Ajker Patrika

ভাবলে আজও গা শিউরে ওঠে

মামুনুর রশীদ
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২২, ১৬: ৩০
Thumbnail image

আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে যাত্রা শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশের। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরোচিত হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। ভয়াবহ সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেছেন মামুনুর রশীদ। অনুলিখনে মীর রাকিব হাসান

২৫ মার্চ কালরাতে আমি গ্রিন রোডে ছিলাম। প্রয়াত চিত্রগ্রাহক ও পরিচালক ফরহাদ সাহেবের বাসায়। আমরা সন্ধ্যা থেকেই টের পাচ্ছিলাম কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে ঢাকায়। একটা ছমছমে পরিবেশ। ফরহাদ সাহেবের বাসায় বসে আমি একটা চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখছিলাম। উনি বললেন, ‘বাইরের অবস্থা তো ভালো নয়, তুমি বরং থেকেই যাও। আর রাস্তাঘাটেও নাকি ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে।’

ওই রাতে আমি ফারহাদ সাহেবের বাসায় থেকে গেলাম। রাত যখন গভীর হচ্ছিল, সারা শহরে গুলির আওয়াজ বাড়ছিল। টের পাচ্ছিলাম, গ্রিন রোডের ওই বাড়ির সামনে দিয়ে ট্যাংক যাচ্ছে। একটা সময় ট্যাংক দিয়ে বেশ কিছু ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। হয়তো মৃত্যুও হতে পারে। অন্ধকার আকাশ তখন আলোকিত হয়ে গেছে পাকিস্তানি সেনাদের গুলির ঝলকানিতে। আকাশে তখন হাওয়াই বাতির মতো গুলি ছুড়ছিল ওরা। জানতে পারলাম, ইকবাল হল, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ওরা হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। সারা রাত ধরেই গুলির শব্দ। কখন থামবে তার কোনো ইয়াত্তা পেলাম না।

আমরা ধরে নিয়েছিলাম হয়তো ফজরের আজানের সময় গুলি করবে না, বা তারপর থামবে। কিন্তু কিসের কী! তখনো চলছিল ধ্বংসযজ্ঞ। পরের দিনও বের হতে পারলাম না। সারা শহরে কারফিউ ছিল। ২৭ তারিখ বের হয়ে দেখি লাশ আর লাশ। মানুষ ছুটছে এলোমেলোভাবে। আমার বোনের বাসা ছিল গুলিস্তানের পাশে। তার বাসায় যেতে এসব দৃশ্য সহ্য করতে পারছিলাম না। একটা কসাইখানায় দেখি গরুও মেরে ফেলেছে। সেই রাতের কথা ভাবলে আজও গা শিউরে ওঠে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত