

বলা হয়, ব্রিটিশ আমলে ত্রিপুরার রাজারা এই খাল বানিয়েছিলেন পণ্য পরিবহনের জন্য। তবে দেশভাগের পর বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়, আর খালটি ধীরে ধীরে আগরতলার পৌর ও শিল্প বর্জ্যের নিষ্কাশনপথে পরিণত হয়। বাংলাদেশ সরকার বহুবার ভারতের সঙ্গে সীমান্ত আলোচনায় এই খালের দূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত বছর আগরতলার আখাউড়া রোড এলাকায় একটি বর্জ্য (দৈনিক ৮ মিলিয়ন লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন) শোধনাগার চালুর খবর কিছুটা আশার সঞ্চার করলেও বাস্তবে সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি।

৫৩ বছর বয়সী মনু মিয়া মনে করেন, কাটাখালের দূষিত পানি তাঁদের ফসলের ওপর তেমন কোনো খারাপ প্রভাব ফেলে না। ছবি: মঙ্গাবে
৫৩ বছর বয়সী মনু মিয়া মনে করেন, কাটাখালের দূষিত পানি তাঁদের ফসলের ওপর তেমন কোনো খারাপ প্রভাব ফেলে না। ছবি: মঙ্গাবে

বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তর নিয়মিতভাবে কাটাখাল ও তিতাস নদীর পানির মান পরীক্ষা করে। সর্বশেষ এপ্রিল মাসের পরীক্ষায় দেখা যায়, পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা অনুমোদিত ৫ মিলিগ্রাম/লিটারের নিচে, আর বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন চাহিদা ও কেমিক্যাল অক্সিজেন চাহিদা যথাক্রমে ৩০ ও ৫০ মিলিগ্রাম/লিটার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। চট্টগ্রামের পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণ করা এই পানির নমুনা ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা।

আখাউড়ার প্রায় ১ হাজার ২০০ একর জমিতে কৃষিকাজ হয়, যার বেশির ভাগই দুই ফসলি জমি। শুষ্ক মৌসুমে বিকল্প পানির অভাবে কৃষকেরা বাধ্য হয়ে কাটাখালের দূষিত পানি ব্যবহার করছেন। ৩৩ বছরের কৃষক জাহেদ চৌধুরী বলেন, ‘এই পানি ব্যবহার করলে গায়ে চুলকানি হয়, কিন্তু বিকল্প না থাকায় এই পানিই ব্যবহার করি।’ ৫৩ বছর বয়সী মনু মিয়াও একই কথা বলেন। যদিও তাঁদের ধারণা, এই পানি ফসলের ওপর তেমন কোনো খারাপ প্রভাব ফেলে না।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন। আগের কিছু পরীক্ষায় কাটাখালের পানিতে ক্যাডমিয়াম, সালফার, সিসা, ম্যাঙ্গানিজ ও ক্রোমিয়ামের মতো ক্ষতিকর ভারী ধাতু পাওয়া গেছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘এই দূষিত পানি ব্যবহারে ধীরে ধীরে মাটি ও ফসলের মধ্যে বিষাক্ত উপাদান জমা হয়, যা মানবদেহে পৌঁছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।’

আখাউড়ার গরুচাষিরা কাটাখালের কচুরিপানাকেই পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেন। ছবি: মঙ্গাবে
আখাউড়ার গরুচাষিরা কাটাখালের কচুরিপানাকেই পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেন। ছবি: মঙ্গাবে

২০১৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এই দূষিত পানিতে জন্মানো জলজ উদ্ভিদ, যেমন কচুরিপানা দুধ ও মাংসে সিসা ও দস্তার মতো ধাতু জমা করে। কিন্তু আখাউড়ার গরুচাষিরা কাটাখালের কচুরিপানাকেই পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেন। এতে পশুর স্বাস্থ্য ও পরোক্ষভাবে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

আখাউড়ায় প্রতিদিনই কাটাখালসংলগ্ন এলাকা থেকে চর্মরোগে আক্রান্ত রোগী আসে বলে জানান আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিমেল খান। তাঁর মতে, চিকিৎসা দিলেও অনেক রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয় না।

বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই ১৯৯২ সালের জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন-সম্পর্কিত রিও ঘোষণার স্বাক্ষরকারী, যেখানে বলা হয়েছে, কোনো দেশ তার সীমান্তবর্তী দেশকে পরিবেশগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না।

ভারতের ত্রিপুরা সরকার কাটাখাল ও কালাপানিয়া খাল থেকে আসা বর্জ্য শোধনের জন্য মোট ৩১.৫ মিলিয়ন লিটার দৈনিক ক্ষমতার চারটি বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ করছে। কাজটি মার্চের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল, তবে এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।

বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘উভয় দেশের যৌথ নদী কমিশনের অধীনে আমরা এই সমস্যা সমাধানে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি আমরা আমাদের পক্ষেও একটি বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের পরিকল্পনা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যত দিন না সীমান্তের ওপার থেকে দূষণ বন্ধ হচ্ছে, তত দিন আমাদের জনগণকে রক্ষা করতেই এ পদক্ষেপ জরুরি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণে শীর্ষে লাহোর, ঢাকার বাতাস সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ১১
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণের সংকটে ভুগছে রাজধানী শহর ঢাকা। বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় প্রায়ই দশের মধ্যে অবস্থান করছে বাংলাদেশের রাজধানী। এর মধ্যে আজ বুধবার তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে শহরটি।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ১৯৭। যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

আজ বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে পাকিস্তানের লাহোর। শহরটির বায়ুমান ২৪৮, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো ভারতের কলকাতা (২৪৭), ভিয়েতনামের হ্যানয় (২৩৬), পাকিস্তানের করাচি (২২৮) ও ভারতের দিল্লি (২১০)।

আজ ঢাকার যেসব এলাকায় বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি—ইস্টার্ন হাউজিং, দক্ষিণ পল্লবী, বেচারাম দেউরি, গোড়ান, বেজ এজওয়াটার আউটডোর, কল্যাণপুর, পেয়ারাবাগ রেললাইন, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, শান্তা ফোরাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম বিল্ডিং।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলা এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার তাপমাত্রা আজ ১৬ ডিগ্রির ঘরে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৫
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা আজ সোমবার সকালে ছিল ১৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯১ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১২ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ৩০ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ঢাকা, খুব অস্বাস্থ্যকর বেচারাম দেউরির বাতাস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ২৫
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণের সংকটে ভুগছে রাজধানী শহর ঢাকা। বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় প্রায়ই দশের মধ্যে অবস্থান করছে শহরটি। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার তালিকায় আছে দ্বিতীয় স্থানে।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ৯টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ২৫০, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

ঢাকার যেসব এলাকায় বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি—বেচারাম দেউরি, গোড়ান, কল্যাণপুর, পল্লবী দক্ষিণ, ইস্টার্ন হাউজিং, বেজ এজওয়াটার আউটডোর, শান্তা ফোরাম, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, পেয়ারাবাগ রেল লাইন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম বিল্ডিং।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে থাকা ভারতের কলকাতার বায়ুমান আজ ২৬২, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের বাতাসের নির্দেশক। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো মিসরের কায়রো (২৩৯), ভারতের দিল্লি (২৩২) ও কুয়েতের কুয়েত সিটি (১৯৮)।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজ ঢাকায় শীত কিছুটা বেশি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৬
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকায় আজ মঙ্গলবার শীত কিছুটা বেশি পড়েছে। আগের দিন সোমবার সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সেটি কমে হয়েছে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পরবর্তী ৬ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১২ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ৩০ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত