Ajker Patrika

সূর্যের আলো ঠেকিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর পরিকল্পনা যুক্তরাজ্যের

অনলাইন ডেস্ক
সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছানোর আগে আংশিকভাবে প্রতিফলিত করার মাধ্যমে তাপমাত্রা বাড়ার হার কমানো সম্ভব। ছবি: ফ্রি পিক
সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছানোর আগে আংশিকভাবে প্রতিফলিত করার মাধ্যমে তাপমাত্রা বাড়ার হার কমানো সম্ভব। ছবি: ফ্রি পিক

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামাল দিতে এবার সূর্যের আলো কমানোর উদ্যোগ নিতে চলেছে যুক্তরাজ্য। সূর্যালোক প্রতিফলন বা ‘সোলার জিওইঞ্জিনিয়ারিং’ প্রযুক্তির মাধ্যমে সূর্যের আলো কিছুটা ঠেকিয়ে তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টা করা হবে। এই প্রযুক্তির পরীক্ষা শুরুর জন্য সরকারি অনুমোদন মিলতে পারে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই। এ লক্ষ্যে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি গবেষণা তহবিল গঠন করেছে যুক্তরাজ্যের ‘অ্যাডভান্সড রিসার্চ অ্যান্ড ইনভেনশন এজেন্সি’ (এআরআইএ)।

গবেষকেরা বলছেন, সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছানোর আগে আংশিকভাবে প্রতিফলিত করার মাধ্যমে তাপমাত্রা বাড়ার হার কমানো সম্ভব। মেঘ উজ্জ্বল করা বা বায়ুমণ্ডলে নির্দিষ্ট ধরনের কণিকা ছড়িয়ে আলো প্রতিফলনের উপায় খোঁজা হচ্ছে।

এআরআইএর প্রোগ্রাম পরিচালক অধ্যাপক মার্ক সাইমস বলেন, ‘এগুলো হবে ছোট পরিসরের নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষার সময়সীমা এবং সেগুলো কতটা সহজে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে, সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। পাশাপাশি, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহারে আমরা অনুমোদন দিচ্ছি না।’

‘সোলার জিওইঞ্জিনিয়ারিং’ বলতে এমন কিছু প্রস্তাবিত প্রযুক্তিকে বোঝানো হয়, যেগুলোর মাধ্যমে পৃথিবীতে আসা সূর্যের আলো আংশিকভাবে মহাকাশে প্রতিফলিত করে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর চেষ্টা করা হয়।

তবে সমালোচকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এ ধরনের প্রকল্প উল্টো প্রভাব ফেলতে পারে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের গতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, এমনকি বিরূপ আবহাওয়া সৃষ্টি করতে পারে।

সূর্যের আলো কমানোর প্রস্তাবিত কৌশলের মধ্যে রয়েছে স্ট্র্যাটোসফেরিক অ্যারোসল ইনজেকশন, যেখানে বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে সূর্যালোক প্রতিফলিত করতে ক্ষুদ্র কণিকা ছড়িয়ে দেওয়া হবে। আরেকটি পদ্ধতি হলো মেরিন ক্লাউড ব্রাইটেনিং, যেখানে মেঘের প্রতিফলনক্ষমতা বাড়ানোর জন্য জাহাজ থেকে সমুদ্রের লবণপানি আকাশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে দেখা গেছে, জাহাজ চলাচলের পথে আকাশে থাকা মেঘগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল।

জাহাজগুলোর সালফার-ভিত্তিক জ্বালানি পোড়ানোর ফলে মেঘগুলো সূর্যের আলো বেশি প্রতিফলিত করে। এর ফলে পুরো অঞ্চলেই হালকা অন্ধকারাচ্ছন্ন ও শীতল প্রভাব সৃষ্টি হয়।

জলবায়ুবিদ জিম হেইউড বলেন, ‘জাহাজ চলাচলের পথে মেঘ অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়ে থাকে, কারণ ধোঁয়ায় থাকা সালফার কণিকা আলো প্রতিফলনে সাহায্য করে। ২০১৪ সালে আইসল্যান্ডে একটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পরও দেখা গেছে, সালফার ডাই-অক্সাইড বাতাসে ছড়ানোর ফলে মেঘ উজ্জ্বল হয় এবং পৃথিবী ঠান্ডা হয়ে যায়। এই পর্যবেক্ষণগুলো থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা বাস্তব ক্ষেত্রেও পরীক্ষার পরিকল্পনা করছি।’

বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে সূর্যালোক প্রতিফলিত করতে ক্ষুদ্র কণিকা ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ছবি: ডেইলি মেইল
বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে সূর্যালোক প্রতিফলিত করতে ক্ষুদ্র কণিকা ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ছবি: ডেইলি মেইল

বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, পরীক্ষাগুলো সফল হলে আগামী ১০ বছরের মধ্যেই এই প্রকল্প বড় পরিসরে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

এই পরীক্ষার পাশাপাশি এআরআইএ অর্থায়ন করবে নতুন মডেলিং গবেষণা, গবেষণাগারে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, জলবায়ু পর্যবেক্ষণ এবং জিওইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে জনমত যাচাইয়ের উদ্যোগেও।

এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে যেসব জিওইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্প বর্তমানে পরীক্ষাধীন রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে—বিশাল বড় ফ্যানের মাধ্যমে বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ, ‘ওশান ফার্টিলাইজেশন’ অর্থাৎ, সাগরের ওপরের স্তরে পুষ্টি উপাদান যোগ করে জলজ উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটানো এবং যেখানে আগে বন ছিল না, সেখানে নতুন করে গাছ লাগানো।

২০১৮ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, কৃত্রিমভাবে পৃথিবীকে ঠান্ডা করার প্রক্রিয়া যদি হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবে তা আমাদের গ্রহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

গবেষণায় বলা হয়, যদি বায়ুমণ্ডলে কণিকা ছড়িয়ে ঠান্ডা করার পদ্ধতি শুরু করে পরে হঠাৎ থামিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে পৃথিবীর উষ্ণতা স্বাভাবিকের তুলনায় ১০ গুণ দ্রুত বাড়তে পারে।

আগে থেকেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, এই প্রযুক্তি একটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল’, যা আমাদের আবহাওয়ার স্বাভাবিক ধারা ভেঙে দিতে পারে। ফলে পৃথিবীতে দেখা দিতে পারে ভয়াবহ খরা কিংবা বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়।

নিউজার্সির রাটগারস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ‘সোলার জিওইঞ্জিনিয়ারিং’ হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া হলে আবহাওয়ার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

গবেষণার সহলেখক অধ্যাপক অ্যালান রোব্যাক বলেন, ‘জিওইঞ্জিনিয়ারিং হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে দ্রুত উষ্ণতা বৃদ্ধি প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি বিশাল হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি এই প্রযুক্তি কখনো হঠাৎ থেমে যায়, তবে এর পরিণতি হবে বিপর্যয়কর। তাই এটি ধাপে ধাপে বন্ধ করা সম্ভব কিনা, সেই নিশ্চয়তা থাকা জরুরি। কারণ বাস্তবে অনেক পরিস্থিতি কল্পনা করা যায়, যা এই ধাপে ধাপে বন্ধ করাটাকেও অসম্ভব করে তুলবে।’

তথ্যসূত্র: ডেইলি মেইল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত