Ajker Patrika

অসংখ্য লাশ দেখেছি সেদিন

শিমূল ইউসুফ
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২২, ১৬: ৩১
Thumbnail image

আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে যাত্রা শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশের। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরোচিত হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। ভয়াবহ সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেছেন শিমূল ইউসুফ। অনুলিখনে মীর রাকিব হাসান

১৯৭১ সালে আমার বয়স মাত্র ১৪ বছর। থাকতাম ৩৭০ রাজারবাগ আউটার সার্কুলার রোডে। রাজারবাগে পুলিশ লাইনসের উল্টো দিকেই আমাদের বাড়ি। ২৫ মার্চ রাতে বাঙালি পুলিশেরা বলেছিলেন আপনারা লাইট অফ করে ভেতরে চলে যান। অ্যাটাক হতে পারে। আমার ভাইয়েরা আবার ব্যারিকেড দিতে গিয়েছিল মালিবাগের মোড়ে। আমরা বুঝতে পারিনি, এমন ভারী অস্ত্র নিয়ে ওরা নামবে। বাঙালিরা বাঁশ, গাছ ফেলে এসব প্রতিরোধ করতে চেয়েছিল। ওই রাতে পুলিশ ব্যারাকে পাকিস্তানিরা আগুন জ্বালিয়ে দেয়। আগুনের তাপে আমাদের বাড়ি, মেঝে পর্যন্ত গরম হয়ে গিয়েছিল। সারা রাত পানি ঢালতে হয়েছে মেঝেতে। ঘরের সব লাইট অফ করে চুপ হয়ে বসে ছিলাম।

বাংলাদেশি পুলিশেরা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ওরা যখন আর পারল না, তখন আশপাশের বাড়িগুলোয় লুঙ্গি বা সিভিল ড্রেসের জন্য এসেছিল। আমার ভাইদের লুঙ্গি এবং গেঞ্জি ওদের দেওয়া হয়েছিল। ওরা আমার মাকে সালাম করে বলেছিলেন, যদি বেঁচে থাকি আবার দেখা হবে। দেশের জন্য যুদ্ধ করতে যাচ্ছি। ওনারা বেঁচে আছেন কি না, জানি না। আর দেখা হয়নি।

পরদিন শুনলাম শহীদ মিনার গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তখন যেটা আমাদের অস্তিত্বের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো ছিল। ২৬ তারিখ ছিল কারফিউ। আমার ভগ্নিপতি ও সংগীতগুরু শহীদ আলতাফ মাহমুদ ২৭ তারিখ সকালে বের হয়েছিলেন। কিছু সময়ের জন্য কারফিউ শিথিল করেছিল। ভাইয়ার গাড়িতেই আমরা বের হয়েছিলাম। রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের পানির টেংকির মধ্যে দেখি লাশ পড়ে আছে। অসংখ্য লাশ দেখেছি সেদিন। বীভৎস সব স্মৃতি। ওই দিনই আমরা বাড়ি থেকে চলে আসি। কারণ, বাড়িটা ছিল রাস্তার পাশে। সারাক্ষণ আর্মিরা আসা-যাওয়া করত। বাড়ি বাড়ি এসে খোঁজখবর নিত। প্রায় তিন মাস পর আমরা বাড়িতে ফিরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত